ওসিলা: আল্লাহর নৈকট্য লাভের অনন্য মাধ্যম
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
ওসিলা (وسيله) আরবি শব্দ। এর অর্থ উপায়, উপকরণ, নৈকট্য, মর্যাদা, অবস্থান, ব্যবস্থা, মাধ্যম যা দ্বারা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। কোন কিছু অজর্নের মাধ্যম বা উপায়-উপকরণকে শাব্দিক অর্থে ওসিলা বলে। (রাগেব ইসফাহানী, পৃ: ৫২৩ – ৫২৪) পরিভাষায়, তাজুল আরূস গ্রন্থকার বলেন-
قال ابن الاثيرهى فى الاصل ما يتوسل به الى الشئ ويتقربه-
ইবনুল আছীর বলেন, ওসিলা মূলত যা দ্বারা কোন কিছুর কাছে পৌঁছা যায় বা নৈকট্য হাসিল করা যায়। আল্লামা আলূসী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
”الوسيلة هى ما يتوسل به ويتقرب الى الله عزوجل من فعل الطاعات وترك المعاصى“
ওসিলা হলো, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। ইমাম কুরতবী বলেন,যেসব জিনিসের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়, তাকে ওসিলা বলে। (কুরতুবি, ৬/১৫৯) যেমন- নেক আমল করা এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগ করা। আর তাওয়াস্সুল অর্থ হলো মাধ্যম খোঁজা। মহান রাব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে তাঁর কাছে পৌঁছার জন্য ওসিলা তালাশ করতে বলেছেন। ঈমানের পাশাপাশি ভাল কাজ করা এবং ঈমান বিনষ্টকারী আমল থেকে বেঁচে থাকা যেমন ওসিলা, তেমনি নবী-রাসূল এবং আল্লাহর মাকবুল নেককার বান্দাগণও আল্লাহর নৈকট্য লাভের ওসিলা। নবী-রাসূলগণের ওসিলাতেই বিশ্ববাসী আল্লাহকে চিনতে পেরেছেন। এরপর তাঁদের উত্তরাধিকারী আউলিয়ায়ে কেরামগণের ওসিলাতেই পথহারা উম্মত আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছে।
আল্লাহ্ তা’আলা মানব জাতির হেদায়তের জন্য দুটি ধারাকে আবশ্যক করে দিয়েছেন- তা হলো যথাক্রমে কিতাবুল্লাহ্ ও রিজালুল্লাহ। কিতাবুল্লাহ্ তথা আসমানী নাযিলকৃত কিতাবসমূহ। আর রিজালুল্লাহ্ হলো, নবী-রাসূল ও আউলিয়ায়ে কেরামদেরকে ঝুনানো হযেছে। এ দু’ধারার কোনটিকে অবজ্ঞার সুযোগ নেই।
আমরা দৈনিন্দিন জীবনে প্রায় নানা হতাশা, নিরাশা, বিপদ-আপদ ও বিপযর্য়ের সম্মুখীন হই। তখন তা থেকে পরিত্রাণ লাভের নিমিত্তে দো‘আ, মুনাজাত স্বীয় সৎ আমল, আল্লাহর একান্ত প্রিয়ভাজন ও নৈকট্যশীল বান্দাহদের ওসিলা গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট দু’হাত তুলে দোয়া করা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি, নিত্য-নৈমিত্তিক আমলও। এটা হলো বৈধ, শরিয়ত অনুমোদিত ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কারো মতে এটা মুস্তাহাব। কারো মতে ওয়াজিব। ওসিলা সম্পর্কে মতবিরোধ ইসলামের প্রাথমিক যুগে কেউ ওসিলার বৈধতার ব্যাপারে আপত্তি করেননি। কুফর, শিরক ও বিদআত বলা তো দূরের কথা কেউ নাজায়েয পর্যন্ত বলেননি। ওসিলা সম্পর্কে মতবিরোধের সূচনা সম্পর্কে فيضل القدير কিতাবে আবদুর রউফ মুনাভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (১০৩১হি.) ইমাম তকী উদ্দীন সুবকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বাণী এভাবে বর্ণনা করেন-
وَيُحْسِنُ التَوَسُّلُ وَالاِسْتِعَانَةِ وَالتَشَفِعُ بِالنبى صلى الله عليه وسلم اِلَى رَبِّهِ وَلَمْ يَنْكِرْ ذَالِكَ اَحَدٌ جَاءَ اِبْنُ تَيَمِيَةَ فَانكَر ذَالكَ-
অর্থাৎ স্বীয় প্রভুর কাছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসিলা দেওয়া, তাঁর মাধ্যমে সাহায্য কামনা করা এবং তাঁর সুপারিশ কামনা করা ভাল। ইবনে তাইমিয়য়া আসার পূর্বে কোন পূর্বসূরি আলেম এটাকে মন্দ কাজ বলেননি বরং সর্বপ্রথম সেই অস্বীকার করেছে। (মুনাবী, যাইনুদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে তাজুল আরেফীন (১০৩১ হি.), ফায়জুল ক্বাদীর শরহু জামিউস সগীর, ২/১৭০)
🔃 ওসিলার শ্রেণিবিন্যাসঃ
ওসিলা প্রথমত ২ প্রকার। যথা-
১. অবৈধ ওসিলা, ২. বৈধ ওসিলা।
★ অবৈধ ওসিলাঃ কেউ যদি আল্লাহ্ তা‘আলা ব্যতীত মাধ্যম বা ওসিলাকেই মূল দাতা মনে করে তবে এটা নিঃসন্দেহে হারাম। কেননা এতে গাইরুল্লাহ্র ইবাদত করা হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে ক্বোরআনের বাণী-
وَالَّذِيْنَ اَتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِهِ اَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ اِلَّا لِيُقَرِّبُوْنَا اِلىَ اللهِ زُلفى-
আর যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে অলী (অভিভাবক)রূপে গ্রহণ করেছে (তারা বলে) আমরা তো এদের ইবাদত এজন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌঁছে দেবে। [সূরা যুমর: আয়াত-৩]
