তওবা
হযরত হামজা রাজিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যাকারী হযরত ওয়াহ্শী (রাঃ) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট চিঠি লিখলেন যে, আমি মুছলমান হতে চাই, কিন্তু এ আয়াত শরীফ প্রতিবন্ধক-
وَالَّذِيْنَ
لاَ يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلَهًا اَخَرَوَ لاَ يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ
الَّتِىْ حَرَّمَ اللهُ اِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُوْنَ وَمَوْ
يَّفْعَلْ ذَالِكَ يَلْقَ اَثَامًا
“আর যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বুদ মানেনা, কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে না, এবং যিনা করে না। আর যে ব্যক্তি এ কাজ করেছে, সে গুনাহ্গার।”
আমি এ তিনটি কাজই করেছি, তাহলে কি আমার জন্যে তওবা করার অবকাশ আছে?
এ প্রেক্ষিতে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়-
اِلاَّمَنْ تَابَ وَاَمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا
“কিন্তু যে ব্যক্তি তওবা করে নিয়েছে এবং ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে”।
হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – হযরত ওয়াহ্শী (রাঃ) কে জবাবে এই আয়াতই লিখে পাঠিয়ে দিলেন। ওয়াহ্শী (রাঃ) আবার লিখলেন যে, আয়াত শরীফে নেক আমল করার শর্ত আরোপ করা আছে, কিন্তু আমার তো জানা নেই যে, নেক আমল করতে পরবো কি না?
এ প্রেক্ষিতে আবার এ আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – হযরত ওয়াহ্শী (রাঃ) কে জবাবে এই আয়াতই লিখে পাঠিয়ে দিলেন। ওয়াহ্শী (রাঃ) আবার লিখলেন যে, আয়াত শরীফে নেক আমল করার শর্ত আরোপ করা আছে, কিন্তু আমার তো জানা নেই যে, নেক আমল করতে পরবো কি না?
এ প্রেক্ষিতে আবার এ আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
اِنَّ اللهَ لاَيَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَ كَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَالِكَ لِمَنْ يَّشَاءُ
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা শিরক গুনাহ মাফ করবেন না, আর এছাড়া যাকে ইচ্ছে (তাকেই) মাফ করে দেবেন।”
হুজুর আকরাম (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এ আয়াতও লিখে হযরত ওয়াহ্শী (রাঃ) কে পাটিয়ে দিলেন।
ওয়াহ্শী (রাঃ) আবার লিখলেন যে এতে আল্লাহর ইচ্ছার শর্ত আছে, না জানি আল্লাহ্’র ইচ্ছে হয় কিনা?
অতঃপর এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়-
قُلْ يَعِبَا دِىَ الَّذِيْنَ اَسْرَ فُوْا عَلَى اَنْفُسِهِمْ لاَتَقْنَطُوْ امِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا اِنَّه‘ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
“হে আমার গুনাহগার বান্দাগণ! আল্লাহ্’র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন, নিশ্চয়ই তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, অত্যান্ত মেহেরবান।”
তারপর হযরত ওয়াহ্শী (রাঃ) মদীনায় হাজির হয়ে ইসলাম কবুল করে নিলেন।
اَللَّهَمَّ اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا فَاِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ ط
“হে আল্লাহ্! আমাদের গুনাহগুলো মা’ফ করে দিন, নিশ্চয়ই আপনি অত্যান্ত ক্ষমাশীল, নিতান্তই মেহেরবান।”
মানুষের আচরণ অদ্ভুত ও আশ্চর্য্য
হযরত মুহাম্মদ ইবনে মোতাররাফ (রহঃ) সূত্রে আল্লাহ্ তা’আলার বাণী বর্ণিত হয়েছে যে, মানুষের আচরণ আশ্চর্য ও অদ্ভুত ধরনের। (কারণ) সে গুনাহ করে অতঃপর আমার কাছে মাফ চায়, আমি তাকে মাফ করে দেই, পরে আবার গুনাহ করে এবং মাফ চায়, আমি আবার মাফ করে দেই, (এভাবে) সে না গুনাহ ছাড়ে আর না আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়। (সুতরাং) হে আমার ফেরেশতাগণ! তোমরা স্বাক্ষী থাক, আমি তাকে (মানুষকে) মাফ করে দিলাম।
اَللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْهُمْ
“হে আল্লাহ্ আমাদেরকেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করো”।
অতএব প্রত্যেক গুনাহগারকে উচিৎ, সে যেন আল্লাহর পাকের কাছে তওবা করতে থাকে। আর গুনাহর উপর অটল না থাকে। তথা তওবা করে ফেলে। তওবা কারীকে গুনাহর উপর অটল আছে- এ কথা বলা যাবে না। যদিও একদিনে সত্তর বারও গুনাহ করে।
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তওবা কবুল
হযরত হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এরশাদ করেছেন: যখন আল্লাহ্ তা’আলা ইবলিশকে জমিনে নামিয়ে দিলেন, তখন সে বললো, তোমার ইজ্জত ও আজমতের কসম, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দেহে প্রাণ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁকে গোমরাহ করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
আল্লাহ্
তা’আলা এরশাদ করলেন, আমারও আমার ইজ্জত ও আজমতের কসম, আমিও মানুষের মূমূর্ষ
