হুদায়বিয়ার সন্ধি বিশ্বনবীর দূরদর্শি নেতৃত্বের অনুপম নিদর্শন
নূরকে চশমে লেহরায়ে দরিয়া বহে
অংলিউ কি কারামত পে লাখো ছালাম।
৬২৮ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ষষ্ঠ হিজরির যিলক্বদ মাসে একদিন রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্ন দেখলেন যে, তিনি বিশ্ব মুসলিমের তীর্থ স্থান আল্লাহর ঘর খানায়ে কাবার যিয়ারত করছেন। এটা নিছক কোনো স্বপ্ন ছিল না, বরং এটা ছিল মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে সাংকেতিক নির্দেশনা। ফলে তিনি চৌদ্দশ মতান্তরে পনেরশ সাহাবী নিয়ে ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররমায় যাত্রা করলেন। কিন্তু পথিমধ্যে হুদায়বিয়া নামক স্থানে মক্কার কুরাইশগণ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন। মক্কার কুরাইশদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর সেখানে উভয়পক্ষ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সন্ধি করে। ইতিহাসে এটা 'হুদায়বিয়া সন্ধি' নামে পরিচিত। এ সন্ধিতে স্বাক্ষর করে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অসাধারণ রাজনৈতিক প্রতিভা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তাই হুদায়বিয়ার সন্ধি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জীবনের ‘খধহফ গধৎশ' বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনুল করিমে একে 'ফাতহুম মুবিন’ বা স্পষ্ট বিজয় বলা হয়েছে। আলোচ্য নিবন্ধে বিষয়টির তাত্ত্বিক পর্যালোচনার প্রয়াস পেলাম।
নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার স্বপ্ন: হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর দীর্ঘ ৬ বছর আপন মাতৃভুমি পবিত্র মক্কা নগরী দেখার সুযোগ হয়নি। একরাত্রি তিনি স্বপ্নে দেখেন, ‘সাহাবায়ে কেরামসহ তিনি বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ মাথা মুন্ডন করছেন। তিনি বায়তুল্লাহ শরীফে প্রবেশ করছেন এবং চাবিও তাঁর হস্তগত হয়েছে।’ তিনি সাহাবীদেরকে সবকিছু জানালেন এবং ওমরাহ পালনের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ দিলেন। নবীজি তাদেরকে কুরবানির পশু সাথে নিতেও বললেন। এই স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনে মুহাজির সাহাবীগণ জম্মভুমি দর্শন এবং আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য উতলা হয়ে উঠলেন। সবাই সানন্দে ওমরাহ পালনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন ।
মুসলিম কাফেলার হজ্ব যাত্রা: ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলকদ মাসের ১ম তারিখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন প্রায় দেড় হাজার সফরসঙ্গী সাহাবাদের সাথে নিয়ে ৭০টি কোরবানীর উটসহ ওমরাহ পালনের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মদীনার সামান্য দূরে ‘যুল হুলায়ফা’ নামক স্থানে গিয়ে তিনি ওমরাহর ইহরাম পরিধান করে তালবিয়া পড়ে— অর্থাৎ “লাব্বায়েক" বলে মক্কা মুকাররমার পথে রওনা দিলেন। অপরদিকে মদিনার মুসলিমদের মক্কাযাত্রার এই সংবাদ ইতিমধ্যে কুরাইশদের কাছে পৌঁছে যায়। ফলে কুরাইশরা মুসলিমদের মক্কায় প্রবেশ প্রতিহত করতে উঠে—পড়ে লাগে। তাঁদের গতি রোধ করার জন্য হযরত খালিদ ও ইকরামার নেতৃত্বে সৈন্য প্রেরণ করে। ইতিপূর্বে নবীজি বনু খোঁজা গোত্রের একজন ব্যক্তিকে মক্কাবাসীদের প্রতিক্রিয়া জানার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করছিলেন। তিনি এসে সংবাদ দিলেন, মক্কার কাফেররা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কাফেলাকে বাঁধা দিবে এবং প্রয়োজনে যুদ্ধ করবে।তারপরও মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না। এই সংবাদ পেয়ে হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে প্রচলিত পথ ছেড়ে অন্য পথে অগ্রসর হন এবং মক্কার অদূরে হুদায়বিয়া নামক একটি কুপের নিকট যাত্রা বিরতি করলেন। হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে নিজেদের আগমনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য কুরাইশদের নিকট প্রেরণ করলেন।
