Header Ads

Header ADS

মুসাফির মদিনার পানে


মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
উস কে তুফাইল হজ্ব ভি খোদা নে করওয়া দিয়ে
আসলে মুরাদ হাজিরী উস পাক দর কি হে।

নিশ্চয় যাদের অন্তরে মদীনায় যাওয়ার আগ্রহ থাকে, তাদের প্রতি হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  দয়া অবশ্যই হয় এবং সামর্থ্য না থাকা স্বত্বেও তাদের আশ্চার্য জনক ভাবে হাজিরীর সৌভাগ্য নসীব হয়ে যায়, বরং যদি তা এভাবে বলা হয়, তবে ভূল হবে না যে, মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা হলো ঐ পবিত্র স্থান যেখানে লোকেরা নিজে থেকে যায় না বরং ডাকা হয়। আসুন! এবার মদীনার প্রেম অন্তরে সৃষ্টি করার জন্য মদীনা মুনাওয়ারা এবং পবিত্র রওযায় উপস্থিতির ফযীলত সম্বলিত প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিনটি হাদীস শরীফ শ্রবণ করি: ১. মদীনা মুনাওয়ারা লোকদেরকে এমনভাবে পাক ও পবিত্র করে দেয়, যেমন চুল্লি লোহার মরিচা পরিষ্কার করে দেয়। (সহিহ মুসলিম, ৭১৭ পৃ:, হাদীস :১৩৮২) ২. যে ব্যক্তি আমার (কবরের) যিয়ারতের জন্য এলো এবং আমার যিয়ারত করা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য না থাকে, তবে আমার দায়িত্ব হলো যে, কিয়ামতের দিন তাকে শাফায়াত করা। ( মু’জামু কবীর , ১২/২২৫, হাদীস :১৩১৪৯) ৩. যে আমার জাহেরী (প্রকাশ্য) ওফাতের পর হজ্ব করলো, অতঃপর আমার কবর মুবারক যিয়ারত করলো তবে যেনো সে আমার জীবদ্দশায় আমার যিয়ারত করলো। (দারে কুতনী, ২/৩৫১, হাদীস :২৬৬৭) 
শায়খ শুয়াইব হারিফিশ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রওযা মুবারকের যিয়ারতকারীর জন্য দশটি কারামাত তথা সম্মান রয়েছে: (১) তার উচ্চ মর্যাদা হবে। (২) উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হবে। (৩) তার চাহিদা পূরণ হবে। (৪) তার দান করার তৌফিক অর্জিত হবে। (৫) সে ধ্বংস ও নিংস্ব হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে। (৬) দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র হবে। (৭) তার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। (৮) দূর্ঘটনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। (৯) সে আখিরাতে উত্তম প্রতিদান পাবে এবং (১০) মহান আল্লাহ আয়ালার অনুগ্রহ পাবে। (আর রওযুল ফায়েক, ৩০৭-৩০৮ পৃ) 
ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ আহমদ রযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দ্বিতীয় হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিন্তু তিনি বললেন: “রোগ বৃদ্ধি হওয়ার চেয়ে আমার রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হওয়ার চিন্তাটায় বেশি হচ্ছে।” যখন জ্বরের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে লাগলো ঐ অবস্থায় আমি মদীনায় উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা পোষাণ করলাম। ওলামায়ে কিরামগণ বাঁধা দিতে লাগলেন, প্রথমে তারা এটা বললেন যে, আপনার অবস্থা তো ভাল না এবং মদীনার সফর হলো দীর্ঘ। আমি আরয করলাম: “যদি সত্যি জিজ্ঞাসা করেন তবে হাজিরীর মূল উদ্দেশ্য তো তায়্যিবার যিয়ারতই, দুই বারই এই নিয়্যতেই ঘর থেকে বের হয়েছি, (মাআযাল্লাহ)  যদি এটি না হয় তবে হজ্বের স্বাদই তো নাই।” যখন ইমাম আলা হযরত রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র অবস্থার প্রতিকুলতার কারণে ওলামায়ে কিরামের বাঁধা বৃদ্ধি পেতে লাগলো তখন তিনি এই হাদীস শরীফ পাঠ করলেন: যে ব্যক্তি হজ্ব করলো, অথচ আমার যিয়ারত করলো না, সে আমার প্রতি নিষ্ঠুরতা করলো।” (কাশফুল খিফা, ২/২১৮, হাদীস :২৪৫৮) ওলামায়ে কিরাম বললেন: আপনি তো একবার যিয়ারত করেছেন। তখন তিনি বললেন: “আমার দৃষ্টিতে হাদীস শরীফটির মর্ম এই নয় যে, জীবনে যতবারই হজ্ব করবে, যিয়ারত কেবল একবারই যথেষ্ট, বরং প্রতি হজ্বেই যিয়ারত করা আবশ্যক। এবার আপনারা দোয়া করুন যে, আমি যেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হতে পারি। রওযায়ে আকদাসে এক নজর পড়ে যাক, যদিওবা তখনই নিঃশ্বাস বেরিয়ে যায়।” ( আশিকানে রাসূলের ১৩০ টি ঘটনা, ১১৩ পৃ:) 