অবস্থার পূর্ব পর্যন্ত তওবা কবুল করতেই থাকবো। (আল-হামদুলিল্লাহ্)
মালাইন ইবলিশের আফসোছও নৈরাশ্য
এক হাদীসের বর্ণনায় আছে যে, মানুষ গুনাহ করে, কিন্তু লেখা হয় না, দ্বিতীয় গুনাহও লিখা হয় না, এভাবে পাঁচটি গুনাহ জমা হয়ে যায়, অতঃপর যদি একটি নেকী করে, তাহলে পাঁচটি নেকী লেখা, আর এই পাঁচটি নেকীর বদলায় সেই পাঁচটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।(তখন) ইবলিশ আক্ষেপ করে বলে যে আমি মানুষের উপর কিভাবে আধিপত্য বিস্তার করবো? তার একটি নেকীই তো আমার সমস্ত মেহনতের উপর পানি ঢেলে দেয়।
আরেফ (আল্লাহ্ ওয়ালা) -এর ছয়টি বৈশিষ্ট্য
আরেফ সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যার মধ্যে ছয়টি বৈশিষ্ট বিদ্যমান।
১। যখন আল্লাহ্ কে স্বরণ করে, তখন এই নিয়ামতকে বড় মনে করে (অর্থাৎ এটার শুকরীয়া আদায় করে।)
২। যখন নিজের উপর নজর পড়ে, তখন নিজেকে ছোট মনে করে, (কারণ দাসত্ব স্বীকারই আসল পরিপূর্ণতা)।
৩। আল্লাহ্’র নিদর্শনাদী দেখে নছীহত (শিক্ষা) হাছিল করে। (কারণ এটাই আসল উদ্দেশ্য)।
৪। কামাসক্তি বা গুনাহর খেয়াল আসলে ভয় পেয়ে যায়। (কারণ গুনাহর কল্পনা থেকেও ভয় পেয়ে যাওয়া কামালিয়্যতের আলামত)।
৫। মাফ করা আল্লাহ্’র গুন, – এটার কল্পনায় খুশী হয়ে যায় (কারণ বান্দাহর মুক্তি মালিকের মার্জনার উপর নির্ভর)।
৬। অতীতের কৃত গুনাহ স্মরণ হলে এস্তেগফার করে, (এটাই কামেল বান্দা’র শান)।
হযরত খাজা ফোজাইল (রাহঃ)
ডাকাত দলের সর্দার ফোজাইল সিদ্ধান্ত নিলেন, যে কাফেলা আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছে, এটাকে লুট করা হবে, তাই কাফেলা যখন নিকটে পৌঁছার খবর পেল, তখনই অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত তাঁর ডাকাত দল ঘোড়া দৌড়িয়ে এসে কাফেলার যাত্রা পথের কোন এক স্থানে ওৎ পেতে বসে গেল। কাফেলায় মুসাফির, ব্যবসায়ী, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ যুবক,, শিশু সবাই ছিল। পথিমধ্যে যেখানে অন্যান্য কাফেলারা বিশ্রাম নেয়, সেখানে এ কাফেলাও এসে থেমে গেল। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই হা-হুতাশের তুফান উঠে গেল।
ঘোড়ার টপ, টপ আওয়াজ আর অস্ত্রের ঝংকার কাফেলাকে এমন ভীত-সন্ত্রস্থ করলো যে, যে যেদিকে পারে, সে দিকেই ছুটে পালালো। শিশুদের চিৎকার ও মা’দের আহাজারীতে এক ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা হলো। ডাকাত দল মানবতার মূখ থুবড়ে রেখে যে যেমনে পারে, তেমনেই যার যার থলে ভরতে লাগলো।
ডাকাত দলের সর্দার খাজা ফুজাইল এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন যে, এত কিছুর পরেও একটি লোক এক কোনে বসে যেন কি পড়তে থাকছে। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে তার কাছে এসে দেখেন যে, লোকটি লুট-পাটের ভয় এবং ডাকাত দলের ত্রাসের আতঙ্ক উপেক্ষা করেই কুরআন শরীফ পড়ে যাচ্ছে। যখন নিকটে এলেন, শুনতে পেলেন যে লোকটি পড়ে যাচ্ছে।
মালাইন ইবলিশের আফসোছও নৈরাশ্য
এক হাদীসের বর্ণনায় আছে যে, মানুষ গুনাহ করে, কিন্তু লেখা হয় না, দ্বিতীয় গুনাহও লিখা হয় না, এভাবে পাঁচটি গুনাহ জমা হয়ে যায়, অতঃপর যদি একটি নেকী করে, তাহলে পাঁচটি নেকী লেখা, আর এই পাঁচটি নেকীর বদলায় সেই পাঁচটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।(তখন) ইবলিশ আক্ষেপ করে বলে যে আমি মানুষের উপর কিভাবে আধিপত্য বিস্তার করবো? তার একটি নেকীই তো আমার সমস্ত মেহনতের উপর পানি ঢেলে দেয়।
আরেফ (আল্লাহ্ ওয়ালা) -এর ছয়টি বৈশিষ্ট্য
আরেফ সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যার মধ্যে ছয়টি বৈশিষ্ট বিদ্যমান।
১। যখন আল্লাহ্ কে স্বরণ করে, তখন এই নিয়ামতকে বড় মনে করে (অর্থাৎ এটার শুকরীয়া আদায় করে।)
২। যখন নিজের উপর নজর পড়ে, তখন নিজেকে ছোট মনে করে, (কারণ দাসত্ব স্বীকারই আসল পরিপূর্ণতা)।
৩। আল্লাহ্’র নিদর্শনাদী দেখে নছীহত (শিক্ষা) হাছিল করে। (কারণ এটাই আসল উদ্দেশ্য)।
৪। কামাসক্তি বা গুনাহর খেয়াল আসলে ভয় পেয়ে যায়। (কারণ গুনাহর কল্পনা থেকেও ভয় পেয়ে যাওয়া কামালিয়্যতের আলামত)।
৫। মাফ করা আল্লাহ্’র গুন, – এটার কল্পনায় খুশী হয়ে যায় (কারণ বান্দাহর মুক্তি মালিকের মার্জনার উপর নির্ভর)।
৬। অতীতের কৃত গুনাহ স্মরণ হলে এস্তেগফার করে, (এটাই কামেল বান্দা’র শান)।
হযরত খাজা ফোজাইল (রাহঃ)
ডাকাত দলের সর্দার ফোজাইল সিদ্ধান্ত নিলেন, যে কাফেলা আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছে, এটাকে লুট করা হবে, তাই কাফেলা যখন নিকটে পৌঁছার খবর পেল, তখনই অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত তাঁর ডাকাত দল ঘোড়া দৌড়িয়ে এসে কাফেলার যাত্রা পথের কোন এক স্থানে ওৎ পেতে বসে গেল। কাফেলায় মুসাফির, ব্যবসায়ী, নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ যুবক,, শিশু সবাই ছিল। পথিমধ্যে যেখানে অন্যান্য কাফেলারা বিশ্রাম নেয়, সেখানে এ কাফেলাও এসে থেমে গেল। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই হা-হুতাশের তুফান উঠে গেল।
