বাংলার দৃষ্টিনন্দন তাজমহল মসজিদ
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
দিল্লির তাজমহলের স্থাপত্যশৈলীতে মুগ্ধ মুসলিম-অমুসলিম সবাই। তাই বিভিন্ন দেশে আগ্রার তাজমহলের আদলে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। এর ব্যতিক্রম ঘটে নি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। মিরসরাই উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরনো মহাসড়কের জোরারগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে এই মসজিদের অবস্থান; যাকে স্থানীয় লোকজন একনামে তাজমহল মসজিদ নামে চেনে। পুরো এক একর জমির ওপর একটি মসজিদ, দুটি একাডেমিক ভবন, মসজিদের দুই পাশে দুটি পুকুর। এতে রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট। মধ্যখানে রয়েছে সবুজ ঘাসের বেষ্টনী আর ফ্লোর করা বিশাল মাঠ।
বাহির থেকে দেখতে অনেকটা ভারতের আগ্রার তাজমহলের মত। দবদবে সাদা রঙে আবৃত মসজিদটি এক নজর দেখার জন্য অনেকে ছুটে আসেন। অনেকে আবার খালি মসজিদ এবং মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে স্মৃতির পাতায় রেখে দিয়েছেন।
কার্পেটিং করা সড়ক ঘেষে চার দেয়ালের সীমানা প্রাচীরের মধ্যখানে এমন একটি মসজিদ দেখার অনুভূতি অনেকেরই জাগতে পারে। শুধূ কি তাই! মসজিদের সামনে সুবজ বেষ্টনী আর ফ্লোর করা বিশাল মাঠ। দু’পাশে দু’টি পুকুর।
পুকুরে সানবাঁধানো ঘাট, পুকুর ধারে ঘাটের পাশে কাঠ বাদাম গাছের মেঘের মত ছায়া। আহা! এখানে বসে পড়ন্ত বিকেলে কি মধূর সময় কাটানো যায়! যা স্বচোখে না দেখলে বোঝাই যাবে না। এমন সুন্দর নৈসর্গিক একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন যে ব্যক্তি বিশ্বাস করা যায় তিনি খুব সুন্দর একটা মনের মানুষ।
মানুষের মনের সৌন্দর্য যদি হয় তার বাহ্যিক শৈল্পিক কর্মে। তাহলে বলা যায় এই তাজমহল মসজিদের প্রতিষ্ঠাতার মনের সৌন্দর্য কতটুকু ছিল। কত বড় মনের মানুষ আর দানবীর হলে তিনি এমন একটি সৌন্দর্যের নিদর্শনে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন।
শুধু তাই নয়, মসজিদকে ঘিরে দু’পাশে সুবিশাল দু’টি একাডেমিক ভবনও নির্মাণ করেছেন। এতদ অঞ্চলের মানুষের মাঝে নিরক্ষরতার গ্লানি মুছে দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এখানে একটি দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মসজিদটির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। ৬ নং ইছাখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের ছেলে প্রয়াত আলহাজ সফিউল্লাহ তার নিজস্ব জমিতে এই মসজিদটি স্থাপন করেন। সে সময় তিনি প্রায়ই ভারতে সফরে যেতেন। তখন তিনি তাজমহলের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হন। পরে তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, তাজমহলের আদলে দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। সেখানে এক প্রকৌশলীর সহায়তায় আগ্রার ওই পুরো তাজমহলের আদলে হার্ডবোর্ডে সম্পূর্ণ একটা নকশা তৈরী করেন।
যা পরবর্তিতে তিনি স্বদেশে এসে প্রকৌশলীর সহায়তায় স্থানীয় বিল্ডিংয়ের ঠিাকাদার তোফায়েলকে এটার নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেন। সে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে অতপর সম্পূর্ণ মসজিদটি নির্মাণ করেন। সূত্রে আরো জানা যায়, মসজিদটির নাম করণ করেন, তার ছেলে মরহুম ফখরুদ্দিনন মাহমুদ জামে মসজিদ প্রকাশ তাজমহল মসজিদ নামে।
উল্লেখ্য ফখরুদ্দিন মাহমুদ ভারতে শিক্ষার্জনের জন্য যান। সেখানে অনাকাঙ্খিত একটি দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। পরে তার স্মৃতি স্বরুপ মসজিদটির নাম করণ করা হয়। এদিকে আলহাজ সফিউল্লাহ শুধু মসজিদ নির্মাণ করে খ্যান্ত হননি। মসজিদের খোরাক মুসল্লি জোগান দিতে মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে দ্বিতল বিশিষ্ট দু’টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করেন।
সেখানে বিগত ২০০০ সাল থেকে একটি দাখিল মাদরাসার কার্যক্রম শুরু হয়। যা তার পিতা মরহুম মৌলভী নজির আহমদের নামে নাম করণ করেন “মৌলভী নজির আহমদ আদর্শ দাখিল মাদরাসা হিসেবে।”বর্তমানে উক্ত মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমে উপজেলার শ্রেষ্ঠ একটি বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে।
প্রতিদিন মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়রা একসাথে জোহরের নামাজ আদায় করেন। অনেকে নাজাম আদায় করার এবং মসজিদের আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দুর-দূরান্ত থেকে এখানে আসেন।
স্থানীয়রা অনেকে বিকালে আছরের নামাজ আদায় করে পুকুর ঘাটে কিংবা মাঠে বসে গল্প করেন মাগরিব পর্যন্ত। আবার অনেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে এশার পর্যন্ত এখানে বসে সময় কাটান।
কোন মন্তব্য নেই