Header Ads

Header ADS

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রিশতম মুসলমান। তার জন্ম ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ হস্তীসনের ছয় বছর পর। এ হিসেবে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার চেয়ে বয়সে ছয় বছরের ছোট। অধিকাংশ বর্ণনামতেই তার জন্ম সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। অবশ্য অনেকের বর্ণনামতে তার জন্ম তায়েফ নগরীতে বলা হয়েছে। তাঁর উপাধি জুন-নুরাইন এবং জুল-হিজরাতাইন। তার পিতা আফ্‌ফান এবং মাতা আরওয়া বিনতু কুরাইজ। তিনি কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা শাখার সন্তান ছিলেন। তার ঊর্ধ্ব পুরুষ আবদে মান্নাফে গিয়ে মুহাম্মদের বংশের সাথে মিলিত হয়েছে। তার নানী বায়দা বিনতু আবদুল মুত্তালিব ছিলেন মুহাম্মদের ফুফু। সেই হিসাবে তিনি মুহাম্মদ এর ভাগ্নে। প্রাথমিক জীবন : উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশ বংশের অন্যতম বিখ্যাত কোষ্ঠীবিদ্যা বিশারদ ছিলেন। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে তার অগাধ জ্ঞান ছিল। ইসলাম গ্রহণের পূর্বেও তার এমন বিশেষ কোনো অভ্যাস ছিল না যা ইসলামী নীতিতে ঘৃণিত। যৌবনকালে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসায় শুরু করেন। ব্যবসায়ে তার সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। মক্কার সমাজে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন বলেই তার উপাধি হয়েছিল গণি যার অর্ধ ধনী। ইসলাম গ্রহণ : ৬১১ সালে তিনি সিরিয়া থেকে বাণিজ্য করে ফিরে মুহাম্মদ কর্তৃক ইসলাম প্রচার সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে এক সূত্রে জানা যায় তাঁর খালার উৎসাহেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তাঁর সেই খালা ছিলেন একজন বিশিষ্ট গণক যার নাম সুওদা বিনতে কুরাইজ। তিনি তার কবিতার মাধ্যমে উসমানকে বেশ কিছু কথা বলেন। তিনি উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর রাসূল সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলেন। তারপর উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একদিন চিন্তা করতে করতে পথ অতিক্রম করছিলেন। পথে চিনতা ক রেন বন্ধু আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে দেখা হলে তিনি তার খালার কথাগুলো আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন। আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উত্তরে বলেন, ‘তোমার খালা আল্লাহর রাসূল সম্পর্কে সত্য কথা বলেছেন। উসমান! তুমি সত্য মেনে নাও। তুমি আল্লাহর রাসূলের কাছে যাও এবং তার কথাগুলো শোনো।’ তিনি আবু বকরের কথা অনুযায়ী আল্লাহর রাসূলের কাছে গিয়ে তার কথা শোনেন; অতঃপর অবিলম্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রশাসন: তিনি বায়তুল মাল থেকে জনগণকে দেওয়া ভাতা ২৫% বাড়িয়ে দেন যা উমারের সময় সবার জন্য নিদির্ষ্ট ছিল। বিজিত অঞ্চলের কৃষি জমি বিক্রির উপর ঐঐ নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে তিনি এর অনুমোদন প্রদান করেন। তার করা অর্থনৈতিক পুনঃগঠনের কারণে খিলাফাতের মুসলিম অমুসলিম সবাই অর্থনৈতিক সুফল ভোগ করতে পারতো। শাহাদাত : খিলাফতের শেষের দিকে জিলক্বদ জিলহজ্ব মাসের মাঝামাঝি সময়ে, যে সময় মদিনার প্রায় সাহাবায়ে কেরাম গন হজ্বের উদ্যেশ্যে রওনা দেন। মুনাফিকরা সে সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে সৌয়দুনা ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর বাসভবন অবরোধ করেন, খাবার পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এই অবরোধ এর সময়কাল ছিলো চল্লিশ দিন। আর নবি প্রেমিক, নবীর