Header Ads

Header ADS

জুমার খুতবা -১ : কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ








মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম


বসুন্ধরায় এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, সে কবরে আজাব ভোগ করতে আগ্রহী। জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন ও শাস্তি ভোগ করার লোকও পাওয়া যাবে না। বরং সবাই চাইবে আখিরাতের বিশাল জিন্দেগিতে আল্লাহর রহমত লাভ করে তাঁর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে চিরশান্তির স্থান জান্নাত লাভ করতে। কবরের জিন্দেগিতে শান্তিতে থাকতে। তাই কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে মুক্তি লাভের আমল  তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম -কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে হলে চারটি বিষয়ের ওপর  আমল করতে হবে, আর চারটি কাজ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মানুষের জরুরী। যে আমল গুলো করতে হবে-
ক. যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
খ. বেশি বেশি সাদকা করতে হবে।
গ. কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং বেশি বেশি তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করতে হবে। 
ঘ.বান্দার হক সমুহ আদায় করতে হবে।অ
এ আমলগুলি কবরকে আলোকিত ও প্রশস্ত করে। আর নিম্নোক্ত চারটি  থেকে বিরত থাকতে হবে-
ক. শিরক ও মিথ্যা কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
খ. অপরের সম্পদ তথা পরের হক আত্মসাৎ করা যাবে না।
গ. চোগলখুরী করা থেকে বিরত থাকতে হবে।ঘ. পেশাবের ছিটা হতে বেঁচে থাকতে হবে। 

 হযরত আলী (রাঃ) বলেন- আমরা প্রথম দিকে কবর আযাব সম্পর্কে সন্দিহান ছিলাম। এ বিষয়ে আমাদের সুষ্পষ্ট ধারণা ছিলনা।অতঃপর আল্লাহ্ তায়ালা “ছুরা তাকাছুর” নাযিল করলেন-
الھٰکم التکاثر حتی زرتم المقابر الخ ۔
অর্থাৎ “তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে মাল-দৌলতের আধিক্যের প্রতিযোগিতা- যে পর্য্যন্ত না তোমরা কবরে যাবে। অবশ্যই তোমরা জানতে পারবে- কবরে কি ধরণের আযাব নাযিল হচ্ছে - হ্যাঁ, পুনরায় তোমরা দেখতে পাবে- হাশরে কি ধরণের আযাব তোমাদের উপর নাযিল হবে”। (তাফসীরে ইবনে আব্বাস)

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মদিনা বা মক্কার) কোনো একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, 

 انھما لیعذبان ۔ ومایعذبان فی کبیر ۔ اما احدھما وکان یمشی بالنمیمۃ واما الاٰخر فکان لایسنزہ من بولہ فدعا بعسیب رطب فشقہ باثنین ثم غرس علی ھذا واحدا وعلی ھذا واحدا ثم قال لعلہ یخفف عنھما مالم ییبسا ۔ وفی روایۃ کان لا یستنزہ عن البول رواھما مسلم وفی کتاب ابی داؤد وکان لا یستنثر من بولہ وفی حدیث ھناد بن السری ، لا یستبری من البول ، من الاستبراء وقال البخاری ’’ وما یعذبان فی کبیر وانہ لکبیر
 অর্থাৎ “ এরা দুজনেই কবর আযাবে ভুগছে। তবে খুব কঠিন বিষয়ে নয়- অর্থাৎ যার থেকে বাঁচা খুব কঠিন ছিলনা। তাদের একজন চোগলখুরী করে বেড়াতো। অন্যজন প্রস্রাব থেকে পূর্ণভাবে পবিত্র হতোনা”। একথা বলে তিনি একটি তাজা খেজুরডাল আনালেন। ওটাকে দুভাগ করে একটি এই কবরে, অন্যটি ঐ কবরে গেড়ে দিয়ে বললেন- ”আশা করা যায়- তাদের উভয়ের কবর আযাব হাল্কা থাকবে- যতক্ষণ না ঐ টুকরো দুটি শুকিয়ে যায়”। (সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)
অত্র হাদীসে কয়েকটি মাসআলা আছে-
(ক) চোগলখুরী করা কবিরা গুনাহ্। প্রস্রাব থেকে পূর্ণ পবিত্র হওয়া ওয়াজিব। উহা তরক করাও কবিরা গুনাহ্। বুঝা গেল- কবিরা গুনাহের কারণে কবর আযাব হয়।

