Header Ads

Header ADS

জান্নাতীদের অভাবনীয় পুরুস্কার

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম

মুনতাযীর হে জান্নাত উস কে লিয়ে ভিরদ হে জিস কা সানায়ে মুহাম্মদ। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মুমিন অনুগত বান্দাদের জন্য পরকালে প্রস্তুত করে রেখেছেন জান্নাতী স্থায়ী নেয়ামত । এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি সৎ কাজ করবে- পূরুষ হোক কিংবা নারী আর যদি হয় মুসলমান, তবে ওই সব লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদেরকে অণূ পরিমাণও জুলুম করা হবে না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য ঐ নেয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান কখনো তা শুনেনি এবং কোন মানুষের মনে কখনোই এর ধারণাই আসেনি।” হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যেকোন মানুষ পূরুষ হোক বা মহিলা নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী যদি নেক আমল করে এবং মুমিন (বিশুদ্ধ আক্বীদা সম্পন্ন) হয়, তবে এর প্রতিদান হলো, সে কিয়ামতের পর জান্নাতে যাবে। আমল অনুযায়ী তার জান্নাতে মর্যাদা অর্জিত হবে এবং তার প্রতি তিল পরিমাণও অত্যাচার করা হবে না, সে যদি উচ্চ মর্যাদার যোগ্য হয়, তবে বিনা দোষে তার মর্যাদা কমিয়ে তাকে সাধারণ মর্যাদার ব্যক্তিদের স্তরে প্রবেশ করানো হবে না। কোরআনুল করিমের বিভিন্ন স্থানে জান্নাতীদের অর্জিত হওয়া নেয়ামতের বর্ণনা এসেছে। যেমন এই নেয়ামত সমূহের দৃশ্যপট বর্ণনা করে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, কারুকার্য খচিত আসনসমূহের উপর (সমাসীন) হবে; সেগুলোর উপর হেলান দিয়ে পরস্পর সামনাসামনি হয়ে (বসবে) । তাদের চতুর্পার্শ্বে চির-কিশোররা- কুজা ও জলপাত্র (বদনা) এবং পানপাত্র ও চোখের সামনে প্রবাহমান শরাব নিয়ে প্রদক্ষিণ করবে; যা দ্বারা না তাদের মাথা ব্যথা হবে, না তাদের হুশজ্ঞানে কোন পার্থক্য আসবে; এবং ফলমূল (নিয়ে), যা তারা পছন্দ করবে; এবং পক্ষীমাংস (থাকবে), যা তারা চাইবে। এবং বড় বড় চোখসম্পন্না হূরেরা; (তারা) যেন গোপন করে রাখা মুক্তা, (এসব) পুরস্কারস্বরূপ তাদের কৃতকর্মগুলোর। কোরআনুল করিমের উপরোক্ত আয়াতে জান্নাতীদের প্রদানকৃত নেয়ামত সমুহ বর্ণনা করা হয়েছে। জান্নাতীরা বাগানে পরস্পর সামনা সামনি কোল বালিশে হেলান দিয়ে প্রশান্ত মনে বসে থাকবে, তাদের খেদমতে নিয়োজিত গোলাম উচ্ছাসিত সূধা, আরামদায়ক আসন এবং আলো হাতে তাদের ডানে বামে আদেশের অপেক্ষায় থাকবে, সামনে প্রবাহমান শরাব, পছন্দনীয় খাবার এবং উন্নত ফলমূল দ্বারা তাদের সম্বর্ধনা করা হবে। মোটকথা জান্নাতে জান্নাতীরা তাদের দয়ালু প্রতিপালক আল্লাহ পাকের দয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে থাকবে এবং বিভিন্ন ধরনের নেয়ামত দ্বারা উপকৃত হতে থাকবে। মনে রাখবেন! জান্নাতে অর্জিত যেকোন নেয়ামত দুনিয়াবী কোন বস্তুর সাথে সামান্যতমও মিল থাকবে না। জান্নাতে আল্লাহ তায়ালার দয়ায় অর্জিত নেয়ামত ও উপহার সমূহ দুনিয়ার কোন বস্তুর সাথে উপমা চলে না।