গোলাম, ধৈর্যের মূর্ত প্রতীক সৈয়দুনা ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু সে সময়কালে রোযা রাখতেন। ক্ষুধা লাগলে আল্লাহর যিকির করতেন, পিপাসা পেলে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। অবরোধের প্রথম দিকে তিনি মসজিদে নববি গিয়ে নামায আদায় করতেন, পরে মুনাফেকরা সেখানেও বাধা প্রদান করেন। রাসুলে পাক যে মিম্বরে যে আশা মোবারক কে হাতে নিয়ে খুৎবা দিতেন। সে আশা মোবারক ছিনিয়ে নিয়ে এক বদবখত ভেংগে ফেলেন এভাবে অত্যাচার চলছিলো। হযরত মওলা আলি কারামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করিম খবর পেয়ে,হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর কাছে মুনাফেকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অনুমতি চেয়েছিলেন। ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু চাইতেন না নবিজির পবিত্র নগরীতে যেন রক্তপাত হয়, তাই যুদ্ধর অনুমতি ও প্রদান করেন নি। পরে মওলা আলি কারামাল্লাহু ওয়াযহাহুল কারিম, উনার পুত্রদ্বয় সৈয়দুনা ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু কে ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর বাসভবনে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। অবশেষে এক রাতে উম্মতের কান্ডারি নবির আগমন ঘটলো সৈয়দুনা ওসমান রাদিয়াল্লাহু তালা আনহুর হুজরা শরীফে। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু তা'লা আনহু বলেন: যখন বিদ্রোহীরা হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বাসভবন অবরোধ করে রাখে, উনার ঘরে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় আর হযরত সায়্যিদুনা ওসমান গণী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু তীব্র পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েন। সেদিন (১৮ ই জিলহজ্ব) আমি উনাকে দেখতে যায়। তিনি বলেন হে আব্দুল্লাহ বিন সালাম রাদিয়াল্লাহু তালা আনহু আমি আজ রাতে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কে সপ্নে আলোকিত স্থানে দেখেছি। হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত মায়া ভরা কণ্ঠে আমাকে ইরশাদ করলেন: হে ওসমান! তারা পানি বন্ধ করে দিয়ে তোমাকে পিপাসায় কাতর করে ফেলেছে? আমি আরয করলাম জী, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তখনই হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম , একটি পানিভর্তি পাত্র আমার সামনে ধরলেন। আমি তৃপ্তি সহকারে পাত্র থেকে পানি পান করলাম। এখনো পর্যন্ত সে পানির শীতলতা আমার বুকের উভয় প্রান্ত, দু'কাঁধের মাঝখানে অনুভব করছি। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে ইরশাদ করলেন: হে ওসমান ! যদি তুমি চাও, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমি তোমাকে সাহায্য করবো, আর যদি তুমি চাও আমার কাছে রোযার ইফতার করতে পারো..আমি আরয করলাম: ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আপনার সান্নিধ্যে নুরানী দরবারে হাযির হয়ে রোযার ইফতার করাটাই আমার জন্য অধিক পছন্দনীয়। হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন সালাম বলেন: অতঃপর আমি উনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। আর সেদিনই বিদ্রোহীরা দেয়াল টপকে ছাদ বেয়ে খলিফাতুর রাসুল হযরত ওসমান জিন্নুরাইন এর কক্ষে প্রবেশ করে উনাকে শহীদ করে দেয়। (কিতাবুল মানামাত, মায়া মওসুয়াতিল ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া, ৩য় খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা, নং: ১০৯) ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত দিবসের নিসবতে তাঁর ১৮ ফজিলতঃ ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ হযরত ওসমান বিন আফফান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর অনন্য বৈশিষ্ট্য: ১.