Header Ads

Header ADS

আল্লাহর ইবাদতে অন্তরায়



অধ্যক্ষ হাফেয কাজী আবদুল আলীম রিজভী

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ- وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنَ الصَّالِحِينَ- وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ-

তরজমাঃ (মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন) হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ, না তোমাদের সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে, এবং যে কেউ তেমন করে, (অর্থাৎ ওই সব কারণে আল্লাহর স্বরণ থেকে বিস্মৃত হয়) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্থ। এবং আমার প্রদত্ত (রিজিক) থেকে কিছু আমার পথে ব্যয় করো, এর পূর্বে যে, তোমাদের মধ্যে কারো নিকট মৃত্যু এসে পড়বে অতঃপর বলতে থাকবে হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে কেন কিছু সময়ের জন্য অবকাস দিলে না ? যাতে আমি দানসদকাহ্ করতাম এবং সৎকর্মপরায়নদের অন্তভর্’ক্ত হতাম। এবং কখনো আল্লাহ কোন প্রাণকে অবকাশ দেবেন না যখন তার প্রতিশ্রুতি (অর্থাৎ নির্ধারিত সময়) এসে পড়বে এবং তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ জ্ঞাত। [সূরা মুনাফিকুন এর শেষ তিন আয়াত]
আনুষঙ্গিক আলোচনা
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ الخ
উপরুক্ত আয়াতে বর্ণিত জিকরুল্লাহ বা আল্লাহর স্মরণ বলে কি বুঝানো হয়েছে এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম বিভিন্ন অভিমত উল্লেখ করেছেন। যথা, কোন কোন তাফসীর বিশারদ বলেন আল্লাহর স্মরণ বলতে পাঞ্জেগানা ফরজ নামাজকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন আল্লাহর স্মরণ মানে হজ¦ ও যাকাতকে বুঝানো হয়েছে। আবার কারো মতে আল্লাহর স্মরণ মানে আল্লাহর কুরআন। সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মতে আল্লাহর স্বরণ মানে যাবতীয় আনুগত্য ও ইবাদতকে বুঝানো হয়েছে। এই ব্যাখ্যা সবকিছুতে পরিব্যপ্ত। [তাফসীরে খাযায়েনুল ইরফান ও কুরতুবী শরীফ] আল্লাহর পবিত্র বাণী “হে মুমিনগণ! তোমাদের সম্পদ আর তোমাদের সন্তান-সন্ততী যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে” এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন যে সব বিষয় মুমিন নর-নারীকে জাগতিক জীবনে আল্লাহর স্মরণ ও আনুগত্য-ইবাদত হতে উদাসীন করে তন্মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখ যোগ্য হলো দুটি, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততী যেমন “সূরা তাকাসূর” এর সূচনায় এরশাদ হয়েছে, الهكم التكاثر حتى زرتم المقابر অর্থাৎ প্রাচুর্যের লালসা (অর্থাৎ প্রচুর ধন-সম্পদ সঞ্চয় করার লালসা) তোমাদেরকে উদাসীন করেছে (আল্লাহর স্মরণ থেকে) এমন কি তোমরা কবরস্থানে পৌছে গিয়েছ। নতুবা দুনিয়ার যাবতীয় ভোগ-সম্ভারই ঈমানদারকে আল্লাহ-রাসূল- আখেরাত থেকে বিস্মৃত করে উদাসীন করে রাখতে চায়। যেমন, অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, وما الحيوة الدنيا الا متاع الغرور অর্থাৎ জাগতিক জীবন ধোকা-প্রতারণার সরঞ্জাম বৈ অন্য কিছু নয়।
অতএব আয়াতের সার বক্তব্য এই যে, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততীর মহব্বত সর্বাবস্থায় নিন্দনীয় নয়। বরং এগুলো নিয়ে ব্যাপৃত থাকা এক পর্যায়ে কেবল জায়েযই নয় বরং ওয়াজীব ও হয়ে যায়। যেমন, ফরজ হজ¦, যাকাত আদায় এবং ওয়াজীব কুরবানী-ছদকায়ে ফিতরসহ সারা বছর ছদকা-খায়রাত, দান-দক্ষিণা করা সম্পদের প্রাচুর্য ব্যতীত সম্ভব নয়। তাই এসব উদ্দেশ্যে বৈধ ও হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন ও সংরক্ষণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়। কিন্তু সর্বদা এই সীমানার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যে, এসব বস্তু যেন মানুষকে আল্লাহ-রাসূল-আখেরাত থেকে উদাসীন না করে। দুনিয়ার প্রতি মোহাচ্ছন্ন করে ধ্বংস করতে না পারে। যেভাবে কাফির-মুশরিক-বেদ্বীনগণকে উদাসীন করেছে।
وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ
আল্লাহর পবিত্র বাণী “আর তোমরা আমার প্রদত্ত রিজিক হতে কিয়দাংশ (আমার পথে) ব্যয় কর তোমাদের নিকট মৃত্যু আসার পূর্বে” এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন উদ্ধৃত আয়াতে নির্দেশিত ব্যয় এর মধ্যে ফরজ ব্যয় যথা, হজ¦-যাকাত,ওয়াজিব ব্যয় যেমন, কুরবানী, ছদকায়ে ফিতর ও মান্নত এবং সারা বছরের নফল ছদকা-খায়রাত, দান-দক্ষিণা ইত্যাদী সকল প্রকার ব্যয় অর্ন্তভূক্ত। আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদের প্রাচূর্য থেকে একমাত্র আল্লাহরই সন্তুষ্টি অর্জনের মহৎ লক্ষ্যে ফকির-মিসকীন, অভাবী-অসহায়-নিঃস্ব বান্দাদের সাহায্যে ব্যয় করা ঈমানদারের জন্য উৎকৃষ্ট ইবাদত। সূরা বাক্বারার প্রারম্ভিক আয়াতে মুত্তাকী-আল্লাহভীরু বান্দাগণের অন্যতম বৈশিষ্ট-লক্ষণ হিসেবে সবসময় আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদ হতে ব্যয় করাকে উল্লেখ করা হয়েছে। যাদেরকে আল্লাহর কুরআন নিশ্চিতভাবে হেদায়ত করতঃ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছাবে।
আল্লাহরই নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের একটি উল্লেখযোগ্য ও নিশ্চিত অবলম্বন হলো আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদের প্রাচূর্য হতে সবসময় ব্যয় করা। কুরআনে কারীমের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে নববী শরীফের অগণিত রেওয়ায়াতে আল্লাহর পথে ব্যয় করার অপরিসীম ফজিলত-বরকত-সাওয়াবের সুসংবাদ উল্লেখিত হয়েছে। যাতে মুমিন-মুসলিমগণ আল্লাহ প্রেমে উজ্জিবীত হয়ে তাঁরই পথে ব্যয় করতে উদ্ভুদ্ধ-অনুপ্রাণিত হয় এবং কার্পণ্যমুক্ত জীবন অতিবাহিত করতে অভ্যস্থ হয়। যেমন, কুরআনে কারীমের সূরা বাক্বারায় ২৭৪ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ 
 অর্থাৎ যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়) তাদের জন্য রয়েছে সাওয়াব তাদের পালনকর্তার নিকট আর তাদের কোন ভয়-ভীতি নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। সহীহ বুখারী শরীফে উল্লেখিত রয়েছে একদা রাসূলে কারীম রাউফুর রাহিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বেলাল হাবশী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন, انفق يا بلال ولا تخشى عن ذى العرش اقلالا অর্থাৎ হে বেলাল রা.! আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং এ ব্যয়ের কারণে) আল্লাহর পক্ষ থেকে দরীদ্র হয়ে পড়ার আশংকা করো না। উল্লেখ থাকে যে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে খালেছ নিয়্যতে আল্লাহর পথে দান-সদকাহ করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতিদান-বিনিময় স্বরূপ দশগুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে বদলা দান করবেন। (আলহামদুলিল্লাহ) সুতরাং সদকাহ-খায়রাত করতঃ দরীদ্র-নিঃস্ব হয়ে যাওয়া শয়তানের প্ররোচনা ব্যতীত অন্য কিছু নয়। দান-দক্ষিণায় সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আমলনামায় পুন্যের পরিমাণ বর্ধিত হয় এবং আল্লাহর নিকট দানশীল ব্যক্তির নৈকট্য বেঢ়ে যায়। সুতরাং সম্পদ হ্রাস পাওয়ার দুশ্চিন্তা শয়তানী কল্পনা-জল্পনা বৈ কিছু নয়। যেমন, কুরআনে কারীমে এরশাদ হয়েছে, وَمَا تُنْفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ অর্থাৎ আর তোমরা যা কিছু সৎপথে ব্যয় করবে তার পুরোপুরি প্রতিদান তোমাদেরকে দান করা হবে। এবং তোমাদের উপর কোন প্রকার অবিচার করা হবে না। [সূরা আল বাক্বারা, আয়াত নং ২৭২] 