ঘোড়ার টপ, টপ আওয়াজ আর অস্ত্রের ঝংকার কাফেলাকে এমন ভীত-সন্ত্রস্থ করলো যে, যে যেদিকে পারে, সে দিকেই ছুটে পালালো। শিশুদের চিৎকার ও মা’দের আহাজারীতে এক ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা হলো। ডাকাত দল মানবতার মূখ থুবড়ে রেখে যে যেমনে পারে, তেমনেই যার যার থলে ভরতে লাগলো।
ডাকাত দলের সর্দার খাজা ফুজাইল এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন যে, এত কিছুর পরেও একটি লোক এক কোনে বসে যেন কি পড়তে থাকছে। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে তার কাছে এসে দেখেন যে, লোকটি লুট-পাটের ভয় এবং ডাকাত দলের ত্রাসের আতঙ্ক উপেক্ষা করেই কুরআন শরীফ পড়ে যাচ্ছে। যখন নিকটে এলেন, শুনতে পেলেন যে লোকটি পড়ে যাচ্ছে।
اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ اَمَنُوْا اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبَهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ
অর্থাৎ এখনো কি সময় আসেনি যে, ঈমানদারদের অন্তর আল্লাহ্’র স্মরণে কেঁপে উঠবে।”
আল্লাহ্’র কালামের বরকত ও ক্রিয়া তো অনস্বীকার্য় সত্য। এই কালামে পাকের সূরা ত্বোহার একটি আয়াতই হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর জীবনের রুখ পরিবর্তন করে দিয়েছিল এবং এমন উচ্চাসনে আসীন করেছিল যে, আল্লাহ্’র হযরত রাসূলু (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এরশাদ করেছেনঃ “আমার পরে নবুয়্যতের ধারা বন্ধ না হলে ওমরকেই নবী বানানো হতো”।
সেই কালামে পাক হযরত ফোজালের অন্তরেও নাড়া দিল এবং এমন মোড় নিল যে, হাতিয়ার ফেলে দিল, ঘোড়া সেখানেই ছেড়ে দিল, বন্ধুদের থেকে মুখ ফিরিয়ে জঙ্গল মুখী হয়ে গেল। নিরব-নির্জন জায়গা পেয়ে অকপটে কাঁদতে লাগল, যতই কাঁদেন, ততই কাঁদা আসে, ক্রন্দন তো আর বন্ধ হয় না। এভাবে যিন্দেগীর সমস্ত গুণাহ থেকে তওবা করলেন এবং জঙ্গলকেই নিজের বাড়ী বানিয়ে নিলেন।
কিছু দিন পর আরেক কাপেলা এ পথ দিয়েই যাচ্ছিল। দেখলো, আল্লাহ্’র এক বান্দাহ জিকির ও এবাদতে মশগুল। জিজ্ঞেস করলো, আপনার কাছে কি ফোজাইল ডাকাতের কোন খবর আছে, সে এখানে কোথাও আছে, না ডাকাতি করতে বেরিয়ে গেছে?
এ আল্লাহ্ ওয়ালা এখন জওয়াব দিলেন যে, এখন ফোজাইলকে ভয় করোনা, এখন তো সে নিজেই বাচ্চাদের থেকেও ভয় পায়।
যাক ডাকাত দলের সর্দার ফোজাইল মনে প্রাণে তওবা করে এখন হযরত ফোজাইল (রাহঃ) হয়ে গেলেন, তাই তিনি এখন ঘরে-ঘরে শহরে-শহরে ঘুরেন, আর সেই লোকদের বাড়ী তালাশ করে তাদের ছিনতাই করা মালের প্রতিটি জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছেন এবং মাফ চেয়ে নিচ্ছেন। যেন তিনি সূরা ওয়াশশামছ” এর পুরো পরাকাষ্ট। আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন-
فَاَلْهَمَهَا فُجُوْرَهَا وَتَقْوَهَا – قَدْاَفْلَحَ مَنْ زَكَّهَا وَقَدْخَابَ مَنْ دَسَّهَا
আল্লাহ্ তা’আলা ভাল-মন্দ উভয়টিই মানুষের মধ্যে রেখেছেন, সাথে সাথে তাকে বিবেক-বুদ্ধিও দিয়েছেন এবং নবীগনের (রাঃ) মাধ্যমে সঠিক ও সোজা পথও দেখিয়েছেন, এখন সে ইচ্ছে করলে নেক হয়ে জান্নাতের অধিকারী হতে পারে, নতুবা ফাসেক, ফাজের হয়ে জাহান্নামেরও ইন্ধন হতে পারে। তারই খুশী, যা ইচ্ছে, তাই করতে পারে। – খাযীনাতুল অসফীয়া।
তাওবাতুন নাসূহ্ (খাটি তওবা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ‘তাওবাতুন নাসূহ্’ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, তাওবাতুন নাসূহ্’র আর্থ হলো এই যে -
১। মানুষ মনে প্রানে লজ্জিত হয়ে যাবে।
২। মুখে ইস্তেগফার করবে।
৩। দ্বিতীয় বার গুনাহ না করার উপর বদ্ধপরিকর হবে।
بَاَ يُّهَا الَّذِيْنَ اَمَنُوْا تُوْبُوْا اِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ’র কাছে সত্যিকার খাঁটি তওবা করো”।
ইস্তেগফারের সাথে গুনাহ না করার দৃঢ় প্রত্যয় থাকতে হবে
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন :- এরশাদ করেছেনঃ মুখে ইস্তেগফার করার পরেও গুনাহর উপর অটল থাকা অর্থ আললাহ্ তা’আলার সাথে ঠাট্টা করার নামান্তর। (নাউজুবিললাহ্)।
হযরত রাবেয়া বসরী (রহঃ) বলেন: আমাদের ইস্তেগফারও ইরস্তেগফারের মুখাপেক্ষী অর্থাৎ ইস্তেগফারকেও ইস্তেগফার করা দরকার।
অশ্চর্য্য কাহিনী
বনী ইসরাঈলের এক বাদশাহ জনৈক গোলামের প্রশংসা শুনে তাকে ডেকে আনলেন এবং নিজ খেদমতে নিযুক্ত করে দিলেন। একদিন সে গোলাম বাদশাহকে দয়ালু দেখে বলল আপনি আমার জন্যে খুবই উত্তম ব্যক্তিত্ব। কিন্তু একথা বলেন তো, সেদিন আমার সাথে আপনার কি আচরন হবে, যেদিন আপনি আপনার মহলে ঢুকে আমাকে আপনার বাঁদীর সাথে হাসি-ঠাট্টা করতে দেখবেন। একথা শুনা মাত্রই বাদশাহ অগ্নিশ্বর্মা হয়ে বলতে লাগলেন, অপদার্থ কোথাকার! তোর একথা বলার সাহস কোত্থেকে কিভাবে হলো?