আমাদের মদীনার স্মরণে সর্বদা ছটফট করে নিজে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা এবং অধিকহারে সালাত ও সালাম পাঠ করার পাশাপাশি প্রতি বছর হজ্বের মৌসুমে হজ্ব সম্পাদনকারী ও মদীনার যিয়ারতকারীদের মাধ্যমে বিশেষভাবে নিজের সালাম প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পৌঁছানো উচিৎ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যখন কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা আমার রূহকে আমার মাঝে ফিরিয়ে দেন, এমনকি আমি তার সালামের উত্তর প্রদান করি। (সুনানে আবু দাউদ, ২/৩১৫, হাদীস :২০৪১) হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীসে শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে রূহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোযোগ, ঐ প্রাণ নয় যা দ্বারা জীবন প্রতিষ্ঠিত, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো স্থায়ীভাবে (সর্বদা প্রাণ সহকারে) জীবিত। এই হাদীসের উদ্দেশ্য এটাও নয় যে, আমি এমনিতে তো নিষ্প্রাণ থাকি, কারো দরূদ পাঠ করাতে জীবিত হয়ে উত্তর প্রদান করি, অন্যথায় সর্বদা প্রতিটি মুহুর্তে হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি লাখো লাখ দরূদ শরীফ পাঠ করা হচ্ছে, এতে আবশ্যক যে, সর্বদা লাখোবার নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ বের ও প্রবেশ হতে থাকবে। মনে রাখবেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি মুহুর্তে  অসংখ্য দরূদ পাঠকারীর দিকে সমান মনোযোগ রাখেন, সবার সালামের উত্তর প্রদান করেন, যেমন সূর্য একই সময়ে পুরো দেশ ব্যাপী কিংবা ভুখন্ডে কিরণ দেয়, তেমনিভাবে নবুয়তের আকাশের সূর্যও একই সময়ে সবার দরূদ-সালাম শুনেন এবং এর উত্তরও প্রদান করেন, কিন্তু এতে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন কষ্টও অনুভূত হয়না, কেনই বা হবে, তিনি তো আল্লাহ তায়ালার পবিত্র স্বত্বার প্রকাশস্থল, যেমন রব তায়ালা একই সময়ে সবার দোয়া শুনেন তেমনিভাবেই তাঁর মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁরই প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একই সময়ে অসংখ্য আশিকের দরূদ ও সালাম শুনেন। (মিরাতুল মানাজিহ, ২/১০১) 
মারওয়ান তার শাসনামলে একদিন কোথাও যাচ্ছিলো, তখন সে কোন ব্যক্তিকে দেখলো যে, ঐ ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী কবরে নিজের মুখ লাগিয়ে রেখেছেন। মারওয়ান বললো: তুমি কি জান যে, তুমি কী করছ? যখন তিনি মারওয়ানের দিকে তাকালেন তখন দেখা গেলো যে, তিনি ছিলেন হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বললেন: হ্যাঁ, আমি কোন পাথরের নিকট আসিনি, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়েছি। আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি যে, দ্বীনের জন্য ততক্ষন পর্যন্ত অশ্রু বিসর্জন করবে না, যতদিন পর্যন্ত এর দায়িত্ব উপযুক্ত লোকেদের নিকট থাকবে। দ্বীনের জন্য তখনই অশ্রু বিসর্জন করো, যখন এর দায়িত্ব অনুপযুক্তদের নিকট হবে। (মুসনাদে আহমদ , ৯/১৪৮, হাদীস :২৩৬৪৬) 
উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা জানা গেলো যে, সাহাবায়ে কিরামগণ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম প্রিয় আক্বা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতিশয় ভালবাসা পোষণ করতেন এবং তাদের এই আক্বীদা ছিলো যে, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নূরানী কবরে জীবিত, তাইতো হযরত সায়্যিদুনা আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মারওয়ানকে খুবই কড়া ভাষায় উত্তর দিলেন যে, আমি কোন পাথরের নিকট আসিনি, যা নিষ্প্রাণ, শুনে না, বলতে পারে না বরং আমি তো আল্লাহ তায়ালার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়েছি, যিনি আজও তাঁর নূরানী কবরে উৎকর্ষময় জীবন সহকারে বিদ্যমান আছেন। সুতরাং আমাদেরও শয়তানী কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে এই আক্বীদার উপর অটল থাকা উচিৎ যে, শুধু হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বরং সকল আম্বিয়ায়ে কিরামরাও আলাইহিমুস সালাম তাঁদের কবরে জীবিত। নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: আম্বিয়ায়ে কিরামগণ আলাইহিমুস সালাম তাঁদের কবরে জীবিত এবং নামাযও আদায় করে থাকেন।” (মুসনাদে আনাস বিন মালিক,৩/২১৬, হাদীস :৩৪১২) অপর এক হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে:  নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আম্বিয়ায়ে কিরামদের আলাইহিমুস সালাম শরীরকে খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালার নবীগণ জীবিত, তাঁদের রিযিক দেয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ২/২৯১, হাদীস :১৬৩৭) 
ইমামুল আরেফিন হযরত সৈয়্যদ আহমদ কবীর রেফায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন হজ্ব থেকে অবসর হয়ে মদীনা মুনাওয়ারায় নূরানী  রওযায় উপস্থি হয়ে আরবীতে এই দু’টি লাইন পাঠ করেন: 

