মহিলাদের নামাযের সর্বোত্তম স্থান
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম বিধান, যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নর—নারীর উপরই ফরজ। সেই সাথে পুরুষের জন্য রয়েছে মসজিদে নামাজ পড়ার বিধান। এই বিধান কি শুধুই পরুষর জন্য নাকি নারীর জন্যও? কুরআন ও হাদিসে কী এসেছে? নারীরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে কিনা এ নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু ইখতিলাফ পরিলিক্ষত হচ্ছে। মূলত এটি কোনো ইখতিলাফের বিষয় নয়। কেননা, হাদিসে এর স্পষ্ট সমাধান রয়েছে। হয়তো আমাদের ইলমের সংকীর্ণতার কারণে অথবা দুই—একটি হাদিসের কিতাবে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করার কারণে এ মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল করিমে আল্লাহ তা‘আলা নারী জাতিকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক—জাহেলি যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন কোরো না। তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো।’ এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ : ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻋﻮﺭﺓ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﺘﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﻭﻣﺎ ﺑﻬﺎ ﻣﻦ ﺑﺄﺱ ﻓﻴﺴﺘﺸﺮﻓﻬﺎ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﻓﻴﻘﻮﻝ : ﺇﻧﻚ ﻻ ﺗﻤﺮﻳﻦ ﺑﺄﺣﺪ ﺇﻻ ﺃﻋﺠﺒﺘﻴﻪ ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻟﺘﻠﺒﺲ ﺛﻴﺎﺑﻬﺎ ﻓﻴﻘﺎﻝ : ﺃﻳﻦ ﺗﺮﻳﺪﻳﻦ ؟ ﻓﺘﻘﻮﻝ : ﺃﻋﻮﺩ ﻣﺮﻳﻀﺎ ﺃﻭ ﺃﺷﻬﺪ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﺃﻭ ﺃﺻﻠﻲ ﻓﻲ ﻣﺴﺠﺪ ﻭﻣﺎ ﻋﺒﺪﺕ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﺭﺑﻬﺎ ﻣﺜﻞ ﺃﻥ ﺗﻌﺒﺪﻩ ﻓﻲ ﺑﻴﺘﻪ
অর্থাৎ মহিলারা আপাদমস্তক পর্দায় থাকার বস্তু। নিঃসন্দেহে মহিলারা নির্দোষ অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়। অতঃপর শয়তান তার প্রতি কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, তুমি যার সামনে দিয়েই অতিক্রম করবে তার কাছেই পছন্দনীয় হবে। মহিলারা যখন কাপড় পরিধান করে তখন পরিবারের লোকজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যেতে চাচ্ছ ? তখন সে বলে, কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাচ্ছি। অথবা মাইয়্যেতের জানাযা পড়তে যাচ্ছি। অথবা মসজিদে নামায পড়তে যাচ্ছি। বস্তুত: মহিলাদের অন্দর মহলে ইবাদতের চাইতে কোন ইবাদাতই উত্তম নয়।
হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ ছিল সোনালী যুগ, সে যুগের মানুষদেরকে বলা হত স্বর্ণ মানব। মুসলিম নারীরাও ছিলেন ঈমানী চেতনায় বলীয়ান, যাদের অন্তর ছিল পূত—পবিত্র, যাদের ব্যাপারে সামান্যতম কূধারণার কল্পনাও করা যায় না। তারা হলেন কেয়ামত অবধি সকল নারী জাতির জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, আদর্শ পরাকাষ্ঠা। যাদের অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং অতুলনীয় পর্দা থাকার কারণে ফিৎনার কোন আশংকাই ছিল না। তারা রাতের আধারে কেবলমাত্র ফজর ও ইশায় আপাদমস্তক ঢেকে অত্যন্ত আড়ম্বরহীনতার সহিত অতি সংগোপনে খুব হেফাজতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার ইক্তেদার সৌভাগ্য অর্জনার্থে মসজিদে গমন করতেন। তথাপি শান্তির আধার, মানবতার মুক্তিদূত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মার্জিত ভাষায়, কোমলভাবে মসজিদে না আসার প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের ঘরের কোণকে তাদের জন্য উত্তম, উৎকৃষ্টতম মসজিদ, অধিক সওয়াবের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻭﺣﺪﻫﺎ ﺗﻔﻀﻞ ﻋﻠﻰ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻤﻊ ﺑﺨﻤﺲ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺩﺭﺟﺔ
অর্থাৎ মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়া অপেক্ষা ঘরে নামাজ পড়ায় পঁচিশ গুণ ছওয়াব বেশী হয়। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামার কয়েকটি অমূল্যবাণী তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম।
ক. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,
صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِي بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي حُجْرَتِهَا وَصَلَاتُهَا فِي مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِي بَيْتِهَا
অর্থাৎ নারীর জন্য নির্ধারিত হুজরার নামায অপেক্ষা তার ঘরে নামায পড়া উত্তম, আর ঘরে নামায অপেক্ষা নিভৃত ও একান্ত কোঠায় নামায পড়া উত্তম।
খ. হযরত উম্মে হুমায়দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত -
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓِ ﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺍﻟﺴَّﺎﻋِﺪِﻱِّ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﺟَﺎﺀَﺕْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧِّﻲ ﺃُﺣِﺐُّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻣَﻌَﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪْ ﻋَﻠِﻤْﺖُ ﺃَﻧَّﻚِ ﺗُﺤِﺒِّﻴﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻣَﻌِﻲ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺑَﻴْﺘِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﺣُﺠْﺮَﺗِﻚِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺣُﺠْﺮَﺗِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِﻙِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِﻙِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﻮْﻣِﻚِ ﻭَﺻَﻠَﺎﺗُﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﻗَﻮْﻣِﻚِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻚِ ﻣِﻦْ ﺻَﻠَﺎﺗِﻚِ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِﻱ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺄَﻣَﺮَﺕْ ﻓَﺒُﻨِﻲَ ﻟَﻬَﺎ ﻣَﺴْﺠِﺪٌ ﻓِﻲ ﺃَﻗْﺼَﻰ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﺘِﻬَﺎ ﻭَﺃَﻇْﻠَﻤِﻪِ ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻓِﻴﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺣﻤﺰﺓ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﺰﻳﻦ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ)
অর্থাৎ একদা হযরত উম্মে হুমাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আপনার সঙ্গে নামাজ পড়তে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে নামায পড়তে ভালোবাসো, কিন্তু তোমার ঘরে নামায তোমার বাইরের হুজরায় নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার হুজরায় নামায তোমার বাড়িতে নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার বাড়িতে নামায তোমার মহল্লার মসজিদে নামায অপেক্ষা উত্তম। আর তোমার মহল্লার মসজিদে নামায আমার মসজিদে নামায অপেক্ষা উত্তম। অতঃপর উক্ত মহিলা সাহাবী নিজ ঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নামাযের স্থান নির্ধারণ করে নিলেন এবং আমরণ তাতেই নামায আদায় করলেন।
গ. উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻋَﻦْ ﺃُﻡِّ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺧَﻴْﺮُ ﻣَﺴَﺎﺟِﺪِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻗَﻌْﺮُ ﺑُﻴُﻮﺗِﻬِﻦَّ
অর্থাৎ গৃহাভ্যন্তরই হলো নারীদের জন্য উত্তম মসজিদ।