গোলাম বললো, বস, আমার পারীক্ষা করা ছিল, হয়ে গেছে।
জনাবে ওয়ালা! আমি এমন মেহেরবান প্রতিপালকের গোলাম, যিনি আমাকে দৈনিক সত্তর বার গুনাহ করতে দেখেও আপনার মত রাগান্বিত হন না এবং আমাকে নিজ দ্বার থেকে পদাঘাত করে প্রত্যাখ্যান করেন না আর রুজীও বন্ধ করে দেন না বরং তওবা করলেই মাফ করে দেন। তাহলে আমি তাঁর দ্বার ছেড়ে তোমার দ্বারে কেন আসবো? আমি তো এক্ষণে মাত্র অপরাধের কল্পনার কথাটাই না বললাম, এতেই আপনার এই অবস্থা! যখন অপরাধ হয়ে যাবে, তখন কি অবস্থা হবে? তাই আমি আপনার কাছ থেকে চললাম, বলেই গোলাম চলে গেলো।
শয়তানও আফসোছ করে
কোন এক জন তাবেয়ী (রাহঃ) বলেন যে, যখন কোন ব্যক্তি গুনাহ করার পর তাওবা ও ইস্তেগফার করে এবং লজ্জিত হয়, তখন তাঁর তাওবা ও অনুতাপ অনুশোচনার কারনে তাঁর মর্যাদা আরো বেড়ে যায় আর জান্নাতের যোগ্য হয়ে যায়।
তখন শয়তান আফছোছ করে মরে, আর বলে যে, হায়! যদি আমি তাকে গুনাহর জন্যে উদ্বুদ্ধ না করতাম, তাহলেই না ভাল ছিল। তাঁর এতটুকু মর্যাদা বৃদ্ধি হতো না, যা ছিল তাই থাকতো।
তিন জিনিসে তাড়াতাড়ি করা ভাল
১। নামাজের যখন সময় হয়ে যায়, (মোস্তাহাব ওয়াক্তের পর দেরী করা উচিৎ নয়)।
২। মৃত ব্যক্তির দাফন (ইন্তেকালের পর যতই তাড়াতাড়ি সম্ভব, মৃতকে দাফন করে দেয়া উচিৎ)।
৩। গুনাহর পর তওবা, (এ কাজটিও খুবই তাড়াতাড়ি করা উচিত কারণ এমনটি যেন না হয় যে, তওবার আগে মৃত্যু এসে যায়।
তাওবা কবুলের লক্ষণ
কোন দার্শনিক ব্যক্তি বলেছেন, কারো তাওবা কবুল হয়েছে কিনা, তা জানার জন্যে চারটি আলামত রয়েছে।
১। স্বীয় মুখ বেহুদা কথা, মিথ্যা ও গীবত থেকে বন্ধ হয়ে যাবে।
২। নিজের অন্তরে কারো ব্যাপারে হিংসা ও দুশমনী স্থান পাবে না।
৩। খারাপ সাথীদের ছেড়ে দেবে।
৪। মৃত্যুর প্রস্ততি গ্রহণ করতে, সব সময় লজ্জিত ও অনুতপ্ত থাকবে, ইস্তেগফার করতে থাকবে, আর আল্লাহ্’র আনুগত্যে লেগে থাকবে।
জৈনক হাকীম ছাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করা হলো : তওবাকারীর জন্যে এমন কোন আলামত আছে কি যে, তার তওবা কবুল হয়েছে কিনা, জানতে পারে? বললেন, হাঁ চারটি আলামত আছে।
১। অসৎ সঙ্গ ছেড়ে দেবে, সৎ সঙ্গ গ্রহণ করবে, এবং তাঁদের অন্তরে তাঁর ভীতি সঞ্চার হবে।
২। সমস্ত গুনাহ থেকে পৃথক হয়ে এবাদত ও আনুগত্যের দিকে ধাবিত হবে।
৩। দুনিয়ার মুহাব্বত অন্তর থেকে বেরিয়ে যাবে, এবং আখেরাতের চিন্তায় চিন্তিত থাকবে।
৪। আল্লাহ্ পাক যে রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাতেই সন্তষ্ট থেকে আল্লাহ্’র এবাদতে মশগুল থাকবে।
এ ধরনের ব্যক্তিদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের উপর চারটি বিষয় পালনীয় -
১। তাঁদেরকে মুহাব্বত করবে, কেননা আল্লাহ্ পাকও তাদেরকে মুহাব্বত করেন।
২। তাদের জন্যে তওবার উপর অটল থাকার দোয়া করতে থাকবে।
৩। অতীত গুনাহর জন্যে তাদেরকে ভৎসনা দেবেনা।
৪। তাদের সংস্পর্শ, সঙ্গ অবলম্বন করবে, তাদের আলোচনা করবে। এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
আল্লাহ্’র কাছে তাওবাকারীর মর্যাদা
আল্লাহ্ তা’আলা তওবাকারীকে চারটি বিষয়ের সম্মান দান করেন।
১। তাকে গুনাহ থেকে এমন ভাবে মুক্ত করে দেন, যেন সে কখনো গুনাহ করেই নি।
২। আল্লাহ্ তা’আলা এমন বান্দাহদেরকে মুহাব্বত করতে থাকেন।
৩। শয়তান থেকে তাকে হেফাজত করেন।
৪। দুনিয়া ত্যাগের (অর্থাৎ মরনের) আগে তাকে ভয়-ভীতিহীন ও নিশ্চিন্ত করে দেন।
للَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْهُمْ ا
আল্লাহ্! আমাদেরকেও তাদের অন্তর্ভূক্ত করো, আমীন।
দোজখ অতিক্রম কালে তওবাকারীকে আগুণ স্পর্শ করবে না।
হযরত খালেদ ইবনে মা’দার (রাহঃ) বলেন যে, যখন তওবাকারীগণ জান্নাতে পৌঁছে যাবেন তখন তারা বলবেন: আল্লাহ্ তা’আলা তো এরশাদ করেছিলেন যে, আমরা জান্নাতে যাইবার কালে দোজখের উপর দিয়ে অতিক্রম করবো, (কিন্তু কৈ, তখন) তাদেরকে বলা হবে যে তোমরা দোজখের উপর দিয়ে চলে এসেছো কিন্তু তখন তা টান্ডা ছিল।
মুছলমানকে লজ্জা দেয়ার পিরিণাম
হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন :- যে মুছলমান কোন মুছলমানকে কোন দোষের উপর লজ্জা দেয় এবং লজ্জিত করে, তাহলে সে দোষী ব্যক্তির সমান, (অর্থাৎ সে এমন, যেমন ও করেছিলঃ তথা সে যেন নিজেও দোষটি করেছে।) আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন কে কোন অপরাধের (গুনাহর) ভিত্তিতে বদনাম করবে, সে নিশ্চিত এ দুনিয়ায় মরার আগে আগে সে অপরাধের মধ্যে জড়িত ও বদনাম হয়েই থাকবে। (আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে এত্থেকে হেফাজত করুন।)
ফকীহ হযরত আবুল লাইছ (রহঃ) বলেন যে, মুমিন কখনো ইচ্ছাকৃত ভাবে গুনাহ করেনা বরং অসতর্কতার কারণে গুনাহ হয়ে যায়, তাই তওবা করার পর তাকে লজ্জা দেয়ার কোন অর্থ নেই।
তাওবা দ্বারা গুনাহ সম্পূর্ণ ভাবে বিলীন হয়ে যায়।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন বান্দাহ সত্যিকার তওবা করে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা তার তওবা কবুল করত: গুনাহ লিখক ফেরেশতাকে এবং গুনাহগারের অঙ্গাবলীকে সে গুনাহ ভুলায় দেন, যাতে কেউ স্বাক্ষ্য দিতে না পারে। এমনকি গুনাহর স্থান পর্যন্ত ভুলিয়ে দেয়া হয়।
যখন শয়তানের উপর আল্লাহ্ তা’আলার লানত পড়ল, তখন বলতে লাগল, তোমার ইজ্জতের কছম! যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার বান্দাহ জিন্দা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তার বুক (ভিতর) থেকে বের হবো না।
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করলেন, আমারও আমার ইজ্জতের কছম যে, আমি তার সারা জীবনই তার তওবা কবুল করতে থাকবো।
উম্মতে মুহাম্মদীর মর্যাদা
পূর্ববর্তী উম্মতের গুনাহর কারণে কোন হালালকে হারাম করে দেয়া হতো, আর পাপী ব্যক্তির দরজায় বা শরীরে আল্লাহর পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হতো যে, অমূকের ছেলে অমূক এই গুনাহ করেছে এবং এটার তওবা এই- কিন্তু হযরত রাসূলুল্লাহ্ ((সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন :- এর ওছীলায় এই উম্মতকে নেক ইজ্জত দেয়া হয়েছে। কারো গুনাহকে প্রকাশ করা হয় না আর যখনই বান্দাহ লজ্জিত হয়ে আপন পরওয়ার দেগারের কাছে প্রার্থনা করে যে, হে আমার আল্লাহ্! আমার দ্বারা গুনাহ তো হয়ে গেছে, এখন এটা আপনি মাফ করে দেন। এত আল্লাহ পাক বলেন: আমার বান্দাহ গুনাহ করে মনে করেছে যে, আমার রব আছেন, তিনি গুনাহ মাফ করার বা শাস্তি দেবার ক্ষমতা রাখেন। তাই আমি আমার বান্দাহকে মাফ কর দিলাম। এরশাদ হয়েছে-
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْ أً اَوْيَظْلِمْ نَفْسَه‘ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرً ارَّحِيْمًا
“যে ব্যক্তি গুনাহ করে বা নিজের উপর জুলুম করে তারঃপর আল্লাহর কাছে মাফ চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়াশীল পাবে”
অতএব প্রত্যেক বান্দাহকেই সকাল-বিকাল নিজের গুনাহ থেকে তওবা করতে থাকা উচিৎ।
গুনাহ লেখার আগে নেকীর অপেক্ষা কারা হয়
প্রত্যেক মানুষের ডান, বাম কাঁধে দু’জন ফেরেশতা নিযুক্ত আছে, ডান কাঁধের ফেরেশতা বাম কাঁধের ফেরেশতার উপর প্রশাসক হয়, যখন কোন মানুষ গুনাহ করে, তখন বাম কাঁধের ফেরেশতা লিখতে চায়, কিন্তু ডান কাঁধের ফেরেশতা বাঁধা দেন এবং বলেন যে, যতক্ষন পাঁচটি গুনাহ না হবে ততক্ষণ লেখ না। পাঁচটি গুনাহ্ হয়ে গেলে তারা লেখার অনুমতি চান তারপরও বাধা দেন এবং বলেন যে, অপেক্ষা কর হয়তঃ কোন নেকী করে নেবে।
যদি সে বান্দাহ কোন নেকী করে ফেলে, তাহলে ডান কাঁধের ফেরেশতা বলেন যে, আল্লাহ্ তা’আলার কাছে এই বিধান আছে যে, প্রত্যেক নেকীর প্রতিদান দশ গুন দেয়া হবে। তাই এখন তার একটি নেকী দশ গুণ হয়ে গেল, আর গুনাহ আছে পাঁচটি। তাহলে পাঁচ নেকীর বদলায় পাঁচ গুনাহ মাফ হয়ে গেল, (রইল পাঁচ নেকী, তাহলে) আমি এখন পাঁচটি নেকী লিখে নিচ্ছি। এতে শয়তান চিল্লায়ে, চিৎকার করে বলে যে, তাহলে আমি মানুষকে কীভাবে কাবু করবো?
