Header Ads

Header ADS

গৃহ নির্মাণে শরয়ী নির্দেশনা



স্থাপত্য শিল্প হচ্ছে সকল শিল্পকর্মের উৎস, একে ইংরেজিতে বলা হয়  গড়ঃযবৎ ড়ভ ধষষ ধৎঃং। বর্তমানে সারা বিশ্বে স্থাপত্য শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। গড়ে উঠছে পর্বত সমান নানান অট্টালিকা ও সুউচ্চ স্থাপনা। মানব সভ্যতার ইতিহাস অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে, মিসরী, ব্যাবিলিয়ন, গ্রিক ও রোমান ইত্যাদি জাতি এ শিল্পের প্রতি সেই প্রাচীনকাল থেকেই যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছিল। প্রত্যেক জাতি ও গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র বজায় রেখে স্থাপত্য শিল্প নির্মাণ করতে থাকে। ফলে প্রত্যেক জাতির নিজস্ব স্থাপত্য শিল্প তৈরি হয়েছে এবং তাতে তাদের ধর্মীয় দর্শনের প্রতিফলন ঘটেছে সুস্পষ্টভাবে। এমতাবস্থায় ইসলামের জীবন দর্শনের সাথে বিরাট অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ এবং এ বিষয়ে ইসলামের বক্তব্য কী?  ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। তাই মানুষের আত্মিক ও পার্থিব উভয় দিককেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। মানুষের জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন: খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবন ধারণের অন্যান্য উপাদানকে ইসলাম উপেক্ষা করে নি। মানুষ এ পৃথিবীতে আগমনের পর হতেই শীতকালে ঠান্ডা হতে, গ্রীষ্মকালে গরম হতে, বর্ষাকালে বৃষ্টি হতে এবং রাতের অন্ধকারে পশু-প্রাণীর আক্রমণ হতে নিজেদেরকে বাঁচাবার জন্য এ শিল্পের প্রয়োজন। তা ছাড়া বিভিন্ন উপাসনা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বা অন্য কোন প্রয়োজনে এক স্থানে একত্রিত হবার জন্যও তাদের এই স্থাপত্য শিল্পের প্রয়োজন হয়। ইসলাম মুসলমানদেরকে শিখিয়েছে, মানুষ চাইলে তার সমস্ত কর্মকান্ডের মধ্য দিয়েই তার প্রতিপালকের নিকটবর্তী হতে পারে, তার সন্তুষ্টি পেতে পারে, যদি তা দ্বীনের শিক্ষা ও বিধান অনুযায়ী আদায় করে। সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য বৈরাগ্য সাধনের প্রয়োজন নেই। দুনিয়াদারী ছেড়ে দিয়ে ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ার এবং দেহকে নানাভাবে কষ্ট দেয়ারও কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তাঁর প্রদত্ত কোন নিয়ামতকেও হারাম করার কোন প্রয়োজন নেই। ‘সৈয়দ আলী আহসান  খুবই সুন্দর বলেছেন,“তাই মুসলিমরাও তাদের ধর্মীয় দর্শন অনুযায়ী তাদের ধর্মীয় ইবাদতের স্থান মসজিদগুলোর স্থাপত্য রীতি আলাদা করে নিয়েছে। ফলে তাদের নিজস্ব স্থাপত্য শিল্প তৈরি হয়েছে।”  আলোচ্য নিবন্ধে গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কতিপয় নীতি মালা  আলোকপাত করার প্রয়াস পেলাম। 
সুন্দর একটি বাড়ি মানুষের জীবনে লালিত একটি স্বপ্ন, প্রশান্তি লাভের জায়গা। সর্বোপরি এটি মহান আল্লাহর অপার নিয়ামত, যা তিনি বান্দাকে দান করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, “আর আল্লাহ তোমাদের ঘরগুলোকে তোমাদের জন্য আবাস করেছেন এবং তোমাদের পশুর চামড়া দিয়ে তাবুর ব্যবস্থা করেছেন, যা খুব সহজেই তোমরা সফরকালে ও অবস্থানকালে বহন করতে পার। আর তাদের পশম, তাদের লোম ও তাদের চুল দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গৃহসামগ্রী ও ভোগ-উপকরণ (তৈরি করেছেন)। আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড়কে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন”।  আর একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সব কাজই হওয়া উচিত ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী। তবে আবাসন প্রকল্পে ব্যয় করেও সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। 
      ১.হালাল উপার্জন থেকে গৃহ নির্মাণ: হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, তোমরা বাড়ি-ঘর নির্মাণে হারাম থেকে বিরত থাকো। কারণ তা সর্বনাশের মূল ভিত্তি।  অন্যথায় নিম্নোক্ত হাদিসানুসারে প্রতিদান হতে বঞ্চিত হতে হবে।খাব্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ঘর বাড়ি নির্মান কাজ ব্যতীত সব কাজে ব্যয়ে মানুষ প্রতিদান পাবে।  