বাস্তবেই জান্নাতের স্থায়ী নেয়ামত সমূহ দুনিয়ার ধ্বংসশীল বস্তুর সাথে কোন তুলনাই হয়না। নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান সেই, যে জান্নাতের স্থায়ী নেয়ামত সমূহকে এই দুনিয়ার ধ্বংসময় নেয়ামতের উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং ঐ সকল নেয়ামত সমূহ অর্জনের চেষ্টা করে, যা সর্বদা স্থায়ী। কিন্তু আফসোস! আমাদের অধিকাংশই এই বিষয়ের প্রতি উদাসীন এবং নিজের জীবনকে এই নশ্বর দুনিয়ার অস্থায়ী রঙে রঙিন করতে ব্যস্ত। মনে রাখবেন! দুনিয়া এবং এর রঙের উদাহরণ ঐ সাপের ন্যায়, যার উপর হাত লাগালে নরম ও তুলতুলে মনে হয়, কিন্তু এর বিষ হলো প্রাণনাশক। তাই দুনিয়া বিমুখ হয়ে পরকালকে সুন্দর করার প্রতি মনযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়। ক্ষণস্থায়ী হায়াতে সাধ্যমতো নেকী করার মাধ্যমে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে। অন্যথায় মৃত্যুর সময় আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা নেক আমলের ওসিলায় দুনিয়াও দান করেন, কিন্তু দুনিয়াবী আমলের সাথে আখিরাত দান করেন না। সুতরাং আসুন! নিজের আখিরাতকে উত্তম বানানোর চেষ্টা করি! এর বরকতে দুনিয়াও উত্তম হয়ে যাবে, আখিরাতও সজ্জিত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের চিরস্থায়ী নেয়ামতও নসীব হবে। জান্নাতে চারটি নদী রয়েছে, একটি পানির, দ্বিতীয়টি দূধের, তৃতীয়টি মধুর, চতুর্থটি অমীয় সূধার (শরাব), অতঃপর এগুলো থেকে নহর প্রবাহিত হয়ে প্রত্যেকের অবস্থানে বয়ে চলছে। জান্নাতের নহরগুলো মাটি খুঁড়ে নয় বরং মাটির উপরই প্রবাহমান, নহরের এক পাশ মুক্তোর, অপর পাশ ইয়াকুতের এবং এই নহরের মাটি খাটি মিশকের। জান্নাতের শরাব (অমিয় সূধা) দুনিয়ার মতো নয়, যা দূর্গন্ধ ও তিক্ত এবং নেশাকর হয়ে থাকে এবং পানকারীর জ্ঞানও লোপ পেয়ে যায়, অজান্তেই অহেতুক বকবক করে; জান্নাতী শরাব এসব কিছু থেকে পবিত্র ও মহিমাময়। জান্নাতে বিভিন্ন ধরনের মণি-মুক্তার অট্টালিকা রয়েছে, এরূপ স্বচ্ছ যে, ভেতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়। জান্নাতের দেওয়াল স্বর্ণ এবং রূপার ইট ও মুশকের মাটি দ্বারা নির্মিত। একটি ইট স্বর্ণের, একটি ইট রূপার, মাটি জাফরানের, কংμিটের স্থলে মুক্তা ও ইয়াকুত (প্রবাল)। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, চিরস্থায়ী জান্নাতের একটি ইট সাদা মুক্তার, একটি ইট লাল ইয়াকুতের, একটি সবুজ পান্নার, মুশকের কাদা এবং ঘাসের স্থলে জাফরান, মুক্তার কংμিট, আম্বরের মাটি। জান্নাতে সকল প্রকার সুস্বাধু খাবার পাওয়া যাবে। যা চাইবে তৎক্ষনাৎ জান্নাতীদের সামনে উপস্থিত হবে। যদি পানীয় পান করার ইচ্ছা জাগে তবে পানির পাত্র স্বয়ং হাতে এসে যাবে, এতে ঠিক ইচ্ছানুযায়ী পানি, দূধ, শরাব বা মধূ থাকবে, তা তার ইচ্ছা থেকে এক ফোঁটা কমও হবে না কিংবা বেশিও হবে না। পান করার পর পানির পাত্র স্বয়ং যেখান থেকে