Header Ads

Header ADS

রাউজান পৌরসভায় আটশত বৎসরের পুরাতন দৃষ্টি নন্দন সাহেব বিবি জামে মসজিদ



মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম 

আটশত বৎসরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সাহেব বিবি মসজিদ আদি নগরী চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের বাইন্ন্যা পুকুড় এলাকার দক্ষিণ পার্শ্বে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত। এটি চুন সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপত্য।
মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, ২টি জানালা ও সুউচ্চ ১টি গম্বুজের ওপর। প্রশস্ত জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদের সামনে রয়েছে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তৈরি করা আকর্ষণীয় একটি প্রবেশদ্বার। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ। পশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর।  মসজিদের পশ্চিম পাশেই রয়েছে সুদীর্ঘ ১টি মিনার। মসজিদের পাশেই রয়েছে ফুলের বাগান সংবলিত কবরস্থান। মসজিদে কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ।

ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, আজ থেক প্রায় ৮’শ বছর পূর্বে মসজিদটি নির্মাণ করেন তৎকালীন জমিদার আমির মুহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী ও চট্টগ্রামের আলোচিত ও প্রসিদ্ধ মালকা বানুর মাতা সাহেব বিবি। স্থাপত্যের পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী। সুদীর্ঘকাল পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস। এই মসজিদ কবরস্থান সহ ৩০ শতক জায়গার উপর নির্মিত। এলাকার মানুষের প্রাণের মসজিদ এটি। মসজিদের পার্শ্বস্থ  কবরস্থানে শায়িত আছেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম সাহেব বিবি। এর সামনে নির্মাণ করা হয়েছে ঈদগাহ। ডান পাশে রয়েছে বিশালাকার এক শাহী পুকুর। এটি ‘সাহেব বিবির দিঘি’ হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত।  তৎকালে  বাদশা মুহাম্মদ শাহ এস্টেটের আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম বাইশটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই ২২টি মসজিদের মধ্যে সর্বপ্রথম সাহেব বিবি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। যা চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে সুপ্রাচীন মসজিদ হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। যার কারণে নান্দনিক এই স্থাপনাটি এক নজর দেখতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্তের বহু মানুষ। মসজিদটিতে প্রায় শতাধিক মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। লোকমুখে শোনা যায়, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে তৎকালীন বাদশাহ ৮ মাইল হেঁটে এ মসজিদে এসে নামাজ আদায় করতেন।
সত্তরোর্ধ বয়সের আকবর চৌধুরী বলেন, আমরা ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি ৩/৪শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমার দাদাও তাঁর দাদার মুখে শুনেছিল এটি বিদেশী মিস্ত্রী দ্বারা শত শত বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদে তখন নাকি দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে মোছাভাত (আঞ্চলিক শব্দ) অর্থাৎ কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পাঁয়ে হেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো নামাজ পড়ার জন্য। তিনি আরো বলেন, সাহেব বিবির মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। বর্তমান মোতোয়াল্লীর  তত্তাবধানে ২০১৬ সালে মসজিদটির রূপগত পরিবর্তন করা হয়। ৮’শ বছর পূর্বে নির্মিত সাহেব বিবি মসজিদের সঠিক তথ্য না থাকলেও ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বাংলা একাডেমীর একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে এলাকার বৃদ্ধদের কাছ থেকে ও তাদের প্রজন্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গেছেন বলেও জানান তিনি। 
ভ্রমন পিপাসুদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসাবে এটি পরিচিত। কালের সাক্ষী এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দেখার জন্য পর্যটকদেরও কমবেশি ভিড় হয় সরকারী বন্ধের সময়।   এই দর্শনীয় স্থানটি দেখতে হলে চট্টগ্রামের মুরাদপুর হতে রাউজানের বাসে উঠে রাউজান এর জলিলনগর নামতে হবে। জলিলনগর থেকে হারিশ খান পাড়া সড়ক দিয়ে লোকাল সিএনজি করে যেতে পারেন এই মসজিদে।
এদিকে সাহেব বিবি মসজিদের পাশাপাশি ডাবুয়া আমির চৌধুরী জামে মসজিদটিও একই আমলে করা। তবে আমির চৌধুরী মসজিদটি ভেঙ্গে নতুন নির্মাণ করায় সে পুরানো ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।

 লিখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা ; খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া,চট্টগ্রাম। 

কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.