ভিক্ষাবৃত্তি ও শরয়ী নির্দেশণা

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম মানব সভ্যতায় জীবিকা অর্জনের আদিম ও অলস পদ্ধতি ভিক্ষাবৃত্তি; যা চরম ঘৃণিত একটি পেশা। আর এ কাজে ইসলামি লেবাসকে ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে ভিক্ষুকরা অপমান করে যাচ্ছে ইসলামকে। অধচ ইসলাম এটিকে শর্তসাপেক্ষে নিন্দনীয় বৈধ করেছে, মূলত তা অধিকার নয় বরং সুযোগমাত্র। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ অর্থাৎ ‘যমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব একমাত্র (আমি) আল্লাহরই ওপরে।’ এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, عَنْ عَبْدَ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللَّهُ بِمَا آتَاهُ ‏"‏ ‏ অর্থাৎ ‘ঐ ব্যক্তি (জীবনে) সফলতা লাভ করেছে, যে ইসলাম কবুল করেছে এবং তাকে যে পরিমাণ রিযিক তথা সম্পদ দেওয়া হয়েছে তার ওপরেই সে পরিতৃপ্ত হয়েছে।’ অন্যত্র ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে হালাল কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো স্ত্রীকে তালাক দেয়া এবং ভিক্ষা করা। সামাজিকভাবেও ভিক্ষা একটি নিচু পেশা। কিছু মানুষ আছে, যারা শারীরিকভাবে সক্ষম ও শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও ভিক্ষাবৃত্তিকে নিজেদের জীবন নির্বাহের প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে, যা একেবারেই লাঞ্ছনাকর। ইরশাদ হচ্ছে, শক্ত-সমর্থ ও দৈহিক সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য ভিক্ষা করা হালাল নয়। অনুরূপভাবে মিথ্যা আবশ্যকতা দেখিয়ে অথবা কৃত্রিম বিকৃত রূপ ধারণপূর্বক অন্যের সহানুভূতি ও দাক্ষিণ্য প্রত্যাশা করাও এক প্রকারের ধোঁকা, যা স্পষ্ট হারাম। তাই এ পেশাকে নিরুত্সাহিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, عَنْ الزُّبَيْرِ بْنِ الْعَوَّامِ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللهُ بِهَا وَجْهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ অর্থাৎ‘ তোমাদের মধ্যে কেউ রশি নিয়ে তার পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে আনা এবং তা বিক্রি করার ফলে আল্লাহ তার চেহারাকে (যাঞ্চা করার লাঞ্ছনা হতে) রক্ষা করা- (এ কাজটি) মানুষের নিকট ভিক্ষাবৃত্তি করার চেয়ে অনেক উত্তম, চাই তারা দিক বা না দিক।’ তবে একান্ত অপারগ অবস্থায় ভিক্ষার অবকাশ দেয়া হলেও তা পেশা হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। হযরত আনাস বিন মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কাছে এক আনসারি সাহাবী ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার ঘরে কিছু আছে কি? তিনি বললেন, একটি কম্বল আছে যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্র আছে পানি পান করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো। ঐ সাহাবী তা নিয়ে এলে রাসুলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতে নিয়ে বলেন, এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলল, আমি এগুলো এক দিরহামে নেব। তিনি দুইবার অথবা তিনবার বললেন, কেউ এর অধিক মূল্য দেবে কি? আরেকজন বলল, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি। তিনি ওই ব্যক্তিকে তা প্রদান করে ঐ আনসারি সাহাবীকে বলেন, এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও। আরেক দিরহামে কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো। সাহাবী তাই করলেন। রাসুলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে হাতল লাগিয়ে বললেন, যাও, কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনেরো দিন যেন তোমাকে না দেখি। ঐ সাহাবী কাট কেটে বিক্রি করতে লাগল। অতঃপর সে আসল, তার কাছে দশ দিরহাম ছিল। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় ও খাবার কিনল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম।’ আর ভিক্ষাবৃত্তিকে যারা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন তাদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরস্কারের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে, عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏ مَنْ تَكَفَّلَ لِي أَنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا وَأَتَكَفَّلَ لَهُ بِالْجَنَّةِ ‏‏ অর্থাৎ যে ব্যক্তি আমাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তাহলে আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হব।’ ইসলাম এই ভিক্ষাবৃত্তিকে দাফন করতে অসহায় বিপন্ন মানুষকে সচ্চল করতে ধনীদের উপর দান-সাদকা ও যাকাত আবশ্যক করেছে। মূলত ধনী ৩ ধরনের। যথা: প্রথমত, যার কাছে নেসাব পরিমাণ বর্ধনশীল সম্পদ রয়েছে। তার ওপর যাকাত এবং সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। আর তার জন্য সদকা খাওয়া নাজায়েজ। দ্বিতীয়ত, যে বর্ধনশীল নয় এমন সম্পদের নেসাব পরিমাণ মালিক। তার ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কিন্তু সদকায়ে ফিতর ও কোরবানি ওয়াজিব। তার জন্যও সদকা খাওয়া নাজায়েজ। তৃতীয়ত, যে বর্ধনশীল-অবর্ধনশীল কোনটার নেসাবের মালিক নয়, কিন্তু তার প্রয়োজন অনুযায়ী মাল আছে। তাহলে সে যাকাতও খেতে পারবে, সদকাও খেতে পারবে। এই তিন প্রকারের কারোর জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ নেই। তবে হ্যাঁ, যার কাছে একদিন চলার মতো খাদ্য সংরক্ষিত নেই, তার জন্য ভিক্ষা করা জায়েজ আছে। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু বিশর কাবীসা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা আমি ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার নিকটে গিয়ে এ ব্যাপারে কিছু সাহায্য চাইলে তিনি বলেন, অপেক্ষা কর। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثَلاَثَةٍ رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ - أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ - وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُومَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَا مِنْ قَوْمِهِ لَقَدْ أَصَابَتْ فُلاَنًا فَاقَةٌ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ - أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ - فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتًا يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا ‏‏.‏ অর্থাৎ‘হে কাবীসা! তিন ধরনের ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য (অন্যের নিকট) হাত পাতা তথা ভিক্ষা করা বৈধ নয়। যথা: ১. যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত চাইতে পারে। কিন্তু তারপর তাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে হবে। ২. যে ব্যক্তি কোনো কারণে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে, সেও তার প্রয়োজন মিটানোর উপযোগী সম্পদ চাইতে পারে। ৩. যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কিংবা অভাব-অনটনের খপ্পরে পড়েছে। এ ব্যাপারে তার বংশের অন্তত তিন জন বিশ্বস্ত ব্যক্তি সাক্ষ্যদান করেছে যে, অমুকের উপর অভাব-অনটন চেপে বসেছে। এরূপ ব্যক্তির পক্ষেও প্রয়োজন মিটানো পরিমাণ সম্পদ প্রার্থনা করা বৈধ। নবীজি আরো বলেন, ‘হে কাবীসা! শুনে রাখ’ এই তিন ধরনের ব্যক্তি ছাড়া আর কারো পক্ষে অন্যের নিকট হাত পাতা হারাম। যারা এভাবে হাত পাতে আসলে তারা হারাম খায়।’ যদি আমরা বর্তমানের ভিক্ষুকদের প্রতি লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব যে, তাদের অধিকাংশই ভিক্ষা করে মাল বৃদ্ধির জন্য। খাদ্যসংকটে পতিত হয়ে প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। অথচ এ সম্পর্কে হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে ইরশাদ করেন- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ ‏ অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বাড়ানোর জন্য লোকজনের কাছে মাল প্রার্থনা করে, নিশ্চয় সে যেন আগুনের অঙ্গার প্রার্থনা করল। কম প্রার্থনা করুক বা বেশি প্রার্থনা করুক। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, عَنْ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتَّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কেয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না।’ অথচ অসাধু সিন্ডিকেটরা ভিক্ষাবৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। তারা অবুঝ শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এমনকি সুস্থ মানুষকে কৃত্রিম উপায়ে প্রতিবন্ধিত্বের কবলে ফেলে এ বাণিজ্য করছে। নবজাতক শিশু থেকে শুরু করে চলৎশক্তিহীন বৃদ্ধদেরও ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করছে তারা। শুধু বেঁচে থাকা বা পেটের দায়ে নয়, ভিক্ষা করে বা ভিক্ষুকদের সিন্ডিকেট করে বাড়ি-গাড়ি করার অবাক করা খবরও প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়াতে। এ টাকায় তাদের নিরাপত্তা ও ভিক্ষা করার জায়গার নিশ্চয়তা মেলে। ক্ষেত্রবিশেষ ভিক্ষার পয়েন্ট সুরক্ষিত রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কাউকে কাউকে স্থানীয় সন্ত্রাসীদেরও কিছু টাকা দিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, ভিক্ষুক সিন্ডিকেটের লোকেরা শিশুদের অপহরণ করে অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটিয়ে তাদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করিয়ে থাকে। তাদের সৃষ্ট অসংখ্য লোমহর্ষক ঘটনা রয়েছে। যার বর্ণনায় গা শিউরে ওঠে। যদিও ভিক্ষাদান সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীন কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তির বর্তমান দৃশ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কিছু কিছু ভিক্ষুক জোরপূর্বক ও নানা ধরনের বিরক্তিকর পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগন্যাল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে গাড়ির উপর হামলে পড়ে এসব ভিক্ষুকের দল। বাচ্চা কোলে নিয়ে শিশু ও মহিলা, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু, অসুস্থতাসহ যে যেভাবে পারছে সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করছে সাহায্যোর জন্য। এ ভিক্ষুকদের নানারকম উৎপাত ও বিরক্তিকর আচরণে ক্ষুব্ধ অনেকেই। এক্ষেত্রে সমাজ বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, মনুষ্য সত্ত¡ার মর্যাদাবোধের জাগ্রতকরণই পারে এমন অপমানজনক কাজ থেকে মানুষকে বাঁচাতে। সম্পদ বৃদ্ধির জন্য যারা ভিক্ষা করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৃত ভিক্ষুকদের জীবনমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করা সরকার ও জনপ্রশাসনের দায়িত্ব। সরকার ভিক্ষুকদের জন্য যে পুনর্বাসন এবং আর্থসামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা, ভুয়া ভিক্ষুকদের শনাক্ত করাসহ নেপথ্যে থাকা অবৈধ চক্র ও সিন্ডিকেটের সব সক্রিয় কর্মীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে প্রকৃত দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে বাজেটে এদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবী। সর্বোপরি ভিক্ষাবৃত্তিকে সঠিক জায়গায় আনতে সরকার এবং নগর প্রশাসন যদি এখনই সোচ্চার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে সামাজিক অবক্ষয়ের আরও বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে। আর আমরা যারা সত্যিকার অর্থে অসহায়দের সাহায্য করতে চাই, তারা এই সংকটময় পরিস্থিতি না কাটা পর্যন্ত কষ্ট করে হলেও ভিক্ষুককে আর্থিক সাহায্য না করে তাদের খাবার, শীতের কাপড় কিংবা তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিজেরা কিনে দেবো। তাহলে খুব স্বল্প হলেও এই পেশায় পরিবর্তন আসবে। বস্তুত যে ব্যক্তি নিজের প্রয়োজন এবং অভাব লোকের সামনে পেশ করবে, তার প্রয়োজন এবং অভাব কোনো দিন পূরণ হবে না। তাই সে সব সময় লোকের কাছে যাচন করতেই থাকবে এবং তার পেট পূরণ হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর আস্থা রাখবে এবং তাঁর উপর ভরসা করে জীবিকার্জন সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করবে, আল্লাহর অনুগ্রহে তার অভাব দূর হয়ে যাবে। ইরশাদ হচ্ছে, وَّیَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَیۡثُ لَا یَحۡتَسِبُ وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ অর্থাৎ তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি সঠিক পন্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তার সাফল্য ও কার্যসিদ্ধি বা অভিষ্টলাভের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর এক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা হলো যদি কোনো ব্যক্তি আয়ের সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বনের পরও অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের অত্যাবশ্যকীয় ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন পূরণে সক্ষম না হয়, তবে বায়তুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরকারি উদ্যোগে ওই ব্যক্তির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। যদি তাতে সম্ভবপর না হয়, তাহলে সামাজের বিত্তবান, ধনাঢ্য লোকদের দায়িত্ব হলো ওই অক্ষম ব্যক্তির বেঁচে থাকার উপায় অবলম্বন করে দেওয়া। আল্লাহ তয়ালা আমাদেরকে প্রকৃত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাবলম্বি করে তোলার মানবিক মহান দায়িত্ব পালন করার তওফিক দান করুন। আমিন বিহুমাতি সৈয়্যদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তথ্যসূত্র: 1- সূরা হুদ,আয়াত:০৬ 2- সহিহ মুসলিম,হাদীস: ২৩১৬ 3- জামে তিরমিযি 4- সহিহ বুখারি:,হাদীস:১৪৭১ 5- জামে তিরমিযি,হাদীস : ১২১৮ 6- সুনানে আবু দাউদ, হাদীস:১৬৪৩ 7- সহিহ মুসলিম,হাদীস: ২২৯৪ 8- সহিহ মুসলিম, হাদীস: ২২৮৯ 9- সহিহ বুখারী,হাদীস: ১৪৭৪ 10
- সূরা তালাক, আয়াত:৩ লিখক: আরবী প্রভাষক ও এম ফিল গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়।