       ২. জনসাধারণের ক্ষতি বর্জন: কারো ক্ষতি কিংবা কাউকে কষ্ট না দিয়ে এবং সীমালঙ্ঘন না করে নিজের মালিকানায় গৃহ নির্মাণ করতে পারবে। নানা কারণে প্রতিবেশীর ক্ষতি হয়, যেমন, ধোঁয়া, দুর্গন্ধ, উচ্চশব্দ, রাস্তার অপব্যবহার ইত্যাদি। আর উপরোক্ত পন্থায় অন্যকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে গৃহ নির্মাণ করা হারাম। এমনকি কাউকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও জমির মালিকের কার্যক্রমে যদি ক্ষতির আশংকা থাকে ফিকহবিদদের মতে, তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। যেমন কেউ তার জমিনের সীমানায় যদি কাঁটাযুক্ত গাছ লাগায় বা এমনভাবে গৃহ নির্মাণ করল যা অন্যকে আলো বাতাস থেকে বঞ্চিত করে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহ্য করাও যাবে না।” 
      ৩. গৃহ নির্মাণের জায়গাটি ও উপকরণ বৈধ হওয়া: জোরপূর্বক অন্যের জায়গায় বাড়ি ঘর নির্মাণ করলে তা মালিককে ফেরত দিতে হবে। গৃহটি নির্মাণের উপকরণ যেন হালাল উপকরণের দ্বারা তৈরিকৃত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নির্মাণ কাজে অপব্যয়, জালিম ও অমুসলিমদের অনুসরণ না করা। ইরশাদ হচ্ছে “যারা যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে,  তারা তাদের দলভূক্ত হবে।” 
      ৪. পর্দার ব্যবস্থা থাকা: নিজ গৃহে পরিবার পরিজনের গোপনীয়তা যেন উত্তমরূপে রক্ষা হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। দরজা জানালা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন অন্য ঘর থেকে তাকালে সরাসরি মানুষের চোখ না পড়ে। বিশেষ করে ঘরের একই দিকে সব দরজা দেওয়া ঠিক নয়, এতে সামনের রুম থেকে ভিতরে তাকালে অনায়াসেই অন্দর মহলের সব কিছু দেখা যায়। ঘরের ছাদে কেউ আরোহণ করলে তাকেও খেয়াল রাখতে হবে যে, সে যেন অন্য কারো ঘরের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে বিব্রত না করে। নারী পুরুষ যেন পর্দার বিধান রক্ষা করে সাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, “মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে।” 
      ৫. ঘরের মধ্যে ছেলে-মেয়ে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,  যখন সন্তুান-সন্তুতির বয়স দশ বছর হয়, তখন তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।  অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে , “হে মুমিনগণ, তোমাদের অধীনস্থ এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন অবশ্যই তিন সময়ে অনুমতি গ্রহণ করে। ফজরের সালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা তোমাদের পোশাক খুলে রাখ, এবং ‘ইশার সালাতের পর; এই তিনটি তোমাদের [গোপনীয়তার] সময়। এই তিন সময়ের পর তোমাদের এবং তাদের কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অন্যের কাছে যাতায়াত করতেই হয়। এভাবে আল্লাহ তোমাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। 
       ৬. হকদারের হক আদায় করা : আপন আত্মীয় স্বজন, এমনকি কাজের ছেলে মেয়েটিও যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় গৃহ নির্মাণের সময় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি, ইসলাম মানুষের জান, মাল, ইজ্জত হেফাযতে সব ধরণের নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলোর দিকে খেয়াল রেখেই সামর্থ অনুযায়ী সুন্দর পরিবেশে বাসস্থান নির্মাণ করা উচিত। ইরশাদ হচ্ছে, আত্মীয়দেরকে তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। 
      ৭. স্থান নির্বাচন করা: পর্যাপ্ত আলো, বাতাস, পানির সুব্যবস্থা ও পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে মসজিদের আশেপাশে গৃহ নির্মাণ উত্তম।  কেননা মসজিদ ছাড়া মু’মিনের জিন্দেগী পানি ছাড়া মাছের ন্যায়। ঘরের জানালা দেয়ার সময় আজান ও দ্বীনি নসিহত  শ্রবণের মানসে দিতে হবে। তবে বাতাস অনুভব করার পাশাপাশি সওয়াবও অর্জিত হবে। ইরশাদ হচ্ছে,  মানুষের কর্মকান্ড তার মনের সংকল্প অনুযায়ী গৃহিত হবে।  
