বর্ষ বরণ ও আমাদের করণীয়

আনন্দ—উৎসব ধর্মীয় কৃষ্টি কালচারেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا هُمۡ نَاسِکُوۡهُ অর্থাৎ ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ অমুসলিম, কাফির কিংবা মুশরিকদের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন, এদিনে তারা নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। এমনকি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বহুলোক তাদের পবিত্র বড়দিনেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে মদ্যপ হয়ে ওঠে, এবং পশ্চিমা বিশ্বে এই রাত্রিতে কিছু লোক নিহত হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর কারণে। পক্ষান্তরে মুসলিমদের উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বস্তুত ইসলাম কেবল কিছু আচার—অনুষ্ঠানের সমষ্টি নয়, বরং তা মানুষের গোটা জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। তাই একজন মুসলিমের জন্য জীবনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইবাদত, ইরশাদ হচ্ছে: وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ অর্থাৎ ‘আমি জ্বিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোন কারণে সৃষ্টি করিনি।’ তাই মুসলিম জীবনের আনন্দ—উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং তা নিহিত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন করতে পারার মাঝে, কেননা মুসলিমের ভোগবিলাসের স্থান ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী নয়, বরং চিরস্থায়ী জান্নাত। আর মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজের রন্ধে্র রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা । আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশে সচল রয়েছে তিনটি বর্ষপঞ্জি— হিজরি বর্ষ, বাংলা বর্ষ ও ঈসায়ী তথা ইংরেজি বর্ষ। দুর্ভাগ্যবশত আমরা ইংরেজি বর্ষের আগ্রাসনের শিকার। বাংলা বর্ষে দিনাতিপাত না করলেও নববর্ষ উদযাপন করছি নিয়মিত। মুসলিম জাতির আসল বর্ষ হিজরি বর্ষ। যা সম্পর্কে আমরা সর্বদা বেখবর। অথচ মুসলিম হিসেবে হিজরি বর্ষ নৈমিত্তিক করা জরুরি ছিল। আমরা বিশ্বায়নের কাছে সব হারাতে হারাতে নিজেদের বর্ষপঞ্জিও হারিয়ে ফেলেছি। যার শানদারগাথা দিয়ে সূচিত হয়েছিল মুসলমানিত্বের গৌরব ও সৌরভ। ইংরেজী সনের ইতিকথা: খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে ‘মায়া সভ্যতা' নামে এক উচ্চমান সভ্যতা ছিল, যাদের ছিল সংখ্যা তাত্ত্বিক জ্ঞান, গ্রহ—নক্ষত্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে অসাধারণ দক্ষতা। তারাই প্রথম আবিষ্কার করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন। আর নিজেদের গণনার সুবিধার্থে সর্বপ্রথম রোমানরাই ক্যালেন্ডার তৈরী করে। তাতে বছরের প্রথম মাস ছিল মারটিয়াস। যা বর্তমানের মার্চ মাস। যা তাদের যুদ্ধ দেবতার নামানুসারে নামকরণ করা হয়। অতঃপর খৃষ্টপূর্ব ১ম শতকে জুলিয়াস সিজার কয়েক দফা পরিবর্তন ঘটান উক্ত ক্যালেন্ডারে। তৎকালীন প্রখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় তিনিই প্রথম ক্যালেন্ডারে মায়াদের আবিষ্কৃত ৩৬৫ দিন ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার উদ্ভাবিত ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ বাজারে প্রচলিত থাকে। অতঃপর ১৫৭৭ সালে খৃষ্টধর্মের ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরী জুলিয়াস প্রবর্তিত উক্ত ক্যালেন্ডারটিতে কিছু পরিবর্তন আনেন। পরিশেষে ১৫৮২ সালে আরেক দফা সংষ্কার করে বর্তমান কাঠামোতে দাঁড় করান। যার নতুন বর্ষের শুরু হয় গ্রীকদের আত্মরক্ষার দেবতা ‘জানুস’—এর নামানুসারে জানুয়ারী দিয়ে। আর এটি ‘গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে বিদ্যান সমাজে পরিচিত। ইংরেজী সনের সাথে বাংলা সনের সমন্বয় : ইংরেজী সনের মত বাংলা ক্যালেন্ডারেও ৩৬৫ দিনে বছর। জোতির্বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড প্রায় ৬ ঘণ্টা। চার বছর পর এই ৬ ঘণ্টা ১ দিনে পরিণত হয়ে ৩৬৬ দিন হয়ে যায়। ইংরেজী ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাস ৩১ দিনে (৭দ্ধ৩১=২১৭), ৪ মাস ৩০ দিনে (৪দ্ধ৩০=১২০), ফেব্রুয়ারী মাস ২৮ দিনে সর্বমোট (২১৭+১২০+২৮)= ৩৬৫ দিন। চার বছর পর ফেব্রুয়ারী মাস ২৯ দিনে হয়। যে বছর ফেব্রুয়ারী মাস ২৯ দিনে হয় সে বছরের দিন সংখ্যা হয় ৩৬৬ এবং বছরটির নাম খবধঢ়ুবধৎ। ২৯ ফেব্রুয়ারীর দিনটির নাম খবধঢ় ফধু। যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। বাংলা সালের সাথে খৃষ্টাব্দের মিল করতে ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহকে প্রধান করে বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটি ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬ সালে বাংলা সালের নিম্নোক্ত ক্রমে সংস্কার করেন— ১. বছরের প্রথম পাঁচ মাস (বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র) গণনা হবে ৩১ দিনে। ২. পরের সাত মাস (আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র) গণনা হবে ৩০ দিনে। ৩. ইংরেজী লিপ ইয়ারে বাংলা ফাল্গুনের সাথে ১ যোগ হয়ে ৩১ দিনে হবে। উক্ত সংস্কারের ফলে এখন প্রতি ইংরেজী বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হয়। যদিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা এ সংস্কার গ্রহণ করেনি। ফলে বাংলা সন হলেও তাদের সাথে বর্ষপঞ্জিকার তারিখে আমাদের মিল নেই। ভারত উপমহাদেশে বর্ষবরণ: ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষবরণ হয় বছরে দুইবার। প্রথমত, পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ইংরেজী নববর্ষ উদযাপন। ইংরেজী নববর্ষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে পালিত হয়। আমেরিকাতে হয় সবচেয়ে বড় নিউইয়ার পার্টি— যাতে ৩০ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে। অষ্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রায় ১৫ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ৮০ হাযারের মত আতশবাজি ফুটানো হয়। মেক্সিকোতে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২—টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ১২—টা ঘণ্টা ধ্বনি বাজানো হয়। প্রতি ঘণ্টা ধ্বনিতে ১টি করে আঙ্গুর খাওয়া হয়, আর মনে করা হয়, যে উদ্দেশ্যে আঙ্গুর খাওয়া হবে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে। ডেনমার্কে আবার কেমন লঙ্কাকান্ড! ডেনিশরা প্রতিবেশীর দরজায় কাঁচের জিনিসপত্র ছুড়তে থাকে। যার দরজায় যতবেশী কাঁচ জমা হবে, নতুন বছর তার তত ভাল যাবে। আর কোরিয়ানরা যৌবন হারানোর ভয়ে রাতে ঘুম থেকে বিরত থাকে। তাদের বিশ্বাস বছর শুরুর সময় ঘুমালে চোখের ভ্রু সাদা হয়ে যায়। বাংলাদেশে রাত বারটা বাজার সাথে সাথে আতশবাজি, নাচ—গান, হৈ—হুল্লোড়, উন্মত্ততা শুরু হয়। নতুন পোশাক, ভাল খাবার, বিভিন্ন স্পটে ঘুরতে যাওয়া, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদির মধ্যদিয়ে পালিত হয় ইংরেজী নববর্ষ। দ্বিতীয়ত, বাঙ্গালী মিশ্র সংস্কৃতিতে বৈশাখ উদযাপন। যার চিত্রও ভয়াবহ। পহেলা বৈশাখ শুরু হয় ভোরে। সূর্যোদয়ের পর পর। মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় ৩১ চৈত্র; চৈত্র সংক্রান্তির মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে চৈত্রকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পিরা বিশ্বকবির বৈশাখী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...’ গেয়ে সূর্যবরণের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। বের হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। যার প্রতীক হল চারুকলার ম্যাসব্যাপী পরিশ্রমে বানানো ঘোড়া, হাতি, ময়ূর, পেঁচা, পুতুল, পাখি, মূর্তি, বিভিন্ন মুখোশ প্রভৃতি। বস্তুত এতে রয়েছে হিন্দু কালচারের সফল বিচরণ। সুধী! রাতের গুরুত্বপূর্ণ যে সময়টিকে ইংরেজি বর্ষ উদযাপনের নামে বাংলার তরুণ প্রজন্ম টগবগে যৌবনের লাগামছাড়া নেশা মেটানোর সময় হিসাবে বেছে নিয়েছে সে সময়টিতে মহান আল্লাহ সাফল্যের সুবর্ণ মুহুর্ত ঘোষণা করেছেন। সপ্তআকাশে তাঁর কুদরত প্রকাশ করে অসুস্থ, ক্ষমাপ্রার্থীসহ সকল প্রার্থনাকারীর চাহিদা পূরণ করেন। মহান ¯্রষ্টার আহবানকে উপেক্ষা করে যারা শয়তানের আহবানে রাত জাগে, তাদের পরিণাম আল্লাহর কাছে কি—ই বা হবে? ইরশাদ হচ্ছে— إِنَّ فِى اللَّيْلِ لَسَاعَةً لاَ يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللهَ خَيْرًا مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ. অর্থাৎ ‘রাতের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যদি কোন মানুষ সে সময় লাভ করতে পারে, তবে আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের কোন কল্যাণ চাইলে আল্লাহ তাকে দান করেন। আর এ সময়টি প্রতি রাতেই রয়েছে। অপরদিকে বাংলা নববর্ষে সূর্যোদয়ের সময়টিকে কল্যাণের জননী হিসাবে বেছে নিয়ে সূর্যকে আহবান করা হয়। বস্তুত কোন সময়কে অশুভ বা শুভ মনে করা হিন্দু সংস্কৃতির অংশ, যা প্রকৃত মুসলমানের কাজ নয়। এরূপ শুভাশুভ নির্ণয় ও তাতে বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, الطِّيَرَةُ شِرْكٌ অর্থাৎ ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’। আধুনিকতার নামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যুবক—যুবতীদের অবিমিশ্রণ জাহেলিয়াতকেও হার মানায়। নগ্নতার এই অপসংস্কৃতি দেশকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছে নিম্ন সংস্কৃতিতে। নতুন প্রজন্মের জন্য চরিত্রবান মায়ের সংকট তৈরী করছে তারা। আঁটসাঁট, অশালীন, অমার্জিত পোষাক পরিধানকারী দুর্বলচিত্ত, মাথার চুল উপরে তুলে বাধা নারীদের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামী রয়েছে, যাদের আমি এখনও দেখিনি। এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরু পরিচালনা করার লাঠি থাকবে। তা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর নগ্ন পোষাক পরিধানকারী নারী, যারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ উহার সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়’। জীবনের দীর্ঘ একটি বৎসরের ইতি ও নতুন বছরের সূচনালগ্ন —একজন মুমিন হিসেবে নিজেকে বিকশিত করার সময় সমাগত। এ হিসাব করার সময় এসেছে যে, যাপিত জীবনে আমাদের জীবনযাপন, চিন্তা লালন ও কর্ম পালন কতটুকু ইসলামসম্মত হয়েছে? ইসলামের অতি আবশ্যকীয় ও করণীয় ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা আমরা যথাযথ পালন করেছি কি? ইসলামে নিষিদ্ধ কর্মযজ্ঞে আমাদের বেখেয়াল বা অসচেতন সম্পৃক্ততা ছিল কি না? ইমানদারের নববর্ষ পরিকল্পনা হবে ইসলামী ভাবধারায়। তার নিকট—অতীতের সময়পঞ্জির অবস্থা ও অবস্থান পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করতে হবে। অন্যথায় নববর্ষ সর্বাঙ্গীণ রঙিন করা যাবে না। ধুলা—বালির আস্তরণে শুভা রং ঝিলিমিলি করে না, কদর্য বাড়ায়। একজন মুমিন তাঁর নতুন বছরকে ইসলামিয়াত দিয়ে সাজসজ্জা করবেন—এটা স্বাভাবিক, এটাই কাঙ্ক্ষিত। ঈমানের চাহিদায় নিজেদের উপযোগী ও প্রস্তুত করার এটা মোক্ষম সময়। আল্লাহ জীবন—মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে বেশী সুন্দর আমল করতে পারে ? আসুন, আমরা আমলনামা সমৃদ্ধকরণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হই। যে উৎসব পৌত্তলিক—খৃষ্টান সমাজ গ্রহণ করেছে তাকে কেন আমরা বর্জন করছি না? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ করল, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল’। প্রিয় অভিভাবক! আপনার স্নেহের সন্তানকে যে বয়সে আপনি রশি ছেড়ে রেখেছেন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পালন করতে, সে বয়সে মুস‘আব বিন উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু গিয়েছেন ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হতে। তরুণ—তরুণী ভাইবোন! নিজেকে অবমূল্যায়ন করো না। তোমার মত যুবক মুহাম্মদ বিন কাশিমের হাতে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছে। তোমার মত তরুণীরা কত পুরুষকে দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে সাহস জুগিয়েছে। পরিশেষে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠানে নিম্নোলিখিত চারটি শ্রেণীর ইসলাম বিরোধী বিষয়াবলী থাকায় বর্জনীয়। ১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত ২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান ৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান ৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক ও বাজে কথা এবং কাজ এ অবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই প্রথা উচ্ছেদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া যেতে পারে: ক.এ বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের দ্বারা নববর্ষের যাবতীয় অনুষ্ঠানে উপরোক্ত বিষয়াবলী সংশোধন করে শরিয়ত সম্মত পরিবেশে আয়োজনের ব্যবস্থা করা। খ.যেসব ব্যক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা। গ.মসজিদের ইমামগণ এ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন ও বিরত থাকার উপদেশ দেবেন। ঘ.পরিবারের প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র, কন্যা, স্ত্রী কিংবা অধীনস্থ অন্য কেউ যেন এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক দান করুন। ইরশাদ হচ্ছে - وَسَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَجَنَّۃٍ عَرۡضُہَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُ ۙ  اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ অর্থাৎ “এবং তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার পরিধি আসমান ও জমীনব্যাপী, যা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।” [সূরা আলে-ইমরান:১৩৩]