নামাযে মুকাব্বিরের শরয়ি বিধান
জামাতে ইমাম সাহেবের আওয়াজ শেষ পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। অন্যথায় মুক্তাদি ইমামের অনুসরণ করা সম্ভবপর নয়। তাই ইসলামী শরিয়তে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে । তবে যদি জামাত অতিরিক্ত বড় হয় এবং মুকাব্বিরের মাধ্যমে নামাজ পড়ালে বিভ্রান্তি হতে পারে তাহলে সে ক্ষেত্রে মুকাব্বির ও লাউড স্পিকার দুটিই ব্যবাহার করবে, কেবল লাউড স্পিকার না। এটাই উত্তম। বক্ষমান প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করার প্রয়াস পেলাম।
মুকাব্বির এর পরিচয়: মুকাব্বির আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ আল্লাহু আকবর উচ্চারণকারী। পরিভাষায় ইমাম সাহেবের আওয়াজ মুক্তাদিদের নিকট পৌছানোর জন্য যে ব্যক্তি ইমামের তাকবির শুনে উচ্চস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবর) উচ্চারণ করে তাকে মুকাব্বির বলে।
মুকাব্বিরের হুকুম: বিশেষ প্রয়োজনে মুকাব্বিরের ব্যবস্থা রাখা উত্তম, যা রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার যুগ থেকে প্রমাণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর আওয়াজ ক্ষীণ হয়ে যায়। ফলে ছিদ্দিকে আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসূলে আকরম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার তাকবির শুনে উচ্চস্বরে তাকবির বলেছিলেন। আর তিনিই ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মুকাব্বির। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন—
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا مَرِضَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَضَهُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ أَتَاهُ بِلاَلٌ يُؤْذِنُهُ بِالصَّلاَةِ فَقَالَ ” مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. قُلْتُ إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ أَسِيفٌ، إِنْ يَقُمْ مَقَامَكَ يَبْكِي فَلاَ يَقْدِرُ عَلَى الْقِرَاءَةِ. قَالَ ” مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. فَقُلْتُ مِثْلَهُ فَقَالَ فِي الثَّالِثَةِ أَوِ الرَّابِعَةِ ” إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ، مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ “. فَصَلَّى وَخَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَخُطُّ بِرِجْلَيْهِ الأَرْضَ، فَلَمَّا رَآهُ أَبُو بَكْرٍ ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ، فَأَشَارَ إِلَيْهِ أَنْ صَلِّ، فَتَأَخَّرَ أَبُو بَكْرٍ ـ رضى الله عنه ـ وَقَعَدَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى جَنْبِهِ، وَأَبُو بَكْرٍ يُسْمِعُ النَّاسَ التَّكْبِيرَ—
অর্থাৎ হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত থাকা কালে একবার হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকট এসে নামাযের (সময় হয়েছে বলে) সংবাদ দিলেন। রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বল, যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। (হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন), আমি বললাম, আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কোমল হৃদয়ের লোক, তিনি আপনার স্থানে দাঁড়ালে কেঁদে ফেলবেন এবং কিরাত পড়তে পারবেন না। নবীজি আবার বললেন, আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বল, নামায আদায় করতে। আমি আবারও সে কথা বললাম। তখন তৃতীয় বা চতুর্থবারে তিনি বললেন, তোমরা তো ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সমকালীন রমণীদেরই মত। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে। অতঃপর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে নামায আদায় করতে লাগলেন। ইতিমধ্যে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’জনের কাঁধে ভর করে বের হলেন। (হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি যেন এখনও সে দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি দু’পা মুবারাক মাটির উপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে যান। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে দেখতে পেয়ে পেছনে সরে আসতে লাগলেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারায় তাঁকে নামায আদায় করতে বললেন, (তবুও) হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু পেছনে সরে আসলেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশে বসলেন, আর হযরত আবু বকর ছিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবীর তাকবির (মুসল্লীদেরকে) শুনাতে লাগলেন।
এ প্রসঙ্গে আল মাওসুআতুল ফিকহিয়াতুল কুওয়েতিয়া গ্রন্থে বলা হয়েছে—
فإن كان صوته لا يبلغ من وراءه فينبغي التبليغ عنه من أحد المأمومين ، والمراد من التكبير ما يشمل تكبيرة الإحرام وغيرها . وقال ابن قدامة : يستحب للإمام أن يجهر بالتكبير ، بحيث يسمع المأمومون ليكبروا ، فإنهم لا يجوز لهم التكبير إلا بعد تكبيره ، فإن لم يمكنه إسماعهم جهر بعض المأمومين ليسمعهم ، أو ليسمع من لا يسمع الإمام . لما روى عن جابر رضي الله عنه قال : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبو بكر خلفه ، فإذا كبر رسول الله صلى الله عليه وسلم كبر أبو بكر ليسمعنا.