এ আয়াতটি কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। যারা মূর্তিপূজা করত। এবং মূর্তিগুলোকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ওসিলা মনে করত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, কোন কোন (জ্ঞানপাপী) ব্যাখ্যাকার মুশরিক কাফিরের ক্ষেত্রে নাযিলকৃত আয়াতটি মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে চলেছেন। আর বৈধভাবে ওসিলা বা শাফাআত প্রত্যাশী মুসলমানদেরকে নিন্দা করে চলেছেন।
★ বৈধ ওসিলা: বৈধ ওসিলা হলো, একমাত্র আল্লাহকে মূলদাতা মনে করা। যেসব জিনিস আল্লাহ পছন্দ করেন, সেগুলো দিয়ে ওসিলা করলে আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন। আল্লাহর প্রিয় হওয়া বা পছন্দের কারণেই মূলত: ওসিলা করা হচ্ছে। নতুবা ওসিলা করার কোন দরকার ছিলো না। সরাসরি দোয়া করলেই হতো।
বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়, যখন কোন বুজুর্গের কাছে দোয়া চাওয়া হয়। বুজুর্গের কাছে দোয়া চাওয়ার কারণ হলো, তিনি আল্লাহর পছন্দনীয় ও প্রিয় বান্দা। তিনি দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন। একইভাবে আমলের মাধ্যমে দুয়ার কারণ হলো আমলগুলো আল্লাহর পছন্দের। আমাদের অবস্থান এখানে খুবই স্পষ্ট। যেসব বিষয় আল্লাহর প্রিয় ও পছন্দের সেসব বিষয়ের ওসিলা দিয়ে দোয়া করা যাবে। কারণ ওসিলার মূল উদ্দেশ্য হলো যে বিষয়ের ওসিলা দেয়া হচ্ছে, সেটি আল্লাহর প্রিয়। সুতরাং যেসকল বিষয় আল্লাহর প্রিয় হবে, সেটা দিয়ে আমরা ওসিলা করবো। আল্লাহর প্রিয় বিষয়টি জীব হোক, জড় হোক, কোন আমল হোক। প্রিয় হওয়ার দিক থেকে সবই সমান। এজন্য আমাদের কাছে জাত ও আমলের মধ্যে কোন পাথর্ক্য নেই। কারণ জাতও আল্লাহর প্রিয়। আমলও আল্লাহর প্রিয়। কেউ যদি কা'বার ওসিলা দিয়ে দোয়া করে, সেটাও আমাদের কাছে পছন্দনীয়। যদিও কাবা আমল বা কোন জীব নয়। কিন্তু কা'বা আল্লাহর প্রিয় ঘর হওয়ার কারণে আমরা এর ওসিলায় দোয়া করি। এক্ষেত্রে আমরা জীবিত, মৃতেরও কোন পাথর্ক্য করি না। ব্যক্তি জীবিত থাকলেও আল্লাহর প্রিয় থাকে, মারা গেলেও আল্লাহর প্রিয় থাকে।
ওসিলা দিয়ে দো'য়া করার সময় আমাদের অন্তরে এই বিশ্বাস থাকে যে, যেসব বিষয়ের ওসিলা দিচ্ছি, সেটি আল্লাহর প্রিয়, এজন্যই আমরা এর ওসিলা দিচ্ছি। আমরা আমলের ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস করি না যে, এসব আমলের নিজস্ব ক্ষমতা আছে, যার কারণে দোয়া কবুল হয়। কোন নেককার ভালো মানুষের কাছে দোয়া চাওয়ার সময় আমরা এটা মনে করি না যে, এই ব্যক্তির নিজস্ব ক্ষমতা কারণে দোযা কবুল হবে। বরং আমাদের অন্তরের বিশ্বাস হলো, এই ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়। প্রিয় হওয়ার কারণে তার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।আরেকটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন, আমরা যার ওসিলা দিচ্ছি, তাকে আল্লাহ, আল্লাহর সমকক্ষ বা মূর্তি মনে করছি না। নাউযুবিল্লাহ। বরং তাকে আল্লাহর বান্দা মনে করি। তাকে শুধু আল্লাহর প্রিয় বান্দা বিশ্বাস করি। আপনার যদি দিলে আমাদের ব্যাপারে অন্য কোন ধারণা আসে, তাহলে মুমিনের ব্যাপারে অমূলক ধারণা থেকে বেঁচে থাকুন। আপনার অন্তরে যদি ওসিলা দেয়া ব্যক্তিকে মূর্তি মনে হয়, তাহলে আপনি তওবা করুন। আমাদের অন্তরে যেহেতু এগুলো আসে না, সুতরাং এজাতীয় কথা আমাদের সামনে না বলে নিজে অন্যায় ধারণা থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন।
ওসিলার ক্ষেত্রে সব-সময় একটা পদ্ধতিতেই ওসিলা করা হবে, এই চিন্তা করা ভুল। আমি যেমন কোন বুজুর্গের কাছে গিয়ে দোয়া চাইতে পারি। আবার সে বুজুর্গের ওসিলা দিয়ে আমি সরাসরি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি। আবার আমি নিজের কোন ভালো আমলের মাধ্যমেও ওসিলা করতে পারি। এক্ষেত্রে কোন বাধা নিষেধ নেই। একথা চিন্তা করা অন্যায় যে, আমি ওসিলার শুধু একটি মাধ্যমই সব-সময় আমল করি।
সার কথা হলো,
১. ওসিলার যেসকল প্রকার রয়েছে, আমি ইচ্ছা করলে সবগুলো এক সাথে করতে পারি।
২. ইচ্ছা করলে পৃথক পৃথক বা যে কোন একটা করতে পরি।
৩. এক প্রকার ওসিলা ব্যবহার এটা প্রমাণ করে না যে, আমি অন্য প্রকার করি না বা আদৌ করবো না।
এবার এ বিষয়ে পবিত্র কুরআন- সুন্নাহর কয়েকটি প্রমাণ আলোকপাত করার প্রয়াস পেলাম ।
🔃 পবিত্র কুরআনুল করিমের আলোকে ওসিলাঃ
১। সূরা মায়েদার ৩৫ আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
« يا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَ ابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَ جاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ».