দুত বিনিময় ও মধ্যস্থতার চেষ্টা: হযরত আবু সুফিয়ান হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে সাদরে গ্রহণ করে প্রস্তাব দিলেন যে, প্রথমে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার পর কথাবার্তা হবে। হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন— “আমার প্রিয় নবীর পূর্বে আমি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করতে পারিনা। প্রিয় নবীর সম্মান আল্লাহর ঘরের সম্মানের চাইতেও অনেক বেশী।" একথা শুনে আবু সুফিয়ান ও অন্য নেতৃবর্গ তেলে—বেগুনে জ্বলে উঠলো এবং হযরত ওসমানকে আটক করে রাখলো। রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু খোঁজা গোত্রের বুদাইলের মাধ্যমে কুরাইশদেরকে জানিয়ে দিলেন যে শান্তিপূর্ণভাবে শুধু ওমরাহ পালন করার উদ্দেশ্যেই তাঁরা এসেছেন অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু কুরাইশরা মুসলিমদেরকে কোনভাবেই মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না বলে জানিয়ে দেয়। ফলে বুদাইলের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হয়। অতঃপর মুকরিজ ইবনে হাফস মুসলিমদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিস্তারিত কুরাইশদেরকে অবহিত করল। তৃতীয়বারে কেননা গোত্রের হালিস ইবনে আলকামা মুসলিম শিবির পর্যবেক্ষণ করে তাদের সাথে কুরবানির পশু দেখে কুরাইশদেরকে বলল যে, এই কাফেলাকে মক্কা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে না। কিন্তু কুরাইশরা তার কথায় কর্ণপাত করল না। অতঃপর উরওয়া ইবনে মাসউদ শাকাফি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কাছে আলোচনার জন্য আসে। সে নবীজি এবং তাঁর সাহাবীদের সাথে অশালীন ও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করে। অতঃপর উরওয়া উঠে চলে আসার সময় দূর থেকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি সাহাবীদের অগাধ ভক্তি দেখে অবাক হয়ে যায়।
হযরত উসমান হত্যার গুজব: দীর্ঘ সময় হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ফিরে না আসার কারণে মুসলিম শিবিরে এই গুজব রটে যায় যে হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে কে হত্যা করা হয়েছে। ফলে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা দেখা দেয়।
বায়আতে রিদওয়ান: সাহাবায়ে কেরামের উত্তেজিত অবস্থা অবলোকন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে একটি বাবলা গাছের নীচে ডেকে শান্তভাবে তাঁদের মতামত জানতে চাইলেন। সবাই এক বাক্যে কথিত ওসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প ঘোষণা করলেন। কেননা, দূত হত্যা সকল ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে নিষিদ্ধি এবং এর পরিণতি মারত্মক। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের এই সংকল্পকে বায়আতে রূপদান করলেন। ইসলামের ইতিহাস ও কুরআনুল করিমের ভাষায় এই বায়আতকে ’বায়আতে রিদওয়ান’ বলা হয়। কেননা, আল্লাহ—রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যুদ্ধ করার লক্ষ্যে সকলে এই বায়আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার ডান হাত মোবারকের নিচে সকলের ডান হাত রেখে এই বায়আত বা অঙ্গীকার করেছিলেন বলে এটাকে বায়আতে রাসূলও বলা হয়। রাসূলুল্লাহ আপন বাম হাত নিজ ডান হাতের নীচে স্থাপন করে বললেন, “আমি ওসমানের পক্ষে এই বায়আত গ্রহণ করছি।" এ কথা বলার সাথে সাথে সকলে বুঝে ফেললেন যে, হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এখনও জীবিত আছেন। কেননা, মৃত লোকের পক্ষে কোন বায়আত হতে পারেনা। সত্যিই দেখা গেল, বায়আত গ্রহণ শেষেই হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এসে সাহাবাদের নিকট ফিরে এসেছিলেন।