অর্থাৎ যদি ইমামের আওয়াজ তার পিছনের লোকদের কাছে না পেঁৗছে তবে তার পিছনে নামাযরত লোকদের মধ্যে যে কোন একজনের ইমামের তাকবির পৌঁছে দেওয়া উচিত। তাকবীর বলতে ইহরামের তাকবীর ও অন্যান্য তাকবীরকে বুঝায়। ইমাম ইবনে কুদামাহ বলেন, ইমামের জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর উচ্চারণ করা মুস্তাহাব, যেন মুক্তাদিগণ তাকবিরের আওয়াজ শুনে তাকবির বলতে পারে। কারণ ইমাম তাকবির বলার পূর্বে মুক্তাদিগণের তাকবির বলা জায়েয নাই। যদি দূরবর্তী মুক্তাদিরা তাকবির শুনতে না পায়, তবে মুক্তাদিদের মধ্য থেকে কেউ যেন উচ্চস্বরে তাকবির বলে, যারা ইমামের আওয়াজ শুনতে পায় না তারা যেন শুনতে পায়। এ প্রসঙ্গে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাথে নিয়ে নামায আদায় করলেন, হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিছনে ছিলেন। যখন নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "আল্লাহু আকবর" বললেন, তখন আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু "আল্লাহু আকবার" বললেন , যাতে তিনি আমাদের শুনাতে পারেন।
মাসবুক ব্যক্তি মুকাব্বির হতে পারবে কিনা? মাসবূক ব্যক্তির মুকাব্বির হওয়া উচিত নয়। বরং যারা প্রথম থেকে নামাযে শরীক আছে, তাদের মধ্যে কেউ প্রয়োজনে মুকাব্বির হবেন। তবে যদি মাসবূক ব্যক্তি প্রয়োজন বশত মুকাব্বির হয়েও থাকে, তার জন্য ইমামের সালাম ফিরানোর সময় আসসালামু আলাইকুম বলা ও সালাম ফিরানো জায়েজ নাই। কারণ, ইচ্ছেকৃত মাসবূক ব্যক্তি তখন সালাম ফিরিয়ে ফেললে তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ইমাম সালাম ফিরালে মাসবূক সালাম ফিরাবে না, বরং বাকি নামায পূর্ণ করবে।
মসজিদের দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ তলায় নামায চলাকালিন সময়ে যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিদ্যুৎ চলে গেলে ইমামের কোনকিছুই শ্রবণ করা যায় না। এমতাবস্থায় উপস্থিত মুসল্লীদের মধ্য হতে বিভিন্ন জন মুকাব্বির হবেন এবং তাঁরা ইমামের তাকবির মুসল্লী পর্যন্ত পৌঁছে দিবেন। অর্থাৎ প্রত্যেক তলায় মুসল্লীদের মধ্য হতে একজন যোগ্য মুসল্লী নিজ দায়িত্বে মুক্তাদীদের নিকট ইমামের তাকবিরের পর তাকবিরের আওয়াজ পৌছাবেন। এটিই সর্বাধিক উত্তম পদ্ধতি। যেমন, হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ইমামতি করা অবস্থায় ‘আবূ লুলু’ নামক এক গোলাম খঞ্জরাঘাত দ্বারা আহত করলে, তিনি আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিলেন। হযরত ওমর ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকটে যারা ছিলেন শুধু তারাই ব্যাপারটি দেখতে পেলেন। আর মসজিদের শেষে যারা ছিলেন তারা ব্যাপারটি এর অধিক বুঝতে পারলেন না যে, উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কন্ঠস্বর শুনা যাচ্ছে না কেন? তাই তাঁরা ‘সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ’ বলতে লাগলেন। তখন আব্দুর রহমান ইবনু আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁদেরকে নিয়ে সংক্ষেপে অবশিষ্ট নামায শেষ করলেন।
