এক কৃতজ্ঞ মুসলিম জ্বিন
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
মক্কা মুয়াযযমায় কট্টর কাফির ওলীদ বিন মুগীরা একটি ভূত মূর্তিকে দেবতা মেনে পূজা করতো। একদিন ঐ ভূত মূর্তি কথাবলার শক্তি পেল এবং বলতে লাগলো,"হে লোক! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল নয়, তার কথা কখনো মান্য করবে না।" এটা শুনে ওলীদ খুশি হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে তার সঙ্গীদের আজব ঘটনা খুলে বললো। ওলীদের ঘরে লোকে লোকারণ্য। সকলে শুনতে পেল-মূর্তিটি রাসূলুল্লাহর বিরুদ্ধে বলতে লাগলো, সকলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। ওলীদ সংবাদটি চতুর্দিকে প্রচার করতে লাগলো। দ্বিতীয় দিনও অনেক মানুষ জমায়েত হলো। কাফেররা নবীজির নিকট এ মর্মে সংবাদ দিল যে,আপনি এসে আমাদের দেবতার কথা শ্রবণ করুন।
তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তথায় তশরিফ আনলেন। নবীজির আগমনে মূর্তিটি বলতে লাগলো - "হে মক্কাবাসী! তোমরা জেনে রাখো, রাসূলে আরবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য নবী, তাঁর আনিত দ্বীন সত্য। তোমরা ও তোমাদের প্রতিমা মিথ্যা। যদি তোমরা এ সত্য নবীর উপর ঈমান না আনো, তবে তোমরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অতএব বুদ্ধির সাথে কাজ করো এবং এই সত্য নবীর গোলামীতে নাম লিখাও।" ওলীদ এ কথা শুনে রাগান্বিত হয়ে স্বীয় দেবতাকে জমীনের উপর জোরে নিক্ষেপ করে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলো।
হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তথা হতে বের হয়ে আপন নিবাসে ফিরছিলেন তখন সবুজ পোশাক পরিহিত রক্তাক্ত তলোয়ার হাতে এক নওজোয়ান নবীজির সামনে এসে দাঁড়ালেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, তুমি কে? যুবক বললো, আমি জ্বিন জাতির একজন এবং আপনার নগন্য গোলাম। আমি তূর পর্বতে থাকি, আমার নাম মহিন। আমি কিছুদিনের জন্য বাহিরে গিয়েছিলাম। সফর শেষে বাড়ি ফিরে দেখি, পরিবার -পরিজন সবাই কাঁদছে। জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কাঁদছো কেন? তারা বললো, "মুসাফফার নামক এক কাফির জ্বিন মক্কা নগরীতে গিয়ে ওলীদের মূর্তির মাঝে প্রবেশ করে প্রিয় নবীর শানে আপত্তিকর কথা বলে মানুষদের বিভ্রান্ত করছে। আজ আবার গিয়েছে, রাসূলুল্লাহর শানে গোস্তাখী করতে পারে।" একথা শুনে ঐ কাফেরের উপর আমার ভীষণ রাগ হলো। আমি উন্মুক্ত তলোয়ার হস্তে তার পিছু নিলাম এবং পথিমধ্যে ঐ অভিশপ্তকে নরকে পাঠিয়ে দিয়েছি। অতঃপর তড়িৎগতিতে গিয়ে ওলীদের মূর্তিতে প্রবেশ করেছি। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আজ ভূত মূর্তি থেকে যে আওয়াজ বের হয়েছিল, তা আমারই আওয়াজ ছিল। হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনা শুনে আনন্দিত হয়ে স্বীয় গোলামের জন্য নবুয়তী কন্ঠে দোয়া করলেন। (জামেউল মুজিযাত,পৃ:৯)
লিখকঃ আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা,
খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজি, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রা।
কোন মন্তব্য নেই