       ৮. ঘর প্রশস্ত করা : বসবাসের ঘর প্রশস্ত ও বড়সড় হওয়া উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সৌভাগ্যের বিষয় চারটি; সতী-সাধবী স্ত্রী, প্রশস্ত বাড়ী, সৎকর্মশীল প্রতিবেশী ও আরামদায়ক বাহন’। 
        ৯. মজবুত ও সুন্দর করা: ইসলাম মুসলিম স্থপতির কাছে দক্ষতার সাথে উৎকর্ষের সাথে মজবুত ও সুন্দর করে স্থাপত্য শিল্প নির্মাণ করা কামনা করে। ইরশাদ হচ্ছে, তোমদের কেউ কোন কাজ করলে সে যেন তা উৎকর্ষ ও দক্ষতার সাথে করাটা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন। 
       ১০. উচ্চ অট্টালিকা নির্মাণ ও তা কারুকার্যময় করা: উচ্চ দালান নির্মাণ করা, তাতে কারুকার্য করা ইসলামের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়। বরং তা কাঙ্খিত বিষয়ে পরিণত হয়, যদি অহঙ্কার প্রকাশ বা নিজেকে বড়লোক বলে জাহির না করে নির্মাণ করা হয়। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো কোনো সাহাবীও বিনা দ্বিধায় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। হযরত সা’দ বিন আবু ওয়াক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বসরায় গভর্নর থাকাকালীন সময়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন। তিনি এ অট্টালিকা নির্মাণের পর মন্তব্য করেন, এ অট্টালিকা তো লোকদেরকে আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে! এ সংবাদ (তার মন্তব্য)  হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শুনার পর হযরত মুহাম্মদ বিন মাসলামাকে বসরায় প্রেরণ করেন এবং তাকে আদেশ দেন, যেন তিনি বসরায় পৌঁছে বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। নির্দেশ মোতাবেক তিনি বসরা গিয়ে বাড়িটি আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। মাওলানা ইবনে তাইমিয়া বলেন, ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ কাজটি করেছিলেন অট্টালিকা তৈরি ইসলামে নিষিদ্ধ বলে নয়, বরং একজন গভর্নর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন বলেই এমনটি করেছিলেন। কারণ তিনি চাননি তার কোন গভর্নর জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জনগণের দু:খ-দুর্দশা না দেখে দায়িত্ব পালন করুক।  সাহাবীদের পরে তাবি‘য়ী, তাবে-তাবি‘য়ী ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের যুগে এব তার পরবর্তী যুুগেও মুসলিমরা পৃথিবীর সর্বত্র নির্দ্বিধায় অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন। দুর্গ গড়ে তুলেছেন। গৃহকে অতিসাজে সজ্জিত করা,কারুকার্যে অতিরঞ্জিত করা মাকরূহ। তবে কেউ যদি আল্লাহর নি‘য়ামতের শুকরিয়া আদায়ের জন্য কারুকার্য ও সৌন্দর্য বর্ধন  করে তবে তা জায়েয। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার মজবুত ও নিপুন কাজ পছন্দ করেন। ইরশাদ হচ্ছে,  “আর বলুন, ‘তোমরা আমল কর। অতএব, অচিরেই আল্লাহ তোমাদের আমল দেখবেন, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণও। আর অচিরেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর নিকট। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে যা তোমরা আমল করতে সে সম্পর্কে জানাবেন ”। 
     ১১. বাথরুম (টয়লেট) কিবলামুখি না করা: গৃহ নির্মাণের সময়  লক্ষ্য রাখতে হবে বাড়ির অভ্যন্তরে টয়লেটগুলো যেন কিবলামুখি করে না করা হয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব-পায়খানা করার সময় কিবলামুখি হতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা কিবলামুখি হয়ে বা কিবলাকে পিছনে রেখে পায়খানা-পেশাব করো না।  
       ১২. নামাযের ব্যবস্থা : ইবাদত-বন্দেগী, বিশেষত সালাত আদায়ের পরিবেশ তৈরি করে তা নির্মাণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে যেখানে দ্বীনের বিধান রক্ষা সহজতর হয়। আরো মনে রাখতে হবে যে, মানুষ এ পৃথিবীতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসেনি, তাকে তার রবের কাছে অবশ্যই একদিন আবার ফিরে যেতে হবে। অতএব, ঘর নির্মাণ কালে এ কথা মনে রেখেই তা তৈরি করতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে, আমরাতো আল্লাহরই মালিকানাধীন এবং তাঁরই প্রতি ফিরে যেতে হবে। 
