আত্মহত্যা, আত্মঘাতী ও অনশন: প্রাসঙ্গিক দু’টি কথা
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
পারিবারিক বিপর্যয়, ব্যর্থতা, মানসিক অশান্তি, দু:খ-কষ্ট,নারী নির্যাতন,ধর্ষণ, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি কারণে অনেকে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয়। যখন কারও জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে করে, তখনই ধর্ম-কর্ম ভুলে মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। জাগতিক দু:খ-কষ্ট, লা না ও অপমান থেকে আত্মরক্ষার ইচ্ছায় মানুষ আত্মহননের মাধ্যমে চিরন্তন কষ্ট ও লা নার দিকে চলে যায়। প্রচন্ড মনস্তাত্বিক চাপও আত্মহত্যার পিছনে কাজ করে। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহননের মধ্য দিয়ে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা মুক্তি খুঁজে। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে কম্যুনিস্ট অধ্যুষিত দেশসহ বৌদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের সেক্যুলার দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রথম প াশটি দেশের মধ্যে মুসলিম অধ্যুষিত একটি মাত্র দেশ আছে। প্রথম পচাঁত্তরটি দেশের মধ্যে মাত্র চারটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আছে। দেশগুলো হচ্ছে-কাজাখিস্তান,কিরগিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান। মজার ব্যাপার হলো এই চারটি দেশই কম্যুনিস্ট শাষিত সোভিয়েত রাশিয়ার অধীনে ছিল। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়ায় এ দেশগুলোও স¦াধীন হয়। অর্থাৎ দেশগুলো হয়ত কম্যুনিজমের বসÍুবাদী প্রভাব থেকে আজো মুক্ত হতে পারে নি। অধিকন্তু দেশ চারটি মুসলিম অধ্যুষিত হলেও মুসলিমদের শতকরা হার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো অত বেশি না। ফলে এই দেশগুলোতে অমুসলিমদের মধ্যে হয়ত আত্মহত্যার হার বেশি, আর সেটা হওয়াটাই স¦াভাবিক। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশে আত্মহত্যার হার খুবই কম। যেমন ইরানে প্রতি আড়াই লক্ষে মাত্র একজন, সিরিয়াতে প্রতি পাঁচ লক্ষে একজন, আর মিশরে প্রতি দশ লক্ষে একজন। আর বাংলাদেশে প্রতি লক্ষে ১০ জনের বেশি। সাম্প্রতিক এর সাথে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত ‘জিহাদ’ এর নামে আত্মঘাতী হামলা। বর্তমানে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে মুসলিম নামধারি কিছু ব্যক্তি আত্মঘাতী হামলার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছু পথভ্রষ্ট মুসলমান আত্মহত্যার মাধ্যমে ভীতি স ারকে বৈধ ও উত্তম কাজ মনে করছে এবং তরুণ ও যুবকদেরকে ভুলিয়ে এর ক্রীড়নকে পরিণত করছে। যখন তাদের পক্ষ থেকে চরমপন্থী কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তখন তাদেরকে দমন করার নামে আমেরিকা ও ইউরোপের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক সন্ত্রাস শুরু হয়ে যায়। যার দরুন সম্পদ ধ্বংস হয়, নিরপরাধ লোকজন মারা যায়, নিষ্পাপ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা বলির পাঠা হয়। আল-কায়েদার বাহানায় পূর্বে ইরাক ও আফগানিস্তান ধ্বংস হয়েছে। আর এখন ‘আইএস’-এর বাহানায় মুসলিম বিশ্ব বরবাদ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বমিডিয়া মুসলমানদের অনুকূলে না থাকার কারণে সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়ায় ঢালাওভাবে বিভিন্ন হামলা এবং আত্মঘাতী হামলায় মুসলমানগণ জড়িত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং দোষ দেওয়া হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে; অথচ অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব হামলা মুসলিমরা করেনি। ‘আইএস’ মূলত খারেজী ও ইহূদীদের মদদপুষ্ট সংগঠন। যার প্রতিষ্ঠাতা ইহূদী বংশোদ্ভূত আবুবকর বাগদাদী। যিনি স্বীয় নাম ইলিয়ট শামউন পরিবর্তন করে আবু বকর বাগদাদী রেখেছে এবং নিজেকে ‘আমীরুল মুমিনীন’ আখ্যা দিয়েছে। আর নির্দ্বিধায় মানুষ হত্যা শুরু করে দিয়েছে। যার তার বর্বর খুনোখুনি যেন চিৎকার দিয়ে বলছে, ইসলামের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তো মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য এসেছি। আর যদি সে ইহূদী না হয়ে থাকে তাহলে খারেজী সম্প্রদায়ের সরদার। যাদের ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: ‘তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়’। তারা আকার-আকৃতিতে মুসলমান মনে হবে, নামায আদায় করবে, কোরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হবে। তাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে জাতি ও দেশবাসীকে অবহিত করা এখন সময়ের অনিবার্য দাবী। উল্লিখিত দু’ধরনের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা এখন সময়ের দাবী এবং ইমামদের দায়িত্ব। চরমপন্থা চরমপন্থাই, যা ইসলামে হারাম। অনুরূপভাবে আত্মহত্যাও হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা সর্তক বাণী ঘোষণা করে ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো,আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ অন্যত্র ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ অপর আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া যে কাউকে হত্যা করলো, সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো; আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো।’ অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। ... আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ অন্যত্র ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে (সে যে মত বা পথেরই হোক না কেন) হত্যা করো না।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আত্মহত্যার ভয়ানক পরিণতি সম্পকে ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা অনুরূপভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে, যা দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে। ‘যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করবে, তাকে জাহান্নামে অনুরূপভাবে ফাঁসি দেওয়া হবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ ‘তোমাদের পূর্বেকার এক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ আত্মহত্যা তো দূরে থাক, মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়। কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীজি ইরশাদ করেন: ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয়, তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন. যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে, এর প্রতিধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়তেন না। তবে এমন ব্যক্তির জানাযায় শীর্ষস্থানীয় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব না গিয়ে সাধারণ লোক দিয়ে জানাযার নামায পড়িয়ে নেওয়াই উত্তম। কারণ, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, সে শুধু তার নিজের ওপরই জুলুম করে না বরং এতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-পরিজন সবাই খুব কষ্ট পায় এবং অত্যন্ত বিচলিতবোধ করে। যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, এটি এক বিরাট অন্যায়। কারণ, এর দ্বারা আল্লাহর বেঁধে দেয়া নিয়ম লঙ্ঘিত হয়। তাই এমন কুচিন্তা থেকে সতর্ক থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। মানুষ এ কাজটি করে যখন তার সামনে কোন উপায়ান্তর না থাকে। প্রকৃতপক্ষে কোন মুমিন আত্মহত্যা করতে পারে না। কেননা, এটা করলে সে ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারাবে। তাকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, উপায়-উপাদানের মালিক আল্লাহ। নিরুপায় মানুষ আল্লাহ উপর একান্ত ভরসা করে বৈধ পন্থায় চেষ্টা করে গেলে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য উত্তম পথ বের করে দিবেন। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর অনুগত বান্দাদের আশ্বস্ত করে ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য তিনি উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক প্রদান করেন, যা সে কল্পনাও করেনি’। তিনি আরো ইরশাদ করেন: ‘যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, অবশ্যই আমি তাদেরকে আমাদের পথসমূহে পরিচালিত করবো। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’। ইসলামী আইন শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব ফতোয়ায়ে কাজিখানে রয়েছে, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন নিজেকে হত্যা করেছে, আর দ্বিতীয়জন অন্যকে হত্যা করেছে, তখন যে নিজেকে হত্যা করেছে, তার পাপ বেশি হবে।’ কেননা, অন্যকে হত্যা করলে আপসের মাধ্যমে তাওবা করার সুযোগ থাকে; কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য তাওবার কোনো পথ থাকে না। যদি কোনো ব্যক্তি অন্যকে বলে, তুমি নিজেকে হত্যা করো নতুবা আমি তোমাকে হত্যা করব, তখনো সে নিজেকে হত্যা করতে পারবে না। নতুবা সে আত্মহত্যাকারীও পাপী হবে। বর্তমান সময়ে তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত অনশন। অথার্ৎ কোনো কারণে না খেয়ে মারা যাওয়া। এটিও ইসলাম সমর্থিত নয়। যে ব্যক্তি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকল, ফলে মরে গেল, তখন তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ ওয়াজিব হয়ে যাবে। কেননা, সে নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করল। এটি ওই ব্যক্তির মতো, যে ছুরিকাঘাতে নিজেকে হত্যা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ২০০৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর “বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস” পালন করে আসছে। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোকে প্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা রক্ষাকারী বিষয় বলা হয়। জীবনের খারাপ সময়গুলোতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মবিশ্বাস, সমস্যা সমাধানের কার্যকর দক্ষতা এবং প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ইতিবাচক সহায়তা লাভের চেষ্টা প্রভৃতিকে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে রক্ষাকারী বা প্রতিরোধী বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি, অনুশাসন, ভালো বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহকর্মীর সঙ্গে সামাজিক সুসম্পর্ক প্রভৃতিও আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাসে সহায়তা করে। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের আত্মহননের ইচ্ছা আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে ব্যক্ত করে থাকেন। হয়তো সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না। আত্মহত্যা প্রতিরোধে এ সম্পর্কিত কুসংস্কার দূর করার জন্য তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রচার, শিক্ষা ও সচেতনতার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রচার মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণা সাপেক্ষ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক এবং প্রচার-মাধ্যম-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, আতহত্যার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা থেকে বিরত থাকতে ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নির্দেশ প্রদান করেছে। পরকালে আত্মঘাতী হামলাকারী ও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির ভয়বাহ শাস্তির কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, নিঃসন্দেহে তারা জাহান্নামি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে আত্মঘাতী হামলা ও আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। তাঁর বিধি-বিধানগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন! বিজাহিন নবিয়্যিল আমীন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
লিখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা
পারিবারিক বিপর্যয়, ব্যর্থতা, মানসিক অশান্তি, দু:খ-কষ্ট,নারী নির্যাতন,ধর্ষণ, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা প্রভৃতি কারণে অনেকে আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নেয়। যখন কারও জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে করে, তখনই ধর্ম-কর্ম ভুলে মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। জাগতিক দু:খ-কষ্ট, লা না ও অপমান থেকে আত্মরক্ষার ইচ্ছায় মানুষ আত্মহননের মাধ্যমে চিরন্তন কষ্ট ও লা নার দিকে চলে যায়। প্রচন্ড মনস্তাত্বিক চাপও আত্মহত্যার পিছনে কাজ করে। ফলে ভারসাম্য হারিয়ে তা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহননের মধ্য দিয়ে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিরা মুক্তি খুঁজে। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে কম্যুনিস্ট অধ্যুষিত দেশসহ বৌদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের সেক্যুলার দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রথম প াশটি দেশের মধ্যে মুসলিম অধ্যুষিত একটি মাত্র দেশ আছে। প্রথম পচাঁত্তরটি দেশের মধ্যে মাত্র চারটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আছে। দেশগুলো হচ্ছে-কাজাখিস্তান,কিরগিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান। মজার ব্যাপার হলো এই চারটি দেশই কম্যুনিস্ট শাষিত সোভিয়েত রাশিয়ার অধীনে ছিল। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়ায় এ দেশগুলোও স¦াধীন হয়। অর্থাৎ দেশগুলো হয়ত কম্যুনিজমের বসÍুবাদী প্রভাব থেকে আজো মুক্ত হতে পারে নি। অধিকন্তু দেশ চারটি মুসলিম অধ্যুষিত হলেও মুসলিমদের শতকরা হার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো অত বেশি না। ফলে এই দেশগুলোতে অমুসলিমদের মধ্যে হয়ত আত্মহত্যার হার বেশি, আর সেটা হওয়াটাই স¦াভাবিক। কারণ, মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশে আত্মহত্যার হার খুবই কম। যেমন ইরানে প্রতি আড়াই লক্ষে মাত্র একজন, সিরিয়াতে প্রতি পাঁচ লক্ষে একজন, আর মিশরে প্রতি দশ লক্ষে একজন। আর বাংলাদেশে প্রতি লক্ষে ১০ জনের বেশি। সাম্প্রতিক এর সাথে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত ‘জিহাদ’ এর নামে আত্মঘাতী হামলা। বর্তমানে ভুল পথে পরিচালিত হয়ে মুসলিম নামধারি কিছু ব্যক্তি আত্মঘাতী হামলার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছু পথভ্রষ্ট মুসলমান আত্মহত্যার মাধ্যমে ভীতি স ারকে বৈধ ও উত্তম কাজ মনে করছে এবং তরুণ ও যুবকদেরকে ভুলিয়ে এর ক্রীড়নকে পরিণত করছে। যখন তাদের পক্ষ থেকে চরমপন্থী কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তখন তাদেরকে দমন করার নামে আমেরিকা ও ইউরোপের পক্ষ থেকে বৈশ্বিক সন্ত্রাস শুরু হয়ে যায়। যার দরুন সম্পদ ধ্বংস হয়, নিরপরাধ লোকজন মারা যায়, নিষ্পাপ শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা বলির পাঠা হয়। আল-কায়েদার বাহানায় পূর্বে ইরাক ও আফগানিস্তান ধ্বংস হয়েছে। আর এখন ‘আইএস’-এর বাহানায় মুসলিম বিশ্ব বরবাদ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বমিডিয়া মুসলমানদের অনুকূলে না থাকার কারণে সঠিক তথ্য প্রমাণ ছাড়ায় ঢালাওভাবে বিভিন্ন হামলা এবং আত্মঘাতী হামলায় মুসলমানগণ জড়িত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং দোষ দেওয়া হচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে; অথচ অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব হামলা মুসলিমরা করেনি। ‘আইএস’ মূলত খারেজী ও ইহূদীদের মদদপুষ্ট সংগঠন। যার প্রতিষ্ঠাতা ইহূদী বংশোদ্ভূত আবুবকর বাগদাদী। যিনি স্বীয় নাম ইলিয়ট শামউন পরিবর্তন করে আবু বকর বাগদাদী রেখেছে এবং নিজেকে ‘আমীরুল মুমিনীন’ আখ্যা দিয়েছে। আর নির্দ্বিধায় মানুষ হত্যা শুরু করে দিয়েছে। যার তার বর্বর খুনোখুনি যেন চিৎকার দিয়ে বলছে, ইসলামের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তো মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য এসেছি। আর যদি সে ইহূদী না হয়ে থাকে তাহলে খারেজী সম্প্রদায়ের সরদার। যাদের ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: ‘তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়’। তারা আকার-আকৃতিতে মুসলমান মনে হবে, নামায আদায় করবে, কোরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হবে। তাদের ভয়াবহতা সম্পর্কে জাতি ও দেশবাসীকে অবহিত করা এখন সময়ের অনিবার্য দাবী। উল্লিখিত দু’ধরনের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা এখন সময়ের দাবী এবং ইমামদের দায়িত্ব। চরমপন্থা চরমপন্থাই, যা ইসলামে হারাম। অনুরূপভাবে আত্মহত্যাও হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা সর্তক বাণী ঘোষণা করে ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্যই আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো,আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’ অন্যত্র ইরশাদ করেন: ‘আর তোমরা নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না।’ অপর আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া যে কাউকে হত্যা করলো, সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো; আর যে কারো প্রাণ রক্ষা করলো, সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো।’ অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। ... আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ অন্যত্র ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন। যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে (সে যে মত বা পথেরই হোক না কেন) হত্যা করো না।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আত্মহত্যার ভয়ানক পরিণতি সম্পকে ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা অনুরূপভাবে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে, সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা অনুরূপভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে, তার কাছে জাহান্নামে সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে, যা দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেট ফুঁড়তে থাকবে। ‘যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করবে, তাকে জাহান্নামে অনুরূপভাবে ফাঁসি দেওয়া হবে। আর যে বর্শার আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ ‘তোমাদের পূর্বেকার এক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এরপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ আত্মহত্যা তো দূরে থাক, মৃত্যু কামনাও বৈধ নয়। কোনো বিপদে পড়ে বা জীবন যন্ত্রনায় কাতর হয়ে নিজের মৃত্যু কামনা করতে পর্যন্ত বারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নবীজি ইরশাদ করেন: ‘তোমাদের কেউ যেন কোনো বিপদে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা না করে। মৃত্যু যদি তাকে প্রত্যাশা করতেই হয়, তবে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ আমাকে সে অবধি জীবিত রাখুন, যতক্ষণ আমার জীবনটা হয় আমার জন্য কল্যাণকর। আর আমাকে তখনই মৃত্যু দিন. যখন মৃত্যুই হয় আমার জন্য শ্রেয়।’ আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে, এর প্রতিধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়তেন না। তবে এমন ব্যক্তির জানাযায় শীর্ষস্থানীয় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব না গিয়ে সাধারণ লোক দিয়ে জানাযার নামায পড়িয়ে নেওয়াই উত্তম। কারণ, যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, সে শুধু তার নিজের ওপরই জুলুম করে না বরং এতে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়-পরিজন সবাই খুব কষ্ট পায় এবং অত্যন্ত বিচলিতবোধ করে। যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, এটি এক বিরাট অন্যায়। কারণ, এর দ্বারা আল্লাহর বেঁধে দেয়া নিয়ম লঙ্ঘিত হয়। তাই এমন কুচিন্তা থেকে সতর্ক থাকা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। মানুষ এ কাজটি করে যখন তার সামনে কোন উপায়ান্তর না থাকে। প্রকৃতপক্ষে কোন মুমিন আত্মহত্যা করতে পারে না। কেননা, এটা করলে সে ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারাবে। তাকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, উপায়-উপাদানের মালিক আল্লাহ। নিরুপায় মানুষ আল্লাহ উপর একান্ত ভরসা করে বৈধ পন্থায় চেষ্টা করে গেলে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য উত্তম পথ বের করে দিবেন। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর অনুগত বান্দাদের আশ্বস্ত করে ইরশাদ করেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য তিনি উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক প্রদান করেন, যা সে কল্পনাও করেনি’। তিনি আরো ইরশাদ করেন: ‘যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, অবশ্যই আমি তাদেরকে আমাদের পথসমূহে পরিচালিত করবো। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’। ইসলামী আইন শাস্ত্রের বিখ্যাত কিতাব ফতোয়ায়ে কাজিখানে রয়েছে, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন নিজেকে হত্যা করেছে, আর দ্বিতীয়জন অন্যকে হত্যা করেছে, তখন যে নিজেকে হত্যা করেছে, তার পাপ বেশি হবে।’ কেননা, অন্যকে হত্যা করলে আপসের মাধ্যমে তাওবা করার সুযোগ থাকে; কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য তাওবার কোনো পথ থাকে না। যদি কোনো ব্যক্তি অন্যকে বলে, তুমি নিজেকে হত্যা করো নতুবা আমি তোমাকে হত্যা করব, তখনো সে নিজেকে হত্যা করতে পারবে না। নতুবা সে আত্মহত্যাকারীও পাপী হবে। বর্তমান সময়ে তার সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত অনশন। অথার্ৎ কোনো কারণে না খেয়ে মারা যাওয়া। এটিও ইসলাম সমর্থিত নয়। যে ব্যক্তি খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকল, ফলে মরে গেল, তখন তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ ওয়াজিব হয়ে যাবে। কেননা, সে নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করল। এটি ওই ব্যক্তির মতো, যে ছুরিকাঘাতে নিজেকে হত্যা করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ২০০৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় প্রতিবছর ১০ সেপ্টেম্বর “বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস” পালন করে আসছে। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোকে প্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর বা রক্ষাকারী বিষয় বলা হয়। জীবনের খারাপ সময়গুলোতে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মবিশ্বাস, সমস্যা সমাধানের কার্যকর দক্ষতা এবং প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ইতিবাচক সহায়তা লাভের চেষ্টা প্রভৃতিকে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে রক্ষাকারী বা প্রতিরোধী বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি, অনুশাসন, ভালো বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহকর্মীর সঙ্গে সামাজিক সুসম্পর্ক প্রভৃতিও আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাসে সহায়তা করে। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো গুরুতর মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের আত্মহননের ইচ্ছা আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে ব্যক্ত করে থাকেন। হয়তো সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না। আত্মহত্যা প্রতিরোধে এ সম্পর্কিত কুসংস্কার দূর করার জন্য তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক প্রচার, শিক্ষা ও সচেতনতার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রচার মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণা সাপেক্ষ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক এবং প্রচার-মাধ্যম-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এ ব্যাপারে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, আতহত্যার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট। আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা থেকে বিরত থাকতে ইসলাম সম্পূর্ণভাবে নির্দেশ প্রদান করেছে। পরকালে আত্মঘাতী হামলাকারী ও আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির ভয়বাহ শাস্তির কথাও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, নিঃসন্দেহে তারা জাহান্নামি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে আত্মঘাতী হামলা ও আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। তাঁর বিধি-বিধানগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন! বিজাহিন নবিয়্যিল আমীন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।
লিখক: আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা
কোন মন্তব্য নেই