নেতৃত্ব চেয়ে নেয়া যোগ্য ব্যক্তির আদর্শ নয়
মুুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
عن عبد الرحمن بن سمرة رضى الله عنه قال قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم يا عبد الرحمن بن سمرة! لاتسئل الإمارة، فإنك إن أعطيتها عن مسئلة وكلت فيها إلى نفسك، وإن أعطيتها عن غير مسئلة اعينت عليها. সরল অনুবাদ: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন- হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি কখনো নেতৃত্ব চেয়ে নিও না। কেননা, তোমাকে যদি চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নেতৃত্ব দেয়া হয়; তবে ধরে নিবে যে, নেতৃত্ব বোঝা হিসাবে তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ তোমার সাহায্যে তেমন একটা এগিয়ে আসবে না। আর যদি চাওয়া ব্যতিতই তোমাকে নেতৃত¦ দেয়া হয়; তবে তোমার সাহায্যে মানুষ এগিয়ে আসবে এবং তোমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ফলে নেতৃত্ব দেয়া তোমার জন্য সহজতর হবে।১ রাবী পরিচিতি: বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদ্বিয়া
ল্লাহু আনহু) মক্কার কোরাইশ বংশে জম্ম গ্রহন করেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় রাসুলুল্লাহর হাতে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং নবীজির সাহচর্য লাভের মাধ্যমে ধন্য জীবন গড়ে তোলেন। এরই সুবাদে তিনি রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেন।২ প্রাসঙ্গিক আলোচনা: নেতৃত্ব কোন ব্যক্তি বা একদল মানুষের ঐ কাম্য গুণাবলী, যা সমাজের ঈন্সিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষকে উদ্বীপ্ত করতে পারে।৩ সঠিক নেতৃত্ব পরশমণিতুল্য। যোগ্য নেতৃত্বের যে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং একটি জাতি তার অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছতে পারে। পক্ষান্তরে অযোগ্য নেতৃত্বের ফলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে সীমাহীন অভিশাপ। জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংহতি সংরক্ষণে যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। প্রিয় নবীজির সার্বিক গুণসমৃদ্ধ পরিচালনায় শিক্ষা-দীক্ষায় মুসলিম জাতি ঐক্ষ্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আব্রাহাম লিংকনের দক্ষ নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে তার ঈন্সিত জাতীয় ঐক্য। মাও সেতুং এর নেতৃত্ব দুর্দশা পীড়িত চীনকে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আর ইসলাম এই নেতৃত্ব চেয়ে নেয়াকে সর্মথন করে না। কারণ, অনেক সময় চেয়ে নেতৃত্ব গ্রহন করলে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটে, লোভের বশবর্তী হয়ে দূর্নীতির আশ্রয় নেয় এবং স¦জন প্রীতির মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠাকরণের অপচেষ্টা চালায়। ফলে জনগণ তার সাহায্যে এগিয়ে আসে না। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তিকে চাওয়া ছাড়াই নেতৃত্ব প্রদান করা হয়, তাহলে মানুষ তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এবং আল্লাহর রহমত এর পরিচালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে। ফলে এই নেতৃত্ব পরিচালনা করা ঐ ব্যক্তির জন্য সহজতর হয়। কেননা, এই নেতৃত্ব লাভের পিছনে তার কোন লোভ ও আকাক্সক্ষা ছিল না। লোকেরাই তাকে যোগ্যতা সম্পন্ন মনে করে তার অজান্তেই তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছে। এ কারণেই নবী করিম সৈয়্যদিল মুরসালিন (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে নেতৃত্ব চেয়ে নিতে বারণ করেছেন। নবীজি অন্যত্র ইরশাদ করেন- “তোমরা যখন কোন ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, তখন যদি কেউ তোমাদের নিকট সেই নেতৃত্ব দখল করার উদ্দেশ্যে আসে এবং তোমাদের শক্তিকে প্রতিহত করতে চায় কিংবা তোমাদের ঐক্যে ফাটল করতে সচেষ্ট হয়; তবে তোমারা তাকে হত্যা কর।” আমীরুল মো’মেনীন হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন- “হে জনগণ! তোমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে কিছু করার অধিকার কেবল তারই হতে পারে, যাকে তোমরা নিযুক্ত করবে। আর খলিফা হিসাবে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আছে শুধু এই যে, তোমাদের গচ্ছিত মাল-সম্পদের চাবিগুলো, যা আমার নিকট রক্ষিত”। তথ্যসূত্র: ১- ইমাম আবু দাউদ, সুনানে আবু দাউদ, পৃ:৪০৬, হাদিস নং-২৯১৯।
২- সুনানে আবু দাউদ ওয়া মুস্তালাহুল হাদীস, ঢাকা: আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স,২০১৩, পৃ: ২০৯।
৩- মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, রাজনীতির কথা,খ-১, পৃ: ১৫৪
লিখক:পরিচালক : গাউসুল আজম রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।