فِىْ حَالَةِ الْبُعْدِ   رُحِي  کُنْتُ اُرْسِلُهَا   تُقَبِّلُ الْاَرْضَ   عَنِّىْ فَهِيَ نَائِبَتِي 
وَهٰذِہٖ دَوْلَةُ الْاَشْبَاحِ قَدْ حَضَرَتْ     فَامْدُدْ يَمِينِكَ كَي تَحظى بِهَا شَفَتَى 

অর্থাৎ দূরে থাকাবস্থায় আমি আমার রূহকে আপনার পবিত্র খেদমতে প্রেরণ করতাম তখন তা আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হয়ে পবিত্র আস্তানা শরীফকে চুম্বন করতো। আর এখন স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়েছি, সাক্ষাতের পালা এসেছে। তাই আপনার পবিত্র হাত মুবারক প্রসারিত করে দিন, আমার দুখানি ঠোঁট যেন হাত মুবারক  চুম্বন করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। যখনই এই চরন শেষ হলো নূরাণী কবর হতে হাত মুবারক প্রকাশিত হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মুবারক  চুম্বন করার সৌভাগ্য অর্জন করে নিলেন।-(আল হাভী লিল ফাতোয়া, ২/৩১৪) 
এ প্রসঙ্গে হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন  রহমাতুল্লাহি আলাইহি  মদীনার সফরের এক ঈমান উদ্দীপক ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: “আমি (১৩৯০ হিজরিতে হজ্ব ও মদীনায়ে তৈয়বার যিয়ারতের সময়ে) মদীনা মুনাওয়ারায় হোচট খেয়ে পড়লে ডান হাতের কব্জির হাঁড় ভেঙে যায়, ব্যথা যখন বৃদ্ধি পেল তখন আমি তা চুমু দিয়ে বললাম: “হে মদীনার ব্যথা, তোমার স্থান আমার হৃদয়ে, তুমি তো আমার প্রিয় হাবীবের দরজা থেকে পাওয়া।” (তিনি আরো বলেন) ব্যথা তো তখন থেকেই উধাও হয়ে গেলো, কিন্তু হাত নাড়াতে পারছিলাম না, সতের দিন পরে সরকারি হাসপাতালে এক্সরে করালাম, দেখা গেলো, হাঁড় দুই টুকরো হয়ে সামান্য ফাঁক হয়ে গেছে, কিন্তু আমি চিকিৎসা করালাম না। পরে ধীরে ধীরে হাতও কাজ করতে শুরু করল, মদীনা মুনাওয়ারার সেই হাসপাতালের ডাক্তার মুহাম্মদ ইসমাঈল বললো: এটি বিশেষ চমকই বটে। কেননা ডাক্তারি শাস্ত্র মতে, এই হাত কাজই করতে পারে না। সেই এক্সরে এখনো আমার নিকট আছে, হাঁড় এখনো ভাঙাই রয়েছে, এই ভাঙা হাতেই তাফসীর লিখছি, আমি ভাঙা হাতটির এই চিকিৎসাই করিয়েছি যে, মহান আস্তানায় দাঁড়িয়ে আরয করলাম: “হুযুর! আমার হাত ভেঙে গেছে, হে আব্দুল্লাহ্ বিন আতীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাঙা হাটু জোড়া দানকারী! হে মুয়াজ বিন আফরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাঙা বাহু জোড়া দানকারী! আমার ভাঙা হাতটি জুড়ে দিন।”(তাফসীরে নঈমী, ৯/৩৮৮) 
মদীনা মুনাওয়ারায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযার সামনে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। আহ! আমাদের জীবনেও সেই মুবারক মুহুর্ত আসতো। মনে রাখবেন, যার এই দরবারের উপিস্থিতির সৌভাগ্যে নসীব হয়েছে তার জন্য আবশ্যক যে, এই মহান দরবারের আদবের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা, কেননা সামান্যতম অসতর্কতাই কঠিন বঞ্চনার কারণ হতে পারে। আসুন! মদীনার সফর এবং রওযায়ে আকদাসের উপস্থিতির কিছু আদব শ্রবণ করি। 
আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আযমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওযায় উপস্থিত হওয়ার আদব বর্ণনা করে বলেন: উপস্থিতিতে শুধুমাত্র পবিত্র যিয়ারতেরই নিয়্যত করুন। হজ্ব যদি ফরয হয় তবে হজ্ব করেই মদীনা মুনাওয়ারায় উপস্থিত হোন। হ্যাঁ! যদি মদীনা মুনাওয়ারা পথে হয় তবে যিয়ারত করা ছাড়া হজ্ব করতে যাওয়া কঠিন বঞ্চনা ও অন্তর কঠোরতার কারণ। আর এই উপস্থিতিকে হজ্ব কবুলের এবং দ্বীন ও দুনিয়ার  সৌভাগ্যের মাধ্যম ও ওসীলা বানান। যদি নফল হজ্ব হয় তবে অধিকার রয়েছে যে, প্রথমে হজ্ব থেকে পাক পবিত্র হয়ে মাহবুবের দরবারে উপস্থিত হবে কিংবা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে প্রথমে উপস্থিত হয়ে সেই উপস্থিতিকে হজ্বের মকবুলিয়্যত ও নূরানীয়্যতের ওসীলা বানাবে। সারা রাস্তায় দরূদ ও যিকিরে লিপ্ত থাকবে এবং মদীনা মুনাওয়ারা যতই নিকটে আসবে, আগ্রহ ও আকাক্সক্ষা আরো বৃদ্ধি করবে। যখন মদীনার হেরেম আসবে, উত্তম হলো পায়ে হেঁটে, কান্না করে, মাথা নত করে, দৃষ্টিকে নীচু করে, অধিকহারে দরূদ শরীফ পাঠ করতে করতে এবং সম্ভব হলে খালি পায়ে চলা। যখন নূরানী গম্বুজ দৃষ্টি গোচর হবে, অধিক হারে দরূদ ও সালাম পাঠ করবে। মসজিদে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে ঐসকল প্রয়োজনীয়তা থেকে অবসর হয়ে যাবে, যা দ্বারা মন না লাগার কারণ হয়, খুবই তাড়াতাড়ি অবসর হবে, এছাড়া কোন অযথা কথাবার্তায় লিপ্ত হবে না, দ্রুত ওযু ও মিসওয়াক করবে  এবং গোসল করা উত্তম। সাদা পোষাক পরিধান করবে, আর তা নতুন হলে উত্তম। সুরমা ও সুগন্ধি লাগাবে এবং মেশক উত্তম। এবার দ্রুত পবিত্র আস্তানার দিকে অত্যন্ত বিনয় ও ন¤্রতার সহিত মনোযোগি হবে, কান্না না এলে তবে কান্নার মতো ভঙ্গি করবে এবং মন থেকে কান্না করার চেষ্টা করবে। আর নিজের নিঃসঙ্গ অন্তর দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি  অনুরোধ করবে। মসজিদে নববী শরীফে উপস্থিত হয়ে প্রথমে সালাত ও সালাম আরয করবে, অতঃপর একটু অপেক্ষা করবে, যেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাজিরীর অনুমতি প্রার্থনা করছে, অতঃপর বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম  বলে ডান পা প্রথমে রেখে একেবারে আদব সহকারে প্রবেশ করবে। চোখ, কান, মুখ, হাত, পা, অন্তর সবকিছুকে অন্য খেয়াল থেকে পবিত্র করে নিবে, পবিত্র মসজিদের নকশা ও কারুকাজের দিকে তাকাবে না। যদি এমন কেউ সামনে এসে যায় যার সাথে সালাম ও কথাবার্তা বলা প্রয়োজন, তবে যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যাবে অন্যথায় প্রয়োজেনের অতিরিক্ত বলবে না, তবুও অন্তরকে হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে রাখবে। কখনোই মসজিদে নববীতে কোন শব্দকে চিৎকার করে বের করবেন না। বিশ্বাস রাখবে যে, হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিকার ভাবে দুনিয়াবী শারীরিক জীবন দ্বারা তেমনি জীবিত, যেমনটি ওফাত শরীফের পূর্বে ছিলেন, তাঁর এবং সকল আম্বিয়ায়ে কিরামের মৃত্যু শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার ওয়াদাকে সত্যে পরিনত করতে মুহুর্তের জন্যই ছিলো। (বাহারে শরীয়ত, ১ম অংশ, ৬/১২২২-১২২৩) এবার আদব ও আগ্রহ সহকারে গর্দান ঝুকিয়ে, দৃষ্টিকে নিচু করে, অশ্রুসিক্ত করে, কাঁপতে কাঁপতে, গুনাহের প্রতি লজ্জিত হয়ে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি আশা রেখে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কদম শরীফের দিক দিয়ে সোনালী জালির সামনে রওযা শরীফে উপস্থিত হবে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নূরানী মাযারে কিবলামূখী অবস্থান করছেন, সুতরাং কদম মুবারকের দিক দিয়ে যদি মুসাফির উপস্থিত হয় তবে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কৃপা দৃষ্টি সোজাসুজি তার দিকেই হবে এবং এই বিষয়টি অশেষ আগ্রহান্বিত হওয়ার পাশাপাশি তার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যের কারণও। কিবলাকে পিছনে দিয়ে কমপক্ষে চার হাত (দু’গজ) দূরে নামাযের ন্যায় হাত বেঁধে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুরানী চেহারার দিকে হয়ে দাঁড়াবে, কেননা ফতোওয়ায়ে আলমগীরি ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এভাবে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে নামাযে দন্ডায়মান হয়। মনে রাখবেন! হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরানী মাযারে একেবারে প্রকাশ্য জীবনের ন্যায় জীবিত এবং উপস্থিত ব্যক্তিকেও দেখছেন বরং যিয়ারতকারীর মনে যে খেয়াল আসছে সে সম্পর্কেও অবহিত। খবরদার! জালি মুবারককে চুমু দেয়া বা হাত লাগানো থেকে বিরত থাকবে, কেননা তা আদবের পরিপন্থি; আমাদের হাত জালি মুবারককে স্পশ করার উপযুক্ত নয়, সুতরাং চার হাত (অর্থাৎ দু’গজ) দূরেই থাকবে, আদব এবং আগ্রহের পাশাপাশি কাতর কন্ঠে এই শব্দাবলী সহকারে সালাম আরয করবে: 
اَلسَّلَامُ عَلَيْکَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ اَلسَّلَامُ عَلَيْکَ يَارَسُوْلَ اللّٰهِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْکَ يَاخَيْرَ خَلْقِ اللّٰهِ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْکَ يَاشَفِيْعَ الْمُذْنِبِيْنَ ـ اَلسَّلَامُ عَلَيْکَ وعلى َاٰلِکَ وَاَصْحَابِکَ وَاُمَّتکَ اجَمَعِيْنَ 