উপরোক্ত সহিহ হাদিসসমূহ দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয়াদি প্রমাণিত হয়: ক. নারীদের নামাযের জন্য তাদের নিজ গৃহকোণ মসজিদ অপেক্ষা উত্তম। খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই নারীদেরকে মসজিদে গমনের প্রতি নিরুৎসাহিত করেছেন। গ. আর হাদিসের কয়েকটি বর্ণনা, যা নারীদের মসজিদে আসা প্রসঙ্গে পাওয়া যায়,(যেমন: যদি নারীরা তোমাদের নিকট মসজিদে গমনের অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও। ‘তোমরা তোমাদের নারীদের মসজিদে যাতায়াতে বাধা দিও না। তবে তাদের ঘরই তাদের (নামাযের জন্য) উত্তম স্থান।’ ‘তোমাদের নারীদেরকে রাতের বেলায় মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেবে।’ ) তা প্রাথমিক যুগের কথা, তখন নারী- পুরুষ কেউ ইসলামের সকল মাসআলা জানতেন না, তখন কয়েকটি কঠিন শর্তসহকারে রাতের আঁধারে নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে একদম পেছনের কাতারে নারীদের দাঁড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দৈনন্দিন জীবনের নিত্য নতুন শরীয়তের বিভিন্ন হুকুম, আহকাম অবতীর্ণ হত, সে সকল বিষয় জানার জন্যও মহিলাদের মসজিদের জামাআতে আসার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া মহিলাদের অনেক জটিল বিষয়ে মাসআলা জানার প্রয়োজন হত, যা স্বয়ং রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই কেবল সমাধান দিতে পারতেন। তাই নারীদের মসজিদে আসার ব্যাপারে বাধা দিতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে কিতাবাদী, আলেমদের ওয়াজ, নসীহত ও আরো বিভিন্ন পদ্ধতিতে শরীয়তের বিষয়াদির প্রচার—প্রসার ঘটেছে, কাজেই মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং ওইসব হাদিস দ্বারা বর্তমানে নারীদের মসজিদে গমন জায়েয বলা যাবে না।
জুমু’আর নামাজে নারীদের অংশগ্রহণ: হাদিসের আলোকে জুমু’আর দিনে মুসলিম উম্মাহর করণীয় বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। আমলগুলো করার মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান ফজিলত লাভ করে। তবে, যে আমলগুলো মসজিদে যাওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো মূলত পুরুষদের জন্য। বাকি যে আমলগুলো রয়েছে, তার সবগুলোই নারী-পুরুষ উভয়ই করতে পারেন। যেমন- গোসল করা, নখ কাটা, বেশি বেশি দরুদ পাঠ, সুরা কাহাফ তেলাওয়াত, দোয়ার প্রতি মনোনিবেশ করা ইত্যাদি। নারীরা জুমু’আর নামাজের পরিবর্তে ঘরে যোহরের নামাজ আদায় করবে। উল্লেখ্য, অনেক মহিলা মনে করেন, পুরুষ জুমু’আর পর ঘরে ফেরার আগ পর্যন্ত নামাজ পড়া যাবে না। এটি সঠিক নয়। জুমু’আর নামাজের সময় হওয়ার পর বিনা প্রয়োজনে বিলম্ব করা নারীদের উচিত নয়। আসলে নারী-পুরুষ কারো জন্যই উচিত নয়। বিশেষত যখন নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত হয়ে যায়। তাই জুমার দিনে নারীরা যোহরের নামাজের মুস্তাহাব সময় হওয়ার পর নিজ গৃহে নামাজ আদায় করতে পারবেন। চাই ওই সময় মসজিদে জুমুআর জামাত হোক বা না হোক। শুক্রবার যোহরসহ যেকোনো দিন যেকোনো ওয়াক্তের নামাজ নারীরা মুস্তাহাব সময় দেখে আদায় করবেন। পুরুষদের ঘরে ফেরার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
জুমুআর নামাজ নারীদের উপর ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও নারীরা জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে আলাদা সুব্যবস্থা রাখার জন্য অনেকে নিজেদের সর্বস্ব বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। তারা মনে করে, এটা অনেক বড় সাওয়াব ও পুণ্যের কাজ। কারো মাতমে প্রভাবিত না হয়ে আমাদের দেখতে হবে, বুঝতে হবে ইসলামী শরীয়ত নারীদের ওপর জুমু’আর নামায পড়ার বিধান রেখেছে কি না? হাদীসের বিশাল ভান্ডার অনুসন্ধান করে দেখা যায়, নারীদের ওপর জুমু’আ ওয়াজিব নয়। তাদের জন্য কোনো জুমু’আ নেই। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِي جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِيٌّ أَوْ مَرِيضٌ
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জামাতে জুমু’আর নামায পড়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অকাট্য ওয়াজিব, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়। অপর বর্ণনায় হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা’ব আল কুরাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে তার ওপর জুমু’আ ফরয, তবে ক্রীতদাস, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব নয়।”