عن عبد الرحمن بن سمرة رضى الله عنه قال قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم يا عبد الرحمن بن سمرة! لاتسئل الإمارة، فإنك إن أعطيتها عن مسئلة وكلت فيها إلى نفسك، وإن أعطيتها عن غير مسئلة اعينت عليها. সরল অনুবাদ: প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন- হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরা! তুমি কখনো নেতৃত্ব চেয়ে নিও না। কেননা, তোমাকে যদি চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নেতৃত্ব দেয়া হয়; তবে ধরে নিবে যে, নেতৃত্ব বোঝা হিসাবে তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ তোমার সাহায্যে তেমন একটা এগিয়ে আসবে না। আর যদি চাওয়া ব্যতিতই তোমাকে নেতৃত¦ দেয়া হয়; তবে তোমার সাহায্যে মানুষ এগিয়ে আসবে এবং তোমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। ফলে নেতৃত্ব দেয়া তোমার জন্য সহজতর হবে।১ রাবী পরিচিতি: বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদ্বিয়া
ল্লাহু আনহু) মক্কার কোরাইশ বংশে জম্ম গ্রহন করেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় রাসুলুল্লাহর হাতে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং নবীজির সাহচর্য লাভের মাধ্যমে ধন্য জীবন গড়ে তোলেন। এরই সুবাদে তিনি রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) থেকে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেন।২ প্রাসঙ্গিক আলোচনা: নেতৃত্ব কোন ব্যক্তি বা একদল মানুষের ঐ কাম্য গুণাবলী, যা সমাজের ঈন্সিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষকে উদ্বীপ্ত করতে পারে।৩ সঠিক নেতৃত্ব পরশমণিতুল্য। যোগ্য নেতৃত্বের যে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং একটি জাতি তার অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌছতে পারে। পক্ষান্তরে অযোগ্য নেতৃত্বের ফলে জাতীয় জীবনে নেমে আসে সীমাহীন অভিশাপ। জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংহতি সংরক্ষণে যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। প্রিয় নবীজির সার্বিক গুণসমৃদ্ধ পরিচালনায় শিক্ষা-দীক্ষায় মুসলিম জাতি ঐক্ষ্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আব্রাহাম লিংকনের দক্ষ নেতৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে তার ঈন্সিত জাতীয় ঐক্য। মাও সেতুং এর নেতৃত্ব দুর্দশা পীড়িত চীনকে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আর ইসলাম এই নেতৃত্ব চেয়ে নেয়াকে সর্মথন করে না। কারণ, অনেক সময় চেয়ে নেতৃত্ব গ্রহন করলে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটে, লোভের বশবর্তী হয়ে দূর্নীতির আশ্রয় নেয় এবং স¦জন প্রীতির মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠাকরণের অপচেষ্টা চালায়। ফলে জনগণ তার সাহায্যে এগিয়ে আসে না। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তিকে চাওয়া ছাড়াই নেতৃত্ব প্রদান করা হয়, তাহলে মানুষ তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এবং আল্লাহর রহমত এর পরিচালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে। ফলে এই নেতৃত্ব পরিচালনা করা ঐ ব্যক্তির জন্য সহজতর হয়। কেননা, এই নেতৃত্ব লাভের পিছনে তার কোন লোভ ও আকাক্সক্ষা ছিল না। লোকেরাই তাকে যোগ্যতা সম্পন্ন মনে করে তার অজান্তেই তাকে দায়িত্ব প্রদান করেছে। এ কারণেই নবী করিম সৈয়্যদিল মুরসালিন (সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম) হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে নেতৃত্ব চেয়ে নিতে বারণ করেছেন। নবীজি অন্যত্র ইরশাদ করেন- “তোমরা যখন কোন ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ, তখন যদি কেউ তোমাদের নিকট সেই নেতৃত্ব দখল করার উদ্দেশ্যে আসে এবং তোমাদের শক্তিকে প্রতিহত করতে চায় কিংবা তোমাদের ঐক্যে ফাটল করতে সচেষ্ট হয়; তবে তোমারা তাকে হত্যা কর।” আমীরুল মো’মেনীন হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন- “হে জনগণ! তোমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে কিছু করার অধিকার কেবল তারই হতে পারে, যাকে তোমরা নিযুক্ত করবে। আর খলিফা হিসাবে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আছে শুধু এই যে, তোমাদের গচ্ছিত মাল-সম্পদের চাবিগুলো, যা আমার নিকট রক্ষিত”। তথ্যসূত্র: ১- ইমাম আবু দাউদ, সুনানে আবু দাউদ, পৃ:৪০৬, হাদিস নং-২৯১৯।
২- সুনানে আবু দাউদ ওয়া মুস্তালাহুল হাদীস, ঢাকা: আল ফাতাহ পাবলিকেশন্স,২০১৩, পৃ: ২০৯।
৩- মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, রাজনীতির কথা,খ-১, পৃ: ১৫৪
লিখক:পরিচালক : গাউসুল আজম রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।
কোন মন্তব্য নেই