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ (মুমিনগণ)! তাকওয়াধারী হও এবং আল্লাহর কাছে নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উসিলা বা মাধ্যম গ্রহণ করো। আর খোদার পথে জিহাদ করো তবে তোমরা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে।(সূরা মায়েদা, আয়াত:৩৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই আয়াতে মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:
ক) আল্লাহর তাকওয়া অর্জন;খ) প্রভুর নৈকট্য অর্জনের জন্য উসিলা নির্ধারণ;
গ) খোদার পথে জিহাদ করা।
২। সূরা নেসার ৬৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে :
« وَ ما أَرْسَلْنا مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ لِيُطاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ وَ لَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جاؤُكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَ اسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّاباً رَحِيماً ».
অর্থাৎ আমি কোন নবীকেই প্রেরণ করিনি, শুধুমাত্র এই জন্য যে, তার হুকুমে তার আনুগত্যতা করা হোক, আর যদি এ সকল লোকেরা নিজেদের আত্মাসমূহের ওপর অত্যাচার করে, হে নবী ﷺ আপনার দরবারে এসে হাজির হয়ে যায় এবং আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবায়ে নছুহা করে এবং আপনিও (ইয়া রাসুলুল্লাহ) তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তাহলে নি:সন্দেহে এরা আমি আল্লাহতায়ালাকে তওবা কবুলকারী, ক্ষমাকারী মেহেরবান হিসেবে পাবে। (সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪)
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমাম ইবনে কাসির বর্ণনা করেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পাপী বান্দাদেরকে ইরশাদ করছেন যে, নবী করিমকে ﷺ যেন তারা খোদার দরবারে উসিলা করে নেন এবং নিজেও ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং নবী করিমকেও ﷺ আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য মাগফেরাত চাওয়ার জন্য বলে। এমতাবস্থায় আল্লাহর রহমতে শামিল হতে পারবে, তাদের তাওবাও কবুল করা হবে।
অতঃপর (ইবনে কাসির) উদাহরণস্বরূপ নবীর ﷺ কবরে একজন আরব লোকের তাওয়াস্সুলের ঘটনা ও খোদার ক্ষমার বর্ণনা করেন। (ইবনে কাসির, পৃ: ৩২৮ – ৩২৯)।ইমাম কুরতুবি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে অনুরূপ একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন:
« روي ابو صادق (الازدي الكوفي) عن علي (رضی الله عنه) قال: قدم علينا اعرابيّ بعد ما دفّنّا رسول الله…بثلاثة ايّام، فرمي بنفسه علي قبر رسولالله… و حث علي رأسه من ترابه، فقال: يا رسولالله ! فسمعنا قولك، و وعيت عن الله فوعينا عنك وكان فيما انزل الله « و لو انّهم اذ ظلموا انفسهم…» و قد ظلمت نفسي و جئتك تستغفرلي، فنودي من القبر انّه قد غفر لك »
আবু সাদেক আযদি হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেব যে, একজন আরব লোক রাসুলুল্লাহর ﷺ দাফনের তিন দিন পর নিজেক তাঁর কবরের উপর ফেলে দিয়ে তাঁর ধুলো মাটি নিয়ে নিজের মাথায় ঢালছিল আর বলছিল: হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! আপনার বাণী শুনেছি, আমরা আপনার কাছে চাচ্ছি আর আপনি খোদার কাছে চান । যে আয়াত আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, “যদি আমার কোন বান্দা নিজের উপর যুলুম অত্যাচার করে, তারা আপনার কাছে আসে আপনিও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও তাদের তাওবা কবুল করবেন”, আমি নিজের উপর যুলুম করেছি, এখন এসেছি যাতে আপনি আমার জন্য খোদার দরবারে মাগফেরাত ও ক্ষমা কামনা করেন; অতঃপর নবী করিমের ﷺ কবর থেকে আওয়াজ এলো যে, তোমার মার্জনা হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবি, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৬৫)
এই হাদীস হতে আমরা বুঝতে পারি যে, আরব লোকটি কোরানের আয়াতকে ধারণ করার মাধ্যমে নবী করিমকে ﷺ উসিলা করলো এবং খোদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো আর এই তাওয়াস্সুল ফল দিলো এবং সে লোকটিকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করলেন। সুতরাং এ আয়াত কারীমা দ্বারা প্রমাণ হয়ে গেল হুযূর ﷺ প্রত্যেক গুনাহ্গারের জন্য সর্বসময় (কিয়ামতাবধি) মাগফিরাতের (ক্ষমা) ওসিলা।
৩। সূরা বাকারার ৩৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে :
« فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِماتٍ فَتابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ ».
অতঃপর আদম আলাইহিস সালাম নিজের প্রভুর কাছে কিছু শব্দাবলীর শিক্ষা নেন এবং তার মাধ্যমে তাওবা করেন এবং খোদা তার তাওবাকে কবুল করলেন, কেননা আল্লাহ রাব্বুর আলামিন তাওবা গ্রহণকারী ও মেহেরবান।(সূরা বাকারা, আয়াত:৩৭)
উপরোক্ত আয়াতে «كلمات» শব্দের বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা বর্ণনা করা হয়েছে, যার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসুলে ﷺ সত্ত্বা। এ প্রসঙ্গে ইমাম কুরতবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-
« و قالت طائفة: رأي مكتوبا علي ساق العرش (محمد رسول الله) فتشفّع بذلك ».
যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর ইরশাদি হুকুমের বিরোধীতা করে অনুতপ্ত হলেন এবং তাঁর শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, তখন আরশে হযরত নবী করিমের ﷺ পবিত্র নাম দেখতে পান, অতঃপর তাঁকে খোদার দরবারে শাফাআতকারী নির্দিষ্ট করেন। (তাফসীরে কুরতুবি, ১/ ৩২৪; আল মো’জামুল আকায়েদি, ১/ ৮৭)
এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেকও নবী করিমের ﷺ মাযারে মানসুর দাউয়ানেকিকে বললেন:
« هو وسيلتك و وسيلة ابيك آدم ».
হযরত মোহাম্মদ ﷺ হচ্ছেন তোমার জন্য উসিলা যেরূপ তোমার পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর জন্য উসিলা ছিলেন। (যাইনি দাহলান, পৃ: ১৫৭)
🔃 হাদীসের আলোকে ওসিলাঃ
শুধু পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত বা তাফসীর নয় অসংখ্য - সহীহ হাদীস দ্বারাও উছিলা প্রমাণিত।
✔️ প্রথম দলিল:সহিহ বোখারী শরীফে রয়েছে, হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
عن أنس بن مالك - رضي الله عنه - قال: كنا إذا قحطنا استسقى عمر بن الخطاب - رضي الله عنه - بالعباس بن عبد المطلب - رضي الله عنه - فقال: اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا , وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا , قال: فيسقون.
অর্থাৎ আমরা যখন অনাবৃষ্টির স্বীকার হতাম, তখন হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মাধ্যমে বৃষ্টির দোয়া করতেন। হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা আমাদের নবী রাসূল ﷺ এর মাধ্যমে আপনার কাছে ওসিলা করতাম, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করতেন, এখন আমরা আপনার কাছে আমাদের নবীজীর চাচাকে ওসিলা করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর বৃষ্টি হতো। (সহিহ বোখারী শরিফ, হাদীস নং ৫১১)
এই হাদীস জীবিত ব্যক্তির ওসিলার সুস্পষ্ট প্রমাণ। হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর এখানে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছেন। এই দোয়ার মধ্যে হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ওসীলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দোয়াটি ব্যক্তির মাধ্যমে ওসীলার প্রমাণ এবং হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দোয়া করতে বলাটা কোন নেককার ব্যক্তির মাধ্যমে ওসীলার প্রমাণ। এখানে দু’প্রকার ওসিলা এক সাথে হয়েছে। একে এক প্রকার বানাবার চেষ্টার কোন সুযোগ নেই।
এই হাদীসের অন্য বর্ণনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় স্পষ্ট হয়। বণর্নাটি নাসীরুদ্দীন আল-বানী তার আত-তাওয়াসসুল কিতাবের ৬২ পৃষ্টায় এনেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন। হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দোয়া করেছেন,
اللهم إنه لم ينزل بلاء إلا بذنب ، ولم يكشف إلا بتوبة ، وقد توجه القوم بي إليك لمكاني من نبيك ، وهذه أيدينا إليك بالذنوب ونواصينا إليك بالتوبة فاسقنا الغيث .
অর্থাৎ হে আল্লাহ! প্রত্যেক বালা মুসীবতই গোনাহের কারণে আসে, আর তওবা ছাড়া এটি দূর হয় না, হে আল্লাহ! আমার জাতি আমার মাধ্যমে আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছে, কারণ আপনার প্রিয় নবীর ﷺ সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে (নবীজীর চাচা)। আপনার সামনে আমাদের গোনাহগার হাতগুলো উপস্থিত, আর উপস্থিত আমাদের তওবার কপাল, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। (আত- তাওয়াসসুল,)
🔃 বিপথগামীদের জন্য সতর্কবানী,,,!!!!
বিপথগামী লোকেরা বলে থাকে- হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নবীজীর উছিলা না ধরে তাঁর যুগে জীবিত হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু কে উছিলা ধরেছেন । এতে বুঝা যায়- মৃত কাউকে উছিলা ধরা জায়েয নেই। (নাউযুবিল্লাহ) হাদীস বিশারদ ওলামাগণ বলেছেন, বিপথগামীরা হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যা করেছে । বরং উক্ত হাদীসের প্রকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে উছিলা ধরে এ কথাই বুঝিয়েছেন যে, নবীজী ﷺ ছাড়াও ঐসবলোককে উছিলা ধরা যায়- যারা নবীজীর অতি নিকটের এবং আত্নীয় । সুতরাং পাকপাঞ্জাতন ও আউলিয়া কেরামের উছিলা ধরার প্রকৃষ্ট প্রমান হলো - হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর উক্ত আমল । অন্যান্য সাহাবীগণকে উছিলা না ধরার মধ্যে কারণ হলো- নবীজী ﷺ ও তাঁর পরিবারের সদস্যগণের বুযুর্গী ও মর্তবা আল্লাহ তা'য়ালার কাছে কত বেশী তা প্রকাশ করা । নজদী ওহাবীদের প্রতারনামূলক ব্যাখ্যা যে সম্পূর্ন মিথ্যা- তা অন্যান্য হাদীস দ্বারাও প্রমানিত হয় ।
✔️দ্বিতীয় দলিল: ওসিলার বিষয়ে হযরত উসমান বিন হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিখ্যাত হাদীস রয়েছে। হাদীসটি সহীহ হওয়ার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সালাফী আলেমগণও হাদীসটিকে সহীহ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসাই, ইমাম বায়হাকী ও ইমাম তাবরানী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম সহীহ সনদে বর্ননা করেন,,,
