Header Ads

Header ADS

মুনকার-নকীরের সাওয়াল জওয়াব


মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
পেশতর মরনে ছে করনা চাহিয়ে,
মওত কা সামান আখির মওত হে।
জনৈক ধনবান ব্যক্তি একদা হযরত সায়্যিদুনা হাতেম আসাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে দাওয়াত দিল এবং যাওয়ার জন্য খুব জোর করল। তিনি বললেন: তুমি যদি আমার এ তিনটি শর্ত মেনে নাও, তাহলে তোমার দাওয়াত গ্রহণ করবো। ১. আমার যেখানে ইচ্ছা বসব। ২. আমার যা ইচ্ছা খাব। ৩. আমি যা বলব, তোমাদের তা করতে হবে। ধনবান লোকটি এই তিনটি শর্ত মেনে নিল। আল্লার্হ অলীর সাক্ষাতের জন্য অসংখ্য লোকজন জমা হল। নির্দিষ্ট সময়ে হযরত সায়্যিদুনা হাতেম আসাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এসে পৌঁছলেন। লোকজন যেখানে তাদের জুতো রেখেছিল তিনি এসে সেখানেই বসে গেলেন। খাওয়া-দাওয়া যখন শুরু হল, হযরত হাতেম আসাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজ থলের ভিতর থেকে একটি শুকনো রুটি বের করে তা খেয়ে নিলেন। খাওয়া- দাওয়া যখন শেষ হয়ে গেল, তিনি মেজবানদাতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: একটি চুলায় আগুন জ¦ালাও এবং তাতে একটি তাবা রাখ। যেই হুকুম সেই কাজ। আগুনের তাপে যখন তাবাটি কয়লার মত লাল হয়ে গেল, তিনি তখন সেই তাবাটির উপর খালি পায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর বললেন: আজকের খাবারে আমি শুকনো রুটি খেয়েছি। এই কথা বলে তিনি তাবা থেকে নেমে গেলেন। এরপর উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আপনারা প্রত্যেকেও এক এক করে এই তাবায় দাঁড়িয়ে আজকের দাওয়াতে যা যা খেয়েছেন তার হিসাব দিয়ে যান। এ কথা শুনে লোকদের মুখে চিৎকার শুরু হল। সকলে সমস্বরে বলল: হুজুর! এই ক্ষমতা তো আমাদের কারো নেই। (কোথায় গরম তাবা আর কোথায় আমাদের নরম পা। আমরা সবাই তো এমনিতেই গুনাহ্গার (দুনিয়াদার লোক)। তিনি বললেন: যেক্ষেত্রে আপনারা দুনিয়ার এই গরম তাবায় দাঁড়িয়ে আজকের মাত্র এক বেলা খাবারের মত নেয়ামতের হিসাব দিতে অপারগ রয়ে গেলেন, সেক্ষেত্রে কাল কিয়ামতের দিন এত দীর্ঘ জীবনের সকল নেয়ামতের হিসাবগুলো কীভাবে দিবেন? অতঃপর তিনি সূরা তাকাসুরের শেষের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন:“ অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের সবাইকে নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” মর্মস্পর্শী এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত সবাই অঝোর নয়নে ক্রন্দন করতে লাগলো এবং নিজ কৃত অপকর্মের গুনাহ থেকে তাওবা করলো।
কিয়ামত দিবসের এই পরীক্ষা সম্পর্কে হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “মানুষ কিয়ামতের দিন ঐ সময় পর্যন্ত নিজ পা নাড়তে পারবে না, যতক্ষণ সে পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেবে না। যেমন- (১) তুমি জীবন কিভাবে কাটিয়েছ? (২) যৌবন কিভাবে অতিবাহিত করেছ? (৩) সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ? (৪) এবং কোথায় কোথায় তা খরচ করেছ? (৫) নিজ ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছ?
মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম কবরের পরীক্ষার মুখোমুখী হয়ে অবশ্যই মানবজাতিকে কিয়ামতের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। আফসোস! আমাদের কাছে এর কোন প্রস্তুতি নেই। পার্থিব চাকুরীর ইন্টারভিউতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য, স্কুল কলেজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অনেক জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। প্রবাদ বাক্য ‘যে সাধনা করে সে কৃতকার্য হয়।’ এর সত্যায়ন শুধু দুনিয়াবী পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু কিয়ামতের কঠিন পরীক্ষার অবস্থা কি হবে? একদিন অবশ্যই আমাদেরকে মৃত্যু বরণ করতে হবে। কবর এবং পরকালের পরীক্ষার মুখোমুখী হতে হবে। সেই পরীক্ষায় কোন ধোঁকার আশ্রয় নেয়া যাবে না। ঘুষও চলবে না। দ্বিতীয়বার যাচাইয়ের সময়ও দেয়া হবে না। আসুন! আখিরাতের ঐ জটিল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিই, যাতে উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা জান্নাতের ঐ নেয়ামত সমূহ লাভ করবে যা চিরস্থায়ী বিদ্যমান থাকবে। পক্ষান্তরে অকৃতকার্য ব্যক্তি জাহান্নামের প্রজ্জ্বলিত আগুনে জ্বলতেই থাকবে।
কখনো একা বসে চিন্তা করেছি কি যে, এক সময় মৃত্যুর যন্ত্রণা আসবে, রূহ শরীর থেকে বের করে নেয়া হবে, আর মৃত্যুর যন্ত্রণাও এমন যে, “তরবারীর হাজার আঘাত থেকে গুরুতর।” হায়! আফসোস! আমাদের কি অবস্থা হবে? আমরা তো দুনিয়াদারীর রং-তামাশার মধ্যে মত্ত রয়েছ্ িআমরা উন্নত স্বাদময় খাবার সমূহ এবং দুনিয়াবী নেয়ামত সমূহের বিলাসী অথচ বর্ণনায় এসেছে- নিশ্চয় মৃত্যু যন্ত্রণার তীব্রতা দুনিয়াবী স্বাদ অনুযায়ী হবে। তাই যে দুনিয়াবী স্বাদ সমূহ ভোগ করেছে, তার মৃত্যু যন্ত্রণাও বেশি হবে। অতঃপর আমাদের নামের ধুম পড়ে যাবে যে, অমুক ইন্তিকাল করেছে। দ্রুত গোসলদাতাকে নিয়ে এস। আর গোসলদাতা ব্যক্তি যখন তখতা নিয়ে চলে আসবে তখন আমার-আপনার উপর চাদর আবৃত করা হবে। মাথা থেকে সম্পূর্ণ মুখাবয়ব বন্ধ করে দেয়া হবে। পায়ের উভয় গিরা বন্ধ করে দেয়া হবে। গোসলদাতাও গোসল দিয়ে দেবে, কাফন পরিধান করাবে। আর আপন সন্তানেরা আমাকে গোসল দিতে পারবে না। কাফনও পরিধান করাতে পারবে না। কেননা, যখন বাচ্চার বুদ্ধি হয়েছে, তখন আমি তাকে স্কুলের দরজা দেখিয়েছি। যখন বড় হয়েছে তখনই কলেজে তাদেরকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য আমেরিকা কিংবা পশ্চিমা বিশ্বে প্রেরণ করেছিলাম। দুনিয়াবী পরীক্ষা সমূহের তৈরীর জন্য খুবই আগ্রহ জাগিয়েছি। কিন্তু ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করিনি। মৃত ব্যক্তির গোসল সে কিভাবে দেবে? তার কাছে তো জীবিত ব্যক্তি হিসেবে গোসল করার সুন্নাত সমূহও জানা নেই। বস্তুত পিতার শেষ খেদমত এই যে, আপন ছেলে তাকে গোসল করিয়ে দেবে। কাফন পরিধান করাবে। জানাযার নামাযও পড়াবে এবং নিজ হাতে তাকে দাফন করবে। যদি পুত্র গোসল দেয় তবে অতিব নম্রতার সাথে সুন্নাত মোতাবেক মৃতকে গোসল দেবে। আর যখন ভাড়াকৃত গোসলদাতা আনা হবে। তখন সে যত্রতত্র পানি ভাসিয়ে কাফন পরিহিত করে পকেটে টাকা-পয়সা আসা পর্যন্ত সে মাথা থেকে পা পর্যন্ত গোসল করিয়ে চলে যাবে।
