ইবাদত সংশ্লিষ্ট সাতটি কবিরা গুনাহ

কুরআন হাদিস পর্যালোচনা করলে ইবাদাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সাতটি কাবীরা গুনাহের সন্ধান পাওয়া যায়, যা আলোচ্য প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয়। যথা- ২:১. পেশাব হতে বেঁচে/সতর্ক না থাকা: স্বাস্থ্যবিধি মতে, সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে ৬ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করা স্বাভাবিক। আর প্রস্রাব করার পর প্রত্যেকবার পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ বারংবার তাগিদ দিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদীস : ৭; ) কেনানা,প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন না করা কবীরা গুনাহের পর্যায়ভুক্ত। যা খ্রিস্টানদের একান্ত বৈশিষ্ট্য এবং  কবরের অধিকাংশ শাস্তি তা থেকে সতর্ক না থাকা। (মুসনাদে আহমাদ, ২৫২, দারাকুতনি, হাদীস : ৪৪৮) প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতার্জন না করার মধ্যে এটিও যে, আপনি প্রস্রাব শেষেই দ্রুত উঠে গেলেন অথচ প্রস্রাবের কয়েক ফোঁটা এখনো থেকে গেছে যা পরবর্তীতে কাপড়কে নাপাক করে দিচ্ছে অথবা প্রস্রাবের পর পানি বা ঢিলা কিছুই ব্যবহার না করা।  এ প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এ দু’ জন কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে তা আপাত দৃষ্টিতে কোন বড় অপরাধের জন্য নয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, বাস্তবে তা সত্যিই বড় অপরাধ অথবা বস্তুত উক্ত দু’টি গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া তাদের জন্য কোন কষ্টকরই ছিলো না। তাদের এক জন নিজ প্রস্রাব থেকে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতো না আর অপর জন মানুষের মাঝে চোগলখুরি করে বেড়াতো। অতঃপর রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছের একটি তাজা ডালকে দু’ভাগ করে প্রত্যেক কবরে একটি করে গেড়ে দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কেন এমন করলেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই যতক্ষণ না ডাল দু’টি শুকাবে ( ডালের তাসবীহ পাঠের বিনিময়ে) তাদের শাস্তি হালকা করে দেয়া হবে । (সহিহ বুখারী, হাদীস :২১৮; সহিহ মুসলিম, হাদীস: ২৯২) ২:২. সালাত পরিত্যাগ করা নামায না পড়া মারাত্মক গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি। নামায ত্যাগকারী ব্যক্তিরাই বস্তুত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আখিরাতে প্রথম বিচার হবে নামাজের। নামায ত্যাগকারী দুনিয়া, কবর ও আখিরাত সর্বত্রই কঠিন অবস্থায় পতিত হবে। কবর তার জন্য সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়বে ও আগুনে ভর্তি থাকবে। আখিরাতে কঠোরভাবে হিসাব গ্রহণ করা হবে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হবেন এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ইরশাদ হচ্ছে, তাদের পরে এলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা নামাজ নষ্ট করল এবং লালসার বশবর্তী হলো। ফলে অচিরেই তারা কু-কর্মের শাস্তি ভোগ করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবাহ করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নেক কাজ করেছে।’ (সুরা মারইয়াম : আয়াত ৫৯-৬০) ইমাম ইবনুল কায়িম জুযি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সালাতের হিফাজত করে না অর্থাৎ সালাত ত্যাগ করে, এর পেছনে থাকে অর্থসম্পদের ব্যস্ততা, রাজত্বের ব্যস্ততা, সরকারি কাজের ব্যস্ততা কিংবা ব্যবসায়-বাণিজ্যের ব্যস্ততা। সুতরাং যে তার অর্থসম্পদ (উপার্জন ও রক্ষায়) ব্যস্ততায় সালাত ত্যাগ করে, সে কারুনের সাথী হবে। যে ব্যক্তি দেশ ও রাজত্ব পরিচালনার ব্যস্ততায় সালাত ত্যাগ করে, সে হবে ফিরাউনের সাথী। যে ব্যক্তি সরকারি কাজের ব্যস্ততায় সালাত ত্যাগ করে, সে হবে হামানের সাথী। আর যে ব্যক্তি ব্যবসায়-বাণিজ্য (এবং চাকরি বাকরির) ব্যস্ততায় সালাত ত্যাগ করে, সে হবে উবাই ইবনে খালফের সাথী। ইসলামী রাষ্ট্রে নামাজ না পড়ার শাস্তি প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেন, ‘তারা তওবা না করলে জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা হবে যতক্ষণ না তওবা করে বা মৃত্যু হয়। অন্যান্য ইমামরা (ইমাম মালেক রহ:, ইমাম হাম্বলি রহ: ও ইমাম শাফেয়ি রহ:) বেনামাজিকে মুরতাদ হিসেবে ঘোষণা করে তাদের তওবা করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। ফিরে না এলে তাদেরকে হত্যা করা হবে।’ ২:৩. সালাতে ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা: জামাতে নামায পড়ার সময় মুকতাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা জরুরি। নামাযের প্রত্যেক রুকনেই মুকতাদির জন্য ইমামের  অনুসরণ করা ওয়াজিব। ইমামের আগে বেড়ে কোন কাজ করা হারাম। কেননা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَمَا يَخْشَى الَّذِي يَرْفَعُ رَأْسَهُ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يُحَوِّلَ اللَّهُ رَأْسَهُ رَأْسَ حِمَارٍ “যে ব্যক্তি ইমামের পূর্বে মাথা উঠায় সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ্‌ তার মাথাটি গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দিবেন না? অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে পরিবর্তন করে দিবেন না?” (বুখারি, হাদিস : ৬৯১; রদ্দুল মুহতার : ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক : ২/৭৭) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا كَبَّرَ فَكَبِّرُوا وَلَا تُكَبِّرُوا حَتَّى يُكَبِّرَ وَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَلَا تَرْكَعُوا حَتَّى يَرْكَعَ “অনুসরণ করার জন্য ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি তাকবীর দেয়ার পর তোমরা তাকবীর দিবে, তিনি তাকবীর দিয়ে শেষ না করলে তোমরা তাকবীর দিবে না। তিনি রুকূ করলে তোমরা রুকূ করবে। তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।”(সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৪১২) উল্লেখ্য যে, ইমামের সাথে মুক্তাদীর চারটি অবস্থা রয়েছেঃ ১) ইমামের আগে বেড়ে কোন কিছু করা। ২) ইমামের সাথে সাথে করা। ৩) ইমামের অনুসরণ করা। ৪) ইমামের পিছনে পিছনে করা। ইমামের আগ বেড়ে কোন কিছু করাঃ অর্থাৎ ইমাম শুরু করার আগেই তা করে নেয়া। এরূপ করা হারাম। একাজ যদি তাকবীরে তাহরীমার ক্ষেত্রে হয় তবে তার নামাযই হবে না। নামায পুনরায় ফিরিয়ে পড়া ওয়াজিব। ইমামের সাথে সাথে করাঃ অর্থাৎ ইমামের রুকূর সাথে রুকূ করা, সিজদা করার সাথে সাথে সিজদা করা, উঠে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ানো। প্রকাশ্য দলীল সমূহ অনুযায়ী এরূপ করাও হারাম। তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিনি রুকূতে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রুকূ করবে না।” কোন কোন বিদ্বান বলেছেন এটা হারাম নয়; বরং মাকরূহ। তবে এটা যদি তাকবীরে তাহরীমার সময় হয়, তবে তার নামাযই হবে না। পুনরায় নামায পড়া তার উপর ওয়াজিব। ইমামের অনুসরণ করাঃ অর্থাৎ ইমামের পর পর দেরী না করে তার অনুসরণ করা। এটাই হচ্ছে সুন্নাতী পদ্ধতি। ইমামের পিছনে পিছনে করাঃ অর্থাৎ অতিরিক্ত দেরী করে ইমামের অনুসরণ করা। ইহা সুন্নাত বহির্ভূত। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৯৫; আলবাহরুর রায়েক : ২/৭৭) ২:৩. সালাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা সুতরা বলে কোনো কিছুর আড়ালকে। কোনো বড় মসজিদে নামাজে দাঁড়ালে সামনে একটি বস্তু (দেয়াল, পিলার, লাঠি ইত্যাদি) রাখা জরুরি। যার ফলে নামাজ অবস্থায় সামনে দিয়ে লোকজন চলাফেরা করতে না পারে। সুতরা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুতরা ছাড়া নামাজ পড় না। ’ -আবু দাউদ এখন প্রশ্ন হলো নামাজী ব্যক্তি সুতরা কোথায় রাখবে এবং সুতরা কিসের হবে? এর উত্তরে বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, সুতরা হতে হবে মাটি থেকে অল্প উঁচু কোনো বস্তু এবং তা রাখতে হবে সিজদার জায়গার অল্প সামনে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে অনেক ধরনের সুতরার কথা প্রমাণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদের খুঁটিকে, ফাঁকা ময়দানে বর্শা গেড়ে, নিজের সওয়ারি উটকে আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে সুতরা বানাতেন। এছাড়াও রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময় উটের পিঠে বসার জিনপোশ (গদি), গাছ ও শোয়ার খাটকে সামনে রেখেও নামাজ পড়েছেন। কেউ যদি নামাজীর বরাবর সামনে থাকে, তাহলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সুযোগ আছে। এটা নামাজের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে বিনা প্রয়োজনে এমন করা ঠিক নয়। সুতরা বিষয়ে কয়েকটি মাসলা হলো— ১. ইমামের সামনে সুতরা থাকলে মুক্তাদিদের জন্য পৃথক সুতরার দরকার নেই। তবে কোনো ইমাম যদি সুতরা না দেন, তাহলে মুক্তাদির সুতরা দিতে হবে। ২. সুতরা মাটি থেকে অল্প উঁচুতে হতে হবে। কিছু না পেলে দাগ কেটে দেয়ার প্রচলন