এসেছিলো সেখানে চলে যাবে। এক প্রকার সুগন্ধময় আনন্দদায়ক ঢেকুর আসবে, সুগন্ধময় আনন্দদায়ক ঘাম বের হবে, সব খাবার হজম হয়ে যাবে এবং ঢেকুর ও ঘাম থেকে মিশকের সুগন্ধ বের হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির মাথার পাশে কমপক্ষে দশ হাজার খাদিম দাঁড়িয়ে থাকবে, খাদিমদের মধ্যে প্রত্যেকের একহাতে রূপার পাত্র থাকবে এবং অপর হাতে থাকবে স্বর্ণের পাত্র। আর প্রত্যেক পাত্রে নতুন নতুন রঙের নেয়ামত থাকবে। যতই খাবে স্বাদ কম হবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে, প্রত্যেক গ্রাসে ৭০ রকমের স্বাদ হবে, প্রত্যেকটির স্বাদ আরেকটির চেয়ে ভিন্ন হবে, তা একই সাথে অনুভূত হবে, একটির অনুভব আরেকটির জন্য প্রতিবন্ধক হবে না, জান্নাতীদের পোশাক পুরোনো হবে না, তাদের যৌবন কখনা শেষ হবে না। জান্নাতীরা যখন জান্নাতে যাবে, সকলেই নিজ আমলের সমপরিমাণ মর্যাদা পাবে এবং তার অনুগ্রহের সীমা নেই। তাদেরকে দুনিয়ার এক সপ্তাহ সময়ের পর পর নিজ পরওয়ারদিগারের যিয়ারত করতে অনুমতি দেয়া হবে। আল্লাহ তায়ালার আরশ প্রকাশিত হবে এবং আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বাগানগুলো থেকে একটি বাগানে তাজাল্লি প্রদান করবেন। আর জান্নাতীদের জন্য মিম্বর বিছানো হবে, নূরের মিম্বর, মুক্তার মিম্বর, ইয়াকুতের মিম্বর, পান্নার মিম্বর, স্বর্ণের মিম্বর, রূপার মিম্বর এবং এতে কম মর্যাদাবানরাও মুশক ও কাফুরের উপত্যাকায় বসবে আর এতে নগন্য কেউ নয়, নিজের ধারনায় চেয়ারে উপবিষ্টদেরকে নিজের চেয়ে বড় মনে করবে না এবং আল্লাহ তায়ালার দীদার এমন পরিস্কার ভাবে হবে, যেমন সূর্য ও চৌদ্দ তারিখের চাঁদকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেখে থাকে যে, একজনে দেখা অপররের জন্য প্রতিবন্ধক নয়, আর আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের প্রতি তাজাল্লি প্রদান করবেন। এর মধ্যে কাউকে ইরশাদ করবেন: হে অমুকের সন্তান অমুক! তোমার কি মনে আছে, যেদিন তুমি এরূপ করেছিলে...? দুনিয়ার কিছু গুনাহ স্মরন করিয়ে দেয়া হবে। বান্দা আরয করবে, হে মালিক! তুমি কি আমায় ক্ষমা করে দাওনি? ইরশাদ হবে: হ্যাঁ! আমার ক্ষমার কারণেই তো তুমি এই মর্যাদায় পৌঁছেছো, তারা সবাই এই অবস্থায় থাকবে যে, মেঘ ছেয়ে যাবে এবং তাদের উপর সুগন্ধি বর্ষন হবে যে, এরূপ সুগন্ধি লোকেরা কখনো পায়নি এবং আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন, যাও ঐদিকে, যা আমি তোমাদের জন্য সম্মান প্রস্তুত করে রেখেছি, যা ইচ্ছা নিয়ে নাও, অতঃপর লোকেরা একটি বাজারে যাবে, যা ফিরিশতারা ঘিরে রেখেছে। তাতে ঐ বস্তুই থাকবে যে, যার মতো না কোন চোখে দেখেছে, না কোন কানে শুনেছে আর না কারো মনে এরূপ ধারনা জন্মেছে। এর মধ্যে যে বস্তুই চাইবে, তা তাদের সাথে দিয়ে দেয়া হবে, μয়-বিμয় হবে না, জান্নাতীরা সেই বাজারে পরস্পর মিলিত হবে। ছোট মর্যাদাবানরা বড় মর্যাদাবানদের দেখবে, তাদের পোশাক পছন্দ করবে, তখনও কথাবার্তা শেষ হবে না, দেখবে যে তাদের পোশাক এর চেয়েও