নবীগণের নিকট ইলমে গায়েব থাকার বৈধতা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিকে জিহাদের বায়আত বা অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন, অপরদিকে হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বেঁচে থাকার গায়েবী সংবাদও দিয়ে দিলেন। প্রয়োজনের তাগিদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজের মাধ্যমে “ইলমে গায়েব" প্রকাশ করতেন। যা ছিল আল্লাহ্ প্রদত্ত ইলম। সুতরাং কুরআনের যে সব স্থানে সাধারণভাবে বলা হায়েছে— “আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না"— এর অর্থ হচ্ছে “নিজ শক্তিবলে কেউ ইলমে গায়েব জানেনা।" কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব—এর নিষেধাজ্ঞামূলক কোন আয়াত বা হাদীস নেই— বরং আল্লাহ তা’আলা নিজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইলমে গায়েব শিক্ষা দিয়েছেন বলে পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُۚ
অর্থাৎ “ আপনি (নিজে নিজে ) যা কিছু জানেতেন না তা সবই আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।" উপর্যুক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ুতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “হে হাবীব! আপনার প্রভূ আপনাকে অজানা গায়েবী ইলম ও বিধি—বিধানের জ্ঞান নিজে শিক্ষা দিয়েছেন।" বস্তুত ইলমে গায়েব সত্ত্বাগতভাবে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য মানা যেমন কূফরী ও শিরকী কাজ — তদ্রুপ আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবও আল্লাহর জন্য মানা নাজায়েয এবং হারাম। কেননা, আল্লাহর ইলম আতায়ী (প্রদত্ত) হতে পারেনা। এই প্রভেদটুকু না বুঝার কারণে এক শ্রেণির জ্ঞানপাপী ঢালাও ভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েব কে অস্বীকার করে বসে। এটা তাদের মুর্খতার পরিচায়ক।
বায়আতে শাইখের বৈধতা: সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের হাদীস পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার পরবর্তীকালে খোলাফায়ে রাশেদীন বায়আতে খিলাফত ও বায়আতে শাইখ (তরিকত) তথা জাগতিক ও আধ্যত্মিক উভয় প্রকারের বায়আত গ্রহণ করেছেন — উভয়টিই সুন্নাত। সূরা ফাতহ্ ১০নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বয়ান বর্ণিত রয়েছে, বায়আতে শাইখ বায়আতে রাসূলেরই প্রতিনিধিত্বকারী এবং বায়আতে রাসূল মূলতঃ বায়আতুল্লাহরই প্রতিনিধিত্বকরী। এই কারণেই তরিকতের তিনটি স্তর ফানা ফিশ শাইখ, ফানা ফির রাসূল এবং ফানা ফিল্লাহ— নির্ধরিত হয়েছে। ফানা ফিস শাইখ হলো ফানা ফির রাসূলের পূর্বশর্ত এবং ফানা ফির রাসূল হলো ফানা ফিল্লাহর পূর্বশর্ত। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে সাভীতে রয়েছে, বায়আতে রিদওয়ান" আয়াতটির নুযুল, খাস হলেও হুকুম আম। অর্থাৎ বায়আতে ইমাম ও বায়আতে শায়খ উক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। শাসক বা ইমামের নিকট বায়আত করার অর্থ তার আনুগত্য ও ওয়াদা পূর্ণ করার শপথ। আর বায়আতে শাইখের অর্থ হলো, শাইখে আরেফের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত হাসিলের জন্য শরীয়তের বিধি—বিধান পালনের শপথ করা।
রাসূলুল্লাহর প্রতি সাহাবাদের আদব ও ভক্তি: উরওয়া নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার প্রতি সাহাবীদের অগাধ ভক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে কুরাইশ নেতাদের বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাদের আদেশ দিলে তা তারা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি উযূ করলে তাঁর উযূর পানি গ্রহণের জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতো। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তারা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে থাকতেন না। তিনি আরো বলেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি কিসরা—কায়সার এবং নাজ্জাশীর মতো সম্রাটদের দরবারে ঘুরে এসেছি। আল্লাহ্ শপথ! আমি কখনো কোন সম্রাটকে তার লোকজনের এমন মর্যাদার আসনে দেখতে পাইনি, যেমনটি দেখতে পেয়েছি মুহাম্মদকে তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে। তারা কোন অবস্থাতেই তাঁকে ত্যাগ করে চলে যাবে না। তোমরা এখন নিজেরাই স্থির কর, কী করবে?