অর্থাৎ হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত এবং বরকত হোক। হে আল্লাহ তায়ালার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে আল্লাহ তায়ালার সকল সৃষ্টি থেকে উত্তম! আপনার প্রতি সালাম। হে গুনাহগারদের শাফায়াতকারী! আপনার প্রতি সালাম। আপনার প্রতি, আপনার পরিবার পরিজন ও সাহাবাদের প্রতি এবং আপনার সকল উম্মতের প্রতি সালাম। 
কিন্তু মনে রাখবে যে, সালাম আরয করার সময় আওয়াজ বেশি উচ্চ এবং কঠোর যেনো না হয়, কেননা আমলই নষ্ট হয়ে যাবে এবং একেবারে ধীরেও যেনো না হয় বরং মধ্যম আওয়াজের হওয়া উচিৎ। (বাহারে শরীয়ত, ৬ষ্ট অংশ, ১/১২২৪-১২২৬) নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিজের এবং আপন পিতা-মাতা, পীর, ওস্তাদ, সন্তান, আত্মীয়, বন্ধু এবং সকল মুসলমানের জন্য শাফায়াতের প্রার্থণা করুন, বারবার আরয করবে: 
اَسْئَلُکَ الشَّفَاعَةَ يَارَ سوْلَ اللهِ 
(ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনার শাফায়াতের ভিখারী)। 
অতঃপর যদি কেউ সালাম আরয করার ওসীয়ত করে তা পূরণ করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মদীনা তায়্যিবার হাজিরী নসীব হয়, একটি নিশ্বাসও অযথা নষ্ট করবে না, প্রয়োজন ছাড়া অধিকাংশ সময় মসজিদ শরীফে পবিত্রাবস্থায় উপস্থিত থাকবে, নামায ও তিলাওয়াত এবং দরূদ পাঠ করে সময় অতিবাহিত করবে, দুনিয়াবী কথাবার্তা শুধু এখানে নয় বরং যেকোন মসজিদে করা উচিৎ নয়। মদীনা তায়্যিবায় রোযা নসীব হলে, বিশেষতঃ গরমের মৌসুমে তবে কতই না উত্তম যে, এতে শাফাআতের ওয়াদা রয়েছে। এখানে প্রত্যেক নেকীই পঞ্চাশ হাজার (৫০,০০০) লিখা হয়, সুতরাং ইবাদত করার বেশী বেশী চেষ্টা করবে, পানাহার অবশ্যই কমিয়ে দিবে এবং যতটুকু সম্ভব সদকা করবে। নূরানী রওযায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করা ইবাদত, যেমনিভাবে পবিত্র কাবা বা কোরআনে করীম দেখা ইবাদত, তাই আদব সহকারে তা অধিকহারে করবে এবং দরূদ ও সালাম আরয করতে থাকবে। দিনে পাঁচবার বা কমপক্ষে সকাল-সন্ধ্যা রওযা শরীফে সালাম আরয করার জন্য উপস্থিত হবে। শহরের মধ্যে বা শহরের বাইরের যেখান থেকেই সবুজ গুম্বদের উপর দৃষ্টি পড়বে, দ্রুত হাত বেঁধে সেদিকে মুখ করে সালাত ও সালাম আরয করবে, এরূপ করা ছাড়া কখনো পথ অতিμম করবে না, কেননা এটা আদবের খেলাফ। রওযা শরীফের দিকে কখনোই পিঠ করবে না এবং যথাসম্ভব নামাযেও এমন স্থানে দাঁড়াবে না, যেখানে পিঠ করতে হয়। নূরানী রওযার তাওয়াফ করবে না, সিজদা করবে না, এর সামনে এতটুকু ঝুঁকবে না যে, রুকুর সমান হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ এর সম্মান তাঁর আনুগত্যের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। আর নূরানী রওযার সিজদা ও তাওয়াফ করা বা এর সামনে রুকুর সমান নত হওয়া রাসূলের আনুগত্যের পরিপন্থি। ( বাহারে শরীয়ত, ১ম অংশ, ৬/১২২৫-১২২৮ পৃ:)  

মুসাফির চল মদীনা চল, মুসাফির চল মদীনা চল
আজি নহে তো কাল, মুসাফির চল মদীনা চল।

লিখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা।
খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ মসজিদ 

মুসাফির মদীনার পানে - দৈনিক পূর্বদেশ
dailypurbodesh.com



কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.