আইয়ামের জাহেলিয়াতের সকল বদরুসূম থেকে তিনি সম্পুর্ণ মুক্ত ছিলেন। ২.খান্দানে নবুয়তের দুই কন্যা যথাক্রমে রুকাইয়া ও উম্মেকুলসুমকে শাদী করেন এবং জুন্নুরাইন উপাধি লাভ করেন। ২.যদিও সৈয়্যদুনা সিদ্দিক আকবর কোরান সংগ্রহ করেছেন তারপরও জামেউল কোরান হজরত ওসমানকেই বলা হয়। ৩.তিনি একাধারে হাফেজ,ক্বারী এবং মুয়াল্লিমে কোরান ছিলেন। ৪.জুমার ৩য় আজানের প্রচলন তিনিই করেছেন। ৫.তিনি "সাহিবুল হিজরাতাইন" তথা হাবশা ও মদিনা উভয় দেশে হিজরত করেছেন। ৬.তিনি ৪র্থ নং মুসলমান ছিলেন। ৭.জীবনে কোনদিন মিথ্যা মুখে আনেননি। ৮.রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জুবানে একাধিক জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন। বী'রে রৌমা ক্রয় করে ওয়াকফ করে ও তাবুকের যুদ্ধ সামগ্রী প্রদান করে দুই দুইবার রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জান্নাত খরিদ করে নিয়েছিলেন। ৯.রাসুলে পাক নিজের হাত মোবারককে তাঁর হাত ঘোষণা করে হুদায়বিয়াতে বাইয়াত করিয়েছিলেন। ১০.সেদিন থেকে হজরত ওসমান নিজ ডানহাতকে একটি রূমাল দিয়ে ঢেকে রাখতেন। পরবর্তী সে হাতে কোনদিন লজ্জাস্থান স্পর্শ করেননি। ১১.মুসলমান হবার পর থেকে প্রতি জুমাবারে একটি একটি গোলাম আজাদ করেছেন। ১২.কেবলাতাইন মসজিদের পাশে অবস্থিত বীরে রৌমা এক ইহুদীর মালিকানায় ছিলো।সেটার পানি খুব সুস্বাদু ছিলো। অন্য কোন পানির ব্যাবস্থা না থাকায় ঐ ইহুদী ছড়া দামে পানি বিক্রি করছিল। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কেউ কিনে ওয়াকফ করলে তার বিনিময়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেন।হজরত ওসমান ৩৫০০০দিরহাম দিয়ে সে কুয়াটা কিনে ওয়াকফ করে সে সুযোগ টা লুফে নেন। ১৩.একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।সেসময় ১০০০উট বোঝাই খাদ্যসামগ্রী তিনি বিনামুল্যে বিলি করেছেন।সে সময় ব্যবসায়ীরা তাকে ন্যায্য মুল্যের চেয়ে পাঁচগুন বেশী দাম দিয়ে ঐ খাদ্যসামগ্রী কিনতে চেয়েছিলো।তিনি এই বলে তাদের ফিরিয়ে দেন যে আমি যে দশগুন ঘোষণা করেছে তার কাছেই বিক্রি করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১৪.মসজিদে নবুবী প্রসস্থ করার প্রয়োজন হলে তিনি২৫০০০দেরহাম খরচ করে পার্শ্ববর্তী জমি খরিদ করে ওয়াকফ করেছেন। ১৫.আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী হবার পরও তিনি ফকীরী ও সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন।খলিফা থাকাবস্থায় একবার দুপুরে গরমের কারনে মসজিদে নবুবীর মাটিতে শুয়েছিলেন, তখন তাঁর শরীরে পাথরকনার দাগ পড়ে গিয়েছিল। ১৬.তাবুকের যুদ্ধে তিনিই সবচেয়ে বড় আকারে দান করে রাসুলে পাককে সন্তুষ্ট করে ফেলেছিলেন এবং জান্নাত খরিদ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। ১৭.একবার তাঁর এক গোলামকে ডেকে বললেন -আমি তোমাকে একবার কান টেনে দিয়েছিলাম, তুমি আমার থেকে সেটার প্রতিশোধ নিয়ে নাও। ১৮.৮২বছরের দীর্ঘ জীবনে যেনা ও শরাব পানের কল্পনাও কোনদিন করেননি। আসুন! প্রতি বৎসর ১৮ই জিলহজ্জ আমরা সুন্নিরা ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর শাহাদাত দিবস উপলক্ষ্য ফাতেহা খানির আয়োজন করি। মাহফিলে যিকরে ওসমান যুন নুরাঈন পালন করি। ১৮ জিলহজ্জ " ঈদে গদীরে খোম" কে না বলি কেননা এটা সুন্নিদের নয় এটা শিয়াদের অনুষ্ঠান। 'ঈদে গদীরে খুম' শিয়া সম্প্রদায়ের নব উদ্ভাবিত ঈদ। যার সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন দূরবর্তী সম্পর্কও নেই।

কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.