হুদায়বিয়ার সন্ধি প্রস্তাব: মুসলিমরা যখন যুদ্ধ করার জন্য শপথ গ্রহণ করে তখন কুরাইশদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়। এ সময় মক্কার প্রবীণ ব্যক্তিরা সন্ধির পক্ষে ছিলেন। কেননা সন্ধি না হলে মদিনার পথে সিরিয়া বাণিজ্য নষ্ট হবে। পরিস্থিতির নাজুকতা উপলদ্ধি করে ওরওয়ার বক্তব্য শুনে কুরাইশ নেতারা ঘাবড়িয়ে যায়। তারা হযরত ওসমানকে ছেড়ে দেয় এবং সন্ধিচুক্তির খসড়া তৈরীর জন্য সোহায়লকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রবীনদের এই সন্ধি মনোভাব বুঝতে পেরে সন্ধি প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য রাতের আধারে মক্কার ৭০—৮০ জন যুবক মুসলিম শিবির আক্রমণ করতে এসে উল্টো নিজেরাই মুসলিমদের হাতে বন্দী হয়ে যায়। সন্ধির খাতিরে রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ষমা করে মুক্ত করে দেন।
সোহায়ল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি তার সাথে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সোহাইল ইবনে আমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করে সন্ধির নিম্নোক্ত শর্তসমূহ স্থির করে।
হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তাবলী:
১. ১০ বছর মক্কার কুরাইশ ও মুসলিমদের মাঝে যে কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ থাকবে।
২. মুসলিমরা এ বছর ওমরা পালন না করেই ফিরে যাবে। তারা চাইলে আগামী বছর হজের জন্য
আসবে, তবে তিন দিনের বেশি মক্কায় অবস্থান করতে পারবে না। মক্কায় তাদের অবস্থানের সময় মক্কাবাসীরা অন্যত্র আশ্রয় নেবে।
৩. মুসলিমের আত্মরক্ষার জন্য শুধুমাত্র কোশবদ্ধ তরবারি আনতে পারবে। এছাড়া অন্য কোন অস্ত্র
বহন করতে পারবে না।
৪. এ সন্ধি সূত্রের ভিত্তিতে আরবের যে কোন গোত্র রাসূলুল্লাহ কিংবা কুরাইশদের সাথে সন্ধি সূত্রে
আবদ্ধ হতে পারবে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
৫. সন্ধির মেয়াদকালে জনগণের পূর্ণ নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।কেউ কারো ক্ষতি সাধন করবে না,
আক্রমণ বা লুণ্ঠন করবে না।
৬. কোনো মক্কাবাসী মদিনায় আশ্রয় গ্রহণ করলে মুসলিমগণ তাকে আশ্রয় দিতে পারবে না। পক্ষান্তরে ে
কোনো মুসলিম মদিনা থেকে মক্কায় আগমন করলে মক্কাবাসী তাকে প্রত্যাপর্ণ করতে বাধ্য থাকবে না।
৭. হজ্বের সময় কুরাইশরা মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবে। বিনিময়ে মক্কার বণিকরা
নিরাপদে মদিনার পথে সিরিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশে বাণিজ্য করতে পারবে।
৮. অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন নাবালক মুসলিমদের দলে যোগ দিতে পারবে না।
৯. এ সন্ধি চুক্তি ১০ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে।
১০. সন্ধির শর্তাবলি উভয়পক্ষকেই পরিপূর্ণভাবে পালন করতে হবে।