(খ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত উম্মতের আমল সম্পর্কে অবহিত আছেন। এমনকি- মাটির তলায় কি হচ্ছে- তাও তিনি জানেন এবং দেখেন। মাটির উপরে অবস্থিত উম্মতের যাবতীয় আমল অবলোকন করা তো খুবই সহজ ব্যাপার।

(গ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের ভিতরও স্বচক্ষে দেখেন এবং আযাবের ধরনও দেখেন।

(ঘ) তাজা খেজুরডালা গেড়ে দিয়ে নবী করীম (ﷺ) প্রমাণ করলেন- তাজা বৃক্ষলতা আল্লাহর তস্বিহ পাঠ করে। তাই কবরের উপর বা পাশে তাজা বৃক্ষ থাকা উত্তম এবং কবরের পাশে আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করলে বা তাস্বিহ তাহ্লীল পড়লেও কবর আযাব হাল্কা হয় অথবা বন্ধ থাকে। অতএব ৪০ দিন পর্য্যন্ত কবরে কোরআন তিলাওয়াত করার প্রচলিত নিয়ম অত্র হাদীস দ্বারা অনুমোদিত। কবরস্তানে মসজিদ থাকলে নামাযের মধ্যে তিলাওয়াতের কারণে কবরবাসীর কবর আযাব হাল্কা হয়। ধর্মের দুশমনরা এটা উপলদ্ধি না করেই কবরস্তানে মসজিদ নির্মাণে বাধা দেয়।

কাফেরদের কবর আযাবঃ

হযরত আবু হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- তোমরা কি জানো- কোরআনের নিম্ন আয়াতখানা কাদের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে?

فان : لہ معیشۃ ضنکا ونحشرہ یوم القیامۃ اعمٰی۔

তোমরা কি জানো- উক্ত আয়াতে معیشۃ ضنکا (অর্থাৎ ”তাদের জীবন হবে সঙ্কুচিত এবং তাদেরকে আমি হাশরে উঠাবো অন্ধ বানিয়ে”) -এর অর্থ কী? সাহাবায়ে কেরাম বললেন-

الله اعلم ورسوله

“আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই সর্বজ্ঞ। রাসুল করিম (ﷺ) এরশাদ করলেন-

عذاب الکافر فی القبر ۔ والذی نفسی بیدہ انہ لیسلط علیہ تسعۃ وتسعون تنینا۔ اتدرون ماالتنین ؟ تسعۃ وتسعون حیۃ لکل حیۃ کسعۃ روس ینفخن فی جسمہ ویلعسنہ ویخدشنہ الی یوم القیامۃ ۔و یحشر من قبرہ الی موقفہ اعمٰی۔

অর্থাৎ“উক্ত আয়াত ও উক্ত শাস্তি কাফেরদের শানে নাযিল হয়েছে। “কবরে তাদের জীবন হবে অতি সঙ্কুচিত”- এ কথার অর্থ হলো- যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ করে বলছি “কাফেরের কবরে ৯৯টি তিন্নীন সর্প লেলিয়ে দেয়া হবে। তোমরা কি জানো- তিন্নীন কোন্ ধরণের সাপ? তিন্নীন এমন ধরণের ৯৯টি সাপ- যার প্রত্যেকটির নয়টি করে মুখ আছে। মোট ৮৯১টি মুখে তারা কাফেরের শরীরে ফুঁক দিতে থাকবে, তাকে দংশন করতে থাকবে এবং তার গোশ্ত খাবলিয়ে খাবলিয়ে খেতে থাকবে- কিয়ামত পর্য্যন্ত। তারপর সে হাশরের ময়দানে অন্ধ অবস্থায় উঠবে। ” (তাযকিরাহ্)

অত্র হাসীসে কয়েকটি জিনিস প্রমাণিত হলো- যথাঃ

* কাফেরদের কবর সঙ্কুচিত হয়ে যাবে। তাদের কবর না হলেও বরযখে তাদের জীবন হবে সঙ্কুচিত এবং ৯৯টি তিন্নীন নামক বিষাক্ত সাপ ৮৯১টি মুখে তাকে দংশন করবে, ছোবল মারবে, গোশ্ত চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে। ইহা সম্পূর্ণ গায়েবী খবর। ইহার উপর ঈমান আনা ফরয। ইহা ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং নবীজীর এই ইল্মে গায়েবকে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।