عن عثمان بن حنيف أن رجلاً ضرير البصر أتى النبي صلى الله عليه وسلم ، فقال : ادع الله أن يعافيني . فقال صلى الله عليه وسلم : (إن شئت دعوت لك ، وإن شئت أخّرتُ ذاك ، فهو خير لك. [وفي رواية : (وإن شئتَ صبرتَ فهو خير لك)] ، فقال : ادعهُ. فأمره أن يتوضأ ، فيحسن وضوءه ، فيصلي ركعتين ، ويدعو بهذا الدعاء : اللهم إني أسألك ، وأتوجه إليك بنبيك محمد نبي الرحمة ، يا محمد إني توجهتُ بك إلى ربي في حاجتي هذه ، فتقضى لي ، اللهم فشفّعه فيَّ وشفّعني فيه) . قال : ففعل الرجل فبرأ
হযরত ওসমান ইবনে হানীফ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু বলেন, এক অন্ধ সাহাবী নবী করিম ﷺ এর খেদমতে এসে আরজ করলেন - ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুণ যেন তিনি আমার অন্ধত্ব দূর করে দেন । রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বললেন- যদি তুমি চাও, তাহলে আমি দোয়া করবো । আর যদি ইচ্ছা করো, তাহলে সবর করতে পারো । এটা তোমার জন্য মঙ্গলজনক হবে । উক্ত সাহাবী বললেন- বরং আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করুণ । তার অনুরোধে নবী করিম ﷺ তাঁকে উত্তমরূপে ওজু করে এই দোয়া পড়তে শিখিয়ে দিলেন- “হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি এবং তোমার নবী যিনি রহমতের নবী সে নবী মুহাম্মদ ﷺ কে উছিলা করে তোমার দিকে আমি মুতাওয়াজ্জাহ (মনোযোগী) হলাম । হে প্রিয় মুহাম্মদ ﷺ, আমি আমার এই মাকসুদ পূরণের জন্য আপনার মাধ্যমে (উছিলায়) আল্লাহর দিকে মুতাওয়াজ্জাহ হলাম । হে আল্লাহ ! তুমি আমার মাকসুদ পূরণের ব্যাপারে হুজুর ﷺএর সুপারিশ কবুল করো” এই দোয়া করে ঐ সাহাবী চলে গেলেন । বায়হাকীর বর্ননায় আছে উক্ত সাহাবী উঠে দাঁড়াতেই তার চক্ষু ভাল হয়ে গেলো” । (মুসনাদে আহমাদ, খ.৪, ১৩৮ পৃ, তিরমিজী শরীফ, খ.৫, পৃ.৫৬৯, ইবনে মাজা খ.১, পৃ.৪৪১, সহীহ ইবনে খোজাইমা, খ.২, পৃ.২২৫)
🔃 হাদীসের পর্যালোচনা,,,
এই হাদিসের মধ্যে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- অন্ধত্ব দূর করার জন্য সাহাবী একবার আল্লাহকে সম্বোধন করেছেন । আর একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ কে সম্বোধন করেছেন । এইভাবে সম্বোধন করা জায়েজ । হাদীস বিশারদগণ বলেছেনঃ এই হাদীসে নবী করিমﷺ কে উছিলা করে দোয়া করা এবং নবী করিম ﷺ কে সম্বোধন করে ডাক দেওয়ারপ্রমাণ পাওয়া যায় । এই দোয়া এস্তেমাল করেছেন সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, সলফে সালেহীন ও পরবর্তী বুযুর্গানে দ্বীন- তাঁদের মকসুদ পূরণের জন্য।
উক্ত হাদীসে আরও প্রমাণিত হয় যে, নবীজি ﷺ এর জীবদ্দশায় এবং ইন্তিকালের পরবর্তি সময়ে যাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল, সেসব বুযুর্গানে দ্বীন উপরোক্ত আমল করে সকলেই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন । এতে প্রমাণিত হল ﷺ এর ইন্তিকালের পরেও তাঁকে উছিলা ধরা যায় । সত্যি কথা এই রাসুলুল্লাহ ﷺ আগমনের পূর্বেও সকল নবী ও সকল উম্মত তার পবিত্র নামের উছিলা ধরেই বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন ।
উক্ত সহীহ হাদীস থেকে আরো প্রমাণিত যে - ১. রাসূল ﷺ এর কাছে এসে লোকটি দোয়ার আবেদন করেছে। এটি এক ধরণের ওসিলা। ২. রাসূল ﷺ এর ওসিলায় দোয়া করার শিক্ষা দিয়েছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ । ৩. ঐ ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর ওসিলা দিয়ে দুয়া করেছে।
এই তিনটি বিষয় মূল হাদীসের বক্তব্য থেকেই প্রমাণিত। এখানে কারও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সুযোগ নেই। নাসীরুদ্দীন আলবানী সাহেবে তার আত-তাওয়াসসুল কিতাবে বিভিন্নভাবে দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত বিষয়টাকে অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তার আত- তাওয়াসসুল কিতাবে তিনি যেসব হাস্যকর অপব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর সাথে হাদীসের দূরতম সম্পর্ক নেই। এগুলো শুধু কিতাবের কলেবর বৃদ্ধি করেছে। কারণ হাদীসের মূল বক্তব্যে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট ওসিলা রয়েছে।
সত্যকথা হলো, আলবানী বিভিন্ন অপব্যাখ্যা করে শেষে লিখতে বাধ্য হয়েছেন যে, "রাসূল ﷺ এর সস্ত্বার ওসিলায় দোয়া প্রমাণিত হলেও সেটা শুধু রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে খাস। অন্য কারও ক্ষেত্রে নয়"।
অথচ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন অপব্যাখ্যা, যুক্তি ও সন্দেহ ঢুকিয়ে এরপরে এটাকে রাসূল ﷺ এর সাথে খাস করার কী উদ্দেশ্য? আর তিনি বিষয়টিকে রাসূল ﷺ এর সাথে খাস করার দলিল কোথায় পেলেন? আলবানী বা সালেহ আল-মুনাজ্জিদসহ অন্যান্য যারা নিজেদের মতের বিরোধী হওয়ার কারণে হাদীসটি অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে, তাদেরকে আমরা বলবো, সহীহ হাদীসের মূল বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর আপনাদের যুক্তি ও ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই।
✔️তৃতীয় দলিল:
عن سليم بن عامر الخبائري , أن السماء قحطت، فخرج معاوية بن أبي سفيان - رضي الله عنهما - وأهل دمشق يستسقون فلما قعد معاوية على المنبر قال: أين يزيد بن الأسود الجرشي؟، فناداه الناس , فأقبل يتخطى الناس، فأمره معاوية فصعد المنبر فقعد عند رجليه، فقال معاوية: اللهم إنا نستشفع إليك اليوم بخيرنا وأفضلنا، اللهم أنا نستشفع إليك اليوم بيزيد بن الأسود الجرشي , يا يزيد , ارفع يديك إلى الله، فرفع يزيد يديه، ورفع الناس أيديهم، فما كان أوشك أن ثارت سحابة في الغرب، كأنها ترس , وهبت لها ريح، فسقينا , حتى كاد الناس أن لا يبلغوا منازلهم.