সাহাবায়ে কেরামের পদক্ষেপ: সাহাবায়ে কেরামের যুগে কোনো নারী জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে চলে এলে তাঁরা তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? নিম্নের বর্ণনাসমূহ দ্বারা বিষয়টি অনুধাবন করা যায়। এ প্রসঙ্গে হযরত আমর শাইবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি (এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকাহবিদ) সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে দেখেছি যে, তিনি জুমু’আর দিনে নারীদেরকে মসজিদ হতে বের করে দিতেন এবং বলতেন, তোমরা নিজ ঘরে চলে যাও, তোমাদের জন্য ইহাই উত্তম। তিনি শপথ করে বলতেন,
ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺤﻠﻒ ﻓﻴﺒﻠﻎ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻤﻴﻦ : ﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺼﻠﻰ ﻟﻠﻤﺮﺃﺓ ﺧﻴﺮ ﻣﻦ ﺑﻴﺘﻬﺎ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺣﺞ ﺃﻭ ﻋﻤﺮﺓ ﺇﻻ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻗﺪ ﻳﺌﺴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﻌﻮﻟﺔ ﻭﻫﻲ ﻓﻲ ﻣﻨﻘﻠﻴﻬﺎ . ﻗﻠﺖ : ﻣﺎ ﻣﻨﻘﻠﻴﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻋﺠﻮﺯ ﻗﺪ ﺗﻘﺎﺭﺏ ﺧﻄﻮﻫﺎ —
অর্থাৎ মহিলাদের জন্য তার অন্দর মহল থেকে উত্তম নামাযের কোন স্থান নেই। তবে দুই ধরণের মহিলা ব্যতীত। যথা-ক. হজ এবং ওমরায় গমনকারিনী। খ. ঐ মহিলা যে তার স্বামী থেকে নিরাশ হয়ে গেছে এবং নিজের মুনকালীন এ আছে। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, মুনকালীন—এ থাকার অর্থ কী? তিনি বললেন, এমন বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া যে, অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে কাছে কাছে পা পড়ে। আল্লামা তবারানী আল-মু’জামূল কাবীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর প্রত্যেকটি বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। আল্লামা হাইসামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
আমীরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যুগে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা জুমু’আর নামাজ পড়ার জন্য কোনো নারী মসজিদে এলে তার দিকে ছোট ছোট পাথর মেরে তাঁকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং মহিলাদের মসজিদে গমনে বাঁধা দিতেন।
উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে বুঝা গেল, সাহাবায়ে কেরাম নারীদের জুমু’আর নামায আদায় করার জন্য মসজিদে ব্যবস্থা রাখা তো দূরের কথা, কেউ চলে এলে তাঁকে বারণ করতেন এবং বের করে দেওয়ার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। উল্লেখ্য, তাঁদের এই পদক্ষেপ নারী জাতিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আল্লাহর আযাব থেকে তাদের এবং মুসলিম উম্মাহকে বাঁচানোর জন্য ছিল। এই হলো ইসলামের সোনালি যুগের ঘটনা। যে যুগের লোকদের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হওয়ার স্বীকৃতি স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের মুবারক যবানে দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পর আজও সাহাবাদের আমল থেকে বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের শিক্ষণীয় অনেক কিছুই আছে। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻟﻮ ﺭﺃﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺃﺣﺪﺙ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻟﻤﻨﻌﻬﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻛﻤﺎ ﻣﻨﻌﺖ ﻧﺴﺎﺀ ﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ . ﻓﻘﻠﺖ ﻟﻌﻤﺮﺓ ﺍﻭ ﻣﻨﻌﻬﻦ؟ ﻗﺎﻟﺖ ﻧﻌﻢ . ﻛﺎﻥ ﻧﺴﺎﺀ ﺑﻨﻲ ﺇﺳﺮﺍﺋﻴﻞ ﻳﺘﺨﺬﻥ ﺃﺭﺟﻼ ﻣﻦ ﺧﺸﺐ ﻳﺘﺸﺮﻓﻦ ﻟﻠﺮﺟﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻓﺤﺮﻡ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺳﻠﻄﺖ ﻋﻠﻴﻬﻦ ﺍﻟﺤﻴﻀﺔ .
অর্থাৎ যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতেন যে, নারীরা সাজসজ্জা গ্রহণে, সুগন্ধি ব্যবহারে ও সুন্দর পোশাক পরিধানে কী পন্থা উদ্ভাবন করেছে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন, যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনী ইসরাঈলের নারীদেরকে। বনী ইসরাঈলের মহিলারা উঁচু উঁচু কাঠের পা বানিয়ে নিতো। যাতে মসজিদে গিয়ে এগুলো ব্যবহার করে উঁকি মেরে পুরুষদের দেখতে পায়। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা অসুন্তুষ্ট হয়ে তাদের মসজিদে যাওয়া হারাম করে দিয়েছেন এবং তাদের উপর ঋতুস্রাবের সমস্যা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।
বুখারী শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘হযরত আয়েশা ছিদ্দিীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার এই মন্তব্য তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায়ের কিছুদিন পরের নারীদের সম্পর্কে। অথচ আজকের যুগের নারীদের উগ্রতা আর বেহায়াপনার হাজার ভাগের এক ভাগও সে যুগে ছিল না। তাহলে এ অবস্থা দেখে তিনি কী মন্তব্য করতেন?’ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজ যুগ তথা হিজরি নবম শতাব্দীর নারীদের সম্পর্কে এ কথা বলেছেন। তাহলে আজ হিজরি পঞ্চদশ শতাব্দীতে সারা বিশ্ব যে অশ্লীলতা আর উলঙ্গপনার দিকে ছুটে চলেছে, বেপর্দা আর বেহায়াপনার আজ যে ছড়াছড়ি, মেয়েরা যখন পুরুষের পোশাক পরিধান করছে, পেট-পিঠ খুলে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অবলা মা-বোনদের সওয়াবের স্বপ্ন দেখিয়ে মসজিদে আর ঈদগাহে টেনে আনার অপচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অথচ এর জন্য দলিল দেওয়া হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার যুগের নারীদের দ্বারা। এ যুগের নারীরা কি সে যুগের নারীদের মতো? কস্মিনকালেও নয়। তা সত্ত্বেও সে যুগেই নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে এ যুগের নারীদের মসজিদে ও ঈদগাহে গিয়ে নামাযের জন্য উৎসাহ দেওয়া যায়? বরং বর্তমানে নারীদের বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, পর্দাহীনতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেতনা-ফ্যাসাদ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এসব ফেতনা-ফ্যাসাদ থেকে বাঁচার জন্যই মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: ‘ফেতনা-ফ্যাসাদ হত্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর অপরাধ।’ তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফতওয়া হলো- বর্তমান ফিৎনার যুগে কুলুষযুক্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বৃদ্ধা, যুবতী, কিশোরী, কোন মহিলারই মসজিদে গমন বৈধ হবে না। মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত, জুমু’আ, তারাবীহ ও ঈদের নামাযসহ যে কোন নামায জামাআতে আদায় করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়া বা মসজিদে যাওয়া মাকরূহে তাহরীমী।” মসজিদে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত আমলগুলোর সওয়াব না পাওয়ার ক্ষেত্রে আক্ষেপ করে থাকেন অনেক নারী। তাদের জন্য আলেমদের বক্তব্য হচ্ছে- আপনারা বাড়ির মাহরামদেরকে ওসব আমলের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। তাদেরকে উক্ত আমলগুলোর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করতে পারেন। যেমন- উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, দ্রুত মসজিদে যাওয়া, পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া, তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা, মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা এবং জুমার নামাজ আদায় করা। এসব সাধারণত পুরুষদের আমল। কিন্তু আপনি মেয়ে হলেও তাদেরকে উক্ত আমলে উৎসাহ দেওয়ার কারণে বা সহযোগিতার কারণে আপনিও ওই আমলের সওয়াব পেয়ে যাবেন। কারণ কেউ কোনো ভালো কাজের দিকে অপরকে আহ্বান করলে, সেই আহ্বানকারীও উক্ত ভাল কাজের সওয়াব পেয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বলেছেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে। অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে। তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।
অতএব, কুরআন ও হাদীসের আলোকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মুফতীগণের নির্ভরযোগ্য অভিমতের ভিত্তিতে এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, নারীদের মসজিদে গিয়ে পুরুষদের সাথে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ শরীয়ত বহির্ভূত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ না করলেও, গমন করার প্রতি নিরুৎসাহ প্রদানই একথা প্রমাণ করে যে, তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আন্তরিক ইচ্ছা ছিল যে, নারীরা যেন ঘর থেকে বের না হয়। তবে বিশেষ কিছু ফায়েদা ও প্রয়োজনে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেন নি। কিন্তু পরবর্তিতে সাহাবায়ে কেরামের যুগে যখন সে ফায়েদা ও প্রয়োজনের অবকাশ রইল না, তখন সাহাবায়ে কেরাম চিরকালের জন্য রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়ন করেছেন।
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর যুগে যখন মহিলাদের পরিবর্তিত অবস্থা পরিলক্ষিত হয় এবং ফিতনার আশঙ্কাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তখন উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দীকা, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) সহ বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম নারীদের মসজিদে না আসার আদেশ জারি করলেন। অন্য সাহাবায়ে কেরামও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেন। কেননা তাঁরা জানতেন, মহিলাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নির্দেশের বিরোধিতা করা হয়নি; বরং তাঁর ইচ্ছারই প্রতিফলন হয়েছে। তাই এটার উপর সকল সাহাবায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষন করেন। সুতরাং এটা সর্বকালের সর্বসাধারণ সকলের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। আর এই সর্বসম্মত হুকুম উপেক্ষা করে বৈধতার ফতোয়া দেয়া ও তা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা চালানো ঈমানদারের কাজ নয়। কোরআনুল করিমে ইরশাদ হচ্ছে: “যারা হযরত সাহাবা-ই-কিরামগণকে (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ইখলাছের সাথে অনুসরণ করবে, তাঁদের প্রতিও আল্লাহ্ তায়ালা সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট।” হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত অবশ্যই পালনীয়।” এ প্রসঙ্গে ইরবায ইবনে সারিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
قال عرباض : صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبح ذات يوم، ثم أقبل علينا، فوعظنا موعظة بليغة ذرفت منها العيون، ووجلت منها القلوب، فقال قائل : يا رسول الله! كأن هذه موعظة مودع، فماذا تعهد إلينا؟ فقال : أوصيكم بتقوى الله، والسمع والطاعة، وإن كان عبدا حبشيا، فإنه من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا. فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين، تمسكوا بها، وعضوا عليها بالنواجذ
অর্থাৎ ইরবায ইবনে সারিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন। এরপর আমাদের দিকে ফিরে এক সারগর্ভ বক্তৃতা করলেন। এতে আমাদের চোখ অশ্রুসজল হল এবং হৃদয় ভীতকম্পিত হল। একজন আরজ করলেন, আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়কালের উপদেশ। আপনি আমাদের (আরো) কী অসীয়ত করছেন? আল্লাহর রাসূল বললেন, তোমাদেরকে অসীয়ত করছি আল্লাহকে ভয় করার এবং আমীর হাবাশী গোলাম হলেও তার আনুগত্য করার। কারণ আমার পর তোমাদের যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু ইখতিলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়েতের পথের পথিক খলীফাগণের সুন্নাহকে সর্বশক্তি দিয়ে ধারণ করবে।
আর যেখানে গৃহে নামাজ পড়া মসজিদে নামাজ পড়ার চাইতে বেশি সাওয়াব ফযিলতের কারণ হয় তবে কোন আশায় বর্তমান সময়ের মহিলারা সেই গৃহ ছেড়ে মসজিদে আগমন করতে চায়ৃ..? হ্যাঁ যদি কোথাও যাওয়ার পথে নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশংকা হয় এবং নারীদের মসজিদে যাওয়ার পরিবেশ সম্পূর্ণ অনকূল হয়, তবে তাদের শালীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার পুরোপুরি নিশ্চয়তা থাকার শর্তসাপেক্ষে সফররত নারীরা মসজিদে (পৃথক নারী ইবাদতখানায়) গিয়ে একাকী নামাজ পড়তে পারবে।
লেখক :আরবি প্রভাষক, তাজুশ শরীয়াহ দরসে নিযামী মাদরাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
খতিব,রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।
কোন মন্তব্য নেই