Header Ads

Header ADS

নারীর মর্যদা : অনুপম দৃষ্টান্ত


মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম


বিশ্বে যা -কিছু মহান সৃষ্টি চির- কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা -কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্র“বারী অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। - কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান বিশ্বে নারীর অধিকার কথাটি অতি পরিচিত। নারী জাতির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মরণে প্রতিবছর ্িবশ্বব্যাপী ৮ মার্চ পালিত হয় আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। অনুষ্ঠিত হচ্ছে আর্ন্তজাতিক পরিসরে অসংখ্য সভা সেমিনার। তারপরও নারী তার অধিকার থেকে বি ত। বিভিন্ন দেশে নারীরা লাি ত অপমানিত ও ঘৃণিত। প্রতি নিয়ত নারীরা হচ্ছে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌতুকের বলি। এর অন্যতম কারণ ধর্মীয় রীতি-নীতি ও স্রষ্টার বিধানের প্রতি উদাসীনতা ও অবজ্ঞা প্রদর্শন। অথচ ইসলাম এমন সুন্দর নির্মল ব্যবস্থা বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে, যাতে নারীর অধিকার সবদিক থেকে অক্ষুন্ন থাকে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কথিত জ্ঞানপাপী ইসলাম বিদ্বেষী বুদ্ধিজীবিরা ও তাদের অপশক্তিগুলো এ অপপ্রচারে লিপ্ত যে, ইসলামে নারীর অধিকার খর্ব করা হয়েছে। তাদের বি ত করা হয়েছে নানানভাবে। বস্তুত নারীর অধিকার হরণের উৎসস্থলে আঘাত হেনেছে ইসলাম। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সমাজে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সর্বপ্রথম যিনি সোচ্চার হয়ে উঠেন, মানব জীবনে নারীর অধিকার যিনি পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন, তিনি হলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দঃ)। তাঁর বদৌলতে নারী জাতি পেয়েছে মা, স্ত্রী ও কন্যার মর্যাদা। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, ধর্মীয় ও দাম্পত্য জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীর যথার্থ অধিকার। ইসলাম প্রদত্ত নারী জাতির কতিপয় মৌলিক অধিকার নিম্নে তুলে ধরার প্রয়াস পেলাম- (ক) নারীর জীবন ধারনের অধিকার ঃ পুরুষের যেমন বাঁচার অধিকার আছে নারীরও তেমনি বাঁচার অধিকার আছে। কন্যা সন্তানকে হত্যা করার অধিকার কারো নাই। ইতিহাস সাক্ষ্য জাহেলীযুগে কন্যা জীবন্ত কবরস্থ করা হতো।কবির ভাষায়- সে যুগ হয়েছে বাসী - যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাক, নারীরা আছিল দাসী। সর্বপ্রথম ইসলামই তার বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে তার কন্ঠরোধ করে। হত্যাকে মহাপাপ ঘোষণা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “তোমাদের সন্তানকে দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না। আমি তাদের এবং তোমাদের রিযিক প্রদান করি। নিশ্চয় তাদের হত্যা করা মহাপাপ।” (বনী ইসরাঈল-৩১) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- “কিয়ামত দিবসে জীবন্ত কবরস্থ করা কন্যা সন্তানদের জিজ্ঞেস করা হবে, তাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে।” (তাকবীরঃ০৯) কবি নজরুল কতই না সুন্দর বলেছেন- করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন সে অত্যাচারী ? (খ) শিক্ষা লাভের অধিকার ঃ নবী করিম (দ:) ইরশাদ করেন, “ জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত, ইলম শীর্ষক পর্ব) বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে নারীগণ সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত বিধি-বিধান বে-মালুম ভুলে যাওয়াই আজ নারীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পর্দা ও শালীন পোশাক এর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নারী জাতি এক্ষেত্রে বিচরণ করতে হবে। মহান স্রষ্টার নিকট জ্ঞান বৃদ্ধির প্রার্থনার কৌশল বর্ণনায় ঐশীগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “ হে আমার রব! আমার জ্ঞানের বৃদ্ধি সাধন কর।” (তো¡হা- ১১৪) আল্লাহ তায়ালার সমীপে জ্ঞান বৃদ্ধির এ প্রার্থনা নর-নারী সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। (গ) নারীর সম্ভ্রম রক্ষার অধিকার ঃ শ্লীলতা ও সম্ভ্রম রক্ষার অধিকার ধর্মীয় অধিকার। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, “হে হাবীব! মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তাদের বক্ষদেশ যেন কাপড় দ্বারা আবৃত করে।” (নূর- ৩১) (ঘ) ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার ঃ আধুনিক সমাজে অসংখ্য নারী নির্যাতিত নিপীড়িত, এসিডদগ্ধ, শোষণ ও ধর্ষনের শিকার। বিচারের বাণী আজ নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। অথচ ইসলাম নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার দিয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “ তোমরা যখন মানুষের (নর-নারীর) মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায় পরায়ণতার সাথে তা করবে।” (নিসা- ৫৮) (ঙ) বিবাহের অধিকার ঃ নারী তার স্বামী নির্বাচনের পূর্ব অধিকার রাখে, যেমনিভাবে পুরুষ রাখে। পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান অধিকার সংরক্ষণ করে। এ বিষয়ে নবীজি দ্বীপ্ত কন্ঠে ইরশাদ করেন, “কোন বিধবাকে তার সাথে আলোচনা ব্যতিত কোথাও বিয়ে দেয়া যাবে না। আর কোন কুমারীকে তার সম্মতি ব্যতিত বিয়ে দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে তার নীরবতা হলো তার সম্মতির বহি:প্রকাশ।” (বুখারী-মুসলিম) (চ) সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী ঃ ইসলামই প্রথম নারীকে ভুলুন্ঠিত অবস্থা থেকে উঠিয়ে মর্যাদার উচ্চ আসনে সমাসীন করেছে এবং পিতা, স্বামী, পুত্র ও মাতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী করে সম্পদ লাভের বিধান করেছে। (নিসা ঃ ৯,১৯,৩৩, মায়েদা ঃ ১০৬-১০৮) যা পুরুষের দ্বিগুণ, অথচ তাদের খরচের কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। নারী যত সম্পদশালীই হোক, স্বামীর উপর ওয়াজিব নারীর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। নবীজি ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদের সম্পদ জোর করে গ্রহণ করো না। জ্ঞানপাপী ইসলাম বিদ্বেষীগণ উত্তরাধিকার আইন নিয়ে ইসলামের সমালোচনায় প মুখ। অপরদিকে হিন্দু ধর্মে পৈত্তিক সম্পত্তিতে নারীর কোন প্রাপ্যই নেই। এটা নিয়ে যত সমালোচনা নেই, তার চেয়ে বেশি হয় ইসলামী উত্তরাধিকার আইন নিয়ে যে, নারীদের প্রতি বৈষম্য করেছে। অর্থাৎ নারী পুরুষের অর্ধেক পায়। মূলত এটা পুরুষের সামাজিক দায়িত্ব অধিক হওয়াই যৌক্তিকভাবে পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ দেয়া হয়েছে। পিতার অবর্তমানে পরিবারের সব দায়-দায়িত্ব ভাইকে বহন করতে হয়, বোনকে নয়। এমনকি বোনের লেখা-পড়া, বিয়ে-শাদী, দেখা-শুনা প্রভৃতি সামাজিকতা ভাইকেই পালন করতে হয়। তাই ভাইকে বোনের দ্বিগুণ দেয়া কোন ভাবেই বৈষম্য নয় বরং যৌক্তিক প্রাপ্য। (ছ) বিয়েতে মোহর লাভের অধিকার ঃ বৈবাহিক জীবনে নারী-পুরুষ উভয়ে ‘যৌন সম্ভোগ’ ক্ষেত্রে সমানভাবে উপভোগ করলেও বিবাহ-বন্ধনে ইসলাম কিছু বিষয়ে পুরুষের তুলনায় নারীকে বেশি গুরত্ব দিয়েছে। যেমন - মোহর যা স্ত্রী চাওয়া মাত্র আদায় করতে স্বামী আইনত বাধ্য। পুরুষের জন্য স্ত্রীর নিকট এ জাতীয় কোন পাওয়া নেই আইনগতভাবে। ভরণ-পোষণে নারীর রয়েছে আইনী অধিকার। এটা স্বামীর পক্ষ কোন করুণা নয়, বরং এটা নারীর অধিকার। (জ) কন্যা সন্তান লালন-পালনে উদ্ধুদকরণ ঃ যে ব্যক্তি তার কন্যা সন্তানকে উত্তম ভাবে দীর্ঘ ১৮ বৎসর যাবৎ লালন-পালন ও সুশিক্ষা দান করে উপযুক্ত পাত্রে পাত্রস্থ করে, ইসলাম তার জন্য জান্নাতের/ স্বর্গের সুসংবাদ দেয়। নবীজি ইরশাদ করেন, “যার তিনটি কন্যা সন্তান আছে। অত:পর তাদের লালন-পালন ও সুশিক্ষা দান করেছে। এসব কন্যা পরকালে দোযখ থেকে পরিত্রানের মাধ্যম হবে।” (বুখারী শরীফ) অন্যত্র রয়েছে- “যে তার কন্যাকে তুচ্ছ মনে করে না এবং পুত্রকে উক্ত কন্যার উপর প্রধান্য দেয় না, আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করবে।” (আবু দাউদ) রাসূলে করিম (দ:) এর জীবদ্দশায় এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগে নারী সম্প্রদায়ের মান উন্নয়নে মহান আল্লাহর নির্দেশনাবলী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছিল। যা নারী জাতির জন্য গৌরবময় ইতিহাস।কবির ভাষায়- বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি - কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি। পরিতাপের বিষয় ইসলাম নারী জাতির মুক্তি ও মানোন্নয়নে যে অবদান রেখেছে, নারীরা তা অবহিত নয়, তাদের এ অজ্ঞতা তাদের অবহেলিত ও অধিকার বি ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এ অবস্থার নিরসন করতে হলে নারীদের সচেতন হতে হবে, কোরআন-হাদীস অধ্যয়ন ও বুঝতে হবে। তবেই তারা সমাজের কাছ থেকে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নারীর মর্যাদা উদ্ধার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে নারীদেরকে তাদের কর্মক্ষেত্র ঘর থেকে বের করে এনে পুরুষদের কাতারে দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ তাদের জন্য সঠিক কোন স্থান নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে তাদের কর্মক্ষেত্র ঘর থেকে বের করে এনে পুরুষদের কাতারে দাঁড় করানো হচ্ছে। অথচ তাদের জন্য সঠিক কোন স্থানে নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে তাদের সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। বরং তাদের সমস্যাবলী আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। অতএব, লেখা-পড়া, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলা-ফেরা, পোশাক-পরিচ্ছেদ সবক্ষেত্রে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিশ্চিতকরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একান্ত কর্তব্য। সর্বোপরি আমদের বিশ্বাস মানব সমাজ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠিত হলে নারী জাতির সকল সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ!


কোন মন্তব্য নেই

ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মর্যাদা

জন্ম পরিচিতি: হজরত ওসমান গণী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন তৃতীয় খলীফা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার জামাতা, পয়ত্রিশ মতান্তরে ছত্রি...

Blogger দ্বারা পরিচালিত.