নবীজি নিরক্ষর না হওয়ার উৎকৃষ্ট প্রমাণ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন নবুয়তী জ্ঞান দ্বারা সুদূর প্রসারী বিজয় লক্ষ্য করে চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দিলেন। চুক্তিনামা স্বাক্ষরের জন্য পেশ করা হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নাম এভাবে লিখা হলো— “মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাঁর পক্ষ থেকে........ "। সোহায়ল একথায় আপত্তি জানিয়ে বললো— “রাসূলুল্লাহ" শব্দটি বাদ দিতে হবে এবং তদস্থলে “ইবনে আবদুল্লাহ" লিখতে হবে। ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাগে গর্জে উঠলেন। "এমন অপমানজনক শর্তে কিভাবে চুক্তি হতে পারে— ইয়া রাসুলাল্লাহ?" নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তস্বরে বললেন, "আমি তো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসূল— এটা লিখা বা না লিখার মধ্যে এমন কিছু আসে যায়না। আমি যে ইবনে আবদুল্লাহ্, এটাও তো সত্য।" মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি মুছে ফেলতে তিনি নির্দেশ দিলেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আদবের সাথে ঐ শব্দ মুছে ফেলতে অস্বীকৃতি জানালেন। একদিকে নির্দেশ পালন করা ওয়াজিব—অন্যদিকে আদব রক্ষা করা ফরয। নির্দেশ পালনের উপরে হলো আদবের স্থান। তাই হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অস্বীকৃতি জানিয়ে আদব রক্ষা করলেন । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূলুল্লাহ শব্দটি কেটে দিয়ে আবদুল্লাহ শব্দটি নিজ হাতে লিখে দিলেন। উক্ত ঘটনা নবীজির অক্ষর জ্ঞানের প্রমাণ বহন করে।এছাড়াও নবীজি বিভিন্ন সময়ে খাতেবে ওহীদেরকে আরবি বর্ণমালা লিখার পদ্ধতিও শিখিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার সামনেই ওহী লিখার কাজ করতেন। রাসুলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এভাবে নির্দেশ দিতেন— “দোয়াত এভাবে রাখ, কলমকে ঘোরাও, “ফা" হরফ সোজা করো, “ছীন" হরফটি পৃথক করে লিখ, মীম হরফকে বাকা করো না" — অথচ তিনি লিখার পদ্ধতি কুরআন নাযিলের পূর্বে কোন দিন শিখেননি এবং পূর্ববর্তী কোন কিতাবও পাঠ করেন নি" সুতরাং উম্মি নবী মানে প্রচলিত অর্থে নবীজি নিরক্ষর ছিলেন না— তাই তাফসীরে রুহুল বয়ানের গ্রন্থকার সূরা আরাফের "উম্মি" শব্দের ব্যাখ্যায় বলেছেন— “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মি হওয়ার অর্থ উম্মুল খালায়েক অর্থাৎ তিনি সৃষ্টির মূল। যেমন, উম্মুল ক্বোরা মক্কা শরীফকে বলা হয় এবং উম্মুল কোরআন সুরা ফাতিহাকে বলা হয়— তদ্রুপ ’উম্মি’ শব্দটির অর্থ সৃষ্টির মূল। এটা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার একক বৈশিষ্ট।
হুদায়বিয়ায় প্রকাশিত মু'জিযা: হুদায়বিয়ার ময়দানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে নিয়ে ১৯ দিন অবস্থান করেছিলেন। শুস্ক মরুভুমিতে এমনিতেই পানির অভাব। চৌদ্দশত সাহাবীর সাথে রক্ষিত পানি অল্প সময়ের মধ্যিই ফুরিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হুদায়বিয়ার দিন লোকেরা পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নিকট একটি চর্মপাত্র ভর্তি পানি ছিল মাত্র। তিনি তা দিয়ে উযূ করলেন। তখন