জুমার খুতবা -৮ নদীতে বলী দান : প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার প্রেরিত পুরুষ নবী-রাসূলদের অনেক মোজেজা দান করেছিলেন। তারা আল্লাহর রহমতে অনেক অসম্ভব কাজকে সম্ভব করতে পারতেন তাদের মোজেজা শক্তির দ্বারা। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা তার অনেক নেক বান্দার দ্বারা অনেক আশ্চর্য শক্তি প্রদর্শন করিয়েছেন। তিনি তার নেক বান্দার দোয়াকে কবুল করেছেন চুম্বকের মতো। এমন অনেক ঘটনা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় তেমনই একটি সত্য ঘটনা।
মিশরকে বলা হয় নীল নদের দান। এই নীল নদের তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক মিশর এবং মুসলিম সভ্যতা। আজকে আমরা বছরের বারটি মাসেই নীল নদে পরিষ্কার ঝকঝকে পানি দেখতে পায়, কিন্তু শান্ত নিবিড় নীল নদ এক সময় এমন ছিল না। একসময় নীল নদে বছরের সব সময় পানি থাকতো না বরং বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পানি থাকতো আবার নির্দিষ্ট সময়ে শুকিয়ে যেত। তাহলে এখন প্রশ্ন, নীল নদে পানি এখন বার মাসই থাকে কেন? এই নদীতে কি তাহলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে?
হিজরি ২০ সনে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে বিখ্যাত সাহাবি হযরত আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর নেতৃত্বে সর্ব প্রথম মুসলমানরা মিশর বিজয় করেন। মিশরে তখন চলছিল প্রবল খরা। তখন “বুনা” মাস (তৎকালীন মিসরীয় ক্যালেন্ডারের ১টি মাস) আসার পর দেশবাসী তাঁকে জানালো-“আমীর!! আমাদের ১টি প্রথা আছে, এই মাসের ১২ তারিখের রাত শেষ হলে আমরা ১টি কুমারী মেয়েকে অলংকার ও পোশাকে সাজিয়ে নীল নদে ফেলে দেই । এটি পালন না করলে নীল নদ প্রবাহিত হয় না।।”শুনে আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বললেনঃ
“এটা ইসলাম! এসব চলবে না, ইসলাম সকল কুসংস্কারকে নির্মূল করে দিয়েছে।”এরপর পরপর ৩ মাস বুনা, আবীব ও মাসরা তারা কাটিয়ে দেয় কিন্তু নীল নদ আর প্রবাহিত হয় না।। ফলে দেশবাসী দেশ ত্যাগ করতে মনস্থ করে।
তখন আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এ বিষয়ে জানিয়ে তৎকালীন আমীরুল মূ’মিনীন হযরত উমর (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) এর নিকট চিঠি পাঠান।। উত্তরে জানানো হয়-
“তুমি যা করেছ ঠিক করেছ। এই চিঠির সাথে ১টা কাগজ রয়েছে তা তুমি নীল নদে ফেলে দাও।”
খলিফা ওমর (রাঃ) নীল নদের কাছে লেখা তার পত্রে লিখেছিলেন:
من عبد الله عمر أمير المؤمنين إلى نيل مصر أما بعد: فان كنت تجري من قبلك ومن أمرك فلا تجر فلا حاجة لنا فيك وإن كان الله الواحد القهار هو الذي يجريك فنسأل الله أن يجريك فألقى عمرو البطاقة في النيل فجرى أفضل مما كان
“আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন ওমর (রাঃ) এর পক্ষ হতে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্র। অতঃপর হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ হতে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ হতে আর প্রবাহিত হয়ো না। তোমার কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর তুমি যদি মহা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন”।
হযরত আমর বিন আস (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) চিঠিটি নীল নদ-এ ফেলে দিলে, সকাল-এ দেখা গেল আল্লাহ এর ইচ্ছায় নীল নদের পানি এক রাতের ভেতর ১৬ হাত বৃদ্ধি পেয়ে প্রবাহিত হল তারপর নীল নদ চকচকে ঝকঝকে পানিতে ভরে উঠেছিল এবং আজ পর্যন্ত এক মিনিটের জন্যও নীল নদের পানি আর শুকিয়ে যায়নি। সুবাহান’আল্লাহ!!!
এভাবেই আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে মিসরীয়দের এই কুপ্রথা চিরতরে বন্ধ করে দেন।
( ইবনে কাছির-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,ইবনে আসাকির- তারিখে দামেস্ক,আল্লামা তাফ্তাজানি-শরহে আকায়েদে নাসাফিয়াহ,শরহে ফিকহে আকবর।)
কোন মন্তব্য নেই