বিশ্বনবীর (দ.) অনুপম অবয়ব
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা।
নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তায়ালা সমস্ত উত্তম গুনাবলী দ্বারা সজ্জিত করেছেন এবং সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পবিত্র সত্ত্ব¡ার জন্যই সমগ্র জগৎকে সম্মানিত করেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্য থেকে পুরো দুনিয়াকে সশোভিত করেছেন, তাইতো আজ হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক নূর সারা দুনিয়ায় চমকাচ্ছে, আল্লাহ্ তায়ালা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুবাসে পুরো জগতকে সুবাসিত করে দিয়েছেন। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কতই সুন্দর বলেছেন: তেরে খূলক কো হক নে আযীম কাহা, তেরে খিলক কো হক নে জামিল কিয়া, কোয়ি তুঝ সা হুয়া হে না হো’গা শাহা, তেরে খালিকে হুসন ও আদা কি কসম। (হাদায়িকে বখশীশ, ৮০ পৃ .) একবার কিছু অমুসলিম আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে উপস্থিত হলো এবং তাঁকে আরয করলো: হে আবুল হাসান! আপনার চাচার সন্তান (অর্থাৎ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর গুণাবলী বর্ণনা করুন! তখন তিনি বললেন: রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি লম্বা ছিলেন না এবং একেবারে খাঁটোও ছিলেন না, বরং মধ্যম আকৃতি থেকে একটু লম্বা ছিলেন, মোবারক শরীরের রঙ ছিলো লালচে মিশ্রিত সাদা, চুল মোবারক অনেক বেশি কৃষ্ণবর্ণ ছিলো না, বরং কিছুটা বμ ছিলো, যা কান পর্যন্ত ছিলো, প্রশস্ত কপাল, সুরমা খচিত চোখ, মুক্তা মতো সাদা দাঁত, খাড়া নাক, ঘাড় খুবই স্বচ্ছ যেনো রূপার পাত্র, যখন হাঁটতেন তখন মজবুতভাবে কদম রাখতেন, যেনো উঁচু স্থান থেকে নামছেন, যখন কারো দিকে মনযোগ দিতেন তখন পরিপূর্ণভাবে মনযোগ দিতেন, যখন দাঁড়াতেন তখন লোকদের চেয়ে উচ্চ মনে হতো এবং যখন বসতেন, তখনও সবার মাঝে অনন্য হতেন, যখন কথা বলতেন, তখন লোকদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করতো, যখন খুতবা দিতেন, তখন শ্রবণকারীদের মাঝে μন্দন শুরু হয়ে যেতো, মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালূ ও মেহেরবান, এতিমদের জন্য ¯েœহময় পিতার ন্যায়, বিধবাদের জন্য দয়ালূ ও ন¤্র, সবচেয়ে বেশি বাহাদুর, সবচেয়ে বেশি দানশীল এবং আলোকিত চেহারা মালিক ছিলেন, জুব্বা পরিধান করতেন, যবের রুটি আহার করতেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বালিশ ছিলো চামড়ার, যাতে খেজুরের গাছের আঁশ ভরা ছিলো, খাট ছিলো বাবলা গাছের, যা খেজুরের পাতার রশি দিয়ে বুনানো ছিলো, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’টি পাগড়ী ছিলো, একটিকে সাহাব আর অপরটিকে উকাব বলা হতো, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রয়োজনীয় বস্তুর মধ্যে তলোয়ার যুলফাকার, উটনী আদ্ববাআ, খচ্চর দুলদুল, গাধা ইয়াফুর, ঘোড়া বাহার, ছাগল বরকতা, লাঠি মামশুক এবং পতাকা “লিওয়াউল হামদ” নামে মনোনীত ছিলো, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটকে স্বয়ং নিজেই বাঁধতেন এবং সেটিকে খাবার দিতেন, কাপড়ে তালি লাগাতেন আর জুতার মেরামতও নিজেই করতেন। পরিপূর্ণ মুবারক আকৃতি বর্ণনা করার পর হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে এবং হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর তাঁর মতো আর কাউকে দেখিনি। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৬৫৭ ও ৩৬৫৮) হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: সাহাবায়ে কিরামগণ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো দেখবেই বা কিভাবে, আল্লাহ্ তায়ালা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় তো কাউকে সৃষ্টিই করেনি। (মিরাতুল মানাযিহ, ৮/৫৮) যেমনিভাবে নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উৎকর্ষময় চরিত্র দ্বিতীয় কারো নেই, তেমনিভাবে সমস্ত পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মাঝে তাঁর সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের ন্যায় আর কেউ নেই। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্ত্ব¡ায় সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যময়তার আধার ছিলেন, যাঁর দীদারে শুষ্ক ফুলের কলি সতেজ হয়ে উঠে, অন্ধকার অন্তর ঝলমল করতে থাকে, বিষন্ন হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। রাসূলের প্রত্যেক সাহাবীর এমন আশা ও আকাক্সক্ষা থাকতো যে, সর্বদা যেনো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী চেহারার যিয়ারত দ্বারা ধন্য হতে থাকে, এই কারণেই সাহাবায়ে কিরাম হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী চেহারার দীদার দ্বারা নিজের চোখকে শীতল এবং অন্তরকে প্রশান্তি দিতো আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার একটি ঝলক তাঁদের অন্তরের হাজারো সুখের আবেশ ছড়িয়ে দিতো। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা রাদি¦য়াল্লাহু আনহু রাসূলের যিয়ারতের সময় নিজের অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: যখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত দ্বারা ধন্য হতাম, তখন অন্তর খুশিতে দুলতে থাকতো এবং আমার চোখ শীতল হয়ে যেতো। (মুসনাদের ইমাম আহমদ, হাদীস নং-৭৯৩৭) আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি সুন্দর আর কাউকে দেখিনি, যেনো মনে হতো যে, সূর্য তাঁর চেহারায় প্রদক্ষিণ করছে। (মিশকাত, হাদীস নং-৫৭৯৫) অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইলো। নবীজি ইরশাদ করলেন: এভাবে দেখার কারণ কি? আরয করলো: হুযূর! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত! আপনার নূরানী চেহারার যিয়ারত দ্বারা (আমার অন্তর শীতল করছি) উৎফুল্লতা অনুভব করছি। (শিফা, ২/২০) বাস্তবেই প্রিয় মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা চাঁদের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর। কেননা, চাঁদ শুধু রাতেই চমকায়, আর এই চেহারা দিন রাত সর্বদাই চমকায়, চাঁদ শুধু তিনটি রাতেই তার আসল রূপ নিয়ে চমকায়, আর এই চেহারা সর্বদাই প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত চমকায়, চাঁদ শরীরের উপর চমকায়, আর এই চেহারা অন্তরের উপর চমকায়, চাঁদ শরীরকে আলোকিত করে আর এই চেহারা ঈমানকে আলোকিত করে, চাঁদ ছোট বড় হয়, আর এই চেহারা ছোট হওয়া থেকে নিরাপদ, চাঁদের গ্রহণ লাগে, আর এই চেহারায় কখনো গ্রহণ আসে না, চাঁদের সাথে শরীরিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত, আর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈমানের, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর হওয়া শুধু তাঁদের ভক্তিতেই নয়, বরং তা বাস্তবেই এরূপ, চাঁদ দেখে কেউ হাত কাটেনি, ইউসুফের সৌন্দর্য্য দেখে মিশরের মহিলারা নিজের হাত কেটে নিলো এবং ইউসুফের সৌন্দর্য্য থেকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য অনেক গুণ বেশি। ইমাম আলা হযরত বলেন: হুসনে ইউসুফ পে কাটি মিসর মে আঙ্গুশতে যানাঁ- সর কাটাতের হে তেরে নাম পে মরদানে আরব। (হাদায়িকে বখশীশ, ৫৭ পৃ.) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতির পাশাপাশি চরিত্রেও তাঁর মতো কেউ ছিলো না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো পরিপূর্ণ উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, শিশু হোক বা বড়, পুরুষ হোক বা মহিলা, বৃদ্ধ হোক বা যুবক, মালিক হোক বা গোলাম সবার সাথেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ এতোই উন্নত হতো যে, লোকেরা প্রভাবিত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করতো, তাঁর সৎচরিত্রের প্রতি প্রভাবিত হয়ে অপরিচিতরাও আপনজন মনে করতো, যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে দূরে থাকতো তারাও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাদিক ও আমীন (সত্যবাদী ও আমানতদার) বলতো, যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে লেনদেন করতো এবং অমুসলিম হতো, তারাও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণে প্রভাবিত হয়ে মুসলমান হয়ে যেতো এবং লেনদেনকারী মুসলমান হতো তবে, তাদের ঈমান সতেজ হয়ে যেতো এবং তারা তাঁর নামে নিজের প্রাণও উৎসর্গ করে দিতে কুন্ঠিত হতেন না। যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের এই অবস্থা, তবে সেই পবিত্র সত্ত্বার অবস্থা কিরূপ হবে, কিন্তু আফসোস! যেই মাহবুব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের আলোচনা শুনার জন্য আমরা মাহফিল সাজাই, নারায়ে রিসালতের শ্লোগানে মুখরিত করি, তবে কি সেই সত্ত্বার বাণীকে ছেড়ে আমরা অমুসলিমদের অনুসরন করবো? তবে কি সুন্নাতের পোষাক ছেড়ে নিত্য নতুন ফ্যাশনকে অনুসরন করবো? তবে কি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখের শীতলতা নামাযকে ছেড়ে দিবো? এখনো কি পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অসদাচরণ করবো?...... এটাই কি রাসূলের প্রতি ভালবাসার দাবি? প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ওয়াজিব। ইরশাদ হচ্ছে-আর আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশ পালন করো, যদি ঈমান রাখো’। (সূরা আনফাল, আয়াত :১) আর এটাই মুক্তির পথ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে আমার আদেশ মানলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করলো, সে অস্বীকারকারী হয়ে গেলো। (বুখারী, হাদীস নং-৭২৮০)
আরবি প্রভাষক, রাণীরহাট আল-আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদরাসা।
নূরে মুজাসসাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তায়ালা সমস্ত উত্তম গুনাবলী দ্বারা সজ্জিত করেছেন এবং সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পবিত্র সত্ত্ব¡ার জন্যই সমগ্র জগৎকে সম্মানিত করেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্য থেকে পুরো দুনিয়াকে সশোভিত করেছেন, তাইতো আজ হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারক নূর সারা দুনিয়ায় চমকাচ্ছে, আল্লাহ্ তায়ালা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুবাসে পুরো জগতকে সুবাসিত করে দিয়েছেন। আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি কতই সুন্দর বলেছেন: তেরে খূলক কো হক নে আযীম কাহা, তেরে খিলক কো হক নে জামিল কিয়া, কোয়ি তুঝ সা হুয়া হে না হো’গা শাহা, তেরে খালিকে হুসন ও আদা কি কসম। (হাদায়িকে বখশীশ, ৮০ পৃ .) একবার কিছু অমুসলিম আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে উপস্থিত হলো এবং তাঁকে আরয করলো: হে আবুল হাসান! আপনার চাচার সন্তান (অর্থাৎ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর গুণাবলী বর্ণনা করুন! তখন তিনি বললেন: রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি লম্বা ছিলেন না এবং একেবারে খাঁটোও ছিলেন না, বরং মধ্যম আকৃতি থেকে একটু লম্বা ছিলেন, মোবারক শরীরের রঙ ছিলো লালচে মিশ্রিত সাদা, চুল মোবারক অনেক বেশি কৃষ্ণবর্ণ ছিলো না, বরং কিছুটা বμ ছিলো, যা কান পর্যন্ত ছিলো, প্রশস্ত কপাল, সুরমা খচিত চোখ, মুক্তা মতো সাদা দাঁত, খাড়া নাক, ঘাড় খুবই স্বচ্ছ যেনো রূপার পাত্র, যখন হাঁটতেন তখন মজবুতভাবে কদম রাখতেন, যেনো উঁচু স্থান থেকে নামছেন, যখন কারো দিকে মনযোগ দিতেন তখন পরিপূর্ণভাবে মনযোগ দিতেন, যখন দাঁড়াতেন তখন লোকদের চেয়ে উচ্চ মনে হতো এবং যখন বসতেন, তখনও সবার মাঝে অনন্য