Header Ads

Header ADS

ওয়ার্ল্ড মুসলিমা-২০১৩ : মিসওয়াল্ডের গতিরোধে অপূর্ব হাতিয়ার




_মুহামমদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
জনবহুল বৃহৎ মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড মুসলিমা প্রতিযোগিতা। এটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান। এ প্রতিযোগিতার অংশ বিশেষ ছিল কুরআন তেলাওয়াত, ইসলাম ও সমসাময়িক বিশ্বের ওপর করা নানা প্রশ্নের উত্তর দেয়া, ধর্মীয় প্রশিক্ষণ প্রভৃতি।এদিকে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা 'মিসওয়ার্ল্ড'-এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। 'মুসলিমাওয়ার্ল্ড' নামের মুসলিম সুন্দরী প্রতিযোগিতার এ আয়োজন মূলত 'মিসওয়ার্ল্ড'-এর পাল্টা জবাবহিসেবেই। যা ঐশীবাণী "তোমরা তাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে,কিন্তু সেীজন্যের সাথে/উত্তম পন্থায়।"(২৯:৪৬) এর যর্থাথ বাস্তবায়ন। শুধু মুসলিম নারীদের জন্যই ছিল এ আয়োজন। মিসওয়ার্ল্ডের সমর্থনকারীরা বেশ আগে থেকেই বলে আসছে, কট্টর লোকেরা আমাদের এ প্রতিযোগিতার বাজে সমালোচনা করে আসছে। কিন্তু মুসলিমা ওয়াِেِِِর্ল্ডর সমর্থনকারীরা বলছেন, সমালোচনা করার মতো কিছু থাকলে বা ঘটলে ঠিকই তার সমালোচনা করে থাকে বিবেকবান লোকেরা। তাই আমরাও এর শুধু সমালোচনা নয়, বরং প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। মুসলিমা ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীরা অংশ নেন মাথায় স্কার্ফ বা রুমাল পরে, গোটা দেহ আবৃত করে। বলা যেতে পারে বিশ্বে এ ধরনের প্রতিযোগিতা খুবই সুন্দর একটি বিষয়। অনুষ্ঠান শেষে যখন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয় তখন মঞ্চে উঠে আসে ২১ বছর বয়সী তরুণী আয়েশা আজিবোলা। মুসলিম বিশ্বের সেরা সুন্দরী হিসেবে যখন তার নাম ঘোষণা করা হয় তখন তিনি অশ্রুসজল চোখে কোরানের সুরা জবছিলেন। নাইজেরিয়ার অধিবাসী আজিবোলা হাসি মুখে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জানিয়ে সেরার মুকুটটি নিজের মাথায় তুলে নেন। সেই সাথে পেয়েছেন ২৫ মিলিয়ন রুপিয়া অর্থাৎ ২,২০০ মার্কিন ডলার। এছাড়াও আয়েশা আজিবোলা পান সৌদি আরব এবং তুরস্ক ও ভারতে আনন্দভ্রমণের সুযোগ।
ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিম বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় তিন বছর আগে ২০১১ সালে একা শান্তি নামের এক টেলিভিশন সংবাদ পাঠিকার উদ্যোগে। তিনি প্রথমদিকে সংবাদ পাঠ করতেন মাথায় স্কার্ফ পরে। কিন্তু পরবর্তী কালে টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে স্কার্ফ ছাড়া সংবাদ পরিবেশনকরার জোর দাবি ওঠে। তাদের এ দাবি মানতে নারাজ হন একা শান্তি।এতে তার চাকরি চলে যায়। তিনি মনে করেন, চাকরি বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হলো ইসলাম ও এর অনুশাসন। এর অনুশাসন মেনে চলায় মনে যে শান্তি আসে তা অন্য কিছু দিয়ে পাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। আর তা থেকেই তার মনে জেগে ওঠে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। এমনকি সংবাদ মাধ্যমকে একা জানিয়েদেন, মিসওয়াের্ল্ডর চূড়ান্ত পর্বের আগেই আয়োজন করা হবে মুসলিম বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা। এর মাধ্যমে একা শান্তি দেখাতে চেয়েছেন মুসলিম নারীদের জন্য রয়েছে বিকল্প পন্থা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মেয়েদের নানা ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। আর ক্যাটাগরিগুলো হলো -সৌন্দর্য, স্টাইল, কুরআন তেলাওয়াত, ও ইসলাম বিষয়ে নানা প্রশ্নের জবাব ইত্যাদি। অংশগ্রহণকারীদের কয়েক দিনের ধর্মীয় প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে চূড়ান্ত পর্বে। ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে ভোরে। এক সাথে নামাজ পড়তে হয়েছে। তারপর কুরআন শরিফ পড়তে হয়েছে। এমনকি অনলাইনে কুরআন তেলাওয়াত করতে হয়েছে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের। পাশাপাশি শুনাতে হয়েছে হিজাব পরতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কাহিনী। আর মুসলিম নারীদের নিয়ে আয়োজিত সুন্দরী প্রতিযোগিতার টাইটেল দেয়া হয়েছে 'ওয়ার্ল্ড মুসলিমা-২০১৩'। আয়েশা একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম রমণী। তিনি পেলেন তৃতীয় ওয়ার্ল্ড মুসলিমার খেতাব। প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ছয় দেশের রমণীরা। দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, ব্রুনেই ও বাংলাদেশ।থেকে অংশ নেয়া