তাওবার ফলে গুনাহ নেকীতে পরিবর্তন হয়ে যায়
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে, একবার আমি এশার পর; হযরত নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সাথে যাচ্ছিলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক মহিলা আমাকে বললো, আবু হুরায়রা! আমার দ্বারা একটি অনেক বড় গুনাহ হয়ে গেছে, তাওবা করার কি কোন যুযোগ আছে?
আমি গুনাহটা কি? জানতে চাইলাম,
সে বললো, আমার থেকে যিনা হয়ে গেছে, আর এটার ফসল সন্তান টিকেও মেরে ফেলেছি। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন : আমি গুনাহর ভয়াবহতা দেখে তাকে বললাম, তুমি নিজেও ধ্বংস হয়েছো আর অন্যকেও ধ্বংস করেছো, এখন আর তাওবার সুযোগ কোথায়? একথা গুনা মাত্রই সে মহিলা ভয়ে বেঁহুশ হয়ে পড়ে গেল।
আমি আগে চললাম, কিন্ত মনে মনে লজ্জিত যে, আমি হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর উপস্থিতিতে কেন আমার রায়ে মাছআলা বলতে গেলাম।
সকাল বেলায় দরবারে আকদাসে হাজির হয়ে রাতের সব ঘটনা বললাম। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – বললেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন! আবু হুরায়রা! তুমি নিজেও ধ্বংস হয়েছো, তাকেও ধ্বংস করেছো। তোমার কি এ আয়াত স্মরণ নেই _
وَالَّذِيْنَ
لاَ يَدْعُوْنَ مَعَ اللهِ اِلَهًا اَخَرَ وَلاَ يَقْتُلُوْنَ النَّفْسَ
الَّتِىْ حَرَّمَ اللهُ اِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُوْنَ وَمَنْ
يَّفْعَلْ ذَالِكَ يَلْقَ اَثَامًا يُضَعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ
الْقِيَا مَةِ وَيَخْلُدْفِيْهِ مُهَا نًا اِلاَّ مَنْ تَابَ وَاَمَنَ
وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحًا فَاوُلَئِكَ يُنَدِّلُ اللهُ سَيِّأَتِهِمْ
حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَّحِيْمً-
“আর
যারা আল্লাহ’র সাথে কাউকে শরীক করেনা এবং কাউকে না হক হত্যা করেনা, আর
যিনা করে না, তারা নেককার, আর যারা এরূপ করে, তারা গুনাহগার। কীয়ামতের দিনে
তাদের দ্বিগুণ আজাব হবে এবং অপমান অপদস্ত হয়ে চিরকাল দোজখে থাকবে, কিন্তু
যারা তওবা করে নিয়েছে, এবং ঈমান এনেছে, আর নেক আমল করতে লেগেছে তাদের গুনাহ
সমূহকে আল্লাহ্ তা’আলা নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন, আর আল্লাহ্ তা’আল
অত্যান্ত ক্ষমাশীল, নিতান্তই মেহেরবান।
হযরত আব হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে আমি এটা শুনে তার তালাশে বেরুলাম এবং মদীনার অলি-গলি বলে বেড়াচ্ছি যে, গেল রাত কোন মহিলা আমার কাছে মাছআলা জিজ্ঞেস করেছিল? আমার অবস্থা দেখে বাচ্চারাও বলতে লাগলো যে আবু হুরায়রা পাগল হয়ে গেছে?
যাহোক রাত্রে সেই জায়গাতেই আমার সেই মহিলার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল। আমি তাকে ফরমালাম রাছুল (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা শুনালাম যে, তোমার জন্যে তওবার দরজা খোলা আছে।
সে তখন খুশীতে বলে উঠল, আমার অমূক বাগান মিছকীনদের জন্যে সদকা করে দিলাম কোন বুজুর্গ বলেছেন যে, তওবার দ্বারা আমলনামায় গুনাহ্ এমন কি কুফরী পর্যন্ত নেকী দ্বারা পরিবর্তন হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন :
হযরত আব হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে আমি এটা শুনে তার তালাশে বেরুলাম এবং মদীনার অলি-গলি বলে বেড়াচ্ছি যে, গেল রাত কোন মহিলা আমার কাছে মাছআলা জিজ্ঞেস করেছিল? আমার অবস্থা দেখে বাচ্চারাও বলতে লাগলো যে আবু হুরায়রা পাগল হয়ে গেছে?
