Header Ads

Header ADS

কদর রজনীর ফজিলত ও আমল



মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম 

আজ দিবাগত রাত বরকতময় পাঁচ রাতের অন্যতম রজনী শবে কদর। شب (শব) শব্দটি ফার্সী, এর অর্থ রাত। قدر (ক্বদর শব্দটি আরবী। এর অর্থ মহিমান্বিত, সম্মান-মর্যাদা। শবে ক্বদর অর্থ-‘মহিমান্বিত রাত’। আরবী ভাষায় বলা হয়- ليلة القدر। যেমন বলা হয়-

ليلة العظمة والشرف من قول الناس لفلان عند 
الامير قدرٍ اى جاءٍ وقدر منزلة
 
অর্থাৎ মর্যাদাবান ও মহত্বের রাত যেমন বলা হয়ে থাকে আমিরের কাছে অমুক ব্যক্তির কদর আছে অর্থ সম্মান মর্যাদা ও প্রতিপত্তি রয়েছে।
[আল্লামা আযহারী, তাফসীরে কাশফুল আসরার, ১ম খন্ড-, ৫৫৮পৃ.] 

شب قدر است اودريات اورا امان يابى چوبرخوانى بداتش

অর্থ: সে তো মর্যাদার রাত খুজে নাও তাকে যার মাঝে পাবে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি। [মাওলানা রূমী, মসনবী শরীফ]

 اگر همه شبها قدر بودى قدر بى قدر بودى

অর্থ: সকল রাত যদি শবে কদর হতো তাহলে থাকতো না শবে কদরের মর্যাদা। [হযরত শেখ শাদী]
এ রজনী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল করিমে ইরশাদ হচ্ছে-   

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ (1) وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ (2) لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ (3) تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ (4) سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ (5)

অর্থাৎ: আমি (আল্লাহ্) এটি (ক্বোরআন মজীদ) অবতীর্ণ করেছি শবে ক্বদরে। শবে ক্বদরের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি জানেন? শবে ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ বিশেষত: জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম দুনিয়াতে আসেন তাদের প্রভুর আদেশক্রমে। এ শান্তি বা নিরাপত্তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
উক্ত সূরার শানে নুযূল বর্ণনা করতে গিয়ে মুফাস্সিরীনে কেরাম বলেন, একদা রাসূলে আরবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের জনৈক আবেদ মুজাহিদ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে আলোচনা করেন। কারো মতে ঔ ব্যক্তির নাম ছিল শামউন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত দিনে অবিরাম জিহাদ ও রাতে ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মি হলো।
মুসলমানগণ অল্পবয়সের কাণে কম ইবাদতের জন্য চিন্তিত হলো। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ সূরাটি অবতীর্ণ করে রাসূলে পাকের ওসীলায় সুসংবাদ প্রদান করেন। এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।

আল্লামা আবদুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মত ও অন্যান্য নবীদের বয়সের তুলনা করেন। অন্যান্য নবীদের উম্মতের বয়স বেশী ও ইবাদত বেশী। এতে মুসলমানগণ হতাশ হলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক মলিন হলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় হাবিবের সন্তুষ্টির জন্য এ সূরা নাযিল করে সুসংবাদ দিলেন। [তাফসীরে আজিজী, পৃ.-২৪৭]