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللَّهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ অর্থাৎ শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার হুকুম দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে (দানের বরকতে) নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। [আয়াত নং ২৬৮] আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দিবা-রজনী, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে অর্থাৎ সর্বাবস্থায় দান-সদকাহ করলে সম্পদের পরিমাণ বিন্দুমাত্রও হ্রাস পায় না। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ বদলা-বিনিময় প্রাপ্তীতে সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়, পাপসমূহের মাগফিরাত হয়ে যায় এবং দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য ধন্য বান্দায় গণ্য হয়। এর বীপরীত কল্পনা-জল্পনা শয়তানী প্ররোচনা ছাড়া কিছু নয়।
উত্তম ও সর্বাধিক পূন্যময় সদকাহ
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী সাইয়েদুনা হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা এক ব্যক্তি রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আরজ করলেন ওহে আল্লাহর রাসূল! কোন সদকায় সর্বাধিক সাওয়াব পাওয়া যায়। জবাবে আল্লাহর হাবীব এরশাদ করলেন যে সদকাহ সুস্থ অবস্থায় এবং ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ করে অর্থ ব্যয় করে ফেললে নিজেই দরীদ্র হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকা অবস্থায় করা হয়। তিনি আরো বললেন আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে সেই সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করো না যখন আত্মা তোমার কন্ঠনালীতে এসে যায় এবং তুমি মরতে থাক আর বল এই পরিমাণ অর্থ অমুককে দিয়ে দাও, এই পরিমাণ অর্থ অমুক কর্মে ব্যয় করো। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ] 
অর্থাৎ মৃত্যুর লক্ষণাদী প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে সম্পূর্ণ সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক থাকাবস্থায় সম্পদের প্রতি পুরোপুরি আকর্ষণ-প্রলোভন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ প্রেমে উজ্জিবীত হয়ে তাঁরই নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অকাতরে ব্যয় করাই জীবনের উত্তম ও সর্বাধিক পুণ্যময় সদকাহ-খায়রাত।
সাইয়্যেদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহুমা বলেন যে ব্যক্তির যিম্মায় যাকাত ফরজ ছিল কিন্তু আদায় করেনি অথবা হজ¦ ফরজ ছিল কিন্তু আদায় করেনি সে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে আল্লাহর কাছে বাসনা প্রকাশ করে বলবে আমি আবার দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাই। অর্থাৎ মৃত্যু আরো কিছু বিলম্বে আসুক, যাতে আমি সদকা খায়রাত করে নিই এবং ফরজ কর্ম থেকে মুক্ত হতে চাই। যেসব ফরজ বাদ পড়েছে সেগুলো পূর্ণ করে নেব এবং যেসব হারাম ও মাকরূহ কাজ করেছি সেগুলো থেকে তাওবা করে নিব। কিন্তু আল্লাহ পাক-সাফ জানিয়ে দিলেন, يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا অর্থাৎ মৃত্যু আসার পর কাউকে কখনো অবকাশ দেয়া হবে না। সুতরাং উপরোক্ত বাসনা নিরর্থক। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকলকে উপরোক্ত দরসে কুরআনের উপর আমল করে উভয় জাহানে ধন্য হওয়ার সৌভাগ্য নসীব করেন। আমীন।

কোন মন্তব্য নেই

ইলমে দ্বীনের ফজিলত

﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١)

Blogger দ্বারা পরিচালিত.