অর্থাৎ হযরত সুলাইম ইবনে আমের আল-খাবাইরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকাশে অনাবৃষ্টি দেখা দিলো। হযরত মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ও দামেশকের লোকেরা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে বের হলো। হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন মিম্বরে বসলেন, তিনি বললেন, ইয়াজীদ বিন আসওয়াদ জুরাশী কোথায়? লোকেরা তাঁকে ডাক দিলো। সে লোকদের ভিড় ঠেলে আসতে লাগলো। হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁকে নির্দেশ দিলেন। তিনি মিম্বরে উঠে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পায়ের কাছে বসলেন। হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে আল্লাহ! আমরা আজ আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ও সবোর্ত্তম ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসেবে পেশ করছি, হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে আজ ইয়াজীদ বিন আসওয়াদ জুরাশীকে মাধ্যম বানিয়ে আবেদন করছি। হে ইয়াজীদ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে তুমি তোমার হাত উত্তোলন করো। ইয়াজীদ ইবনে আসওয়াদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন হাত উঠালেন। লোকেরাও তাঁর সাথে হাত উঠালো। কিছুক্ষণের মধ্যে পশ্চিম আকাশে ঢালের মতো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলো। চার দিকে বাতাস বইতে শুরু করল। আমাদের উপর এমন বৃষ্টি হলো যে, লোকেরা তাদের বাড়ীতে যেতে পারছিল না। (ইরওয়াউল গালীল, হাদীস:৬৭২; নাসীরুদ্দীন আলবানী তার আত-তাওয়াসসুল কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)উপরোক্ত হাদীসে দু’প্রকারের ওসিলা প্রমাণিত হয়েছে।
১. হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইয়াজীদ বিন আসওয়াদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সত্ত্বার ওসিলা দিয়ে দোয়া করেছেন।
২. হযরত ইয়াজীদ বিন আসওয়াদকে দোয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
✔️চতুর্থ দলীল: ইন্তিকালের পর কাউকে উছিলা ধরার অসংখ্য প্রমান আছে। যেমন, ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী সহীহ সনদের মাধ্যমে একটি হাদীস বর্ননা করেছেন । হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর মা হযরত ফাতেমা বিনতে আছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা যখন ইন্তিকাল করেন (৩য় হিজরী) তখন নবী করিম ﷺ তাঁর জন্য এভাবে দোয়া করেছেন,,,,
হে আল্লাহ! তুমি আমার মা (চাচী) ফাতেমা বিনতে আছাদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহা কে মাফ করে দাও, তাঁর জন্য তাঁর কবরকে প্রশস্ত করে দাও । তোমার প্রিয় নবী (আমি) ও আমার পূর্ববর্তী সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের উছিলায় আমার চাচীর মাগফিরাত করো । (ইবনে হিব্বান, হাকেম ও তাবরানী)
✔️পঞ্চম দলীল: নবী করিম ﷺ এর ইন্তিকালের পর হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর খেলাফত যুগে জনৈক সাহাবী বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু রাসুলুল্লাহ ﷺ এর রওজা মোবারকে গিয়ে বৃষ্টির জন্য হুজুর ﷺ এর খেদমতে প্রার্থনা করেছিলেন । ইমাম বায়হাকী, ইবনে আবি শায়বা প্রমুখ হাদীস বিশারদগণ সহীহ সনদের মাধ্যমে এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ খানা বর্ননাকরেছেন,,,
মদীনাবাসীগণ একবার হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এর খেলাফত কালে অনাবৃষ্টির কারণে দূর্ভিক্ষে পতিত হন । হযরত বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু নামক জনৈক সাহাবী নবী করিম ﷺ এর রওজা মোবারকে গিয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ! আপনার উম্মতেরা ধবংসের সম্মুখীন হয়েছে । আপনি তাদের জন্য বৃষ্টির জন্য দোয়া করুন । অতঃপর রাত্রে স্বপনে এসে নবী করিম ﷺবেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে বললেন, তুমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুর নিকট গিয়ে আমার সালাম জানিয়ে বলো- তারা বৃষ্টি পাবে । স্বপ্ন দেখে বেলাল ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুকে এ শুভ সংবাদ দিলেন । হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহু এ সংবাদশুনে কেঁদে ফেললেন । মদিনাবাসীগণ রহমতের বৃষ্টি লাভ করলেন । (বায়হাকী ও ইবনে আবি শায়বা।)
🔃 চার ইমামের দৃষ্টিতে ওসিলা:
ক. ইমাম আ’যম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৫০ হি.) তাঁর রচিত বিখ্যাত না’ত ‘কসীদায়ে নু’মান’ এ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসিলা দিয়েছেন। যেমন-
১. يَامَالِكِىْ كُنْ شَافِعِىْ فَاقْنِىْ- اِنِّى فَقِيْرٌ فِى الوَرَى لِغِنَاكَ