অতঃপর জানাযার লাশ উঠানো হবে। ঘরের মহিলারা চিৎকার করবে আর আমি তাদেরকে এ কাজ থেকে জীবদ্দশায় নিষেধও করিনি যে, চিৎকার করে কাঁদিওনা। কেননা, মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করা হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মত কাজ। হাদীস শরীফে এসেছে যে: ‘মৃত্যুর সময় বিলাপকারীরা যদি নিজের মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে তবে কিয়ামতের দিন তাকে এ নিয়মেই দাঁড় করানো হবে যে, (তার শরীরে) একটি ডুমুরের অপরটি খাজলির (এক প্রকার বৃক্ষ) জামা থাকবে।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন: বিলাপকারী ও বিলাপ শ্রবণকারীর উপর আল্লাহর লা’নত। বিলাপকারীরা কিয়ামত দিবসে আলকাতরাযুক্ত চাদর, খোস-পাঁচরাযুক্ত জামা পরিহত অবস্থায় উঠবে। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন: বিলাপকারীদের জন্য জাহান্নামে দুটি সারি বানানো হবে। একটি সারি জাহান্নামীদের ডান দিকে এবং অপরটি জাহান্নামের বাম দিকে থাকবে। তারা জাহান্নামীদের দেখে ভেউ ভেউ করবে। যাই হোক জানাযার লাশ কাঁধে নিয়ে লোকেরা কবরস্থানের পথে চলা শুরু করবে। সন্তান হয়তঃ সে সঠিক নিয়মে লাশকে বহনও করতে জানবে না। কেননা আমি তাকে সে ব্যাপারে কখনো শিক্ষা দিইনি! অবশেষে আমার আত্মীয় স্বজনরা নিজেদের হাতে আমাকে ছোট ও অন্ধকার কবরে রেখে উপরে মাটি দিয়ে একাকী রেখে চলে যাবে।
দুনিয়াতে বসবাসের জন্য ঘর সমূহ্ অনেক বড় করে তৈরী করা হয়। কিন্তু আফসোস! সংকীর্ণ কবর প্রশস্ত করার কোন ভাবনা নেই। দুনিয়া উন্নত ও উজ্জ্বল করার খেয়াল আমাদের প্রত্যেকেরই আছে। ঘরে আলোর সকল ব্যবস্থাই আমরা রাখি। কিন্তু অন্ধকার কবরকে আলোকিত করার কোন চিন্তা আমাদের নেই। সম্পদ বৃদ্ধি করার আকাংখা প্রত্যেকের আছে। কিন্তু সাওয়াব বৃদ্ধি করার খেয়াল কারো মধ্যে দেখা যায় না। জীবনের নিরাপত্তার জন্য ধ্যান ধারণা রয়েছে। কিন্তু ঈমান হিফাযতের অনুভূতি অনেক কমে গিয়েছে।
মনে রাখবেন! সম্পদ দ্বারা ঔষধ পাওয়া যায়, কিন্তু রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায় না। যদি সম্পদ দ্বারা রোগ থেকে শিফা পাওয়া যেত তাহলে বড় বড় ধনীর পুত্রগণ হাসপাতাল সমূহে রোগে ধুকে ধুকে মারা যেত না। সম্পদ বিপদ ও চিন্তা থেকে মুক্তির চিকিৎসা নয়। যদিও হালাল পদ্ধতিতে ধন-সম্পদ উপার্জন করা এবং ওয়াজিব হক সমূহ আদায় করার শর্তে তা জমা করা শরীয়ত মতে বৈধ। তবে সম্পদের আধিক্যের লোভ করা ভাল নয়। এটির অনেক কুপ্রভাব রয়েছে। সম্পদের আধিক্য সাধারণত গুনাহের দিকে দ্রুতগতিতে নিয়ে যায়। বরং সত্য যে, সম্পদের আধিক্যতা বিপদ সমূহরই ঘাটি। ডাকাতি সম্পদশালীদের দালানেই হয়ে থাকে। সাধারণত সম্পদশালীদের সন্তানেরা গুম হয়ে থাকে। সন্ত্রাসীরা ভয়ানক পত্র প্রেরণ করতঃ সম্পদশালীদের নিকট থেকে প্রচুর টাকা আদায় করে থাকে। সম্পদের আধিক্যতায় আন্তরিক শান্তি কোথায়? বরং উল্টা শান্তি বিনষ্ট হওয়ার কারণ হয়ে থাকে। তারপরও লোকেরা সম্পদ কুড়াতে অলি-গলিতে ঘুরতে থাকে এবং হালাল-হারামের পার্থক্য করে না। এত সম্পদ কোথায় রাখবে? অমুক অমুক বিত্তবানও তো শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর ঘাটে পর্দাপন করেছে। তাদের সম্পদ তাদের কি কোন কাজে এসেছে? পক্ষান্তরে ওয়ারিশরাই সেই সম্পদ বন্টনে যুদ্ধ করল, পরস্পরের শত্রু হয়ে গেল, পরিশেষে কোর্টে ফেঁসে গেল এবং বংশের সম্মান নষ্ট হল।
