আউলিয়া কেরামের দরবার : রহমত পাওয়ার অনন্য স্থান
মুুহাম্মদ আবদল্লাহ আল মাসুম
মহান আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে কতিপয় সৌভাগ্যবান লোক নির্বাচন করে নেন। তারাই অলি আল্লাহ। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ যেমন স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেছেন অনুরূপ তাদের সঙ্গপ্রাপ্ত এবং পরবর্তীতে তাদের ফয়েজ প্রাপ্ত আউলিয়া কেরামও দ্বীন-ধর্ম প্রচারে রেখেছেন অসামান্য অবদান। আউলিয়া কেরাম আল্লাহর বন্ধু যাদের জন্য সুসংবাদ ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে- মনে রেখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোন ভয়ভীতি নেই এবং তারা চিন্তিত হবেন না। তারা হলেন সে সব ব্যক্তি যারা ঈমান এনছেন এবং যাদের অন্তরে আল্লাহর ভীতি রয়েছে তাদের জন্য সু সংবাদ হচ্ছে পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে, আল্লাহর বাক্য সমূহের কোন পরিবর্তন হয় না। এটাই হলো মহান সফলতা। (সুরা ইউনুস: আয়াত ৬২-৬৪) এ প্রসঙ্গে রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-আমার বান্দা নফল ইবাদাত তথা সাধনার মাধ্যমে আমার এতই নিকটবর্তী হয়ে যায় এক পর্যায়ে আমি নিজেই তাকে ভালবাসি। আর আমি যখন কাউকে ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে আমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে আমি তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে তার পা আমার কুদরতী দ্বারা শক্তিশালী হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। এমতাবস্থায় সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তা অবশ্যই দান করি। (সহীহ বুখারি ২য় খন্ড; মেশকাতুল মাসাবীহ, ১৯৭ পৃষ্ঠা)
বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, অলি আল্লাহর দরবার, আল্লাহর দরবার। কেউ যদি আল্লাহর সান্নিধ্যে বসতে চায়, সে যেন অলি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে যায়। অধিকন্তু অলি আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার এবং বসার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে- হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সাদেকিনদের (অলি আল্লাহ) সঙ্গী হয়ে যাও। (সুরা তাওবা: আয়াত-১১৯)
উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় আউলিয়া কেরামের মর্যাদা মহান আল্লাহর দরবারে কত বেশী। তাঁদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তাঁদের সংস্পর্শে আসলে মানুষ হয় ধন্য। গুনাহগার আসলে নেককারে পরিণত হয় আর জাহান্নামী আসলে পেয়ে যায় জান্নাতের রাস্তা। সহীহ বুখারী শরীফের একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বনী ইসরাঈলের ১জন পাষন্ড খুনী। কথায় কথায় মানুষ খুন করে ফেলা যার নেশা। ৯৯ জন মানুষ হত্যা করে একদিন মনে মনে চিন্তা করলো আমি যেভাবে মানুষ মেরে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিচ্ছি। ঠিক এভাবে একদিন আমাকেও তো যেতে হবে। পরকালের কঠিন শাস্তির কথা ভেবে সে একদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ল কোন এক অজানা পথে মুক্তির সন্ধানে। পথিমধ্যে দেখা হলো এক লোকের সাথে। এ লোকের নিকট বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো। ৯৯ জন মানুষ খুনের কথা শুনে লোকটি চমকে উঠলো এবং বললো, একজন মানুষ খুন করলে যেখানে জাহান্নামের শাস্তি পেতে হয় সেক্ষেত্রে তুমি ৯৯ জন মানুষ খুন করে মুক্তির আশা করছো? অসম্ভব। একথা শুনে খুনি ব্যক্তিটি আরো হতাশ। প্রকারান্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। সে বললো, ৯৯ জন খুনের অপরাধে যদি জাহান্নামে যেতেই হবে সুতরাং আর একজন অবশিষ্ট রাখার কোন মানে হয় না। এসো তোমাকে দিয়েই একশত পূর্ণ করি বলেই তরবারী চালিয়ে ঐ লোকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। সর্বশেষ হত্যাকান্ডের পর আবারো তার অন্তর কঁপে উঠলো। পরকালের শাস্তির ভয় তাকে তটস্থ করে ফেলল। এবার সে পুনরায় মুক্তির আশায় সম্মুখপানে এগিয়ে চলল। কিছুদুর গিয়ে দেখা হলো আরেক আল্লাহর