আর এটা না হলে মুক্তাদীরা একাকী নিজ নিজ ছালাত সম্পূর্ণ করবেন। যেমনটি মাসবূক্ব তথা ছালাত ছুটে যাওয়া ব্যক্তিগণ ইমামের সালাম ফিরানোর পর একাকী অবশিষ্ট ছালাত আদায় করে থাকেন। যেমন, হযরত মু‘আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ইমামতি করা অবস্থায় আক্রমণ করা হলে লোকেরা নিজে নিজে নামায সম্পূর্ণ করেছিলেন।
তবে জুমু‘আর নামাযের বিষয়টি একটু স্বতন্ত্র। যদি এক রাক‘আত সম্পূর্ণ হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়, সেক্ষেত্রে বাকি এক রাক‘আত কোন উপযুক্ত মুক্তাদীর তাকবিরের আওয়াজে জুমু‘আর নামায শেষ করবে। অবশ্য জুমু‘আর বাকি এক রাকাত যদি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে খতিবের তাকবিরের আওয়াজ মসজিদের ২য় ও ৩য় তলায় না পৌছে এবং কোন মুসল্লীও ২য় ও ৩য় তলায় মুকাব্বিরের দায়িত্ব পালন না করায় মুক্তাদিগণের নামায এলোমেলো হয়ে যায় তখন ইমাম কিংবা খতিবের জুমু‘আর জমাত শেষ হওয়ার পর মসজিদের ২য় ও ৩য় তলার মুসল্লীগণ মাসবুকের ন্যায় বাকি এক রাকাত নামায আদায় করবেন, আর যাদের নামায এলোমেলো হয়ে গেছে তারা পরবর্তিতে চার রাকাত যোহরের নামায আদায় করবেন। এটা এহতিয়াত তথা সর্তকতা সরূপ।
তদ্রুপ যদি প্রথম রাক‘আতেই ইমামের সাথে মসজিদের ২য় ও ৩য় তলার মুসল্লীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তারা জুমু‘আর পরিবর্তে যোহর আদায় করবেন। পক্ষান্তরে যদি নামায সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই বিদ্যুৎ চলে আসে বা গোলযোগ ঠিক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ২য় ও ৩য় তলার মুক্তাদীগণ ইমামের সাথে রুকু—সাজদা ঠিক থাকলে বা কোন প্রকার এলোমেলো না হলে ইমামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নামায সমাপ্ত করবেন।
নামাযে লাউড স্পিকার ব্যবহার করার বিধান: অধিকাংশ অভিজ্ঞ ও মুহাক্কিক আলেমগণের মতে লাউডস্পীকার বা মাইকের আওয়াজটি মূলত আওয়াজকারী তথা ইমামের আওয়াজ। লাউডস্পীকার শুধু উক্ত আওয়াজকে একটু উঁচু আওয়াজে প্রকাশ করে মাত্র। আওয়াজটিকে যন্ত্রস্ত করে পাল্টে দেয় না। শুধুই সাউন্ড বৃদ্ধি করে থাকে। তাই এটাকে আরবী ভাষায় مكّبر الصوت অর্থাৎ আওয়াজকে বুলন্দকারী বলা হয়। যা মূলত রাব্বুল আলামীনের এক নিয়ামত। এভাবে বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক পাখা, বিমান, গাড়ি, বাল্ব, এসি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ইন্টারন্যাট ইত্যাদি যা মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিস্কার, যা মানুষ নিজেদের জীবনমানকে সহজ করার, স্বস্তি ও শান্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকেন। তাই জামাত বড় হলে রুকু, সাজদা ও বৈঠকে, ইমামের অনুসরণে ব্যাঘাত না হওয়ার জন্য মাইক/লাউড স্পিকারের ব্যবহারকে