* الله اعلم ورسوله বা ”আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলই সর্বজ্ঞ”- বলা সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাত। সাহাবীগণ বিশ্বাস করতেন- আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত”। যারা এটা মানেনা, বরং বলে- নবী কোন গায়েবী বিষয়ই জানতেন না- তারা অজ্ঞ এবং সাহাবী বিরোধী। সুতরাং তারা ঈমানহারা ও বেঈমান।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি বদর ময়দানের একটি কোনায় পাঁয়চারী করতে ছিলাম। হঠাৎ করে একটি লোক মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসলো। তার গলায় ছিল একটি লোহার শিকল। উক্ত শিকলটি ধরে আছে একজন কালো লোক। শিকলপরা লোকটি আমাকে লক্ষ্য করে বললো- হে আবদুল্লাহ্! আমাকে পানি দাও। ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি বুঝতে পারলামনা- এই লোকটি কি সত্যিই আমার প্রকৃত নাম জানে- নাকি এমনিতেই আবদুল্লাহ্ বা আল্লাহর বান্দা বলছে। কালো লোকটি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো- তাকে পানি দিওনা, কেননা, সে কাফের। একথা বলে কালো লোকটি তাকে হেঁচ্ড়া টান মেরে আবার মাটির নিচে চলে গেল। আমি রাসুলকরিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এই ঘটনা বলার পর নবী করীম (ﷺ) আমাকে বললেন-

او قد رأیتہ ؟ ذاکر عدو اللّہ ابو جھل بن ھشام وھو عذابہ الی یوم القیامۃ (الانابۃ)

অর্থাৎ "হে আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর। তুমি কি সত্যিই তাকে এই অবস্থায় দেখেছো? সে তো আল্লাহর দুশমন আবু জেহেল ইবনে হিশাম। তার গলার শিকল হচ্ছে আযাব এবং কালো লোকটি হচ্ছে ফিরিস্তা। কিয়ামত পর্য্যন্ত এভাইে তার কবর আযাব হতে থাকবে”। (ইনাবা- কৃত ওয়ায়েলী; আল্লামা কুরতুবীর তাযকিরাহ্ গ্রন্থ)।
কবরের আজাব হতে বাঁচার দোয়া : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এইগুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরয, নফল বা সুন্নত, যে কোনো নামাজে তাশাহুদ ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর পর এই দোয়াটি পড়তে বলেছেন।
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّال

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ’জুবিকা মিন আ’জাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিনিআ’জাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল মাহ’ইয়া-ওয়াল্ মামাতি, ওয়া মিং সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহিদ্-দাজ্জাল।
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের আজাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর ফেতনা এবং দাজ্জালের ফিৎনা থেকে রক্ষা করো। (সহিহ বুখারি ; সহিহ মুসলিম)

কবীরা গুনাহের কারণ কুরআন ও সহীহ হাদীসে কঠিন শাস্তির ভয় দেখানো হয়েছে, সেইগুলো বর্জন করা ও আল্লাহর বেঁধে দেওয়া ফরয ও ওয়াজিব হুকুম পালনে যত্নবান হওয়া কবরের শাস্তি মুক্তি পাওয়ার অনন্য মাধ্যমে । 

প্রতিদিন সুরা মুলক তেলাওয়াত করলে আশা করা যায় আল্লাহর রহমতে কবরের আজাব ও কেয়ামতের দিন শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যামানায় এই সুরাটিকে আমরা “আল-মা’আনিয়াহ” বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বে সে খুব ভালো একটা কাজ করলো”। (সুনানে আন-নাসায়ী ৬/১৭৯, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াল তারহীব ১৪৭৫)। 
এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন:
 “কুরআনে এমন একটা সুরা আছে যার মধ্যে ৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)”। (সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, মুসনাদের আহমাদ, ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬। ) 
এই প্রসঙ্গে সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের আলেমদের ফতোয়া হচ্ছেঃ “এই হাদীসগুলোর আলোকে বলা যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুরা মুলক বিশ্বাস করবে ও তেলাওয়াত করবে, এই সুরাতে যে শিক্ষা দেওয়া আছে তা গ্রহণ করবে এবং যে হুকুম আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে কেয়ামতের দিন তার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত করবে”।

কোন মন্তব্য নেই

ইলমে দ্বীনের ফজিলত

﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١)

Blogger দ্বারা পরিচালিত.