Header Ads

Header ADS

জুমার খুতবা-৬ : ন্যায়পরায়ণতার প্রতিদান



মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম


পুরস্কার চায় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ পুরস্কার পাওয়ার লোক দুই ধরনের। কেউ নগদ পুরস্কার পেতে চায়। আর একদল রয়েছে যারা দুনিয়ার ইবাদতের বিনিময়ে আখিরাতে পুরস্কার পেতে চায়। তারা আখিরাতের পুরস্কারের আশায় দুনিয়াতে কাজ-কর্ম করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে। আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করেন। কর্মে ন্যায়পরায়ণ হলে তার  পুরস্কার কি হবে তা তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম- ন্যয়পরায়ণতার ঘোষণায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-  
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ 
অর্থাৎ আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।(সূরা নাহল: আয়াত-90)
 অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وَأَقْسِطُوا إنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থাৎ, সুবিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা হুজুরাত, আয়াত:৯)
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “--এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নেতারা (শাসক গোষ্ঠী ও ইমামগণ) আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিধান (ও ফায়সালা) না দেয় এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা বরণ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাদের মাঝে গৃহদ্বন্দ্ব বহাল রাখেন।” (ইবনে মাজাহ ৪০১৯, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১০৫৫০, সহীহ তারগীব ৭৫৯ নং)

আবূ হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি বিচারক-পদ গ্রহণ করল অথবা যাকে লোকেদের (কাযী বা) বিচারক নিযুক্ত করা হল, তাকে যেন বিনা ছুরিতে যবাই করা হল।” অন্য বর্ণনায় শব্দ ভিন্ন অর্থ একই (আবূ দাউদ ৩৫৭১, তিরমিযী ১৩২৫, ইবনে মাজাহ ২৩০৮, হাকেম ৪/৯১, সহীহুল জামে’ ৬৫৯৪ নং)

আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “এই নেতৃত্ব থাকবে কুরাইশদের মাঝে। যতক্ষণ তাদের কাছে দয়া ভিক্ষা করা হলে তারা দয়া করবে, বিচার করলে ইনসাফ করবে, বিতরণ করলে ন্যায়ভাবে করবে। তাদের মধ্যে যে তা করবে না, তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতামণ্ডলী এবং সমস্ত মানবমণ্ডলীর অভিশাপ। তার নিকট থেকে নফল-ফরয কোন ইবাদতই কবূল করা হবে না।” (আহমাদ ১২৯০০, ১৯৫৪১, আবূ য়্যা’লা ৪০৩২-৪০৩৩, ত্বাবারানী ৭২৪, সিঃ সহীহাহ ২৮৫৮ নং)

তাফসিরে ইবনে কাছিরে আদল বা ন্যায়পরায়ণতাকে ফরজ বলেছেন। পৃথিবীতে ঈমানের স্বীকৃতিই হলো সবচেয়ে বড় আদল বা ন্যায়পরায়ণ।কেমন ন্যায়পরায়ণ হওয়া চাই-হাদিসে এসেছে, পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ দায়িত্বশীল, কিয়ামতের দিবসে প্রতিটি মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যে ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালনে ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় দিবে তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। ক. পরিবারের কর্তাব্যক্তিকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।খ. সমাজের প্রতিনিধিকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে।গ. মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রধান পর্যন্ত সব ক্ষেত্রের দায়িত্বশীলকে ন্যায়পরায়ণ হতে হবে। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।ন্যায়পরায়ণ হলে-দায়িত্বে ন্যায়পরায়ণ হলে তাদের পুরস্কার ঘোষণা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কঠিন হাশরের দিনে যখন মহান আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোথাও কোন ছায়া থাকবে না তখন মাত্র সাত শ্রেণীর মানুষ আল্লাহ তায়ালার আরশের নিচে ছায়া পাবে তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছে, ন্যায়পরায়র শাসক বাদশা বা বিচারক। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই যারা ইনসাফ ও ন্যায়বিচার করে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে তারা নূরের মিম্বরে আসন গ্রহণ করবে। এরা হচ্ছে এমন লোক যারা তাদের বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে এবং যেসব দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করা হয় সেসব বিষয়ে ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার করে’। (সহিহ মুসলিম) হজরত ইয়াদ ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের অধিকারী হবে তিন শ্রেণীর লোক, প্রথমত- ন্যায়বিচারক বা শাসক, যাকে তাওফিক দান করা হয়েছে; দ্বিতীয়ত- কোমল হ্যদয় ও নরম দিল লোক যার অন্তরে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম ভাইদের প্রতি অতিশয় কোমল ও নরম আর তৃতীয়ত- যে লোক শরীর ও মনের দিক থেকে পুতপবিত্র, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী ও সন্তান বিশিষ্ট তথা সংসারী’। (সহিহ মুসলিম)
পরিশেষে...প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিটি কাজে যখন ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে, তখন সমাজে শান্তি, স্বস্তি ফিরে আসবে। শান্তির সুবাতাস বইবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে। আর আখিরাতের ভয়াবহ সময়ে আল্লাহ তাআলা দান করবেন আরশের ছায়া। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে ন্যায় কাজ করে কিয়ামতের ভয়াবহ সময়ে আরশের ছায়া দান করুন। আমিন, বিজাহিন নবিয়িল আমীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম। 

কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.