যাহোক রাত্রে সেই জায়গাতেই আমার সেই মহিলার সাথে সাক্ষাৎ হয়ে গেল। আমি তাকে ফরমালাম রাছুল (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা শুনালাম যে, তোমার জন্যে তওবার দরজা খোলা আছে।
সে তখন খুশীতে বলে উঠল, আমার অমূক বাগান মিছকীনদের জন্যে সদকা করে দিলাম কোন বুজুর্গ বলেছেন যে, তওবার দ্বারা আমলনামায় গুনাহ্ এমন কি কুফরী পর্যন্ত নেকী দ্বারা পরিবর্তন হয়ে যায়।
আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেছেন :
قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا اِنْ يَّنْتَهُوْا يُغْفَرْ لَهُمْ مَاقَدْ سَلَفَ
অর্থাৎ কাফেরদেরকে বলে দিন যে, যদি তারা কুফরী থেকে তওবা করে নেয়, তাহলে তাদের অতীত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সুতরাং কুফরী সবচে বড় গুনাহ, সেটাই যদি তওবা দ্বারা মাফ হয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য ছোট গুনাহ তো মাফ হয়ে যাবেই নিশ্চিত)।
হযরত মূছা (আঃ) এর বাণী
হযরত মূছা (আঃ) বলেনঃ সেই ব্যক্তির জন্যে আশ্চর্য, যে দোজখের আগুনের প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্তেও হাসে, মৃত্যুর প্রতি বিশ্বাস রাখা সত্ত্বেও হাসে মৃত্যুর প্রতি এক্বীন থাকা সত্ত্বেও আনন্দ ফুর্তিতে থাকে, হাসরের ময়দানে হিসাবের প্রতি বিশ্বাস থাকা সত্তেও চিন্তিত হয় না, দুনিয়া ও দুনিয়ার পরিবর্তন দেকেও দুনিয়ার প্রতি সন্তুষ্টই থাকে। তদ্রুপ সেই ব্যক্তির জন্যেও আশ্চর্য্য, যিনি জান্নাতের প্রতি ঈমান রেখেও নেক আমল করে না।
হযরত জাজান (রহঃ) এর তাওবার ঘটনা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসইদ (রাঃ) কুফা এলাকার কোথাও তাশরীফ নিয়ে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে কোন একটি স্থানে ফাসেক ব্যক্তিদের সমাবেশে মদ্য পান চলতেছিল আর জাজান নামক এক ব্যক্তি গান-বাদ্য করতে ছিল। নিতান্তই সুমধুর তার কণ্ঠ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তার আওয়াজ শুনে বলতে লাগলেন “কতই না সুন্দর, চমৎকার আওয়াজ, যদি সে কুরআন পাক পড়তো, কতই না ভাল হতো।”
একথা বলে তিনি (রাঃ) মাথায় কাপড় ঢেকে চলে গেলেন। কিন্ত জাজানের কানে এ কথাটি বিদ্ধ হয়ে গেল। সে বললো, ইনি কে ছিলেন আর কি-ই-বা বলতে ছিলেন? লোকেরা বলল, ইনি, হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)। হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী। তিনি (রাঃ) বলতেছিলেন, এটা কতই না উত্তম আওয়াজ! যদি সে কুরআন পড়ে, তাহলে কতইনা মজা পাবে। এটা শুনে জাজান ভীত হয়ে গেল। খাঁড়া অবস্থাতেই তবলা ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে দিল আর দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর কাছে পোঁছে গেল। হযরত (রাঃ) তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, এবং উভয়ে কাঁদলেন। অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, সেই ব্যক্তিকে কেন মুহাব্বত করবো না, যাকে আল্লাহ্ মুহাব্বত করেন। সুতরাং জাজান তওবা করে হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এ খেদমতে থেকে কুরআন শরীফ শিখতে লাগলেন। ফলে তিনি কুরআন ও অন্যান্য এলমে এমন বুৎপত্তি অর্জন করলেন যে তিনি নিজেই ইমাম হয়ে গেলেন। অনেক হাদীসে তাঁর নাম আসে-
عَنْذَاذَانِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ (رض)
শিক্ষা মূলক একটি ঘটনা
ফকীহ আবুল্লাইছ সমরকন্দী (রাহঃ) বলেন : আমার পিতা বর্ণনা করতেন যে, বণী ইছরাইলে একটি খুবই সুন্দরী সুশ্রী কিন্তু বেহায়া বদকার মেয়ে ছিল, সে মানুষকে ফেৎনায় লিপ্ত করিয়ে রেখেছিল। তার দরজা সবার জন্যে উম্মুক্ত থাকত, যেই যেত তাকে পালঙ্কে উপবিষ্ট দেখে আসক্ত হয়ে পড়ত। তার ফিস ছিল দশ দীনার। যে কেই তার ফি আদায়ে মনোবাঞ্চা পূরণ করতে পরত। ঘটনাক্রমে একদিন এক বুজুর্গ এ পথে যাচ্ছিল হঠাৎতার প্রতি দৃষ্টি পড়ল, এতে তিনি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়লেন। মনকে অনেক বুঝালেন, আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করলেন।
কিন্ত উত্তপ্ত হৃদয় আর ঠান্ডা হল না, অবশেষে বাধ্য হয়ে কোন জিনিস বিক্রি করে দশ দীনার নিয়ে ঐ মহিলার কাছে গেলেন। মহিলার নির্দেশে সে দীনার তার সচীবের কাছে দিয়ে দিলেন, এবং একটি সময় আনলেন। নির্ধারিত সময়ে তিনি তার কাছে পোঁছে গেলেন। মহিলা নিজেকে যথেষ্ট সজ্জিত করে রেখেছিল। কিন্তু তিনি যখন মহিলার দিকে হাত বাড়ালেন এবং মনোবাসনা পুরনের ইচ্ছা করলেন, ঠিক তখনি আল্লাহ্’র মেহেরবানী ও তার এবাদতের বরকতে অন্তর আল্লাহ্’র ভয়ে কম্পিত হতে লাগল। ভাবতে লাগলেন যে, আমার এ অপকর্ম তো আল্লাহ্ তা’আলা দেখতেছেন। বস, এ অনুভূতি আসা মাত্র চক্ষুদ্বয় অবনমিত হয়ে গেল, হাতে কম্পন এসে গেল, রং পাল্টে গেল, মহিলা এমন দৃশ্য এই প্রথমবার দেখল, তাই সে বলতে লাগল, আপনার কী হল? তিনি বললেন, আমি আমার পরওয়ারদেগারকে ভয় করছি। আমাকে এখান থেকে যেতে দাও।
সে বলতে লাগল, আপনার প্রতি আমার আফছোছ! যার আকাংখায় শত-কোটি মানুষ অপেক্ষায় থাকে, তাকে আপনি হাতের মুঠোয় পেয়েও ভয়ে পালাতে চান, আসল ব্যাপার কি?
তিনি বললেন, ব্যাপার কিছু নয়, আমি আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় করছি, আমি তোমার থেকে পয়সাও ফেরৎ নেব না। আমাকে শুধু এখান থেকে এখন যেতে দাও। মহিলা বলল, হয়ত: এটা আপনার জীবনের প্রথম পদক্ষেপ। তিনি বললেন, হাঁ! এটাই আমার পথম পদক্ষেপ। মহিলা বলল, আচ্ছা, আপনি আপনার নাম-ঠিকানা আমাকে দিয়ে যেতে পারেন? সুতরাং বুজুর্গ নিজের নাম ঠিকানা দিয়ে কোন মতে মুক্তি পেলেন, এখান থেকে বেরিয়েই তিনি কাঁদতে কাঁদতে নিজের সর্বনাশের উপর দুঃখ করতে করতে মাথায় ধুলা ধুসরিত করে ফিরে যেতে লাগলেন। এদিকে মহিলার অবস্থা আশ্চর্য হারে পরিবর্তন হতে লাগল, মনে পূর্ণ ভীতি জাগ্রত হল, ভাবতে লাগল, এ ব্যক্তি প্রথম দফা গুনাহ করতে এসেছিল, এখনো গুনাহ্ করে নাই, মাত্র ইচ্ছে করেছিল, এতেই আল্লাহ্ পাকের এত ভয় তার মনে সৃষ্টি হল, তাহলে সেই আল্লাহ্ তো আমারও আল্লাহ্। আমার তো গুনাহর এক যুগ পার হয়ে গেল, তাহলে তো আমার আরো বেশী ভয় করা উচৎ।
সুতরাং সে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করল, দরজা বন্ধ করে দিল, সাজ সজ্জার কাপড় খুলে ফেলল এবং সাধারণ ও পুরানো কাপড় পরিধান করে অল্লাহ্’র এবাদতে লেগে গেল। পরক্ষণেই খেয়াল হল যে, কোন কামেল ব্যক্তির সাহাচার্যতা অবলম্বন করা চাই, তা ছাড়া হয়ত: আমার ত্রুটি দূর করা সম্ভব হবে না, তাহলে ঐ বুজুর্গর কাছেই যাই, হতে পারে যে, তিনি আমাকে বিয়ে করে নেবেন, ফলে তার মাধ্যমে আমার ইলম ও আমল হাছিল হয়ে যাবে।
অতএব যথেষ্ট মাল-সম্পদ ও গোলাম-বাঁদী নিয়ে বুজুর্গের দিকে রওয়ানা হল। সে গ্রামে গিয়ে সেই বুজুর্গের ঠিকানা মত সন্ধান করত: তার দরজায় পৌঁছে গেল, বুজুর্গকে খবর দেয়া হল, তিনি বাইরে তাশরীফ আনল। মহিলা তাকে চেনার জন্যে ঘোমটা উঠিয়ে দিল এবং নিজের অতীতের ঘটনাটা স্মরণ করিয়ে দিল। বুজুর্গ একথা শুনে একটি চিৎকার দিল এবং আল্লাহ্ পাকের দরবারে পৌঁছে গেল।
এ মহিলা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, অতঃপর জানতে চাইল যে, এ বুজুর্গের কোন অবিবাহিত রিশতাদার ভাই ইত্যাদি আছে কি না?
লোকেরা বলল, তাঁর এক ভাই আছে, খুবই গরীব কিন্তু খুবই মুত্তাকী, পরহেজগার।
মহিলা বলতে লাগলো, মাল তো আমার কাছে, অনেক আছে, আমার মালেন প্রয়োজন নেই। সুতরাং তার সাথে বিবাহ হয়ে গেল এবং সাতটি ছেলে হয়। আল্লাহ্ পাক সাত জনকেই বিশেষ মাকাম (মার্যাদা) দিয়েছিলেন।
ذَالِكَ فَضْلُ اللهِ يُؤْتِيْهِ مَنْ يَّشَأُ “এটা আল্লাহ্’র মেহেরবানী, যাকে ইচ্ছে, তাকেই দান করেন”। আল-কুরআন।
হাদীসে ক্বদসী
হযরত আবু জর রাজিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন :- যে, আল্লাহ্ তা’আলা ফরমায়েছেনঃ
- হে আমার বান্দাহগণ! জুলুম করা যেমন ভাবে আমি আমার জন্যে হারাম করেছি, তদ্রুপ তোমরাও তোমাদের উপর হারাম করে নাও, যে কারো উপর জুলুম করবে না।
- হে আমার বান্দহগণ! আমার দেখানো পথ ছাড়া অন্য পথে তোমরা সবাই পথ ভ্রষ্ট। সুতরাং তোমরা আমার কাছেই হিদায়াত চাও, আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দেবো।
- হে আমার বান্দাহগণ! আমি যাকে খাওয়াই, সে ছাড়া তোমরা সবাই ভূখা। সুতরাং আমার কাছেই রুজী চাও। আমি অবশ্যই তোমাদেরকে রিযিক দেবো।
- হে আমার বান্দাহগণ! আমি যাকে পরিধান করাই, সে ছাড়া তোমরা সবাই নগ্ন, সুতরাং আমার কাছেই পোষাক চাও, আমি প্রদান করব।
- হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা রাত-দিন গুনাহ করতে থাক, আর আমি তা ঢাকতে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছেই ক্ষমা চাও। আমি নিশ্চিতই ক্ষমা করে দেবো।
- হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা আমার কোন উপকারও করতে পরবে না, ক্ষতিও করতে পারবে না। (এটা তোমাদের শক্তি বহির্ভূত)।
- হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা আগের ও পরের সমস্ত জিন ও ইনছান মিলে যদি সবাই সর্বশেষ পর্যায়ের পরহেজগার হয়ে যাও, তাহলে এতে আমার রাজত্বে সামান্যতমও কিছু বৃদ্ধি পাবে না।
- হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা পূর্ববর্তী, পরবর্তী সমস্ত মানব-দানব মিলে সবাই যদি সর্ব শেষ পর্যায়ের নাফরমান হয়ে যাও, তবু আমার রাজত্বের সামান্যতমও ক্ষতি হবেনা।
- হে আমার বান্দাহগণ! আদম থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মানুষ ও জিন একস্থানে একত্রিত হয়ে সবাই যদি আমার কাছে চাইতে থাক, আর আমি প্রত্যেককে সে মুতাবিক দিতে থাকি, তাহলে আমার খাজনা থেকে এতটুকুও কমবেনা, যতটুকু সুমদ্রে সূঁই ডুবিয়ে উঠিয়ে আনার পর সূঁইয়ের মাথায় পানি থাকে।
কোন মন্তব্য নেই