লায়লাতুল কদর ২৭ রমযানে নিহিত: হাদীস শরীফে লায়লাতুল ক্বদর যদিও পবিত্র রমযান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাতে নিহিত রয়েছে তবুও ওলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনগণ বলেছেন, সূরা কদরে ليلة القدر শব্দটিতে নয়টি হরফ আছে। এ শব্দটি তিনবার ব্যবহার হয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে (৯×৩=২৭) সাতাশ হয়। অথবা উক্ত সুরায় ত্রিশটি শব্দ আছে। তৎমধ্যে هى শব্দটি হল সাতাশ নম্বর শব্দ। আর هى দ্বারা লায়লাতুল কদর উদ্দেশ্য। অতএব লায়লাতুল কদর সাতাশ তারিখ রাতে নিহিত রয়েছে। আর এটাকে গোপন রাখার উদ্দেশ্য হল লোকেরা কেবলমাত্র ঐ রাতের ইবাদতের উপর ভরসা করে অন্যান্য দিবা রাতের ইবাদত পরিত্যাগ করবে।
বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওসমান ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গোলাম একদিন তার কাছে আরয করল যে, হে মুনিব! আমি দীর্ঘদিন যাবৎ নৌকা চালিয়েছি। মাঝে মধ্যে নদীর পানিতে এক বিস্ময়কর ঘটনা আমি অনুভব করেছি যা আমি বুঝতে পারিনা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তা কি? উত্তরে সে বলল প্রতি বছর এমন এক রাত আসে যে রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। তিনি গোলামকে বললেন এবার খেয়াল রাখবেন যেদিন নদীর পানি মিষ্টি হয় তারিখসহ বলবেন। যখন রমজান মাসের ২৭ তারিখ আসল তখন গোলাম তাকে বলল হে মুনিব! আজ রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে গেছে।
[তাফসীরে আজিজী, পৃ.-২৫৭]

লায়লাতুল ক্বদরের ফযিলত: লায়লাতুল ক্বদর সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের শরাহ্ উমদাতুল কারীতে লিপিবদ্ধ করেছেন-

 تَقْدِيْرُ الْاُمُوْرِ وَقَضَائِهَا وَالْحكم وَالْفضل ومعنى ليلة القدر ليلة يقضى الله فيها قضاء السنّة 

অর্থাৎ লায়লাতুল কদর বলতে এমন রাতকে বুঝায় যাতে যাবতীয় বিষয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এর চূড়ান্ত রূপদান করা হয় এবং একটি বছরের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা এ রাতে সব বিধান ও মর্যাদার ফয়সালা করেছেন। [আইনী শহরে বুখারী] ইমাম যুহরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, এ রাতকে শবে কদর এ জন্য বলা হয় যে, এ রাত অত্যন্ত মূল্যবান, অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ মর্যাদাবান সম্পন্ন।
শেখ আবু বকর ওয়াররাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, এ মহান রাতে ইবাদতের কারণে এমন লোকের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পায় ইতিপূর্বে যাদের কোন মর্যাদা মরতবা কদর ছিল না তাই এ রাতকে শবে কদর বলা হয়। [ফাজায়েলে মাহে রমজান, মুফতী আমীমুল ইহসান (রহ.) পৃ.-২৬] শবে কদর মূলত উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীলায় মহান আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে মহান দান ও অনুগ্রহ, রহমত স্বরূপ। যেমন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
 اِنَّ اللهَ اهب لِاُمَّتِىْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ وَلَمْ يُعْطِيْهَا مَنْ كَانَ قَبْلَهُمْ 

অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা আমার উম্মতকেই শবে কদর দান করেছেন। এর পূর্বে কোন উম্মতকে তা দেয়া হয়নি। [দুররে মানসুর, খন্ড-৮, পৃ. ৫৮০] শবে কদর রাতের যে কোন আমল এক হাজার মাসের তথা ৮৩ হাজার ৪ মাসের চেয়ে উত্তম। যেমন আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বর্ণনা করেছেন-

 عَمَلٌ فِيْهَا خَيْرٌ مِنْ عَمَلٍ فِى اَلْفِ شَهْرٍ 

অর্থাৎ রাতের যে কোন আমল হাজার মাসের আমলের চেয়ে উত্তম। [নুযহাতুল মাজালিস, পৃ.-১৬৬] 
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কদর রাতে ঈমান ও ইখলাসের সাথে কিয়াম করবে তার পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। [সহিহ বুখারী; সহিহ মুসলিম] হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলতেন, নিশ্চয়ই রমযান মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন বরকতমন্ডিত রাত নিহিত আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে একে সম্মান করবে সে যেন পুরো কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। [সুনানে ইবনে মাজাহ্] লায়লাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করার জন্য হাদীস শরীফে তাগিদ দিয়েছেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লায়লাতুল কদরকে সন্ধান কর। [সহিহ বুখারী শরীফ]