কখনো চিন্তা করেছি কি যে, আমার লাশটি কয়েক মন মাটির নিচে দাফন করে বন্ধু-বান্ধব সকলেই চলে যাবে। এই সুবাসিত বাগান। ফলে-ফুলে ভরা ক্ষেতটি, নতুন মডেলের চাকচিক্যময় গাড়িগুলো, চমৎকার বহুতল ভবন ইত্যাদি কিছুই তখন কোন কাজে আসবে না। ভয়ানক আকৃতি বিশিষ্ট দুইজন ফিরিশতা মুনকার-নাকীর কবরের দেয়ালগুলি ভেদ করে মৃত ব্যক্তির নিকট হাজির হবে। তাদের মাথায় লম্বা লম্বা কালো কালো চুল হবে যা পা পর্যন্ত আবৃত থাকবে, তাদের চোখগুলোতে আগুন ঝরতে থাকবে। মুহাব্বত সহকারে নয় বরং ধমক দিয়ে উঠাবে এবং খুবই কঠোরভাবে পরীক্ষামূলক জিজ্ঞাসা করবে- ১.তোমার পালনকর্তা কে? ২. তোমার ধর্ম কি? ৩. অতঃপর একটি পবিত্র আকৃতি দেখানো হবে, যার জন্যে উৎসর্গ হতে সকল প্রেমিকরাই ছটপট করতে থাকে। অন্তর আকর্ষনকারী আকৃতি দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। “এ সত্ত্বার ব্যাপারে তুমি কি বলে থাকতে? আল্লাহ্ তা‘আলা এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দয়ায় মু’মিনগণ কৃত প্রশ্ন সমূহের উত্তর এভাবেই প্রদান করবে যে, ১.আমার প্রতিপালক আল্লাহ্ তা‘আলা। ২. আমার ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ৩. ইনিতো আমারই প্রিয় আকা ও মাওলা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আন্দোলিত হয়ে বলবে:
ছরকার কি আমদ মারহাবা!
দিলদার কি আমদ মারহাবা!
অবশেষে শেষ প্রশ্নের জবাব দেয়ার পর জাহান্নামের জানালা খোলা হবে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা বন্ধ হয়ে যাবে। আর জান্নাতের জানালা খুলে যাবে এবং বলা হবে: যদি তুমি সঠিক উত্তর না দিতে পারতে তখন তোমার ভাগ্যে ঐ দোযখের উন্মুক্ত জানালাটিই হত। একথা শুনার পর কবরের ব্যক্তি অনেক আনন্দিত হবে। অত:পর তাকে জান্নাতি পোশাক পরিধান করানো হবে। জান্নাতি বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে। তার দৃষ্টি সীমা পর্যন্ত কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। সকল কিছুই তার জন্য আনন্দদায়ক হবে।
আর যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, সর্বদা মিথ্যা বলে,পরনিন্দা করে বেড়ায়, হারাম উপায়ে উপার্জনে করে, অশ্লীল সিনেমা-নাটক নিজেও দেখে অপরকেও দেখায়, আর খারাপ গান-বাজনা নিজেও শুনে অপরকেও শুনায়, মুসলমানদের মনে কষ্ট দেয়, যদি গুনাহ সমূহের বোঝার কারণে ঈমানও নষ্ট হয়ে যায়; তখন ঐ ফিরিশতাদ্বয়ের প্রত্যেক প্রশ্নের জবাবে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে: হায়! আফসোস, হায় আফসোস! আমি সে প্রসঙ্গে কিছুই জানিনা। হায়! হায়! যখনই চোখ খুলি টিভির উপরই নজর ছিল। যখন কানে