বিশেষ প্রয়োজনে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ ইসলামী স্কলার ও মুফতিগণ শর্তসাপেক্ষে বৈধ বলেছেন। নামাযের জামাত ছোট হলে তথা মুসল্লি সংখ্যা কম হলে এবং মাইক কিংবা লাউড স্পিকার ব্যবহারের বিশেষ প্রয়োজন না হলে তখন নামাযে মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহার হতে বিরত থাকবে। তখন মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহার অনর্থক ও অপ্রয়োজন। তদ্রুপ আযান, ইকামত, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ—নসীহত, হামদ—নাতসহ ভাল ও উত্তম কাজে মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই, বরং জায়েয। অবশ্য মাইকসহ বিজ্ঞানের যাবতীয় আবিস্কার, যা পূর্বে ছিল না তা ভাল কাজে ব্যবহার করা ভাল ও গুনাহের কাজে ব্যবহার করা গুনাহ।
বিদআত কখন পরিত্যাজ্য: বিদআতের দরুণ যদি সুন্নাহর বিলুপ্তি ঘটে,তখন সেই বিদআত পরিত্যাজ্য। রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—
عَن غُضَيْف بن الْحَارِث الثمالِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلَّا رُفِعَ مِثْلُهَا مِنَ السُّنَّةِ فَتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ إِحْدَاث بِدعَة—
অর্থাৎ ‘কোনো সম্প্রদায় বিদআতের উদ্ভাবন করলে যদি এর কারণে সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায় তখন বিদআত উদ্ভাবনের চেয়ে সুন্নাতকেই আঁকড়ে ধরা উত্তম ও জরুরী। তাই বিজ্ঞ ফকিহগণের মতে, বড় জামাত হলে লাউড স্পিকারের ব্যবহারের সাথে সাথে রুকু, সাজদা ও বৈঠকে, ইমামের অনুসরণে ব্যাঘাত না হওয়ার জন্য মুকাব্বির নিয়োগ করা উত্তম। যেভাবে হেরামাইন শরীফাইনে তথা মক্কা শরীফ ও মদিনা মুনাওয়ারা শরীফে প্রচলিত আছে। বিনা প্রয়োজনে দু—এক বা অর্ধ কাতারের জন্য মাইক বা সাউন্ড/লাউড স্পিকার ব্যবহার করা অহেতুক, অনর্থক ও অনুচিত। এ বিষয়ে আরো বিশদ জানতে ‘বড় জামাতে মাইক/ লাউড স্পিকার ব্যবহার বৈধ’ মর্মে উস্তাজুল ওলামা অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান হুযূরের মাসিক তরজুমানে (জিলহজ্ব—১৪৪৪ হিজরি সংখ্যায়) প্রকাশিত ফতোয়া দেখার অনুরোধ রইল।
তথ্যসূত্র:
১ — বাহরুর রায়েক, ইমাম শীর্ষক অধ্যায়
২— সহীহ বুখারী, হাদীস: ৭১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮২৭
৩— আল মাওসুআতুল ফিকহিয়াতুল কুওয়েতিয়া, ১০/ ১১৭, নামায অধ্যায়
৪— সহিহ বুখারী;সহিহ মুসলিম, নামায অধ্যায়
৫— রদ্দুল মুহতার, কিতাবুস সালাত, বাবু সুজূদিস সাহভি;
৬— সহিহ বুখারী, হাদীস:৩৭০০
৭— মুহাম্মদ বিন সালেহ উসাইমিন, আশ—শারহুল মুমতি’, খ—৪, পৃ. ৩৪১—৩৪৩; মুহাম্মদ আসেম হাদ্দাদ, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু, পৃ. ১৫৬
৮— আল—মাজমূঊ, খ—৪,, পৃ. ২০৯; মাজাল্লাতুল বুহুছুল ইসলামিয়্যাহ, খ—৬১, পৃ. ৮৩; ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দূ, পৃ. ১৫৬
৯— মুসনাদে আহমাদ,হাদীস: ১৬৯০৭
কোন মন্তব্য নেই