২. يَااَكْرَمَ الثَقَلَيْنِ يَاكَنْزَ الوَرَى- جَدِّلِى بِجُوْدِكَ وَاَرْضِنِىْ بِرِضَاكَ
৩. يَاطَامِعَ بِالجُوْدِ مِنْكَ لَمْ يَكُنْ- لِاَبِىْ حَنِيْفَةِ فِى الاَنَامِ سِوَاك-
১. হে আমার মালিক! আমার প্রয়োজনকালে আপনি আমার সুপারিশকারী। সমগ্র পৃথিবীতে আমি আপনার ঐশ্বর্যের (ধনাঢ্যের) সবচেয়ে বড় মুখাপেক্ষী।
২. হে জীন ইনসানের সবচেয়ে সম্মানের আঁধার, হে মানবকুলের ধন-ভাণ্ডার। আমাকে আপনার দানে ধন্য করুন এবং আপনার সন্তুষ্টি দানে ধন্য করুন।
৩. (ওহে প্রিয় রাসূল)! আমি আপনার করুণা ও বদান্যতার প্রত্যাশী। আপনি ছাড়া এ জগতে আবু হানিফা’র আর কেউ নেই। [কাসীদায়ে নূ’মান: পৃ:২০০]
ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এমর্মে আরও বলেন-
হে মহান ইমামগণের ইমাম! আমি অন্তরে ইচ্ছা নিয়ে আপনার সন্তুষ্টি ও আশ্রয় লাভের জন্য আপনার কাছে এসেছি। [কাসীদায়ে নূ’মান: পৃ:২০০]
সুতরাং তাঁর দৃষ্টিতে ওসিলা ওধু জায়েয নয়, বরং এটা মুক্তি ও নাজাত লাভের উত্তম অবলম্বন প্রমাণ করেছেন।
খ. ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত১৭৯ হি.)
কাযী ইমাম আয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত ৫৪৪ হি.) কিতাবুশ্ শিফা বি তারিফী হুকুকিল মোস্তফা ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১ বর্ণনা করেন- এক দিন খলিফা আবু জা’ফর মনসুর মদীনা আগমন করলেন। তিনি ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবদুল্লাহ্! আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা জেয়ারতের সময় ক্বিবলামুখী হয়ে দো‘আ করব, নাকি প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে মুখ করবো? তখন ইমাম এর উত্তর দিলেন-
فَقَالَ وَلَمْ تَصْرِفْ وَجْهَكَ عَنْهُ وَهَوَ وَسِيْلَتُكَ وَوَسِيْلَةِ اِبِيْكَ اَدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامِ اِلَى اللهِ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ بَلْ اَسْتَقْبَلَهُ وَاَسْتَشْفَعَ بِهِ فَيَشْفَعُهُ اللهُ تَعَالى قَال اللهُ ”وَلَوْ اَنْتُمْ اِذْ ظَلَمُوْا اَنْفُسَهُمْ الاية“-
অর্থাৎ অতঃপর তিনি বলেন, হে আমীর! আপনি কেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখ ফিরাবেন, অথচ তিনি আপনাদের জন্য এবং আপনাদের সর্বপ্রথম পূর্বপুরুষ আদম আলায়হিস্ সালাম এরও কিয়ামতের দিন ওসিলা হবে। সুতরাং আপনি রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে মুখ করুন এবং তাঁর মাধ্যমে শাফায়াত কামনা করুন। আল্লাহ্ তাঁর সুপারিশ কবুল করবেন। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- যদি তারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে এর পর তারা আপনার খেদমতে হাজির হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাহলে তারা আল্লাহকে অবশ্যই তাওবা কবুলকারী ও অশেষ দয়ালু হিসেবে পেত। (শিফা শরীফ,২/৪১)
গ. ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ২০৪হি.)
তারীখে বাগদাদ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৩-এ খতিব বাগদাদী বর্ণনা করেন, ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বাগদাদে অবস্থান কালে ইমাম আ’যম ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মাজার জেয়ারত করতেন। আর দো‘আতে তাঁকে ওসিলা বানাতেন। যেমন শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বাণী- যা ফতওয়ায়ে শামীতে বিদ্যমান-
انى لاتبرك بابى حنيفة واجئ الى قبره كل يوم يعنى زرئرًا فاذا عرضت لى حاجة صليت ركعتين وجئت الى قبره وسألت الله تعالى الحالجة عنده فما تبعد عنى حتى تقضى-
অর্থাৎ আমি ইমাম আবু হাফিনা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দ্বারা বরকত লাভ করি এবং প্রত্যহ তার কবর জিয়ারতে আসি। যখন আমি কোন মুশকিলে পড়ি, তখন দু’রাকাত নামায পড়ে তাঁর রাওজা শরীফে আসি এবং তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে হাজত পূরণের জন্য আল্লাহ্র দরবারে দো‘আ করতে থাকি। অতঃপর আমি সেখান থেকে আসতে না আসতেই আমার প্রয়োজন পূরণ হয়ে যেত। (তারিখে বাগদাদ,১/১২৩; ফতোয়ায়ে শামী)
এ ছাড়াও তাঁর (ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) প্রসিদ্ধ রচনা ‘আস্সায়িকাতুল মুহরিকা আলা আহলির রাফ্য়ে ওয়াদ্বদ্বালালে ওয়ায্যানদিকাহতে বর্ণিত আছে-
ال النبى ذريعت وهم الله وسيلتى ارجو بهم اعطى غدًا بيدى اليمين صحيفتى-
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবার পরিজন আল্লাহর দরবারে আমার ওসিলা, আমি প্রত্যাশা করছি যে, তাঁদের ওসিলাতে কিয়ামতের দিন আমার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। (ইবনে হাজর হাইতি, আসসাওয়ায়িকুল মুহরিকা, পৃ: ১৮০)
ঘ. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (ওফাত ২৪১হি.)