উত্তম এবং তা এই কারণেই যে, জান্নাতে কারো জন্য দুঃখ নেই। অতঃপর সেখান থেকে নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে আসবে। তাদের স্ত্রীরা স্বাগত জানাবে, মোবারকবাদ দিয়ে বলবে, আপনারা ফিরে এসেছেন এবং আপনাদের সৌন্দর্য আমাদের কাছে থেকে যাওয়ার সময় যা ছিলো এখন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন তারা উত্তর দেবে, মহান প্রতিপালকের নিকট আমাদের বসার সৌভাগ্য নসীব হয়েছে, তাই আমাদের এরূপ হয়ে যাওয়াই উপযুক্ত ছিলো। জান্নাতীরা যখন পরস্পর সাক্ষাৎ করতে চাইবে তখন একজনের আসন অপরজনের নিকট চলে যাবে। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, তাদের নিকট খুবই উন্নত মানের বাহন এবং ঘোড়া আনা হবে, আর এর উপর আরোহন করে যেখানে ইচ্ছা যাবে। সবচেয়ে কম মর্যাদার যে জান্নাতী, তারও বাগান, স্ত্রী, নেয়ামত, খাদেম এবং আসন হাজার বছরের সফরের দূরত্বের সমান হবে এবং তাদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই হবে, যে আল্লাহ তায়ালার দয়ায় সকাল সন্ধ্যা দীদার দ্বারা ধন্য হবেন। যখন জান্নাতীরা জান্নাতে যাবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের ইরশাদ করবেন, “আর কিছু কি চাও, যা তোমাদের দিবো”। তারা আরয করবে, তুমি আমাদের মুখ উজ্জল করেছো, জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছো, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছো, সেই সময় পর্দা উঠে যাবে, যা সৃষ্টির প্রতি ছিলো, তখন আল্লাহর দীদারের চেয়ে বড় তারা কোন বস্তুই পাবে না। নিঃসন্দেহে দুনিয়ার ভালবাসা এবং অস্থায়ী সম্পদের আকাঙ্খা থেকে বিরত থেকে জান্নাত অর্জনের জন্য আমল করা খুবই কঠিন একটি ধাপ। কিন্তু যদি আমরা আখিরাতে অর্জিত সহজতা, আনন্দ এবং আরাম-আয়েশের প্রতি দৃষ্টি রাখি তবে নিশ্চয় আমাদের জন্য আমল করা সহজ হয়ে যাবে। মনে করুন, যদি আমাদের সামনে একটি ১০০টাকার নোট এবং পাশে এক লক্ষ টাকার বান্ডিল রাখা হয়, আর এর মধ্য থেকে যেকোন একটি নেয়ার অধিকার দেয়া হলে তবে নিঃসন্দেহে আমাদের প্রত্যেকে এক লাখ টাকার বান্ডিলের দিকেই দৃষ্টি রাখবে এবং এক লাখ টাকার বান্ডিলটিই নিতে চাইবো, ১০০ টাকার নোটের দিকে কোন বুদ্ধিমানই দৃষ্টি উঠিয়েও তাকাবে না। অনুরূপভাবেই দুনিয়া এবং এর মাঝে যা কিছু আছে তার উদাহরণ ১০০ টাকার নোটের মতোই। আর আখিরাতে অর্জিত উপকারীতা এবং জান্নাতে অর্জিত নেয়ামত তো এমনই, যার কোন মূল্য হতে পারে না। কেননা, দুনিয়ার অস্থায়ী নেয়ামত সমূহের সাথে জান্নাতের স্থায়ী নেয়ামতের কোন তুলনাই হতে পারে না। তাই এই দুনিয়ার চিন্তা ছেড়ে দিন এবং আখিরাত অর্জন, নেকীর প্রতি মন লাগানো এবং জান্নাত পাওয়ার চেষ্টা করুন। মুফলিসোঁ! উন কি গলি মে জা পড়ো! বাগে খুলদ ইকরাম হো হি জায়ে গা। হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে আমার প্রতি দিনে এক হাজার বার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, সে ততক্ষন পর্যন্ত মৃত্যুবরন করবে না, যতক্ষন জান্নাতে নিজের স্থান দেখে নিবে না। তিনি আরো ইরশাদ করেন, জান্নাতে ১০০টি স্তর রয়েছে, প্রতি দু’টি স্তরের মাঝে আসমান ও জমিনের সমান ব্যবধান এবং ফিরদাউস হলো সবচেয়ে উচ্চ স্তর। তাতে জান্নাতের চারটি নদী প্রবাহমান এবং এর উপর হচ্ছে আরশ। অতএব যখন তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করবে, তখন ফিরদাউসের প্রার্থনা করো। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, নিশ্চয় আশ্চার্য লাগে ঐ ব্যক্তির জন্য, যে জান্নাতে আলিশান ঘর হওয়ার প্রতি ঈমান রাখে, এর পরিচিতিকে সত্য মনে করে এবং এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ঈমান রাখে যে, এতে বসবাসকারীরা কখনো মৃত্যুর মুখে পতিত হবে না, (সে জানে যে) যে সেই ঘরে এসে যাবে, তাকে দুঃখ-দূর্দশা কষ্ট দিবেনা, এতে অবস্থানকারীদের মাঝে কখনোই অনৈক্য হবে না এবং তারা সর্বদা নিরাপদ ও প্রশান্তিতে থাকবে। এসব কিছু জানার পরও সে এরূপ ঘরে প্রতি আকর্ষিত, যা অবশেষে ধ্বংস হয়ে যাবে, যার আরাম আয়েশ নিঃশেষ হয়ে যাবে, আল্লাহ তায়ালার শপথ! যদি জান্নাতে শুধু মৃত্যুর প্রতি অভয় হতো, তবে মানুষ ক্ষূধা, পিপাসা এবং সকল চাহিদা থেকে ভয়হীন থাকা যেতো এবং অন্যান্য নেয়ামত না হলে তবুও সেই জান্নাত এর উপযোগী ছিলো যে, এর জন্য দুনিয়াকে ছেড়ে দেয়া যেতো এবং এর উপর এমন বস্তুকে প্রাধান্য দিতো না, যা লুট হয়ে যাওয়া এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া সম্পন্ন, আর জান্নাতে অবস্থানকারীরা নির্ভয় বাদশাহের ন্যায়, রঙ বেরঙের আনন্দ, প্রশান্তিময়, প্রত্যেক চাহিদা অর্জনকারী হতো, প্রতিদিন আরশে আযীমের নিকট গমনকারী হতো, দয়া প্রদানকারী আল্লাহ তায়ালার দীদারকারী হতো, আল্লাহ তায়ালাকে এরূপ অতুলনীয় দৃষ্টিতে দেখতো যে, সেই দৃষ্টি দ্বারা সে জান্নাতের নেয়ামত দেখতো না, সে ঐ নেয়ামতের প্রতি পিষ্ঠ প্রদর্শনকারী হতো না, সর্বদা এই নেয়ামতের মাঝে থাকবে এবং এর নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে নিরাপদে থাকবে। ইরশাদ হচ্ছে, (তোমরা) দ্রুত অগ্রসর হও আপন প্রতিপালকের ক্ষমা এবং এমন বেহেশতের প্রতি যার প্রশস্ততায় সমস্ত আসমান ও যমীন এসে যায়, যা পরহেযগারদের জন্য তৈরী রাখা হয়েছে। সদরুল আফাযিল মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী বলেন: ‘দ্রুত অগ্রসর হও’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাওবা করা, ফরয আদায় করা এবং আনুগত্য ও একনিষ্ট আমল অবলম্বন করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিজের গুনাহ থেকে তাওবা করে, ফরয সমূহ যেমন; নামায ও রোযা ইত্যাদি এবং অন্যান্য শরয়ী বিধানাবলী একনিষ্টভাবে আমল করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও যে, এই পথটিই জান্নাতের দিকে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জান্নাত লাভের পথ সুগম করুক।


লিখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা।

কোন মন্তব্য নেই

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.