ফেরেশতাদের ঈদ:  এ রাতে হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামসহ অন্যান্য অগণিত ফেরেশতাদের নিয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর রহমত নিয়ে অবতরণ করেন। মানবজাতি বছরে দু’ দিন তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল্ আযহার দিন ঈদ তথা খুশী উদযাপন করে পক্ষান্তরে ফেরেশতারা ঈদ উদযাপন করে দু’ রাতে তথা শবে বরাত ও কদরের রাতে। এ রাত ফেরেশতাদের ঈদের রাত। তারা সারা রাত আল্লাহর রহমত ও সালামত নিয়ে সূর্যাস্ত হতে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত রহমত বিতরণ করতে থাকেন।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি লিখেছেন, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম’র সৃষ্টি সম্পন্ন করেছেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর দরবারে আরয করল, হে আল্লাহ্ তা‘আলা! আপনি আদমকে কেন সৃষ্টি করলেন? পৃথিবীতে গিয়ে তাঁর সন্তানরা ঝগড়া-ফ্যাসাদ, যুদ্ধ বিগ্রহ ও রক্তপাত করবে এবং নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্যের রক্ত দ্বারা নিজের হাত রক্তে রঞ্জিত করবে। আপনার ইবাদতের জন্য আমরা কি যথেষ্ট নই? তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
 اِنِّىْ اَعْلَمُ مَالاَ تَعْلَمُوْنَ 
তথা আমি (আল্লাহ্) যা জানি তোমরা তা জান না।
শবে কদরে ফেরেশতাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরণ করে বান্দার আমল ও ইবাদত দেখাখায়ে চাক্ষুষ জবাব দেবেন। আল্লাহ বলবেন, হে ফেরেশতা! তোমরা বলেছিলে তারা পৃথিবীতে গিয়ে রক্তপাত ঘটাবে; কিন্তু আজকে দেখ তারা আমার ইবাদতে মশগুল। তখন ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইবে।
এ পবিত্র রজনীতে আল্লাহ্ তা‘আলা জিব্রাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফিল আলায়হিমুস্ সালামকে বেহেশত থেকে চারটি পতাকা নিয়ে প্রতিজনের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতাসহ দুনিয়াতে আগমনের নির্দেশ দেন।
لواء الحمد ـ لواء المغفرة ـ لواء الكرامة ـ لواء الرحمة
অর্থাৎ ১. হামদের পতাকা তথা প্রশংসার পতাকা, ২. মাগফিরাতের পতাকা তথা ক্ষমার পতাকা, ৩. কারামাত বা মর্যাদার পতাকা এবং ৪. রহমতা বা দয়ার পতাকা। 
মাগফিরাতের পতাকা রাসূলে পাকের রওজা পাকের উপর, হামদের পতাকা আকাশ জমিনের মধ্যখানে, রহমতের পতাকা বায়তুল্লাহ্ শরীফে, কারামত বা মর্যাদার পতাকা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের উপর স্থাপন করা হয়।
শবে কদরের আমল: মূলত উম্মতে মুহাম্মদীকে শবে কদর দেয়া হয়েছে ইবাদতের জন্য। পূর্ববর্তী নবীগণের অনুসারীদের বয়সসীমা অধিক ছিল বিধায় তারা দীর্ঘকাল যাবত ইবাদতের সুযোগ পেত। উম্মতে মুহাম্মদীর যেহেতু আয়ু কম, তাই ইবাদতের বাহুল্যতা নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের একধরণের অপ্রাপ্তির অনুশোচনাবোধ ছিল। আর তা পুষিয়ে দিতে আল্লাহ পাক এমন এক রাত উপহার দিলেন, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “লাইলাতুল কদরের বিশেষ আমল, সদক্বা, নামাজ, জাকাত- এগুলো এক হাজার মাসের আমল থেকেও উত্তম” (দুররে মনসুর)। এক হাজার মাসকে বছরের গণনায় হিসেব করলে তা দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস। এ পবিত্র রাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে যারা বঞ্চিত থাকবে তারা হলেন নিম্নরূপঃ ১. মদখোর, মাদাকদ্রব্য ব্যবসায়ী, ২. মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান-সন্তুতি, ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, ৪. জেনাকারী, সুধখোর এবং ৫. বিনা কারণে অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী। [তাফসীরে কাশফুল আসরার, ১ম খন্ড, পৃ. ৫৬৩]