হযরত ইউসুফ ইবনে ইসমাঈল নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পৃষ্ঠার ‘‘শাওয়াহিদুল হক ফিল ইস্তেগাছা বে সায়্যিদিল খালাক’’ নামক গ্রন্থে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল কর্তৃক ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে ওসিলা বানানোর বিষয় বর্ণিত আছে।
اِنَّ الامام احمد توسل بالامام الشافعى حتى تعجب ابنه عبد الله بن الامام احمد فقال له ابوه ان الشافعى كالشمس للناس وكالعافيه للبدن-
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ওসিলা নিয়ে দো‘আ করেছেন, এতে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ্ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তখন ইমাম সাহেবে বলেন- ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মানুষের জন্য সূর্য এবং শরীরের জন্য সুস্থতাস্বরূপ। (শাওয়াহিদুল হক ফিল ইস্তেগাছা বে সায়্যিদিল খালাক,পৃ:১৬৬)
আল্লাহ্ তা‘আলার নাম মোবারকের ওসিলা নেওয়া দো‘আর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ পাকের নাম ও গুণাবলীর ওসিলা নেয়ার জন্য পবিত্র ক্বোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-
ولله الاسماءُ الحسنى فادعوه بها-
অর্থাৎ আর আল্লাহ্ তা‘আলার সুন্দর নাম আছে, সুতরাং তোমরা সেগুলোর ওসিলা নিয়ে তাঁকে ডাক।(সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮০)
তিরমিজী শরীফ ও ইবনে মাযাহ্ শরীফে হযরত বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেন-
سَمِعَ النَبِىُّ صلّى الله عليهِ وسَلَّمَ رَجُلًا يَقُوْلُ اللَّهُم اِنِّى اَسْئَلُكَ بَاَنَّكَ اَنْتَ اللهُ الاَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِىِ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّهُ كُفُوًا اَحَدٌ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عليهِ وسلم لَقَدْ سَألَ اللهُ بِاِسْمِهِ الاَعْظَمْ الَّذِىْ اِذا اَسْئِلَ بِهِ اَعْطَى وَاِذَا اَدْعِىَ بِهِ اَجَابَ-
একদিন নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এভাবে বলতে শুনতে পেলেন- হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এ ওসিলা নিয়ে প্রার্থনা করছি যে, আপনি আল্লাহ্, আপনি একক, অমুখাপেক্ষী, যিনি সন্তান জন্ম দেননি, এবং যাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। এ দো‘আ শুনে নবীজী বললেন- এ ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলাকে তাঁর ইসমে আ‘যমের ওসিলা দিয়ে আহ্বান করেছে, যার ওসিলা দিয়ে দো‘আ করলে তিনি দান করেন এবং যার ওসিলা দিয়ে দো‘আ করলে তিনি সাড়া দেন। (ইবনে মাযাহ্ ও তিরমিজী শরীফ)
এভাবে নবীজী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে এজাম ,আওলিয়ায়ে কেরাম, ক্বোরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার, দরূদ শরীফ, সাদকা-খায়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে খোদার কাছে প্রার্থনা করা দোয়া কবুলিয়্যাতের উত্তম পন্থা, যা শুধু জায়েযই নয় বরং উত্তম।
🔃 হে সম্মানিত পাঠকগণ!
শরীয়তে কোন বিষয়কে হারাম, না-জায়েজ, মাকরুহ বা শিরক বলতে হলে অবশ্যই এর পক্ষে দলিল লাগবে। আমরা এখানে রাসূল ﷺ এর শিক্ষা, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মতো খলিফায়ে রাশেদার দোয়া, রাসূল ﷺ এর সম্মানিত চাচা হযরত আব্বাসের রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দোয়া, হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর দোয়া, ইমাম চতুষ্ঠদয়ের দোয়া প্রভৃতি দিনের আলোর মতো সহীহ দলিলের মাধ্যমে প্রমাণ পেশ করেছি। সালাফী ভাইয়েরা যখন এটাকে না-জায়েজ বলবেন, তাদেরকে অবশ্যই এধরণের স্পষ্ট দলিল দিতে হবে যে, যেখানে রাসূল বলেছেন, তোমরা ওসিলা করো না। কেননা ওসিলা শিরক।
হারাম, না-জায়েজ বা শিরকের মাত্র একটা হাদীস বা আয়াত দেখাতে হবে। আপনাদের নিজস্ব গবেষণা, যুক্তি বা ব্যাখ্যা নয়। মনে রাখবেন, শরীয়তের দলিল ছাড়া আপনাদের গবেষণা, যুক্তি আমাদের কিছু বিন্দুমাত্র কোন মূল্য রাখে না। সুতরাং যখন ওসিলাকে না-জায়েজ বলবেন, তখন ওসিলা নাজায়েজ হওয়ার স্পষ্ট দলিল দিবেন, যখন শিরক বলবেন, তখন শিরক হওয়ার স্পষ্ট দলিল দিবেন।।
🔃 হে সম্মানিত সুধী! মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির শুরু থেকেই ওছিলার মাধ্যমে সকল কিছু সম্পন্ন করে আসছেন। অথচ আল্লাহ তায়ালার কথা অমান্য করে কিছু সংখ্যক মানুষ কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে বর্তমান সমাজে অশান্তি করছেন। তাই এদেরকে মহান আল্লাহতায়ালা হেদায়েত দান করুন, আমিন।
লিখক: আরবি প্রভাষজ, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসা
কোন মন্তব্য নেই