আশুরার দিবসের আমল
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। এর অর্থ ১০। আর আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে। কারো মতে, এই দিনটিতে যেহেতু আল্লাহপাক স্বীয় দশজন নবীকে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন রহমত ও নেয়ামত দান করেছিলেন, তাই এটির নাম আশুরা।
সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।
মহররমের ১০ তারিখ যেসব তাৎপর্যময় ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, সংক্ষেপে সেগুলো হলো-
১.পবিত্র আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা সাগর, পাহাড়, প্রাণিকুল, আসমান-জমিন ও লওহ-কলম ইত্যাদি সৃষ্টি করেন।
২.আল্লাহ তায়ালা আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে তাঁর খলিফা নিযুক্ত করেন এবং তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান।
৩.এ দিনে হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে দুনিয়ায় নেমে আসেন, আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন এবং স্ত্রী হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে আরাফার ময়দানে সাক্ষাৎ করেন।
৪. পৃথিবীর প্রথম হত্যাকাণ্ড হাবিল-কাবিলের ঘটনা সংঘটিত হয়।
৫.হজরত নূহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিপতিত হওয়ার পর ১০ মহররম তিনি নৌকা থেকে ঈমানদারদের নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন।
৬.হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর ১০ মহররম সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেন।
৭.হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর মহররমের এ দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন।
৮.হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.) তাঁর ১১ ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে কূপে পতিত হন এবং এক বণিক দলের সহায়তায় মিসরে গিয়ে হাজির হন। তারপর আল্লাহর বিশেষ কুদরতে তিনি মিসরের প্রধানমন্ত্রী হন। সুদীর্ঘ ৪০ বছর পর এই দিনে পিতার সঙ্গে মিলিত হন এবং হজরত ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।
৯.হজরত সোলায়মান (আ.) হাতের আংটি হারিয়ে সাময়িকভাবে রাজ্যহারা হলে এই দিনেই আল্লাহ তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
১০.হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচারের কারণে তাঁর দলবলসহ অন্যত্র চলে যান। পথিমধ্যে নীল নদ পার হয়ে তিনি ফেরাউনের হাত থেকে আশুরার দিন মুক্তি পান। আর ফেরাউন তার দলবলসহ নীল নদের পানিতে ডুবে মারা যায়।
১১.হজরত ইউনুস (আ.) জাতির লোকদের প্রতি হতাশ হয়ে নদী অতিক্রম করে দেশান্তরিত হওয়ার সময় নদীর পানিতে পতিত হন এবং মাছ তাঁকে গিলে ফেলে। মাছের পেট থেকে তিনি আল্লাহর রহমতে ৪০ দিন পর মুক্তি পান ১০ মহররম তারিখে।
১২.মারিয়াম (আ.) এর গর্ভ থেকে হজরত ঈসা (আ.) এর পৃথিবীতে আগমন ঘটে এবং এ দিনেই আল্লাহ তাঁকে আসমানে তুলে নেন।
১৩.এই দিনে কারবালা প্রান্তরে হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের মধ্য দিয়ে ইসলামের ইতিহাসের মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয়। যা মুসলিম উম্মাহকে ত্যাগ ও সত্যের উপর আমরণ অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়।
১৪.সর্বশেষ এই ১০ মহররমেই জুমার দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। (তথ্য সূত্র, বোখারি : ১৯০০, মুসলিম : ২৬৫৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১/১৩২, আল কামেল ফিত তারিখ : ১/১২২, উসদুল গাবাহ : ১/২১)
এ দিবসে করণীয় সমুহ:
১. রোযা-
আশুরার রোজা সব নবীর আমলেই ছিল। নবী করিম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে নবীজি ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছে। প্রিয় নবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তাদের এই দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলেন। জানতে পারলেন—এদিনে মুসা (আলাইহিস সালাম ) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত কিতাব লাভ করেন। এই দিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের ফেরাউনের জেলখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং তাদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখে।
মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বললেন, মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। এরপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম অথবা ১১ মহররম মিলিয়ে ২টি রোজা রাখতে বললেন। কারণ, ইহুদিদের সঙ্গে মুসলমানদের যেন সাদৃশ্য না হয়। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। (সহিহ মুসলিম ; সুনানে আবুদাউদ)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) আশুরা ও রমযানের রোযা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন, অন্য কোনো রোযা সম্পর্কে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )-কে সেরূপ গুরুত্ব দিতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০৬; মুসলিম, হাদিস : ১১৩২)
হজরত কাতাদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসুলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ) হজরত আবু হুরায়রা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজার পরে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ; যেমন ফরজ নামাজের পরে শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।’
১০ মহররম আশুরার রোজা রাখা সুন্নত। আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া। মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা; ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা।
২. দরুদ ও সালাম, ইস্তেগফার -
এ মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরিফ ও ৭০ বার ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফজিলতের আমল। [তরিকত শিক্ষা, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহ.) পৃষ্ঠা: ৩০ ও ৯৬; রাহাতুল কুলুব, ইমাম রাজিন (রহ.)]