হতেন, যখন কথা বলতেন, তখন লোকদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করতো, যখন খুতবা দিতেন, তখন শ্রবণকারীদের মাঝে μন্দন শুরু হয়ে যেতো, মানুষের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালূ ও মেহেরবান, এতিমদের জন্য ¯েœহময় পিতার ন্যায়, বিধবাদের জন্য দয়ালূ ও ন¤্র, সবচেয়ে বেশি বাহাদুর, সবচেয়ে বেশি দানশীল এবং আলোকিত চেহারা মালিক ছিলেন, জুব্বা পরিধান করতেন, যবের রুটি আহার করতেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বালিশ ছিলো চামড়ার, যাতে খেজুরের গাছের আঁশ ভরা ছিলো, খাট ছিলো বাবলা গাছের, যা খেজুরের পাতার রশি দিয়ে বুনানো ছিলো, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’টি পাগড়ী ছিলো, একটিকে সাহাব আর অপরটিকে উকাব বলা হতো, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রয়োজনীয় বস্তুর মধ্যে তলোয়ার যুলফাকার, উটনী আদ্ববাআ, খচ্চর দুলদুল, গাধা ইয়াফুর, ঘোড়া বাহার, ছাগল বরকতা, লাঠি মামশুক এবং পতাকা “লিওয়াউল হামদ” নামে মনোনীত ছিলো, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটকে স্বয়ং নিজেই বাঁধতেন এবং সেটিকে খাবার দিতেন, কাপড়ে তালি লাগাতেন আর জুতার মেরামতও নিজেই করতেন। পরিপূর্ণ মুবারক আকৃতি বর্ণনা করার পর হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্বে এবং হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর তাঁর মতো আর কাউকে দেখিনি। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৬৫৭ ও ৩৬৫৮) হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন: সাহাবায়ে কিরামগণ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো দেখবেই বা কিভাবে, আল্লাহ্ তায়ালা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় তো কাউকে সৃষ্টিই করেনি। (মিরাতুল মানাযিহ, ৮/৫৮) যেমনিভাবে নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উৎকর্ষময় চরিত্র দ্বিতীয় কারো নেই, তেমনিভাবে সমস্ত পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মাঝে তাঁর সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের ন্যায় আর কেউ নেই। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্ত্ব¡ায় সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যময়তার আধার ছিলেন, যাঁর দীদারে শুষ্ক ফুলের কলি সতেজ হয়ে উঠে, অন্ধকার অন্তর ঝলমল করতে থাকে, বিষন্ন হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। রাসূলের প্রত্যেক সাহাবীর এমন আশা ও আকাক্সক্ষা থাকতো যে, সর্বদা যেনো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী চেহারার যিয়ারত দ্বারা ধন্য হতে থাকে, এই কারণেই সাহাবায়ে কিরাম হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী চেহারার দীদার দ্বারা নিজের চোখকে শীতল এবং অন্তরকে প্রশান্তি দিতো আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার একটি ঝলক তাঁদের অন্তরের হাজারো সুখের আবেশ ছড়িয়ে দিতো। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা রাদি¦য়াল্লাহু আনহু রাসূলের যিয়ারতের সময় নিজের অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: যখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত দ্বারা ধন্য হতাম, তখন অন্তর খুশিতে দুলতে থাকতো এবং আমার চোখ শীতল হয়ে যেতো। (মুসনাদের ইমাম আহমদ, হাদীস নং-৭৯৩৭) আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বেশি সুন্দর আর কাউকে দেখিনি, যেনো মনে হতো যে, সূর্য তাঁর চেহারায় প্রদক্ষিণ করছে। (মিশকাত, হাদীস নং-৫৭৯৫) অনুরূপভাবে এক ব্যক্তি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইলো। নবীজি ইরশাদ করলেন: এভাবে দেখার কারণ কি? আরয করলো: হুযূর! আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত! আপনার