আছে, এটা ঠিক নয়। ৩. জায়নামাজের শেষ প্রান্তকে সুতরা বলে গণ্য করা যাবে না। ৪. সুতরার সোজাসুজি না দাঁড়িয়ে একটু ডানে-বামে দাঁড়ানোর কথা বলা হয় এটাও ঠিক নয়। ৫. বিনা সুতরায় নামাজ পড়লে কেউ সামনে দিয়ে গেলে নামাজ নষ্ট হয় না। কিন্তু নামাজের ক্ষতি হয়। মানুষ চলাফেরা করতে পারে, এমন স্থানে সুতরা না রেখে নামাজ পড়া গুনাহের কাজ। ৬. যে মসজিদের প্রশস্ততা ৪০ হাতের বেশি, এমন মসজিদে নামাজরত ব্যক্তির দুই কাতার সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয। অর্থাৎ নামাজীর কাতারসহ মোট তিন কাতার দূরত্ব দিয়ে যাওয়া যাবে। এর চেয়ে ছোট মসজিদে মুসল্লির সামনে দিয়ে সুতরা ছাড়া অতিক্রম করা যাবে না। ২:৪. যাকাত প্রদান না করা : যাকাত অনাদায়ের সাজার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, «مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ - يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ - ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ» অর্থাৎ “যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এ যাকাত আদায় করে নি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া হবে, সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্ব কামড় দিয়ে বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪০৩] তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন। ইরশাদ হচ্ছে, ﴿وَلَا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرٗا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّٞ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ [ال عمران: ١٨٠] অর্থাৎ ঁ“আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০] আর যারা যাকাত আদায়ে উদাসীনতা দেখায় তাদের বিষয়ে কুরআনুল করীমে কঠিন হুশিয়ারী এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে, وَٱلَّذِينَ يَكۡنِزُونَ ٱلذَّهَبَ وَٱلۡفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَبَشِّرۡهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٖ ٣٤ يَوۡمَ يُحۡمَىٰ عَلَيۡهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكۡوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمۡ وَجُنُوبُهُمۡ وَظُهُورُهُمۡۖ هَٰذَا مَا كَنَزۡتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمۡ تَكۡنِزُونَ- [التوبة: ٣٤، ٣٥] অর্থাৎ “আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’’। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬;সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৮৭] প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يَمُوتُ رَجُلٌ فَيَدَعُ إِبِلًا أَوْ بَقَرًا لَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهَا إِلَّا جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْظَمَ مَا كَانَتْ وَأَسْمَنَهُ تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَنْطَحُهُ بِقُرُونِهَا كُلَّمَا نَفِدَتْ أُخْرَاهَا أُعِيدَتْ أُولَاهَا حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, যে ব্যক্তি উট, গরুর যাকাত প্ৰদান না করে মারা যায় কিয়ামতের দিন সেগুলোকে পূর্বাপেক্ষা বিরাট এবং বলিষ্ঠাকারে তার সামনে আনা হবে; সেগুলো তাকে ক্ষুর দ্বারা পদদলিত করতে থাকবে এবং শিং দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। যখন দ্বিতীয়টা ফিরে যাবে প্রথমটা ফিরে আসবে। এরূপ চলতে থাকবে লোকজনের মাঝে বিচার কার্য নিম্পন্ন না পর্যন্ত । (সুনান নাসায়ী,হাদীস: ২৪৪২) ২:৫. সিয়াম পরিত্যাগ করা: ইসলাম অনুমোদিত অপারগতা ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক কোনো মুসলমানের এই বিধান পরিত্যাগ করার অনুমতি নেই। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ রোজা ভঙ্গ করলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে বড় পাপী এবং পরকালে তার জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, بينما أنا نائم أتاني رجلان فأخذا بضبعي فأتيابي جبلا وعرا فقالا : اصعد؛ فقلت : إني لا أطيقه. فقالا: سنسهله لك، فصعدت حتى إذا كنت في سواء الجبل إذا بأصوات شديدة، قلت : ما هذه الأصوات؟ قالوا هذا عواء أهل النار، ثم انطلق بي، فإذا أنا بقوم معلقين بعراقيبهم، مشققة اشداقهم، تسيل اشداقهم دما. قال : قلت : من هؤلاء : قال : الذين يفطرون قبل تحلة صومهم. رواه الحاكم فى المستدرك وقال : صحيح على شرط مسلم، ووافقه الذهبي، وذكره الهيثمى فى المجمع (240)، وقال : رجاله رجال الصحيح অর্থাৎ আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমার কাছে দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের ওপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দেব। আমি ওপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছলাম, হঠাৎ ভয়ংকর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এসব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামিদের আর্তনাদ।তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদের পায়ের মাংস পেশি দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোজা ভেঙে ফেলে।’ (সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৭৪৪৮; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস : ৩২৮৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস-১৬০৯; তবারানী, হাদীস : ৭৬৬৬) রমযান মাসের একদিন রোযা না রাখলে মানুষ শুধু গুনাহগারই হয় না, ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখলেও রমযানের এক রোযার যে মর্যাদা ও কল্যাণ, যে অনন্ত রহমত ও খায়ের-বরকত তা কখনো লাভ করতে পারবে না এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, من افطر يوما من رمضان متعمدا من غير سفر ولا مرض لم يقضه ابدا، وان صام الدهر كله، ... وقد ذكره البخاري تعليقا بصيغة الجزم حيث قال : وبه قال ابن مسعود، وقال الشيخ محمد عوامه : وهذا الحديث موقوف لفظا ومرفوع حكما 'যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না।' (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৭৬; সহীহ বুখারী ৪/১৬০) ২:৬. হাজ্জ পরিত্যাগ করা: সামর্থ্যবানদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ ইবাদত। সামর্থ্য থাকার পরও ইচ্ছাকৃত যারা হজ করে না; এটি তাদের জন্য কবিরা গুনাহ। কেননা, রব্বে করিম ইরশাদ করেন, وَلِلّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلاً وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ الله غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ‘ অর্থাৎ আর এ ঘরের হজ করা সে সব মানুষের জন্য অবশ্যক কর্তব্য; যারা সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য রাখে । যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক- আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সূরা আলে ইমরান,আয়াত: ৯৭) ফরজ হজ্ব অনাদায়ীর করুণ পরিণতি বর্ণনা করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার (খরচ বহনের) মতো সম্বল (ধন-সম্পদ) ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হজ না করে তবে সে ইহুদি হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহর) কোনো ভাবনা নেই।’ ( (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮১২)) ২:৭. আল্লাহকে স্মরণ না করা: মুমিন মাত্রই আল্লাহর স্মরণে সদা মগ্ন থাকবে। এটাই মহান রবের নির্দেশ। ইরশাদ হচ্ছে, وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَهۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ অর্থাৎ ‘আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।’ (সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫) কেননা,মহান আল্লাহর যিকর থেকে বিমুখ হওয়া মারাত্মক অপরাধ। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ অর্থাৎ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসিন না করে, যারা উদাসীন হবে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন,আয়াত :৯) সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ২০৫ মুসনাদ আহমাদ : ৯৫৮০, জামি‘ আত্ তিরমিযী : ৩৩৮০] ৫. যাদু: যাদু শিক্ষা দেয়া বা শিক্ষা নেয়া শুধু কবীরা গুনাহ্ই নয়। বরং তা শির্ক এবং কুফর ও বটে। ইরশাদ হচ্ছে,  إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ অর্থাৎ আমরা পরীক্ষাস্বরূপ মাত্র,অতএব তোমরা (যাদু শিখে) কুফরী করো না। (সূরা বাকারা,আয়াত : ১০২) বস্তুত এটি শয়তানের অপকর্ম। ইরশাদ হচ্ছে, وَ لٰکِنَّ الشَّیٰطِیۡنَ کَفَرُوۡا یُعَلِّمُوۡنَ النَّاسَ السِّحۡرَ  অর্থাৎ বরং শয়তানরা কুফরী করেছে,তারা মানুষকে যাদু শেখায়। (সূরা বাকারা,আয়াত : ১০২) যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে, কারো ব্যাপারে তা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করা। এ ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। জুনদুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: حَدُّ السَّاْحِرِ ضَرْبَةٌ بِالسَّيْفِ. ‘‘যাদুকরের শাস্তি হচ্ছে তলোয়ারের কোপ তথা শিরশ্ছেদ’’। (তিরমিযী ১৪৬০) জুনদুব (রাঃ) শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি। বরং তিনি তা বাস্তবে কার্যকরী করেও দেখিয়েছেন। আবূ ’উসমান নাহ্দী (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: كَانَ عِنْدَ الْوَلِيْدِ رَجُلٌ يَلْعَبُ، فَذَبَحَ إِنْسَانًا وَأَبَانَ رَأْسَهُ، فَعَجِبْنَا فَأَعَادَ رَأْسَهُ، فَجَاءَ جُنْدُبٌ الْأَزْدِيْ فَقَتَلَهُ. ‘‘ইরাকে ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববার সম্মুখে জনৈক ব্যক্তি খেলা দেখাচ্ছিলো। সে জনৈক ব্যক্তির মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এতে আমরা খুব বিস্মিত হলে লোকটি কর্তিত মাথা খানি যথাস্থানে ফিরিয়ে দেয়। ইতিমধ্যে জুনদুব (রাঃ) এসে তাকে হত্যা করেন’’। (বুখারী/আত্তা’রীখুল্ কাবীর : ২/২২২ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬) তেমনিভাবে উম্মুল্ মু’মিনীন ’হাফ্সা (রাঃ) ও নিজ ক্রীতদাসীকে জাদুকরী প্রমাণিত হওয়ার পর হত্যা করেন। (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৮৭৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৬) অনুরূপভাবে ’উমর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে সকল যাদুকর পুরুষ ও মহিলাকে হত্যা করার আদেশ জারি করেন।(আবূ দাউদ ৩০৪৩ বায়হাকী : ৮/১৩৬ ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৯৮২, ৩২৬৫২ আব্দুর রায্যাক, হাদীস ৯৯৭২; আহমাদ ১৬৫৭; আবূ ইয়া’লা ৮৬০, ৮৬১) ৬.মানব হত্যা : অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করাও কবীরা গুনাহ্। তবে উক্ত হত্যা আরো ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হয় যখন তা এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হয় যাকে বাঁচানো সবার নৈতিক দায়িত্ব এবং যাকে হত্যা করা একেবারেই অমানবিক। যেমন: নিষ্পাপ শিশু, নিজ মাতা-পিতা, নবী-রাসূল, ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী রাষ্ট্রপতি অথবা উপদেশদাতা আলিমকে হত্যা করা। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, وَيَقْتُلُوْنَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ، أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ حَبِطَتْ أَعْمَالُـهُمْ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَا لَـهُمْ مِّنْ نَّاصِرِيْنَ» অর্থাৎ ‘‘যারা ন্যায় ও ইনসাফের আদেশ করে তাদেরকেও তারা হত্যা করে। (হে নবী) আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। এদেরই আমলসমূহ ইহকাল ও পরকালে নষ্ট হয়ে যাবে এবং এদেরই জন্য তখন আর কেউ সাহায্যকারী হবে না’’। (আলে ’ইমরা’ন,আয়াত : ২১-২২) হত্যাকারীর ভয়াবহ পরিণতি বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনুল করিমে ইরশাদ হচ্ছে, «وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا» অর্থাৎ ‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। তার মধ্যে সে সদা সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি ক্রদ্ধ হবেন ও তাকে অভিশাপ দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন ভীষণ শাস্তি’’। (সূরা নিসা,আয়াত : ৯৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: لَنْ يَزَالَ الْـمُؤْمِنُ فِيْ فُسْحَةٍ مِّنْ دِيْنِهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَمًا حَرَامًا. ‘‘মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করে’’। (সহিহ বুখারী,হাদীস: ৬৮৬২) ৭.ভবিষ্যদ্বক্তা ও জ্যোতিষির কথা বিশ্বাস করা : আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ফেরেশতামণ্ডলি মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করেন এবং আকাশের ফায়সালাসমূহ আলোচনা করেন।  তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শোনেও ফেলে।  অতঃপর তারা সেটা গণকের নিকট পৌঁছে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরো সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে।  (সহিহ বুখারি : ৩২১০) আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কতকগুলো লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ কিছুই নয়। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ওরা কখনও কখনও আমাদের এমন কথা শোনায়, যা সত্য হয়ে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কথা সত্য। জিনেরা তা ছোঁ মেরে নেয়। পরে তাদের বন্ধু (গণক) এর কানে ঢেলে দেয়। তারা এর সঙ্গে সত্য মিথ্যা মিলায়। (সহিহ বুখারি : ৫৭৬২)