আর ১০ ই মহররম দিনভর আল্লাহ কাছে তাওবা- ইসতেগফার করবে। আর এ দোয়া বেশি বেশি পড়বে-
اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালঅমাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।’ (আল-মুঝাম আল আওসাত)
বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করবে-
رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
উচ্চারণ : রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’
সব সময় ইসতেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাওয়্যাবুল গাফুর।
আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’
৩. ভালো খাবারের আয়োজন-
আরেকটি আমল বর্ণনা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো, আশুরার দিনে যথাসাধ্য খাবারে উদারতা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভালো খাবার খাওয়া। আবদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির, হাদিস : ১০০০৭; বায়হাকি, হাদিস : ৩৭৯৫)
এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে দুর্বলতা আছে। তবে ইবনে হিব্বানের মতে, এটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হাদিস। ইমাম আহমদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি ) বলেছেন, এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা থাকার কারণে ‘হাসান’ হওয়া অস্বীকার করা যাবে না। আর ‘হাসান লিগাইরিহি’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আমল করা যায়। (আস-সওয়াইকুল মুহরিকা আলা আহলির রফজি ওয়াদ দালাল ওয়াজ জানদিকা : ২/৫৩৬)
আশুরার দিবসে বর্জনীয় বিষয়াবলী :
আশুরার সুমহান মর্যাদা ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারের প্রচলন হয়ে গেছে। সে সব থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। আশুরার দিন ক্রন্দন-বিলাপ করা, বুকে চাপড়ানো, পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা, নিজেকে রক্তাক্ত করা ও শোক মিছিল করা কোনোটিই শরিয়তসম্মত কাজ নয়। কোরআন-হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই।
কারবালার প্রান্তেরে হাজারো শিয়া মুসলিম থাকার পরও তারা হুসাইন (রা.) কে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। আর এইসব শিয়ারাই পরবর্তীতে হুসাইন (রা.) জন্য মায়াকান্না করতে থাকে। তারা প্রতিবছর আশুরার দিনে তাদের কৃতকর্মের জন্য শোক প্রকাশ করতে থাকে। এ উপলক্ষে নানান অপসংস্কৃতি প্রবর্তন করেছে তারা।যেমন-
১) হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এর স্মরণে কাল্পনিক তাযিয়া বা নকল কবর নিয়ে মিছিল করা।
২) এইসব নকল তাযিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা।
৩) এইসব নকল তাযিয়ায় বা কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ প্রদান করা।
৪) কারবালার শোক প্রকাশ করতে গিয়ে নিজেদের দেহে ছুরি ব্লেড ইত্যাদি দ্বারা আঘাত বা রক্তাক্ত করা।
৫) হুসাইন (রা.) শাহাদাতের স্বরণে হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে শোক, মাতম কিংবা বিলাপ ইত্যাদি করা।
৬) যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা।
৭) বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাযিয়া বা কবরের প্রদর্শনী করা ইত্যাদি।
তাদের শোক প্রকাশ আজ বিশ্ব বিবৃত। যদিও তারা নিজেদের ইসলামের অনুসারী দাবি করে। অথচ তারা আজও আশুরার দিনে শোক প্রকাশ করে ইসলামের বিরোধিতা করে। কেননা ইসলামে চারদিনের বেশী শোক প্রকাশ হারাম।
আশুরা উপলক্ষে শিয়াদের এইসব তাযিয়া মিছিল, কান্নাকাটি, আহাজারি, বুক পিঠ চাপড়ানো, ছুরি বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজেদের আঘাত করা ইত্যাদির সূচনা করেন “মুঈযযুদ দাওলা দাইলামী” নামে একজন শিয়া। এই ব্যক্তি সর্বপ্রথম ৩৫২ হিজরীতে এইসব শোক তাযিয়া মিছিল করার হুকুম জারি করেন। যা পরবর্তীতে ৩৬৩ হিজরীতে আল-মুঈযযু লিদীনিল্লাহি ফাতিমী (বেদ্বীন কট্টর শিয়া) মিশরেও এই হুকুম জারি হয়।(ইবনুল আসীর কর্তৃক রচিত ‘আল-কামেল ফিত তারীখ’ ৭/২৭৯, ইবনে কাসীর (রাহ.) কর্তৃক রচিত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ‘১৫/২৬১ (৩৫২ হিজরীর ঘটনাবলী) ও হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান আযমী (রাহ.) কৃত ‘ইবতালে আযাদারী’)
আশুরা সম্পর্কে ভুল ধারণা:
ইসলাম সম্পর্কে বিশদ না জনার কারণে এবং জানার চেষ্টা না করার কারণেও উপমহাদেশে আশুরাসহ বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে অসংখ্য ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। যথা:
১) এই মাসে বিয়েশাদি না করা।
২) নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা।
৩) কোনো শুভ কাজ বা ভালো কাজের সূচনা না করা।
৪) গোশত না খাওয়া ও নিরামিষ আহার করা।
৫) পান না খাওয়া, নতুন কাপড় ও সুন্দর পোশাক পরিধান না করা, সাদা কাপড় বা কালো কাপড় তথা শোকের পোশাক পরা।
৬) সব ধরনের আনন্দ উৎসব পরিহার করা ইত্যাদি।
উপর্যুক্ত কাজগুলো হচ্ছে কুসংস্কার। এইসব কখনোই ইসলাতী রীতিনীতি নয়। ইসলামের সাথে এইসবের কোনো সম্পর্ক নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার দিনসহ মুহররম মাস জুড়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার ও দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই