Header Ads

Header ADS

প্রসঙ্গ: সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ ও রোজা

আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আল কাদেরী

একথা চিরন্তন সত্য যে, ইসলামী আইন-কানুনের মধ্যে শরিয়তের ইমামগণ ও মুজতাহিদগণের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য বিদ্যমান। যেমন হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী মাজহাব সমূহ তারই জ্বলন্ত নমুনা। আবার হানাফী ফকিহগণের মধ্যেও অনেক হুকুম আহকামে মুতাকাদ্দেমীনে আহনাফ (পূর্ববর্তী হানাফী ওলামা) ও মুতাখেরীনে আহনাফ (পরবর্তী হানাফী ওলামা) গণের মধ্যে শাখা-প্রশাখা ও খুঁটি-নাটি বিষয়ে অনেক মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। সুতরাং কোন একটা বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগে যাচাই-বাচাই একান্ত অপরিহার্য। অবশ্যই দেখতে হবে যে অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহগণের মত কোন্‌টা তা না দেখে খেয়াল-খুশীমত যে কোন একটা সিদ্ধান্ত জনসমাজে প্রকাশ করা ইসলামী শরিয়ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সমতুল্য।

সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ করার ব্যাপারটাও তদ্রুপ ইমামগণ ও ফকীহগনের মাঝে বিতর্কিত মাছয়ালা। ফেকাহ বা আইনশাস্ত্রের প্রায় কিতাবে এবং হাদীসের বিভিন্ন শরুহাতে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে পেপার-পত্রিকায় এ মাছয়ালা নিয়ে কিছু লেখা-প্রবন্ধ দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তাই গবেষণা এবং যথার্থ বিশ্লেষণের আলোকে হক কথা প্রচারের উদ্দেশ্যে হাতে কলম নিয়েছি। বস্তুত: অধিকাংশ হাদীস ও ওলামাগণের বয়ান থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা সম্ভবপর নয় এবং ইহা হানাফী পরবর্তী সমস্ত ফকীহগণের চূড়ান্ত রায়। যদিও হানাফী পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করার ব্যাপারে রায় প্রদান করেছেন, কিন্তু হানাফী মাজহাবের পরবর্তী ফকীহগণ ও শাফেয়ী মাজহাবের অধিকাংশ ইমামগণ সারা বিশ্বে দিন-কাল ও সময়ের পরিবর্তনের কারণে বিশেষত: চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতার কারণে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা যাবে না, যেহেতু নামাজ যেমনিভাবে সূর্যের গতি ও সময়ের উপর নির্ভরশীল, তেমনি রোজা ও ঈদ চন্দ্র উদয়ের সময়সীমার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ সারা বিশ্বে সূর্য উদয়ের ভিন্নতা যে রকম গ্রহণীয় তদ্রুপ অধিকাংশ পরবর্তী ইমামগণের মতে চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতাও গ্রহণীয়। বিজ্ঞানও একথার স্বীকৃতি বহন করে।

সুতরাং পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে অপর প্রান্তে রোজা ও ঈদ পালন করা শুদ্ধ হবে না। কয়েকটি প্রমাণ নিম্নে প্রদত্ত হলো:

প্রথমত: হাদীসে কোরাইব: হযরত কোরাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন যে, তাঁকে উম্মুল ফজল বিনতে হারেছ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) হযরত মুয়াবিয়ার নিকট সিরিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী কোরাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন যে, আমি সিরিয়ায় হাজির হয়ে দেখলাম যে, মাহে রমজানের নতুন চাঁদ আমাদের মাঝে উদয় হয়েছে। আমরা সিরিয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত জুমার রাতে রমজানের চাঁদ দেখেছি। অতঃপর আমি রমজান মাসের শেষভাগে মদিনায় গমন করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) আমাকে রমজানের চন্দ্র সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তদুত্তরে আমি বললাম যে, আমরা জুমার রাতে চাঁদ দেখেছি। পুন: জিজ্ঞাসা করায় আমি বললাম: সিরিয়াবাসীও দেখেছে, তারা এবং বিশেষত: হযরত মুয়াবিয়া (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) রোজাও শুরু করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললেন, আমরা (মদিনায়) শুক্রবার দিবাগত রাতে রমজানের চাঁদ দেখেছি, ফলে আমরা রমজান মাসের ৩০ দিন পরিপূর্ণ করব, অথবা ঈদের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা পালন করব। হযরত কোরাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললেন, হযরত মুয়াবিয়ার দেখা ও রোজা শুরু করা কি যথেষ্ট নয়? ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) পরিস্কার সূরে বললেন যে, না। এ রকমই আল্লাহর প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করেছেন। (তিরমিযি শরীফ-সিয়াম পর্ব)।

উপরোক্ত হাদীসের আলোকে অন্যান্য ইমামগণ বিশেষত: হানাফী পরবর্তী আলেমগণ দূরবর্তী দেশের জন্য চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা গ্রহণ করেছেন। হাফেজুল হাদীস ওছমান বিন আলী জাইলয়ী হানাফী 'শারহুল কান্‌জ' কিতাবে মুতাখেরীনে আহনাফ বা পরবর্তী হানাফী ওলামাগণের মতের উপর রায় প্রদান করেছেন। অবশ্য নিকটতম শহরসমূহের মধ্যে চন্দ্র উদয়স্থল এক হওয়ায় কোথাও চন্দ্র উদেয়র শাহাদত পাওয়া গেলে স্থানীয় সকলের উপর রোজা ও ঈদ পালন করা ফরজ হবে। নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহরসমূহের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে গিয়ে আল্লামা শাব্বির আহমদ ওছমানী মুছলীম শরীফের শরাহ "ফতহুল মুলহিম” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, দুই দেশের মধ্যে সময়ের ক্ষেত্রে এক দিনের চেয়ে বেশি ব্যবধান হলে উভয় দেশকে দূরবর্তী মনে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এক দেশের চন্দ্র দেখা অপর দেশের জন্য দলিল হবে না। আবার কেউ কৌট বলেন, যে দেশ বা শহর পায়ে হেঁটে বা স্বাভাবিক নিয়মে অতিক্রম করতে কমপক্ষে এক মাসের সময় লাগে,সে শহরে রোজা ও ঈদ পালন করা অন্য শহরের চাঁদ উদয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। (জাওয়াহের)

আর কারো মতে যতদূর এলাকায় একই তারিখে বা সময়ে চন্দ্র উদয় হতে দেখা যায় এতটুকু বিস্তৃত এলাকাকে একদেশ মনে করে সে এলাকার যে কোন স্থানে চন্দ্র উদয়ের সার্থী পাওয়া গেলে উক্ত গোটা এলাকায় রোজা ও ঈদ পালন করতে হবে। আর তা না হলে বরং ভিন্ন সময়ে চন্দ্র উদয় হলে ভিন্ন তারিখে রোজা ও ঈদ করতে হবে। যেমন আরব দেশে যে তারিখে চন্দ্র উদয় হতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিপরীত তারিখে উদয় হয়। সুতরাং উভয়দেশ এক হুকুমের আওতায় আসতে পারে না। তদপনি হানাফী পূর্ববর্তী আলেমগণ বিশ্বের কোন এক স্থানে চাঁদ দেখা গেলে সারা দেশে একই সময়ে রোজা ও দদ করার মধ্যে শরীয়ত সমর্থিত প্রমাণের শর্তারোপ করেছেন। যথা: (১) নির্দিষ্ট তারিখেই চাঁদ দেখা সংক্রান্ত সাক্ষী কাজী বা বিচারকের নিকট চন্দ্র দেখা না যাওয়া স্থানে প্রদান করতে হবে। অথবা (২) বিভিন্ন দল উপদল হাজির হয়ে প্রমাণ পেশ করতে হবে। (রদ্দুল মোহতার)।

নির্দিষ্ট তারিখের পরে হলে বা রেডিও, টেলিভিশন, বেতারযন্ত্র অথবা অন্য কোন যান্ত্রিক উপায়ে বিশ্বের কোন এক প্রান্তে চন্দ্র দেখার খবর প্রচার করলে হানাফী ফকীহগণের মতেও অন্য দেশে রোজা ও ঈদ পালন করা শুদ্ধ হবে না। যেহেতু রোজা ও ঈদ পালন করা চন্দ্র দেখার সাক্ষীর উপর ভিত্তি, খবরের উপর নয়। তদুপরি যান্ত্রিক উপায়ে খবর প্রচারে মিথ্যার অবকাশ থাকায় ও যান্ত্রিক অসুবিধা বিরাজ করায় ফকীহগণ তা সমর্থন করেননি। যেমনিভাবে ফাছেক বা কবিরা গুনাহ্গারের সাক্ষীর মধ্যে মিথ্যার অবকাশ থাকায় শরিয়তে তা গ্রহণযোগ্য নয় (বাহারে শরিয়ত)। বর্তমান বিশ্বের কোথাও আদালত বা বিচার বিভাগে শাহাদতের স্থলে টেলিফোন বা যান্ত্রিক মারফত খবরের উপর ভিত্তি করা হয় না, বরং প্রয়োজনে সাক্ষী প্রদানের উপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দ্বিতীয়ত: 'তাতারখানীয়া' নামক হানাফী মাজহাবের গ্রহণযোগ্য কিতাবে ছত্তম পর্বে উপরোক্ত মাছয়ালায় ইমামগণের মতানৈক্য বর্ণনা করার পর শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হানাফী বিশেষজ্ঞগণের মতে যে সমস্ত দেশ সমূহে চন্দ্র উদয় স্থলের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় ঐ সমস্ত দেশের জন্য এক দেশে চন্দ্র দেখা অন্য দেশের জন্য যথেষ্ট হবে না। 'নহরে ফায়েক' গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ইহার উপরই ফতোয়া। 'মারাকিউল ফালাহ' গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, ইহাকেই ছাহেবের তাজরীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বেছে নিয়েছেন তবকার উল্লেখযোগ্য ফকীহ মুফতি আবু ছাঈদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) 'শরহে মারাকিউল ফালাহ' কিতাবে লিখেছেন যে, ছাহেবে তাজরিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইহাই বেছে নিয়েছেন। এর উপরই ফতোয়া। তদুপরি 'তাতারখানিয়া' গ্রন্থে হানাফী ৪র্থ তবকার অন্যতম ফকিত্ব ইমাম কুদুরীর বরাত দিয়ে এ কথা ব্যক্ত করা হয়েছে যে, ইমাম কুদুরীর মতে দুই দেশের মধ্যে যদি এতটুকু তফাত হয় যে চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় না, তবে উক্ত দুই দেশের মধ্যে যে কোন এক অঞ্চলে চন্দ্র দেখা গেলে অপর দেশেও তা অনুসরণ করা হবে, নতুবা অনুসরণ করা যাবে না। এ কথার উপর ৩য় তবকার ইমাম শামছুল আয়েম্মা খলওয়ানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, ইহা আমাদের তথা হানাফীদের ছহি কাওল। (তাতারখানীয়া ছওম পর্ব)। তৃতীয়ত: 'জাওয়াহেরে নফীছা শরহে দুরায়ে মনিফা' গ্রন্থে আছে যে, চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয় বরং কোন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলে অপর দেশেও তা অনুসরণ করতে হবে। ইহাই অধিকাংশ মুতাকাদ্দেমীনের মত। অবশ্য ইমাম যাইলাঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হওয়াই অধিকতর উত্তম। (জাওয়াহেরে নফীছা-ছওম পর্ব) চতুর্থত: তবকার প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম তাহতাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, 'এখতেলাফে মাতালেয়' বা চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য। এবং ইহাকেই ছাহেবে তাজরীদ এখতেয়ার করেছেন। আর এটাই উত্তম কণ্ডল। (তাহতাবী-হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ, ছত্তম পর্ব)।

পঞ্চমত: হানাফী মাজহাবের অন্যতম তবকার ফকীহ ইমাম কাছানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন যে, দুই প্রদেশের মধ্যে যদি চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত না হয়, তবে উক্ত দুই দেশের এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে অপরপ্রান্তেও রোজা বা ঈদ পালন করতে হবে।

হ্যাঁ, যদি অনেক তফাত হবার কারণে চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় তবে এক দেশের দেখা অপর দেশের জন্য যথেষ্ট হবে না। ইহাই বিশুদ্ধমত। (বাদায়ে চানায়ে-ছওম পর্ব, ২য় খন্ড, পৃ.৮৩)

ষষ্ঠত: হানাফী মাজহাবের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফতোয়াগ্রন্থ 'আল ফতোয়াস্ সিরাজিয়ায়' উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিন্তু যদি উভয় দেশের মধ্যে খুব বেশী দূরত্ব হয় যে, চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তখন তা গ্রহণ যোগ্য হবে। (ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া। পৃ.৩১)

উল্লেখিত তবকার গ্রহণযোগ্য কিতাবসমূহ যেমন-তাতারখানীয়া, নহরে ফায়েক, মারাকিউল ফালাহ, শরহে মারাকিউল ফালাহ, জাওয়াহেরেনফীচা, তাহতাবী হাশিয়ায়ে মারাকিউল ফালাহ ও বাদায়ে-ছানায়ে এবং হানাফী মাজহাবের তবকার উল্লেখযোগ্য ফকীহ যেমন-মুফতি আবু ছাইদ, ছাহেরে তাজরীদ, ইমাম কুদুরী, ইমাম শামছুল আয়েম্মা খলওয়ানী, ইমাম যাইলাঈ, ইমাম তাহতাবী এবং ইমাম কাছানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখের বয়ান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হানাফী পরবর্তী ফকীহ ও মুহাক্কেকীনে আহনাফের মতে প্রথম হেলাল দর্শনকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা বা ঈদ পালন করা যাবে না। এটাই তাঁদের চূড়ান্ত রায় এবং ফতোয়া।

হ্যাঁ, যদি বৃহত্তম মুসলিম ঐক্য এবং ইসলামী চেতনা জোরদার করার জন্য বিশ্বের যে কোন প্রান্তে প্রথম হেলাল দর্শনকে ভিত্তি করে সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করলে অনেক দেশে রোজার মাস ২৮ দিনে পরিগণিত হয়ে যায় এবং তা সম্পূর্ণ হাদীস শরীফের পরিপন্থী। কেননা রাসূলে মাকবুল (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন যে, চন্দ্রমাস ২৯ কিংবা ৩০ দিনে সমাপ্ত হয়। (মেশকাত শরীফ)। (২৮ দিনে কিংবা ৩১ দিনে চন্দ্র মাস হিসাব হয় না) দ্বিতীয়ত: অনেক সময় প্রথম হেলাল দর্শনকে নিয়ে সারা বিশ্বে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে রোজা বা ঈদ পালনে যথেষ্ট দুর্দশা ভোগতে হবে-এ কথায় সন্দেহ নেই। যেমন কোন কোন সময় বাংলাদেশের মত একটা ক্ষুদ্র দেশেও চন্দ্র উদয়ের তারিখে ভিন্নমত পোষণ হওয়ায় শবে বরাত ও অন্যান্য ইবাদত পালনে মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত: বর্তমান সারা বিশ্বে শাফেয়ী বা অন্যান্য মতাবলম্বী ও যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। ফলে সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা বা ঈদ পালন করা কোন প্রকারে হতে পারে না। যেহেতু অনেকের মতে চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্ন তা গ্রহণীয়।

সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে একই দিনে রোজা, ঈদ পালন করার জন্য বাংলাদেশের কিছু কিছু স্থানে সাধারণ জনসাধারণকে বাধ্য করা হচ্ছে। যা আর এক নূতন ফিতনা সৃষ্টির পাঁয়তারা। অথচ বর্তমানে আরব বিশ্বেও একই দিনে রোজা ঈদ পালন করা হয় না। যেমন কাতার, মসকেট, মিসর ও ইরাকসহ অনেক আরব দেশে রোজা ঈদ পালনে সৌদি আরবকে অনুসরণ করা হয় না। বরং নিজ নিজ দেশে চন্দ্র উদয়ের প্রেক্ষিতে রোজা-ঈদ ও কোরবানী ইত্যাদি পালন করা হয়, বিধায় একই দিনে রোজা ও ঈদ পালনের প্রশ্নই অবান্তর।

আরো উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের প্রখ্যাত মুফতি ও ইসলামী স্কলারগণ যেমন ঢাকা আলীয়ার সাবেক প্রধান মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি এবং ঢাকা বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক খতিব সর্বজন শ্রদ্ধেয় অসংখ্য কিতাবের রচয়িতা আল্লামা মুফতি আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ঢাকা), প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও মুফতি আল্লামা আমিন, (চট্টগ্রাম), ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, (চট্টগ্রাম), আল্লামা মুফতি ফোরকান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, (চট্টগ্রাম), শাইখুল হাদীস আল্লামা ফজলুল করিম নকশবন্দী, (লক্ষীপুর), আল্লামা সৈয়দ আবেদ শাহ মুজাদ্দেদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, (হাজীগঞ্জ), সহ দেশের প্রখ্যাত ও বরণিয় ফকিহ, মুফতি ও মুহাদ্দিসগণ চন্দ্র উদয়ের ভিন্নতাকে গ্রহণ করত: স্বীয় দেশের আকাশের চন্দ্র উদয়ের হিসেবে রোজা-ঈদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছেন। অথচ উপরোক্ত হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ফেকাহ্-ফতোয়ায় এবং কোরআন-হাদীসের জ্ঞানে বর্তমান যুগের আলিমদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী ও অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁদের অসুসরণ ও অনুকরণ আমাদের জন্য যথেষ্ট। ইহা মূলত: একটি মীমাংসীত বিষয়। সুতরাং এ সব বিষয়ে ফিতনা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য ধর্ম প্রাণ মুসলমানগণের প্রতি অনুরোধ রইল।

লেখক,সাবেক অধ্যক্ষ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া, চট্টগ্রাম। 

সাবেক চেয়ারম্যান,আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা (ওএসি) বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.