(১) কোরআন তেলাওয়াত: পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তা নাজিল হয়েছে পবিত্র কদর রজনীতে। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত না করলে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আমাদের হক যথাযথ আদায় হবে না। বিশেষ করে সুরা কদর, ইয়াসিন, দুখান, মুজ্জাম্মিল, ত্বাহাসহ অধিকতর ফজিলতপূর্ণ সুরাসমূহ পাঠ করবে।

(২) নফল নামাজ: এই রাতের অন্যতম কর্তব্য বেশিবেশি নফল নামাজ আদায় করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কদরের রাতে নামাজে দাঁড়াবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে” (সহীহ বুখারী)। নফল নামাজ অনেক ধরণের হতে পারে। তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, দুখুলুল মসজিদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবাহর নামাজ ইত্যাদি।

(৩) দোয়া করা: এ রাতে একজন মু’মিন কি দো‘আ পড়বে এ প্রসঙ্গে হযরত আয়শা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-

 قلت يارسول الله صلى الله عليه وسلم ان وافقت ليلة القدر فما اقول؟ 

আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি মবে কদর পেয়ে থাকি কি পড়ব? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন- 
اَللهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ 

উচ্চারণ: (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনিতো ক্ষমাকারী, ক্ষমা পছন্দ করেন, আমাকেও ক্ষমা করুন। [তিরমিযী শরীফ, মসনদে আহমদ] তাই প্রত্যেকের উচিত এই দোয়াটি বেশিবেশি পাঠ করা।

(৪) দান সদক্বা করা: দান সদক্বা সেবামূলক কাজ। ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত আমল বলে এটি গণনীয়। আর শবে কদরে এক পয়সাও যদি কেউ দান করে, তবে সে ৮৩ বছর ৪ মাস দান করার নেকী অর্জন করতে সমর্থ হবে।
(৫) অধিক হারে ইস্তেগফার করা
(৬)পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়ের কবর জিয়ারত
(৭) জিকির-আজকারে মশগুল থাকা
(৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা।
আরো অসংখ্য ইবাদত করা যেতে পারে উক্ত রাতে। সাথে সাথে পৃথিবীর নির্যাতিত সকল মুসলমানের মুক্তির জন্য দোয়া ও সমৃদ্ধি কামনা করতে হবে; এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এই রাতেই। এইভাবে যদি আমরা ইবাদতের মাধ্যমে পবিত্র কদর রজনী পালন করতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের পরকালীন মুক্তি অনিবার্য।
এ রাতে প্রত্যেক মু’মিনকে ফেরেশতাগণ সালাম জানিয়ে থাকেন। তাই মাগফিরাত পেতে হলে বেশী বেশী তওবা ও দরূদ শরীফ পড়তে হবে। [নুযহাতুল মাজালিশ, পৃ. ১৬৭] নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র এরশাদ করেন, তোমরা যদি তোমাদের কবরসমূহকে আলোকিত পেতে চাও, তবে শবে কদরে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত কর।

পরিশেষে প্রার্থনা হে পরম করুণাময়! পবিত্র মাহে রমজানে আমাদেরকে মহান আল্লাহ আপনার ও রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, আওলাদে রসূলের মহব্বত নিয়ে আমল করার তওফিক দিন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.