লোকেরা তাঁর প্রতি এগিয়ে আসলে তিনি তাদেরকে বললেন, কি হয়েছে তোমাদের? তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার চর্মপাত্রের পানি ব্যতীত আমাদের কাছে এমন কোন পানি নেই যার দ্বারা আমরা উযূ করবো এবং পান করবো। এরপর নবী করিম তাঁর মোবারক হাতখানা ঐ চর্মপাত্রে রাখলেন। অমনি পাঁচ আঙ্গুলের চারটি ফাঁক দিয়ে ৪টি পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হলো। পানি উপরে পড়তে লাগলো। সাহাবাগণকে তিনি আহবান করলেন— যার যার প্রয়োজন মত পানি সংগ্রহ করার জন্য। চৌদ্দশত সাহাবী নিজেদের প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে নিলেন। তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত মুবারক তুলে নিলেন। পানিপ্রবাহ সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেল। হযরত সালিম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা সেদিন কতজন লোক ছিলেন? তিনি বললেন, আমাদের সংখ্যা একলাখ হলেও এ পানিই আমাদের জন্য যথেষ্ট হতো। আমরা ছিলাম তখন পনেরশ লোক। উক্ত ঘটনায় কয়েকটি শিক্ষাণীয় বিষয়—
১. পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে একটি আবাদী এলাকা বিরান হয়ে যায়। সরকারী ব্যবস্থাপনায় ইঞ্জিনিয়ার, পাইপ টিউব সংগ্রহ করে এবং অনেক অর্থ ব্যয় করে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। তাও আবার সময় সাপেক্ষে। কিন্তু আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য পানির উপর হস্ত মুবারক রাখার সাথে সাথে পানির প্র¯্রবণ প্রবাহিত হয়। এই পানির উৎস কোথায়? বেহেস্তের চারটি নহর ছিল এর উৎস। হুযুরের হাত ছিল জমিনে— কিন্তু তার ক্রিয়া হয়েছিল জান্নাতে। এটা ছিল প্রাকৃতিক ক্ষমতার উর্দ্ধের শক্তি। এজন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অতিমানব এবং মহামানব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনের সময় গায়েবী পানি দিতে পারেন। এটা ছিল সাহাবাগণের আক্বিদা। এই আকিদা পোষণের নামই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত।
২. সামান্য পানিকে উছিলা করে পানির সাগর প্রবাহিত করার মধ্যে হিকমত হলো— “নাই" থেকে কিছু পয়দা করা আল্লাহর একক কুদরত। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামান্য কোন জিনিসকে উপলক্ষ করে তাতে বৃদ্ধি ঘটাতেন। এটা ছিল আল্লাহর সাথে আদব রক্ষা করা।
৩. পৃথিবীর কোন পানি সর্বোত্তম? এর জবাব হলো— সাধারণ পানির চেয়ে অযুর পানি উত্তম। অযুর পানির চেয়ে যমযমের পানি উত্তম। আর যমযমের পানির চেয়েও উত্তম হলো হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার হস্ত মুবারক হতে প্রবাহিত পানি ।
হুদায়বিয়ার ময়দানে উপস্থিত সাহাবী সংখ্যা: হুদায়বিয়ার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ এর সাথে অংশগ্রহণকারী সাহাবীদের সংখ্যা কোন হাদীসে ১৪০০ কোন হাদীসে ১৫০০ আবার কোন হাদীসে ১৩০০ বলা হয়েছে। আসল সংখ্যা কত এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা কিরমানী র. বলেন, যারা বৃদ্ধ, যুবক ও কিশোর সকলকে গণনা করেছেন, তারা বলেছেন ১৫০০, আর যারা বৃদ্ধ ও যুবকদেরকে গণনা করেননি তারা বলেছেন ১৪০০ এবং যারা শুধু বৃদ্ধদেরকে গণনা করেছেন, তারা বলেছেন ১৩০০। ইমাম নববী বলেন, তাদের সংখ্যা চৌদ্দশ এর কিছু বেশী ছিল। কেউ ভগ্নাংশ সহ ১৫০০ উল্লেখ করেছেন আবার কেউ ভগ্নাংশ বাদ দিয়ে ১৪০০ বর্ণনা করেছেন। আর যারা ১৩০০ বলেছেন, মূলত তাদের সঠিক সংখ্যা জানা ছিলনা।
