ইতিকাফ : করণীয় ও বর্জনীয়

ইরশাদ হচ্ছে وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ অর্থাৎ 'তোমরা দুইজনে আমার ঘরকে তওয়াফকারী ও অবস্থানকারীদের জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫) উপর্যুক্ত ইতিকাফ শব্দের অর্থ-অবস্থান করা। তাই আল্লাহর মসজিদে তাঁর নৈকট্য লাভের আশায় যে কোন অবস্থানই হল ইতিকাফ। সেটা কম সময়ের জন্যে হোক অথবা বেশি সময়ের জন্যে হোক। [আল-মুহাল্লা (৫/১৭৯)] আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখেছেন, ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘শুধু অবস্থান করা’। যে লোক মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করেছে তাকে বলা হয়— আকিফ বা অবস্থানকারী। আর শরীয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হল— আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকা ও অবস্থান গ্রহণ করা। (উমদাতুল কারী) এ প্রসঙ্গে কুরআনের অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻋَﺎﻛِﻔُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪِ অর্থাৎ ‘এ অবস্থায় যে তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত।’(সূরা বাকারা, আয়াত:১৮৭) ইতিকাফ বিষয়ে সহীহ বুখারীতে বর্ণিত দীর্ঘ এক হাদীসের শেষাংশে রয়েছে : ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﻣَﻌِﻲ ﻓَﻠْﻴَﻌْﺘَﻜِﻒْ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻟْﺄَﻭَﺍﺧِﺮَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃُﺭِﻳْﺖُ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻠَﺔَ ﺛُﻢَّ ﺃُﻧْﺴِﻴْﺘُﻬَﺎ ‘ অর্থাৎ যে আমার সাথে ইতিকাফ করতে চায় সে যেন শেষ দশকে ইতিকাফ করে, কেননা এই রাত আমাকে দেখানো হয়েছিল, পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (সহিহ বুখারী) তাই যার শক্তি সামর্থ্য আছে তার উচিত হবে ইতিকাফে বসে শেষ দশকের রাতগুলো যাপন করা। ইতিকাফকারী নিজকে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য, দুআ-মুনাজাত, যিকর ইত্যাদির জন্য সে নিজকে মসজিদে আঁটকে ফেলে। দুনিয়াবী সকল দৌড়ঝাঁপ থেকে মুক্ত হয়ে সে মসজিদের পবিত্র আবহে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে। মন ও শরীর উভয়টাকেই সে নিরঙ্কুশভাবে রাব্বুল আলামীনের দরবারে সঁপে দেয়। যা কিছু আল্লাহকে সন্তষ্ট করে শুধু তাতেই নিজকে সংশ্লিষ্ট করে নেয়। আর এভাবে সে শুধুই আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। যা করলে আল্লাহ রাযি হন শুধু তাতেই নিজকে নিয়োজিত করে। ইতিকাফের প্রকারভেদ : ইতিকাফ তিন প্রকার। এক. সুন্নাত ইতিকাফ: রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘আমি প্রথম দশকে ইতিকাফ করেছি, এরপর মধ্য দশকে, এরপর আমাকে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তা ( শবে কদর) শেষ দশকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যার ইতিকাফ করা পছন্দ হয় সে যেন ইতিকাফ করে (মুসলিম)। দুই. ওয়াজিব ইতিকাফ : নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধান হলে আমি এতদিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি একদিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যতদিন শর্ত করা হবে ততদিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। তিন. নফল ইতিকাফ: সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করাকে নফল ইতেকাফ বলে। এর জন্য কোনো দিন কিংবা সময়ের নির্ধারিত নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের পূর্বে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা উত্তম। ইতিকাফের স্থান : ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো পবিত্র মসজিদুল হারাম। এরপর মসজিদে নববি। এরপর যথাক্রমে বাইতুল মাকদিস, জুমা আদায়ের মসজিদ ও মহল্লার মসজিদে। নারীদের ইতিকাফ : পুরুষদের মতো করে নারীদের ইতিকাফ করাও সুন্নত। তবে নারীদের মসজিদের বদলে ঘরে ইতিকাফ করা উত্তম। ঘরের নির্দিষ্ট নামাজের স্থানে তারা ইতিকাফ করতে পারে। আর কারো যদি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকে তাহলে নামাজের নির্দিষ্ট স্থানকে কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে তাতে ইতিকাফের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে আয়েশা (রা.) থেকে একটি হাদিসে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগন ইতিকাফ করেছেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ১৮৬৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ২০০৬) ইতিকাফের শর্ত: ১. মুসলমান হওয়া ২. পাগল না হওয়া ৩. বালেগ হওয়া ৪. নিয়ত করা ৫. ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া ৬. মসজিদে ইতিকাফ করা (ইমাম মালেক র:-এর মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল র:-র মতে, যে মসজিদে জামাতসহকারে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।) ৭. রোজা রাখা। ইতিকাফ অবস্থায় যা করণীয় : ১. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা, ২. কোরআন তিলাওয়াত করা, ৩. দ্বীনি আলোচনা করা ও শোনা, ৪. আল্লাহর জিকির করা, ৫. দোয়া করা, ৬. ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা। ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ : ১. মসজিদে পানাহার করা ২. শৌচকর্ম বা পেশাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া ৩. ফরয গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া ৪. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার পূর্বে ২/৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করতে পারে ৫. আজান দেওয়ার জন্য বাহিরে যাওয়া। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তি ও এ রাতের ঘোষিত ফজিলত লাভে ইতেকাফের চেয়ে উত্তম কোনো উপায় নেই। তাই এই সুযোগকে যথাযথ মূল্যায়ন করে যথাযথ কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৪০, ২/৪৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৫) ইতিকাফ অবস্থায় যা বর্জনীয় : ১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা, ২. ঝগড়া-ঝাটি বা অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৩. গীবত বা পরনিন্দা করা, ৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচা-কেনা করা। যেসব কারণে ইতিকাফ ভেঙে যায় : ১. ওজরবশত বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. বিনা ওজরে মসজিদের বাহিরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। ইতিকাফে যেসব কাজ করা মাকরুহ ১.ইতিকাফে যেকোনো অপ্রয়োজনীয় কাজই মাকরুহ। যেমন- অনর্থক গল্প করা, বিনা প্রয়োজনে বেচাকেনা করা, মোবাইলে গেম খেলা, ফেসবুকে চ্যাট করা ইত্যাদি। একান্ত প্রয়োজনের ক্ষেত্রে বেচাকেনা করার অনুমতি আছে। ২.ব্যবসায়ী মালামাল মসজিদে নিয়ে আসা মাকরুহ। যদিও একান্ত প্রয়োজনে বেচাকেনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ৩.ইতিকাফ অবস্থায় চুপ করে বসে থাকাও কোনো ইবাদত নয়। তাই ইবাদত মনে করে চুপ করে বসে থাকাও মাকরুহ। (আহকামে ইতিকাফ ফাজায়েল ও মাসায়েল, পৃষ্ঠা : ৬৫) ইতিকাফের কতিপয় উপকারিতা: ঈমানদারের জন্য ইতিকাফে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হল: ❖ ১. এর মাধ্যমে কিছু দিনের জন্য দুনিয়া থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহ নৈকট্য হাসিলের বিশাল সুযোগ পাওয়া যায়। ❖ ২. এ সময় অধিক পরিমাণে নফল সালাত, জিকির-আজকার, দুআ, তাসবীহ, তাকবীরে উলা তথা ইমামের প্রথম তাকবীরে সাথে জামাআতে সালাত, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন তথা কবর আখিরাত, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী জ্ঞানার্জন ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়। ❖ ৩. এ ছাড়াও ইতিকাফের ফলে দৃষ্টি হেফাজত, অশ্লীল, অনর্থক ও মিথ্যা কথা থেকে মুখ হেফাজত, গীবত-পরনিন্দা, চুগলখোরি ইত্যাদি অসংখ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। ❖ ৪. রমাযান মাসে ইতিকাফ করার সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, শেষ দশকের রাত জেগে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাওফিক দান করলে ‘লাইলাতুল কদর’ বা শবে কদর লাভ করা সম্ভব হয়-যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। নি:সন্দেহে এটি জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন। ❖ ৫. ইতিকাফ এর মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আদায় করা হয়- যা বর্তমানে মুসলিম সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত। ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত কিছু হাদিস শরীফ নিম্নরূপ - ১। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফকারীর ব্যাপারে বলেছেন, روى ابن ماجه عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْمُعْتَكِفِ : ( هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ ، وَيُجْرَى لَهُ مِنْ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا ) . অর্থাৎ “ইতিকাফকারী গুনাহকে প্রতিরোধ করেন। ইতিকাফকারীকে সকল নেক আমলকারীর ন্যায় নেকী দেয়া হবে। ২। ইমাম তাবারানী, হাকিম ও বায়হাকী হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: روى الطبراني والحاكم والبيهقي عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله جعل الله بينه وبين النار ثلاث خنادق أبعد مما بين الخافقين ) والخافقان المشرق والمغرب . অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ্‌ তার মাঝে ও জাহান্নামের আগুনের মাঝে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন; যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব” ৩। ইমাম দাইলামি আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, روى الديلمي عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( من اعتكف إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه ) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় ইতিকাফ করবে তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” ৪। ইমাম বায়হাকী হাসান বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, روى البيهقي وضعفه عن الحسين بن علي رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف عشرا في رمضان كان كحجتين وعمرتين অর্থাৎ “যে ব্যক্তি রমযান মাসে দশদিন ইতিকাফ করবে এর সওয়াব দুইটি হজ্জ ও দুইটি উমরার সমান। পরিশেষে ইতিকাফ একটি মহৎ ইবাদত। এ ইবাদত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য স্বেচ্ছায় পালনীয়। পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্বাদা কিফায়া। কেউ যদি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতে চায়, তাহলে সে যেন ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগেই ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করবে। (বুখারি, হাদিস : ২০২৭) এক মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলে প্রতিটি মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। তবে তা জরুরি নয়। বরং যেকোনো মসজিদে ইতিকাফ করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যথেষ্ট। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২, ২/৪৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৭/১৬৯) কোনো গ্রামের মসজিদে অন্য গ্রামের লোকের ইতিকাফের দ্বারা ওই গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফের সুন্নাতে মুয়াক্বাদায়ে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য উচিত, তাদের মধ্য থেকে কেউ ইতিকাফে বসা। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৭/১৭১) আর ইতিকাফ স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। ইসলামী শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত পালন করার সুযোগ নেই। তাই কাউকে টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা এবং করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার : ২/৫৯৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৭/১৭১) আজকাল কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, স্থানীয় মুসল্লিদের কেউই ইতিকাফ করছেন না। বরং বাইরে থেকে ভাড়াটে কাউকে এনে কিছু টাকা-পয়সা দিয়ে ইতিকাফ করানো হয়। এতে ইতিকাফের লক্ষ্য অর্জন হয় না। হ্যাঁ, যে কেউ যেকোনো মসজিদে ইতিকাফ করতে পারেন এবং যে কাউকে যে কেউ হাদিয়া বা উপঢৌকন দিতে পারেন। একজন পরহেজগার লোককে সম্মানিত করা বা সহযোগিতা করাতে দোষ নেই; কিন্তু এটি যেন ইবাদতের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত না করে। (মাজমুআ ফাতাওয়া)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন আমীন বিজাহিন নবিয়্যিল আমিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।