অনলাইনে ৫০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে 'মুসলিমাওয়ার্ল্ড'র চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত করা হয় ২০ জনকে। চূড়ান্ত তালিকার ২০ সুন্দরীর মধ্যে ১৪ জনই ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার। অন্যরা বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া ও ইরানের। প্রথম রানার আপ হয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার নুর আসপাসিয়া। দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছেন একই দেশের ইভাওয়ানি এফলিজা।বাংলাদেশী লিজা রয়েছেন সেরা দশের পরে।
'মিস ওয়ার্ল্ড' প্রতিযোগিতার আদলে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে রিসোর্টে জাকার্তার শপিং মলে অগণিত প্রতিদ্বন্‌দ্বী যখন প্রতিদ্বন্‌দ্বিতা করেন, সেই মুহূর্তে মোটেই অতিরিক্ত অভিভূত হয়ে পড়েননি আয়েশা আজিবোলা। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার পর্বে সংবাদ মাধ্যমকে আজিবোলা জানান, 'বিষয়টিকে আমরা প্রতিযোগিতার দৃষ্টিতে দেখছিনা। আমরা বিশ্ববাসীকে দেখাতে বা জানাতে চাই, ইসলাম প্রকৃতপক্ষে কত সুন্দর।' এমব্রয়ডারি ও উৎসবমুখর পোশাক পরে ক্যাটওয়াকে (প্রতিযোগিতার প্লাটফর্ম) হেঁটে শেষ হয় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার আয়োজনকারীদের একজন বলেছেন, ব্রিটিশ পরিচালিত মিসওয়ার্ল্ড প্রেজেন্ট ( নামীদামি প্রতিযোগী ) মুসলিম সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তবে আলোচ্য ইভেন্টটির বিরোধিতা হবে উত্তেজনাবিহীন। স্বীকার করতে হয়, এটা মিস ওর্য়াল্ডের চেয়ে কমতো নয়ই, বরং অনেক বেশি কিছু। মুসলিম নারীরা প্রতিযোগিতার পোশাক হিসেবে হস্ত ওড়না উঁচিয়ে ধরে রাখেন এবং ওই জমকালো অনুষ্ঠানটি পালিত হয় মুসলিম পপসঙ্গীতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে উজ্জ্বল ইন্দোনেশিয়ার ইসলামিক ডিজাইন করা কাপড় ব্যবহার করা হয়, যা ঈর্ষা করে অনেকেই তা আলাদা নজরে দেখেন। প্রতিষ্ঠাতা শান্তি বলেন, আমাদের প্রতিযোগিতা প্রথমে শুরু হয় ইন্দোনেশিয়ায়। আর যখনই মিডিয়া জগতের একটি দিক এটাকে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার সাথে তুলনা করা শুরু করে, তখনই এটার নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হয় 'বিশ্ব মুসলিম সুন্দরীদের প্রতিযোগিতা'। এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠার কারণে এর আয়োজনকারীরা চলতি ২০১৩ সালে তা প্রথমবারের মতো আফ্রিকার বাইরের প্রতিদ্বন্‌দ্বীদের অংশগ্রহণ মেনে নেন,বলে জানান উদ্যোক্তা একা শান্তি।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে 'মিস মুসলিমা ওয়ার্ল্ড' খেতাব জিততে গত ৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোনেশিয়া জাকার্তায় গিয়েছেন ২১ বছর বয়সী তরুণী নাজনিন সুলতানা লিজা। মিরসরাই উপজেলার ১৫ নম্বর ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ওয়াহেদপুর এলাকার ফিরোজ আলম ও জমিলা আক্তারের তির মেয়ে এক ছেলে মধ্যে লিজা সবার বড়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রতিযোগীতা সর্ম্পকে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লিজা ইন্দোনেশিয়া থেকে টেলিফোনে সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব খুশি৷ এটা 'মিস ওয়ার্ল্ড' এর মতো নয়। কারণ, মিস ওয়ার্ল্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাইরের সৌন্দর্যটা বেশি প্রাধান্য পায়। আর এখানে ভেতরের সৌন্দর্যটাই মুখ্য।'
লিজার মা জমিলা আক্তার জানান,"লিজার সহপাঠী তৃনার বড় বোন জেবার মাধ্যমে সে প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছে। জেবা তিন বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান করছেন। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য লিজাকে উৎসাহ দেয় জেবা। প্রাথমিকভাবে লিজার ছবি ইন্দোনেশিায় পাঠালে সে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়। আসা-যাওয়ার খরচ বহন করছেন প্রতিযোগিতার আয়োজকরা।"
লিজার সাফল্যে স্থানীয় ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম বলেন, "লিজা শুধু মিরসরাই নয় দেশেরই গর্ব। আমি আশা করব সে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করবে। যা আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।"
উল্লেখ্য, নজিরবিহীন এ প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের আসা-যাওয়ার খরচ বহন করছে আয়োজকরা।

কোন মন্তব্য নেই

ইলমে দ্বীনের ফজিলত

﴿يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ﴾ (المجادلة: ١١)

Blogger দ্বারা পরিচালিত.