        ১৩. ব্যবসায়িক গৃহ নির্মাণ: ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ভাড়া দিয়ে অর্থ রোজগার করার জন্য অট্টালিকা ও প্রাসাদ নির্মাণ করা মাকরূহ নয়। বরং তা সওয়াবের কাজও হতে পারে, যদি মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধান কল্পে তা তৈরি করা হয়। বিশেষত তা যদি বড় বড় শহরগুলোতে তৈরি করা হয়। কারণ বর্তমান যুগে রাজধানী ঢাকা শহরের মত শহরে বহুতল ভবন নির্মাণ করা না হলে; আরো দু চার দশটি ঢাকা শহরের মত বড় শহরের প্রয়োজন হবে। তখন দেখা দিবে তীব্র ভূমি সংকট। ইসলাম এমন কোন সিদ্ধান্ত দেয় না, যা মানুষের সমস্যা বাড়ায়। ইসলাম এসেছে মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য, সমস্যা বাড়াবার জন্য নয়। এ কারণেই ফকীহগণ বলেছেন, ‘যেখানেই মানব কল্যাণ সেখানেই ইসলাম’।
         ১৪. বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা: বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার কিছু সুন্নাতী নিয়ম আছে। যা পালন করা হ’লে বাড়ী শয়তানের কবল থেকে হেফাযতে থাকে। দুনিয়াবী বিভিন্ন ফেৎনা-ফাসাদ থেকে মুক্ত থাকে। নানাবিধ অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে এবং খাবার গ্রহণকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান (তার সঙ্গীদেরকে) বলে, তোমাদের রাত্রিযাপন এবং রাতের আহারের কোন ব্যবস্থা হল না। কিন্তু কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহার ও শয্যা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেলো’। 
        ১৫.  গৃহে প্রবেশকালে সালাম দেওয়া: সালাম দেওয়া সুন্নাত। এজন্য গৃহে প্রবেশকালে প্রবেশকারী সালাম দিবে, যদিও ঐ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ ঘরে বসবাস না করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তখন পরস্পরে সালাম করবে। এটি আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত বরকমন্ডিত ও পবিত্র অভিবাদন’।  অন্যের গৃহে প্রবেশকালেও সালাম দিবে। অন্যত্র বরিশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং এর বাসিন্দাদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন.‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহলে রিযিকপ্রাপ্ত হয় এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করে। যে ব্যক্তি বাড়ীতে প্রবেশ করে বাড়ীর লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে  আল্লাহর যিম্মায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে  আল্লাহর যিম্মায়’।  এমনকি পরিত্যক্ত ঘরে প্রবেশ করলে বলবে,
السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ-
অর্থাৎ আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক।  
      ১৬. বাড়ীতে কুকুর না রাখা : বাড়ীতে কুকুর প্রতিপালন করা মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। আর এজন্য মুসলমানের নেক আমলের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন.‘যে ব্যক্তি শস্য ক্ষেতের পাহারা কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হতে এক ক্বীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে’। অন্য হাদীসে দুই ক্বীরাতের কথা উল্লেখ রয়েছে।  তবে তিনটি কারণে কুকুর পোষা জায়েয। যথা- ১. পশুপাল পাহারা দেওয়া, ২. শস্যক্ষেত পাহারা দেওয়া ও ৩. শিকার করার জন্য।  
       ১৭.  ক্রুস ও ক্রুসের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন কিছু বা অন্য কোন ধর্মের নিদর্শন না রাখা: মুসলমান স্বীয় দ্বীনের হুকুম-আহকাম ও নির্দেশ মোতাবেক তার দিন-রাত অতিবাহিত করে। শরী‘আতে নিষিদ্ধ কোন কাজ সে করে না। এজন্য অন্য কোন ধর্মের প্রতীক দ্বারা সে নিজের গৃহকে সজ্জিত করবে না। বরং সেগুলোকে স্বীয় গৃহ থেকে দূরে রাখবে। হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা  বলেন, ‘হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ঘরের এমন কিছুই না ভেঙ্গে ছাড়তেন না, যাতে ক্রুসের চিহ্ন বা ছবি থাকত’।  