হুদায়বিয়ার সন্ধিটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অসন্তোষজনক মনে হলেও সুক্ষ্ম কুটনৈতিক বিচারে এটি মুসলমানদের জন্য সুস্পষ্ট বিজয় সুচনা করেছিল। ইসলাম আরবের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। নবীজির দুতগণ ইসলামের বার্তা নিয়ে সিরিয়া, আবিসিনিয়া এবং পারস্যের রাজ দরবারে গমন করেন। নবীজির লিখিত পত্র নিয়ে তারা রোম সম্রাটের নিকটও গমন করেছিলেন এবং ইসলামের বাণী পৌঁছে দিয়ে ইসলামের ছায়াতলে আসার আহ্বান জানান। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, হুদায়বিয়ার সন্ধির পর হতে মক্কা বিজয় পর্যন্ত যত লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল তেমনটি আর কখনো ঘটেনি। কুরাইশদের বীর সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আমর বিন আস ইসলামের আদর্শে মুগ্ধ হন । তাদের ইসলাম গ্রহণের ফলে শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে মদিনা একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ ইসলঅমী প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রে রুপান্তরিত হয়। তাই স্বয়ং রব্বে করিম এই সন্ধিকে “ফাতহাম মুবিনা" বা সুদূর সুস্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষণা করে ইরশাদ করেন,
اِنَّافَتَحۡنَا لَكَ فَتۡحًا مُّبِيۡنًاۙ لِّيَغۡفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنۡ ذَنۡۢبِكَ وَمَا تَاَخَّر —
অর্থাৎ হে প্রিয় রাসূল! জেনে রাখুন— এটা পরাজয় নয়— বরং আমরা আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করছি। আপনার উছিলায়ই আপনার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের গুনাহসমূহ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেবেন।" মহান রাব্বুল ইজ্জত রাষ্ট্রনায়ক ও মুসলিম দল প্রধানদেরকে ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে জাতির দূর্যোগময় মুহুর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে মুসলিম উম্মাহর অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন বিহুরমাতি সৈয়্যদিল মুরসালিন।
লেখক: আরবী প্রভাষক, তাজুশ শরী’আহ দরসে নিযামী মাদরাসা,ষোলশহর,চট্টগ্রাম;
খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া,চট্টগ্রাম।
তথ্যসূত্র:
১— সূরা নিসা,আয়াত:১১৩
২— তাফসীরে জালালাঈন ,সূরা নিসা,আয়াত:১১৩
৩— ইরগামুল মুরিদীন
৪— তাফসীরে সাভী সূরা ফাতহ, আয়াত: ১০
৫— সহিহ মুসলিম,হাদীস: ৪২৯২
৬— খরপূতি—শরহে বুরদা
৭— তাফসীরে রহুল বয়ান, পারা:৯,সূরা আরাফ
৮— ফতোয়ায়ে শামী
৯— সূরা ফাতহ,আয়াত:১,তাফসীরে কানযুল ঈমান; রুহুল বয়ান
কোন মন্তব্য নেই