নূরানী চেহারার যিয়ারত দ্বারা (আমার অন্তর শীতল করছি) উৎফুল্লতা অনুভব করছি। (শিফা, ২/২০) বাস্তবেই প্রিয় মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা চাঁদের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর। কেননা, চাঁদ শুধু রাতেই চমকায়, আর এই চেহারা দিন রাত সর্বদাই চমকায়, চাঁদ শুধু তিনটি রাতেই তার আসল রূপ নিয়ে চমকায়, আর এই চেহারা সর্বদাই প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত চমকায়, চাঁদ শরীরের উপর চমকায়, আর এই চেহারা অন্তরের উপর চমকায়, চাঁদ শরীরকে আলোকিত করে আর এই চেহারা ঈমানকে আলোকিত করে, চাঁদ ছোট বড় হয়, আর এই চেহারা ছোট হওয়া থেকে নিরাপদ, চাঁদের গ্রহণ লাগে, আর এই চেহারায় কখনো গ্রহণ আসে না, চাঁদের সাথে শরীরিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত, আর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈমানের, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর হওয়া শুধু তাঁদের ভক্তিতেই নয়, বরং তা বাস্তবেই এরূপ, চাঁদ দেখে কেউ হাত কাটেনি, ইউসুফের সৌন্দর্য্য দেখে মিশরের মহিলারা নিজের হাত কেটে নিলো এবং ইউসুফের সৌন্দর্য্য থেকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য অনেক গুণ বেশি। ইমাম আলা হযরত বলেন: হুসনে ইউসুফ পে কাটি মিসর মে আঙ্গুশতে যানাঁ- সর কাটাতের হে তেরে নাম পে মরদানে আরব। (হাদায়িকে বখশীশ, ৫৭ পৃ.) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকৃতির পাশাপাশি চরিত্রেও তাঁর মতো কেউ ছিলো না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো পরিপূর্ণ উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, শিশু হোক বা বড়, পুরুষ হোক বা মহিলা, বৃদ্ধ হোক বা যুবক, মালিক হোক বা গোলাম সবার সাথেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ এতোই উন্নত হতো যে, লোকেরা প্রভাবিত হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রশংসা করতো, তাঁর সৎচরিত্রের প্রতি প্রভাবিত হয়ে অপরিচিতরাও আপনজন মনে করতো, যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে দূরে থাকতো তারাও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাদিক ও আমীন (সত্যবাদী ও আমানতদার) বলতো, যারা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে লেনদেন করতো এবং অমুসলিম হতো, তারাও হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণে প্রভাবিত হয়ে মুসলমান হয়ে যেতো এবং লেনদেনকারী মুসলমান হতো তবে, তাদের ঈমান সতেজ হয়ে যেতো এবং তারা তাঁর নামে নিজের প্রাণও উৎসর্গ করে দিতে কুন্ঠিত হতেন না। যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের এই অবস্থা, তবে সেই পবিত্র সত্ত্বার অবস্থা কিরূপ হবে, কিন্তু আফসোস! যেই মাহবুব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের আলোচনা শুনার জন্য আমরা মাহফিল সাজাই, নারায়ে রিসালতের শ্লোগানে মুখরিত করি, তবে কি সেই সত্ত্বার বাণীকে ছেড়ে আমরা অমুসলিমদের অনুসরন করবো? তবে কি সুন্নাতের পোষাক ছেড়ে নিত্য নতুন ফ্যাশনকে অনুসরন করবো? তবে কি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখের শীতলতা নামাযকে ছেড়ে দিবো? এখনো কি পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অসদাচরণ করবো?...... এটাই কি রাসূলের প্রতি ভালবাসার দাবি? প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা ওয়াজিব। ইরশাদ হচ্ছে-আর আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশ পালন করো, যদি ঈমান রাখো’। (সূরা আনফাল, আয়াত :১) আর এটাই মুক্তির পথ। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: যে আমার আদেশ মানলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করলো, সে অস্বীকারকারী হয়ে গেলো। (বুখারী, হাদীস নং-৭২৮০)
কোন মন্তব্য নেই