ঐতিহ্যময় শেখ বাহার উল্লাহ শাহী জামে মসজিদটি ১৭৩৭
সালে নির্মিত এক অনন্য ঐতিহাসিক প্রত্ন স্থাপনা। নগরীর পাঁচলাইশ থানার পূর্ব দিকে ঐতিহাসিক খান বাহাদুর হামিদুল্লাহ খানের বাড়ির পূর্বপার্শ্বে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার পাশেই মসজিদটির অবস্থান। শূন্য দশমিক ২১ একর ভূমির প্রাচীন এই মসজিদটিতে ৪টি বড় মিনার, ৪টি ছোট মিনার, ২টি ছোট গম্বুজ ও ১টি বড় গম্বুজের মাধ্যমে মসজিদটিকে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল। গম্বুজের বাহ্যিক উচ্চতা ১৮ ফুট ও অভ্যন্তরীণ উচ্চতা ১০ ফুট এবং মিনারের উচ্চতা ৩০ ফুট। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অর্ধ গোলাকৃতির। ছোট দুই দরজার সামনে আছে মেহরাবসদৃশ ছোট অর্ধচন্দ্রাকারের মেহরাব। ছোট মেহরাব দুটি বৃদ্ধি করেছে মসজিদটির সৌন্দর্য। তিনটি দরজার চৌকাঠের ওপরে ইটের খিলানে আবৃত। সব নান্দনিকতা ছাপিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে বুখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তোরণের আদলে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি তোরণ। এ যেন ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। যা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আগ্রহী মানুষ নিয়মিত ভিড় জমায়। মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে ধারণা করা হয়, মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর পৌত্র শেখ বাহার উল্লাহ ১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল স্থাপত্যে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এ মসজিদ শেখ বাহার উল্লাহ শাহী জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর অধিভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মহামূল্যবান ও অতিসংবেদনশীল স্থাপনা। ভারতের দিল্লির কেন্দ্রীয় মহাফেজখানা ও ব্রিটেনের লন্ডনস্থ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে শেখ বাহার উল্লাহ জামে মসজিদ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দস্তাবেজ প্রায় ১৭০ বছর ধরে সযত্নে রক্ষিত আছে। সময়ের ব্যবধানে মসজিদটির সৌন্দর্যবর্ধন করা হলেও অক্ষত রাখা হয় মূল অবকাঠামো। ১০২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৮ ফুট প্রস্থের মসজিদটির মুসল্লি ধারণ ক্ষমতা প্রায় ছয় হাজার জনের।
অত্যন্ত
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত
৯ জানুয়ারি'২০ এই মসজিদটি ধ্বংসের মাধ্যমে
রচিত হলো ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদ মসজিদ ধ্বংসের ইতিহাস। যা দেখে নীরবে নিভৃতে কেঁদেছে দেশের জনগণ। সরকারি প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করার দাবি ও ২৮৩ বছরের প্রাচীন মসজিদটি ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংস্থার নেতৃবৃন্দ। তারা
চট্টগ্রামের এই প্রাচীন মসজিদটি ধ্বংসের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ইতিহাসে এই প্রাচীন মসজিদ ধ্বংসকারী শত বছর পর হলেও চিহ্নিত হবে এবং বিবেকের কাঠগড়ায় ইতিহাস হত্যাকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এই প্রাচীন মসজিদটির অবস্থান ও ইতিহাস ছিল ২৮৩ বছরের নন্দিত ইতিহাস। আজ কুচক্রী ইতিহাস অসচেতন বিবেকহীন মানুষের কারণে একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল। এই ধ্বংসের ইতিহাস লজ্জার ও দুঃখের। বিবৃতিতে আরো বলা হল, আশপাশের জায়গাতে বহুতল মসজিদ নির্মাণ করা যেত। কারণ মসজিদের সামনে প্রচুর জায়গা রয়েছে। বিষয়টা না ভেবে প্রাচীন এই মসজিদটি অহেতুক ধ্বংস করা হলো। আমাদের আগামী প্রজন্ম যারা মসজিদ ধ্বংসের সাথে জড়িত আছে তাদেরকে ইতিহাস অসচেতন মানুষ হিসেবে বিবেচিত করবে।
কোন মন্তব্য নেই