বান্দার সাথে। খুনি লোকটি তাকে অতীত জীবনের সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করে মুক্তির পথ খোঁজার বিষয়টি খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলো, আমার মুক্তির পথ আছে কি? লোকটি অনেক চিন্তা ভাবনা করে জবাব দিলেন, আমাদের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন অনেক দয়াবান। বান্দার অপরাধ যতবড় হোক না কেন তাঁর রহমতের একটা ফোঁটা তার চাইতে অনেক বড়। একাগ্রচিত্তে তাওবা করলে অনেক বড় বড় গুনাহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিতে পারেন। অতএব হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। তুমি সামনের দিকে চলো। কিছু দুর গেলে একজন বুযুর্গ (অলি) ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে। তার হাতে তুমি তওবা কর। একথা শুনার পর তার অন্তরের জানালা দিয়ে যেন এক অনাবিল শান্তির বাতাস বইয়ে গেলো। আবিস্কার করলো নিজেকে পুনরায়। ফিরে পেল হারানো জীবন। বিপদসংকুল সমুদ্র হতে তার তরিটিকে যেন নিয়ে এলো তীরে। কাল বিলম্ব না করে পরামর্শ মোতাবেক এগিয়ে চলে সম্মুখপানে সেই বুযুর্গ ব্যক্তির সাক্ষাতের আশায়। কিন্তু হায় কিছুদুর যেতে না যেতেই মৃত্যুর ফেরেশতা আযরাঈল হাজির। সামনে এক কদম যাওয়ার সুযোগ নেই। নিমিষেই বের হয়ে গেল তার দেহ থেকে প্রাণ বায়ু।নিস্তেজ দেহটি পড়ে রইলো মাটিতে। এদিকে দেহ হতে বিচ্ছিন্ন আত্মাকে নিয়ে ফেরেশতাদের মাঝে দেখা দিল দ্বন্দ্ব। একদল বলে আমরা নিয়ে যাবো বেহেশতে। অন্যদল বলে না আমরা নিয়ে যাবো জাহান্নামে। কারণ সে একশত খুনির আসামি। আর বেহেশতের ফেরেশতাদের দাবী সে গুনাহাগার হতে পারে না। যেহেতু তওবার উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হয়েছে। সেহেতু তাকে আমরা বেহেশতে নিয়ে যাবো। দু’দল ফেরেশতার এই বিতর্ক মীমাংসার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন পাঠিয়ে দিলেন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে আর একদল ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বললেন-লোকটি আল্লাহর বুযর্গ বান্দার দরবারে যাওয়ার জন্য যেখান থেকে রওয়ানা দিয়েছে সে জায়গা থেকে আল্লাহর ওলির দরবারে দূরত্ব কতটুকু মেপে দেখ। অতঃপর দেখ ঐ সম্পুর্ণ জায়গাটুকু দুইভাগ করে কোন ভাগে গিয়ে লোকটির মৃত্যু হয়েছে। প্রথমভাগে মৃত্যু হলে সে জাহান্নামী আর দ্বিতীয় ভাগে মৃত্যুবরণ করলে সে বেহেশতী। কারণ সে তওবার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং বেশীর ভাগ অতিক্রম করে কাছাকাছি পৌছে গেছে। ফেরেশতারা পরিমাপ করে দেখলেন। লোকটি প্রথম ভাগ অতিক্রম করে দ্বিতীয়ভাবে একহাত সামনে তথা দ্বিতীয় ভাগে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ফয়সালা দিলেন,আল্লাহর এই বান্দা বেহেশতে যাবে। অতএব তার আত্মা বেহেশতের ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করা হলো আর তারা নিয়ে গেলেন বেহেশতে। সুতরাং বুঝা গেলো একশত খুনের মত এতবড় অপরাধের পরও যদি কেউ আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে তওবা করতে পারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আরো প্রমাণিত হয়ে গেলো আল্লাহর অলির দরবারে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অশেষ বরকত।
আওলিয়া কারা? এর প্রশ্নের উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যাদের দেখলে আল্লাহু তায়ালার কথা মনে হয় – তারাই হচ্ছে, আওলিয়া। অন্যত্র রয়েছে,প্রকৃত ওলীগণ একে অপরকে ভালবাসেন আল্লাহর কারণে, পরস্পরের মধ্যে কোন আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্কের কারণে নয় এবং কোন প্রকার অর্থ-সম্পদ আদান-প্রদানের কারণেও নয়। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় তাঁদের চেহারা অতীব নূরানী ও প্রজ্জ্বলিত এবং তারা কিয়ামত দিবসে নূরানী মিম্বরের উপর আসীন হবেন। আলাহ ডায়ালার কাছে তাদের উঁচু মর্তবা দেখে নবী ও শহীদরাও ঈর্ষা করবেন। অন্যান্য সাধারণ মানুষ যখন ক্বিয়ামতের ভয়ে আতঙ্কিত থাকবে, তখন তাঁরা (ওলীগণ) কোন প্রকার ভয় করবেন না। যখন মানুষ চিন্তিত ও দুঃখিত হবে, তখন তাঁরা কোন প্রকার চিন্তা ও দুঃখ অনুভব করবেন না।অতঃপর রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন: “শুনে রাখো!আল্লাহর ওলীদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না – ১০:৬২।(মেশকাত, আবূ দাউদ, বাগাবী, তাফসীরে তাবারী ও মাযহারী;তাফসীরে রূহুল বয়ান; তাফসীরে জালালাঈন-সূরা ইউনুছ-৬২, পৃ:১৭৬)
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের রওযা এবং সাধারণ মুসলমানের কবর জিয়ারত করা সুন্নত ও নেক-আমল তথা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত বুরাইদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: “আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে জিয়ারত করো …। (সহিহ মুসলিম; মিশকাত,হাদীস:১৬৬৮) অন্যত্র রয়েছে, কেননা, এটা হচ্ছে, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখেরাতের স্মরণ। (সুনানে ইবনে মাজাহ; মিশকাত, হাদীস:১৬৭৫) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,“প্রতি শুক্রবার কেউ তার মা-বাবা বা তাঁদের কারো কবর জিয়ারত করলে – তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং (মা-বাবার সঙ্গে) সদাচারী হিসেবে গণ্য হবে” (শুয়াবুল ঈমান; মিশকাত, হাদীস:১৬৭৪)। আর এরই মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে দুনিয়াবাসী মুসলমানদের আত্মিক ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সুন্নতে বাঁধা দেওয়া বিদয়াত, একে কবর-পূজা বা মাজার-পূজা বলে অবজ্ঞা করা ভ্রষ্টতা এবং এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা চরম অজ্ঞতা,গোমরাহী ও বাতিলপন্থীদের বৈশিষ্ট্য। অনুরূপভাবে জিয়ারতের নামে কোনো শরীয়ত পরিপন্থী কাজ বা আচরণও কোনোভাবেই সমর্থিত নয়, বরং নিন্দিত ও ধিকৃত। কেননা, এর ফলে, এ সুন্নত বা নেক-আমলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে ফেতনার সৃষ্টি হয় এবং বাতিলপন্থীরা মওকা পেয়ে যায়।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (’আলাইহির রাহমাহ) বলেন: " যে মহাপুরুষের [ নবীগণের (আলাইহিমুস সালাম), সাহাবীগণ, তাবেঈন,তবে তাবেঈন, আউলিয়ায়ে কেরাম ও হক্কানী ওলামায়ে ইজাম ] সঙ্গে তাঁর দুনিয়ার হায়াতে সাক্ষাৎ করলে বরকত পাওয়া যায় – তাঁর ওফাতের পরে, তাঁর কবর জিয়ারত করলেও সেই বরকত পাওয়া যায়! এ উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েজ। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামএর ঐ হাদীস শরীফ কোনোভাবেই এর প্রতিবন্ধক নয় – যেখানে তিনি ইরশাদ করেন : মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা ও মসজিদে নবভী – এ ৩টি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশে সফর করা মুসাফিরের জন্যে সঙ্গত নয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস:১১৬০৯; ইহইয়াউ ’উলূমিদ্দীন, সফর অধ্যায়)
ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার শরীফের বরকত সম্পর্কে নিজের পরীক্ষিত আমল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “আমি ইমাম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির উসীলায় বরকত লাভ করি এবং প্রতিদিন তাঁর রওযা জিয়ারত করি। যখন আমার কোনো প্রয়োজন বা সমস্যা হয় – তখন আমি দু’রাকাত নামায আদায় করে তাঁর রওযার পাশে দাঁড়িয়ে হাজত (প্রয়োজন) পূরণের জন্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি। এরপরে আমি সেখান থেকে ফিরতে না ফিরতেই আমার হাজত পূরণ হয়ে যায়!” (তারিখে বাগদাদ, ১/১২৩)
সূধী! নিঃসন্দেহে আল্লাহু তায়ালা তাঁদেরকে দুনিয়াবাসীদের সাহায্য- সহযোগিতা করার ক্ষমতা দান করেছেন। যেমন: মুত্যুর স্বাদ নিয়েও হযরত মূসা
আলাইহিস সালাম পবিত্র মীরাজের রাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ করার পেছনে উম্মতে মুহাম্মাদীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে ওকালতি করে তথা মুখ্য ভূমিকা পালন করে প্রমাণ করেছেন যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম মৃত্যুর স্বাদ নিয়েও শুধু জীবিতই নন, বরং তাঁরা দুনিয়ার মানুষের অফুরন্ত উপকার করতে পারেন! এমনকি আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে ইসলামী শরীয়তের মৌলিক বিষয়ে (নামাজে) হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা পর্যন্ত দান করেছেন, তাই না? যারা বলেন: “ওটা মূসা নবীর বিশেষ মু’জিজা ছিলো” – তাদের উদ্দেশে বলছি, কোনো নবীর রওজা শরীফ জিয়ারত করার সময়েও আমরা এ নিয়ত করি বা আকীদা রাখি যে, তিনি তাঁর ঐ বিশেষ মু’জিজা দিয়েই আমাদের সাহায্য করবেন।
১০ই জুলাই ১৯৮৪ ইংরেজী শাহাদাত বরণকারী আওলাদে রাসুল হাদীয়ে দ্বীনে মিল্লাত হুজুর সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ (রাহঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া মাদ্রাসার দাখিল ১০ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত ১৬ বছরের মর্দে মুজাহিদ আবদুল হালিমের সাথে বেশ কয়েকবার একজন নামধারী মুফাচ্ছিরের বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে শিবির কর্মীদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। প্রতিবারেই হালিম তাদের সমস্ত যুক্তি খন্ডন করে দিতেন। সম্মুখ বিতর্কে এবং আদর্শিক কায়দায় পরাজিত হয়ে শিবির কর্মীরা পরিকল্পনা নেয় হত্যার। সেদিন হালিম লেখাপড়া সেরে নিজ বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঐ রাতেই নব্য এজিদ ঘাতক মাহমুদুল হাছান নামক শিবির কৰ্মী আবদুল হালিমের নিষ্পাপ ও কোমল গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে শহীদ করেছে। হত্যার পর ঘাতক সারারাত মাদ্রাসার বারান্দায় ঘুরেছে। পরদিন ফজরের আযানের ধ্বণিতে ঘুম ভাঙ্গলো সহপাঠীদের। ছাত্রসেনার কর্মী হালিমের রক্তাক্ত নিথর দেহ মাটিতে। খুনীর অনুসন্ধানে একদমই বেগ পেতে হয় নি। মাদরাসার পুকুর পাড়ের বসা ছিল ঘাতক শিবির কর্মী আহমদুল্লাহ। মধ্যরাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও পালায় নি কেন?; এমন জিজ্ঞাসার প্রত্তুরে ঘাতক আহমদুল্লাহ তথ্যে বিস্ময়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে উঠলো পুলিশ কর্তা সমেত উপস্থিত সবার। সে বললো, আমি যখনি পালাতে চেষ্টা করেছি। এই মাদরাসায় যে পীর সাহেব পাকিস্তান থেকে আসে, তিনি আমাকে বারংবার বাঁধা দিচ্ছিল। অথচ হুযুর গাউছে জামান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কয়েক হাজার মাইল দূরে সিরিকোট শরীফে অবস্থান করছে। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।
একটি জড় পদার্থ তথা কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) যদি মহাকাশ থেকে একই সময়ে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে কোনো কিছু সম্প্রচার করতে পারে তথা মানবজাতিকে সাহায্য করতে পারে কিংবা বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যদি তাদের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলোর কল্যাণে সুদূর মহাকাশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দাগিরি বা নজরদারি কিংবা মনিটরিং করতে পারে – তাহলে, নবী-ওলীগণ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে যাঁর যাঁর রওজা ও মাজার শরীফে থেকে কিংবা সেখানে থেকে অতীন্দ্রিয় পন্থায় বের হয়ে মুসলিম উম্মাহর হাল-হাকীকত পর্যবেক্ষণ, তাদের আবেদন শ্রবণ ও গ্রহণ এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পাবেন না কেন? তাঁদের চেয়ে কি ঐ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলো তথা জড় পদার্থগুলোর ক্ষমতা বেশি (মায়াজাল্লা)? তাছাড়া, ঐ জড় পদার্থের ঐ ব্যাপক ও বাস্তব ক্ষমতাকে (world wide broadcasting power or networking power) স্বীকার করলে যদি শিরক না হয় – তাহলে, নবী-ওলীগণের অতীন্দ্রিয় বা আধ্যাত্মিক ব্যাপক ক্ষমতাকে স্বীকার করলে শিরক হবে কেন? কাজেই, কোনো রওজা শরীফে গিয়ে বা সরাসরি নবীগণের কাছে সাহায্য চাওয়াকে যারা শিরক বলে – তারা আসলে শিরকের সংজ্ঞা বা মর্মই জানে না, বরং তারাই গোমরাহী ও অজ্ঞতায় সাংঘাতিকভাবে নিমজ্জিত।
লিখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা।
খতিব,রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ মসজিদ
কোন মন্তব্য নেই