কিছু শুনেছি অবশ্যই সিনেমার গানই শুনেছি। আমার তো জানা নেই যে, প্রতিপালক কে? দ্বীন কি তাও তো আমি জানি না? আমি তো দুনিয়াতে আগমণের উদ্দেশ্য শুধু এটা বুঝেছি যে, যেমন ইচ্ছা তেমন কর, যেভাবে পার সম্পদ উপার্জন কর ইত্যাদি। যদি কখনো কেউ আমাকে আমার পরকালের মঙ্গলের জন্য দ্বীন-ধর্মের প্রতি আহ্বান করতো তখনই এটা বলে দিতাম যে, “সারাদিন কাজ করে দুর্বল হয়ে গিয়েছি। সময়ও পাই না।” অত:পর জান্নাতের জানালা তার জন্য খুলে দেয়া হবে, আর সাথে সাথে তা বন্ধ হয়ে যাবে। অতঃপর জাহান্নামের জানালা খুলে যাবে এবং তাকে বলা হবে: যদি তোমাকে করা প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর প্রদানে সক্ষম হতে তবে তোমার জন্য ঐ জান্নাতের জানালাটি খুলে দেয়া হত। একথা শুনে সে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়বে, জাহান্নামের জানালা থেকে তার গরম ও অগ্নি শিখা আসতে থাকবে। তার কাফনটিকে আগুনের কাফনে পরিবর্তন করে দেয়া হবে। আগুনের বিছানা তার কবরে বিছানো হবে। তার উপর আযাবের ফিরিশতা নিযুক্ত করা হবে, যারা অন্ধ এবং বধির হবে, তাদের কাছে লোহার গদা (হাতুড়ী) থাকবে। এটি দ্বারা যদি পাহাড়ে আঘাত করা হয়, তবে তা মাটির সাথে মিশে যাবে। ঐ হাতুড়ী দ্বারা তাকে মারতে থাকবে। এমনকি সাপ এবং বিষধর বিচ্ছু তার কবরে ভরপুর হয়ে যাবে। সকলে তাকে দংশন করতে থাকবে। তার খারাপ আমল সমূহ বিভিন্ন ভয়ংকর আকৃতি ধারণ করে কখনো কুকুর বা ভেড়া কিংবা অন্য আকৃতি নিয়ে তাকে শাস্তি দিতে থাকবে। [বাহারে শরীয়াত, ১/১১০-১১১] অতএব, দুনিয়ার সম্পদকে নিজের মনে করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আল্লাহ্র স্মরণ থেকে উদাসীন হওয়া উচিত নয়, আল্লাহ্ তা‘আলা ঈমানদারগণকে সতর্কতা প্রদানের নিমিত্তে ইরশাদ করেন: হে ঈমানদারগণ! তোমারই সম্পদ, তোমারই সন্তানগণ! যেন তোমাকে আল্লাহ্ (তা‘আলার) স্মরণ থেকে অলস বানিয়ে না দেয়।
[সূরা মুনাফিক্বূন: আয়াত-৯] আসুন! হালাল রিযিক সন্ধান করতে গিয়েও যেন কখনো ঐ রকম ব্যস্ত না হই, যা নামায সমূহ থেকে অলস করে দেয়। আর যদি আল্লাহ্ না করুক! হারাম উপার্জন এবং সুদের লেনদেন করে থাকি, তবে ছেড়ে দিই। সুদ-ঘুষের কারবার পরিত্যাগ করি। ইরশাদ হচ্ছে: “এবং তোমরা নিজ প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন কর এবং তার নিকটই প্রতি নিয়্যত উপস্থিত থাক। তোমাদের উপর আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বে আর তখন তোমাদের কোন সাহায্যকারী হবে না।”- সূরা যুমার:আয়াত-৫৪
টিকা – সূরা তাকাসূর, আয়াত-৮
– তাজকিরাতুল আউলিয়া, ১/ ২২২
– তিরমিযী, ৪/১৮৮, হাদীস-২৪২৪
– মালফুযাতে আ’লা হযরত, ৪৯৭ পৃ:; হিলয়াতুল আউলিয়া, ৮/২১৮,হাদীস- ১১৯৩৪
– মিহাজুল আবেদীন, ৮৬ প:
– সহীহ মুসলিম, ৪৬৫ পৃ:, হাদীস- ৯৩৪
– ফকীহ আবুল লাইস সমরকন্দী,ক্বুররাতুল উয়ূন ওয়া মুফাররিহুল ক্বলবিল মাহযূন,অধ্যায়:৬,পৃ:৪৫-৪৭
লিখক: আরবি প্রভাষক
রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী)মাদরাসা     
  

কোন মন্তব্য নেই

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.