      ১৮. ঘরে ছবি-মূর্তি না ঝুলানো: ছবি-মূর্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই এসব থেকে বাড়ী-ঘর মুক্ত রাখা মুমিনের অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমানের ঘর ছবি-মূর্তিতে ভরপুর থাকে। দেওয়ালে নিজের, মৃত পিতা-মাতার, প্রিয় ব্যক্তিত্বের বা নেতার ছবি ঝুলানো থাকে। কখনও শোভা বর্ধনের নামে বিভিন্ন  প্রাণী-মূর্তির শোপিচ সাজানো থাকে শোকেচ, আলমারী ও কর্ণার সেলফে। অথচ এসবের জন্য ইহ-পরজগতে কঠিন শাস্তি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।  একদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা ডয়দ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন, তাতে ছবি আঁকা ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের সময় তা দেখতে পেলেন। তিনি ঘরে প্রবেশ না করে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলেন। আয়েশা ছিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা তাঁর মুখ দেখে বুঝতে পেরে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তওবা করছি। আমি কি পাপ করেছি? (আপনি ঘরে প্রবেশ করছেন না কেন?)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এই ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন, আমি এটা এজন্য ক্রয় করেছি, যাতে আপনি হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘নিশ্চয়ই যারা এই সমস্ত ছবি তোলে বা অংকন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে, তোমরা যাদের তৈরি করেছ তাদের জীবিত কর। তিনি  আরো বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে (রহমত ও বরকতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। 
       ১৯. ঘরে চিতাবাঘের চামড়া ঝুলিয়ে বা বিছিয়ে না রাখা: যেসব জিনিস থেকে ঘরকে মুক্ত রাখা জরুরী তন্মধ্যে চিতাবাঘের চামড়া অন্যতম। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিং¯্র জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে এবং এর চামড়ার তৈরী গদিতে আরোহণ করতে নিষেধ করেছেন। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা রেশমের এবং চিতা বাঘের তৈরী গদিতে আরোহী হবে না’।  
       ২০. গৃহে স্বর্ণ-রূপার থালা ব্যবহার না করা: স্বর্ণ-রূপার জিনিস যেমন- থালা-বাটি, পেয়ালা বা এ জাতীয় কোন কিছু ব্যবহার করা মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রৌপ্যের পাত্রে পান করে সে তো তার উদরে জাহান্নামের অগ্নি প্রবিষ্ট করায়’।  অন্যত্র রয়েছে,‘তোমরা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করবে না। কেননা এগুলো দুনিয়াতে তাদের অর্থাৎ অমুসলিমদের জন্য ভোগ্যবস্ত্ত। আর তোমাদের জন্য হ’ল আখিরাতের ভোগ্যবস্ত্ত’। 
        ২১. গৃহে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া: অন্যের গৃহে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। এমনকি মায়ের ঘরে প্রবেশের পূর্বেও অনুমতি নিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। অনুমতি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, হযরত আবূ মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে বললেন, আসসালামূ আলাইকুম, আনা (আমি) আবদুল্লাহ ইবনু কায়েস। কিন্তু তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন না। তখন আবার বললেন, আসসালামু আলাইকুম এই যে, আবূ মূসা। আসসালামু আলাইকুম এই যে ,আশ‘আরী। এরপর (জবাব না পেয়ে) তিনি ফিরে গেলেন। ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জানতে পেরে বললেন, তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। ফিরে এলে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কিসে তোমাকে ফিরিয়ে দিল, হে আবূ মূসা? আমরা কোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, অনুমতি চাও তিনবার। এতে তোমাকে অনুমতি দেওয়া হলে ভাল, অন্যথা ফিরে যাও’।  অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,‘যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয় ফিরে যাও! তাহলে তোমরা ফিরে এসো। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতর। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’। 
