Header Ads

Header ADS

আদর্শিক সমাজ বিনির্মাণে যুব সমাজের ভুমিকা



             মুহাম্মদ আবদুল্লাহ  আল মাসুম

তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। একটি অপ্রতিরোধ্য ঝড়। একটি দৃপ্ত শপথ। একটি অপরাজেয় দুর্জেয় ঘাঁটি।  তারুণ্য কারো বাঁধা মানতে চায় না। সে তার আপন গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। যৌবন যেমনি গড়তে জানে, তেমনি ভাঙতেও জানে। নদীর দু’পাড়ে উঁচু বাঁধ না দিলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যেমন নদীর পানি দু’কূল প্লাবিত করে ফসলের ক্ষেতসহ বসতবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়; যৌবন কালকে সুপথে নিয়ন্ত্রণ না করলে তেমনি যে কোন মুহূর্তে বিপথগামী হতে বাধ্য। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তরুণ সমাজের আত্মত্যাগ।  আজ নৈতিকতা অবক্ষয়ের সময়ে আদর্শিক  সমাজ গঠনে তরুণ প্রজন্মের করণীয় তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম।

তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে অসংখ্য রাজ্যপালের রাজ্য সীমা। আজও ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের বহু স্মৃতি। যখন যুব সমাজ চরিত্রবান ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হবে, তখন তারাই উম্মতের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আল্লাহর দেয়া দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তারাই মানুষকে দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেবে। কারণ, আল্লাহ তা’আলা যুবকদের দৈহিক শক্তি, উদ্ভাবনী মেধা,  চিন্তা ও গবেষণা  করার যোগ্যতা বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি দিয়েছেন। যদিও বৃদ্ধদের  অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের গভীরতা ও বুদ্ধিমত্তা যুবকদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী, কিন্তু দৈহিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং সাহসের অভাব থাকার কারণে শক্তিশালী যুবকরা যে সব কাজ আঞ্জাম দিতে পারে তা আঞ্জাম দেয়া বৃদ্ধদের দ্বারা সম্ভব নয়।  তাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ষোল বছর বয়সে তরুণদের নিয়ে গঠন করেছিলেন  জনকল্যাণমূলক সংগঠন “হিলফুল ফুযুল”। তিনি যখন দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে মাঠে নামেন সর্বাগ্রে তরুণরাই এগিয়ে এসেছিলেন। হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু), হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) যৌবনেই ইসলাম কবুল করেন। তিনি মুসলমান হওয়ার আগ পর্যন্ত নবী করিম  ও তাঁর সঙ্গীরা অত্যন্ত সংগোপণে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। অন্যদের সাথে স্বয়ং ওমরও ছিলেন ইসলাম ও মুসলমানদের ঘোর শত্রু। নাঙ্গা তরবারী নিয়ে যে ওমর নবীজির শিরচ্ছেদ করতে পাগলের মত ছুটে গিয়েছিলেন,সেই ওমরই আল্লাহর অশেষ রহমতে যখন মুসলমান হয়ে গেলেন তখন থেকেই প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু হয়ে গেল। হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু )সহ মোট চল্লিশ জনের ছোট্ট একটি মুসলিম কাফেলা মক্কার অলিতে-গলিতে মিছিল বের করল। উন্মুক্ত তরবারী হাতে মিছিলের প্রথম কাতারে মহাবীর ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু )। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বণীতে মক্কার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল। কাবা প্রাঙ্গণে গিয়ে মিছিল শেষ হল। সকলে একসাথে ছালাত আদায় করলেন। ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ওমরকে দেখে কুরায়েশ যারপরনাই বিস্মিত-হতভম্ব হল। তাদের ক্রোধান্বিত অবস্থা দেখে হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ) বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, ‘সাবধান! কোন মুসলমানের কেশাগ্র স্পর্শ করলে ওমরের তরবারী আজ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে’। আসহাবে কাহাফে যারা ছিলেন তাঁরাও তরুণই ছিলেন । এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল করিমে ইরশাদ করেন,
 “হে নবী (অদৃশ্যের সংবাদদাতা) ! আপনার কাছে আমি তাঁদের  (আসহাবে কাহাফ)- ইতিবৃত্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি, তাঁরা ছিলেন কয়েকজন তরুণ। তাঁরা তাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিলেন এবং আমি তাঁদেরকে সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছি।  (সূরা : কাহাফ- ১৩) 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি কথা ও কাজের ধারক-বাহকের দায়িত্ব পালন করে ইসলামকে যারা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের   অগ্রযাত্রায় রয়েছেন এক ঝাঁক তরুণ সাহাবী। তন্মধে্য আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস, মুয়ায ইবনে জাবাল, যায়েদ ইবনে সাবেত, খালেদ ইবনে ওয়ালিদ, মুসান্নাহ ইবনে হারেসাহ ও আস-সাইবানী (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ যুবক সাহাবীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ একটি জাতি। তাঁরা দ্বীনকে পৌঁছানোর গুরু দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং তারা তাদের উপর অর্পিত স্বীয় দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার অবহেলা প্রদর্শন করেননি। বর্তমানের যুবকরাও যখন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে, সৎ ও ভাল কর্ম করবে, তারা তাদের মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবে এবং তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও আমানত আদায় করবে, তারা তাঁদেরই উত্তরসূরি হবে এবং তাদের নামও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ কারণেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, 
“মহান  আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে  আপন আরশের ছায়ার নিচে ঐ তরুণদেরকে বসার সুযোগ দিবেন, যারা তারুণে্যর সময়কে আল্লাহর পথে অতিবাহিত করেছেন”। (বুখারী; মুসলিম; মিশকাতুল মাসাবীহ)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবসমাজকে  নিজেদের জীবন সাজাতে বিভিন্ন দিক- নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ইরশাদ করেন,
«يَا غُلَامُ إِنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ، احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ، »
অর্থাৎ“হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দেব, তুমি আল্লাহর হিফাযত কর (হক্কুল্লাহ আদায় কর), আল্লাহ তায়ালা তোমাকে হিফাযত করবেন এবং আল্লাহকে তুমি তোমার সম্মুখে দেখতে পাবে। যখন তুমি কিছু চাও আল্লাহর কাছে চাও। আর যখন সাহায্য চাও আল্লাহর কাছে চাও।"( জামে তিরমিযী)
 হযরত ওমর ইবন আবু সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা যখন আমি  হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাচ্ছিলাম এবং হাতকে প্লেটের সব জায়গায় ঘোরাচ্ছিলাম, তখন নবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে ফেলেন এবং আমাকে সম্বোধন করে বলেন,
«يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللَّهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ» فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتِي بَعْدُ
অর্থাৎ“হে গোলাম-বৎস! খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনের অংশ থেকে খাও। এর পর থেকে সারা জীবন এ নিয়মই ছিল  আমার খাদ্য গ্রহণের নিয়ম।”(বুখারী ;মুসলিম)

নেককার স্ত্রী গ্রহণের গুরুত্ব বিবেচনা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরুণদের নেককার স্ত্রী গ্রহণ করার প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। কারণ, স্ত্রীগণ হল-সন্তান উৎপাদনের উৎস এবং ফলাফল লাভের যথাযথ স্থান। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ,

«فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ »
অর্থাৎ“তুমি দ্বীনদার নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে বিজয়ী হও, তোমার হাত বরকতময় হোক।" (বুখারী;মুসলিম) 
কারণ, নেক স্ত্রী থেকে যখন আল্লাহ তোমাকে সন্তান দান করবে, সে তোমার সন্তানদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেবে এবং বাল্য কাল থেকেই তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে। 
আল্লাহ তা’আলা একজন যুবককে তার মাতা-পিতা বা তাদের উভয়ের মধ্যে জীবিত যে কোন একজনের প্রতি ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আর তাকে স্মরণ করিয়ে দেন- তুমি যখন ছোট ছিলে, তখন কীভাবে তোমার মাতা-পিতা তোমাকে লালন-পালন করেছিল। ইরশাদ করেন ,

﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ﴾ [الاسراء: ٣٤  

অর্থাৎ“ আর তোমার প্রতিপালক  আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাঁদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিও না। আর তাঁদের সাথে সম্মানজনক কথা বল আর তাঁদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ২৩, ২৪)
রাসুলুল্লাহ  অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, 
“তরুণ বয়সের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশী খুশি হন, সে তরুণ ও যুবকদের ইবাদতে, যারা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে”। (সুনানে আবু দাউদ)
রাসুল  আরো ইরশাদ করেছেন,
 “হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যৌবন কাল কিভাবে ব্যয় করেছে”। (জামে তিরমিযী; মিশকাতুল মাসাবীহ)

আমেরিকান দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস বলেন,“একজন মানুষের সফল বা ব্যর্থ হওয়া তার ক্ষমতার ওপর যতটা না নির্ভর করে, তারচেয়ে বেশি তার দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে। যারা সফল হয়, তারা সফল হওয়ার আগে থেকেই সফল মানুষের মত আচরণ করে। এই বিশ্বাসই একদিন সত্যিতে পরিনত হয়। আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আপনি অবশ্যই সফল হবেন, তবে আপনার ব্যবহারেও তা প্রকাশ পাবে। এবং আপনি নিজেই নিজের এই দৃষ্টিভঙ্গীর সুফল দেখে অবাক হয়ে যাবেন।”
আর দু'টি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করলে নিজেকে সংশোধন করা সম্ভব। যথা-
১. আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করা, যার ফলে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সহজ হয়।
২. সময়ের অপচয় রোধ করা। কেননা, মন যেমন চায় তেমন না চলে সত্য পথের অনুসরণ করলে অন্তর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ইরশাদ হচ্ছে 

فَأَمَّا مَن طَغَىٰ - وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا- فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَىٰ- وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ  الْهَوَىٰ فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَىٰ
অর্থাৎ“যে ব্যক্তি সীমালংঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।“ [নাযিয়াতঃ ৩৭-৪১]

অন্যত্র আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন –
وَاتَّبِعْ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتَّىٰ يَحْكُمَ اللَّهُ ۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ
অর্থাৎ "আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী। (ইউনূসঃ ১০৯)
সাম্প্রতিক কালে ধর্মের নামে অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত কিছু যুবক সস্তায় জান্নাত লাভের আশায় ইহূদী-নাছারাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করছে। বিশেষ করে কোমলমতি যুবসমাজকে জিহাদের নামে সরাসরি জঙ্গী কার্যক্রমের মত ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হতে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত  করছে । কুরআন-হাদীসের খন্ড খন্ড আয়াত ও হাদীসাংশের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে সরলমনা এসব ছেলেদের শরীরে বোমা বেঁধে ইসলামের দুশমন খতমের নামে যত্রতত্র হামলা চালানো হচ্ছে। আর তাতে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত নিরীহ নিরপরাধ যুবক। পরিণামে ছেলেটি ইহকাল-পরকাল দুটিই হারাচ্ছে; সাথে সাথে বিশ্বের দরবারে চির সত্য ধর্ম ইসলাম সন্ত্রাসীদের ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,  
 ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি হত্যার বিনিময়ে হত্যা অথবা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ব্যতীত কোন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করল’ (মায়েদা ৩২)
অতএব সাবধান হে যুবসমাজ! কোন চক্রান্তকারীর চক্রান্তের শিকার হয়ে আমরা যেন বিপথগামী না হয়ে পড়ি। সাথে সাথে মহান আল্লাহ আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা যেন যথাযথভাবে পালন করে যেতে পারি সেদিকে সদা সচেষ্ট থাকতে হবে। হে যুবক! সর্বদা স্মরণ রেখ রাসূলের বাণী; জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বেই পাঁচটি বস্তু থেকে সুবিধা গ্রহণ করো- বৃদ্ধ হবার পূর্বেই তারুন্যকে সুপথে ন্যস্ত কর,  অসুস্থ হবার পূর্বেই সুস্বাস্থ্য থেকে সুবিধা গ্রহণ করো, দরিদ্রতা এসে যাবার পূর্বেই সম্পদের সুব্যবহার করো ব্যস্ততা এসে যাবার পূর্বেই অবসর সময়কে কাজে লাগাও এবং মৃত্যু এসে যাবার পূর্বেই ‘জীবন’ নামক এই নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার করো।”  (মুস্তাদরেকে হাকিম; জামে তিরমিযী)

 পরিশেষে যুব সমাজের প্রতি একান্ত আরজ, মহান আল্লাহ আমাদেরকে যৌবন নামক যে অমূল্য সম্পদ দান করেছেন, আমরা যেন তার সদ্ব্যবহার করে পরকালে সগৌরবে জান্নাতী যুবকদের কাতারে শামিল হতে পারি সে চেষ্টা করে যেতে হবে। মহান আল্লাহ যেন আমাদের এ মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার তওফিক দান করেন। আমীন! বিজাহিন নবিয়িল আমীন! 


লিখক: আরবি প্রভাষক
রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদরাসা       
খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ মসজিদ     

কোন মন্তব্য নেই

ইলমে দ্বীনের ফজিলত

﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١)

Blogger দ্বারা পরিচালিত.