        ২২. মেহমানদারীর জন্য বাড়ীতে আবশ্যকীয় জিনিস রাখা: মানুষ থাকলে তার আত্মীয়-স্বজন থাকবে এবং বাড়ীতে মেহমানও আসবে। তাই মেহমানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহে রাখা জরুরী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেন,‘একটি শয্যা পুরুষের, দ্বিতীয় শয্যা তার স্ত্রীর, তৃতীয়টি অতিথির জন্য আর চতুর্থটি (যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়) শয়তানের জন্য’।  এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী হচ্ছে মেহমানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ীতে সংরক্ষণ করা তাহলে মেহমানকে বাড়ী রাখা সম্ভব হবে এবং তার আপ্যায়ন করা সহজ হবে।
        ২৩. গৃহে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া: বাড়ীতে কুরআন তেলাওয়াত বরকত লাভ এবং শয়তান দূর হওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উপায়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ে নিয়ো না। অবশ্যই শয়তান সেই ঘর হতে পলায়ন করে যে ঘরে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়’। 
        ১৫. ঘরের ভিতরের সাপ মারার পূর্বে তা তাড়ানোর চেষ্টা করা: ঘরের সাপ মারার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বাড়ি-ঘরে বসবাসকারী (সাপ ইত্যাদির রূপধারী)-দের কোন কিছু দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সতর্ক সংকেত দেয়। এরপরও যদি তার সামনে তা প্রকাশ পায়, তবে সে যেন তাকে মেরে ফেলে, কেননা সে একটা (অবাধ্য) শয়তান’। 
         ১৬. ঘরে পরপুরুষ ও নারীতে নির্জনে অবস্থান না করা: ঘরে নির্জনে পরপরুষ ও পরনারীতে একত্রে অবস্থান করা নিষিদ্ধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মহিলাদের নিকট একাকী যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনছার ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লঅহ! দেবরের ব্যাপারে কী হুকুম? তিনি উত্তর দিলেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য’।  তিনি আরো বলেন,‘একজন স্ত্রীলোকের সাথে একজন পুরুষ একাকী থাকলে তাদের মধ্যে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে যোগ দেয়’।  
         ১৭. ঘুমানোর সময় দরজা বন্ধ করা, আগুন নিভানো ও খাবার পাত্র ঢেকে রাখা: ঘুমানোর পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু কাজ করতে বলেছেন, প্রত্যেক পরিবারের জন্য তা মেনে চলা জরুরী। কেননা, এতে বহু উপকারিতা রয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের সন্তানদের ঘরে আটকে রাখ। কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু অংশ অতিক্রম করলে তখন তাদের ছেড়ে দিতে পার। আর ঘরের দরজা বন্ধ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের মশকের মুখ বন্ধ করবে এবং আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাদের পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে, কমপক্ষে পাত্রগুলোর উপর কোন বস্তু আড়াআড়ি করে রেখে দিও। আর (ঘুমানোর সময়) তোমরা তোমাদের প্রদীপগুলো নিভিয়ে দিবে’। 
পার্থিব জীবনে বসবাসের জন্য বাড়ী-ঘর অতীব গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত। এ বাড়ী-ঘরে অবস্থান করা দুনিয়াবী ফিৎনা-ফাসাদ থেকে নিরাপদ থাকার উপায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ব্যক্তির নিরাপত্তা হচ্ছে বাড়ীতে বা ঘরে অবস্থান করায়’।  বাড়ীতে অবস্থানের ফলে তার থেকে অন্য মানুষ নিরাপদে থাকে এবং সেও শান্তি লাভ করে। তাছাড়া এতে সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘কিংবা সে তার বাড়ীতে বসে থাকবে তাহলে তার থেকে মানুষ নিরাপদে থাকবে এবং সেও নিরাপদে থাকবে’।  আর বাড়ী-ঘরকে ইসলামী গুণাবলী সম্পন্ন করে গড়ে তুলে সেখানে অবস্থান করলে উপরোক্ত ফযীলত লাভ করা যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলের বাড়ী-ঘরকে ইসলামী বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করার তাওফীক দিন-আমীন! বিজাহিন নবিয়্যিল আমিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

লিখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা; খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.